Pages

Saturday, March 13, 2010

তোমার মায়ার মাহাত্ম্য বুকে নিয়ে চলে যাবো পৃথিবী ছেড়ে!


একটা পথও এমন নেই, যে-পথে স্বপ্নদের সাথে খেলতে খেলতে তোমার কাছে পৌঁছে যেতে পারি অক্ষত; সবগুলো পথ আমাকে ডাকে; সকলেই খোলামেলা দেখায় তাদের যা কিছু সুন্দর; আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি না- সকল পথের পাশে কেনো কিছু সুন্দর ফুল কিছু সুন্দর পাখি কিছু জোছনাময় শিশু আর কিছু মায়াবী প্রসন্না থাকে!

তবে কিছু পথে স্বেচ্ছায় একা একা কিছুদূর হেঁটে যেতে যেতে দেখেছি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা মনোহর কুহক আর ক্যামোফ্লাজ; বিভ্রান্তির আয়োজন শনাক্তকরণে খুব বেশি দূর যেতে হয় না আমাকে; উপরে আকাশ আছে নিশ্চিত এই বিশ্বাস অক্ষুন্ন; চলতে পথে আকাশকে প্রখর কিংবা নরম দৃষ্টির ছোঁয়া দেই না ; যদি মর্ত্যের পিচ্ছিল পথে চলতে পা পিছলে যায় এই ভয়ে;

প্রীতির বায়ুমন্ডলেও সাঁতার কাটি কখনো সতর্ক, কেউ যেনো হনন করতে না-পারে; আমি হেঁটে যেতে যেতে কিছুদূর উড়েও যেতে পারি; উড়ু উড়ু মন স্বপ্নদের সাথে ওড়ে আনন্দে;
মাধ্যাকর্ষণ সত্যি বড় প্রেমময়! বাইরে যেতে দ্যায় না, নিশ্চিন্ত থাকো, মহাশুন্যের স্থান-কাল আমার ভেতরেও আছে

আজকাল খুব বেশি তোমাকে দেখা যায় আমার ভাবের সবুজ ভূবনে; প্রতিদিন কিছু প্রিয়ংকর বোধ পাঠাও; বোধের বিভাতে শোভিত চিত্রকল্প- যার অন্তর তুমি,দেখে দেখে খুব মুগ্ধ হই গো নীলসুরভী, মুগ্ধ হই; বেঁচে থাকা ভালো লাগে; পথে পথে ক্ষত বিক্ষত হওয়ার বেদনা ভুলে যাই নিমিষে; তোমাকে হৃদয়ে ধারণ করে বুঝলাম ফিরোজা-নীল রঙে এতো খুশবো মধুর

তাও বলে রাখি- যদি লোমহর্ষক আহত হই, যদি মুমুর্ষাবস্থা হয় পথে, যদি হদস্পন্দন থেমে যেতে চায় ক্ষরণে ক্ষরণে, তোমার মায়ার মাহাত্ম্য বুকে নিয়ে চলে যাবো পৃথিবী ছেড়ে! তুমি খুশবোময় থাকবার চেষ্টা করো মৃত্যু অবধি।

সে অতঃপর পুস্পিত


বিকশিত হওয়ার স্বপ্নের সাথে সারাক্ষণ কথা বলতে বলতে সংকোচ বিদীণ করার সম্ভাবনা তার চোখের সামনে ফুলপরীদের উদ্বাহু নৃত্য হয়ে ভাসে। তার দেহ জাগে, মন জাগে. আত্মা জাগে; তার অন্তর্গত ছত্রিশ রাগিনী জাগে কিন্তু সে রাগান্ধ হয় না।

দুপুরের উত্তাপে সে মনোহর পুস্পিত। রোদের মায়ায় আচ্ছাদিত হতে পারলে তার ভালো লাগে প্রিয় মানুষের হাতে গ্রীবা স্পর্শের মতোন। সে দুপুরের কাছে অনুনয় করে- ‘প্রিয় দুপুর, আমাকে তুমি কখনো সন্ধ্যাভাষা দিও না’। তার সুমধুর ঢুন্ঢন অথবা প্রিয় প্রত্যয় কখনো পাকা সোনালি ধান ছড়ার দোলা, কখনো পাহাড়ি গাঙ্গের বাঁশ ঝাড়ের নিচে গর্তে লুকিয়ে থাকা শিং মাছের সক্রোধ ঘা। সে মা হতে চায়, সে মা হতে চায় না। প্রিন্সেস ডায়নার করুণ মৃত্যু তাকে ভাবায় আবার ভাবায়ও না। সিলভিয়া প্লাথ মস্ত ভুল করেছিলেন, তা সে জানে।

সংগীতের সপ্ত সুরেই সে উতলা হয়। আকাশের কান্না সে হাতের মুঠোয় লুকিয়ে রাখে। কাউকে দেখায় না। যৌবনের সুবিমল ইচ্ছাকেও না। সে নিজগুণে সকাল দুপুর সন্ধ্যা ও রাতের কাছে পরম শ্রদ্ধেয়া হয়ে উঠতে চায়। তার জানা আছে-চব্বিশ ঘন্টা সময়ের মধ্যে, পৃথিবী পৃষ্টে কোথাও না কোথাও নিরন্তর কল্যাণ পথের আহবান- আজান ধ্বনিত হচ্ছে। এবং এও জানে, পৃথিবীর সময়ের ভেতরে কোথাও না কোথাও, প্রজননের প্রয়োজনে অথবা নষ্ট হবার বিনোদন তৃষ্ণায় নারী পুরুষ ইচ্ছায় অনিচ্ছায় চুমু খায়, দেহ সুখ বিনিময়ে লিপ্ত হয়। মনে পড়ে না, কে তাকে বলেছিলো- ‘ভালোবাসার মানুষটির একটি ছোট্ট চুম্বন পাওয়া মানে জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট অর্জন’। বিড়বিড় করলো সে- হুমম........রঙের কথা ঢঙের কথা আলতু ফালতু যথা তথা। সে ভাবে, পৃথিবীতে প্রতি সেকেন্ডেই জন্ম মৃত্যু হত্যা লুন্ঠন চুরি ষড়যন্ত্র এবং পুঁজা এবাদত ইত্যাদি চলছেই। পৃথিবীতে অজস্র ‘শান্তি প্রক্রিয়া’ চলছে অথচ অধিকাংশ নিদারুণ অশান্ত। প্রতি ঘন্টায় অজস্র প্রেমের কবিতা লেখা হচ্ছে। দেশে দেশে প্রেম আছে আবার নাইও। দুইটাই সত্য।

সকল প্রকার যোগ বিয়োগ নিয়ে পৃথিবী দৌড়তে থাকে তার কক্ষপথে প্রতি সেকেন্ড তিরিশ কিলোমিটার বেগে।

কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরতে আজ দেরি হয়েছে। ঘরে ফেরার পথে টের পেলো একটা মিশ্র অনুভূতি- ক্লান্তি এবং কাজ সারার আনন্দ উভয়ে কূটনৈতিক শিষ্টাচারসম্মত করমর্দন করে মুচকি হাসে। ঘরে ফিরে কাপড় বদলাবার সময় টের পায় অনুপেক্ষনীয় প্রিয় বোধের তৃষ্ণা কিছু বলতে চায়। সে বিষাদাক্রান্ত হয়ে বলে- ‘নাহ’। তাছাড়া দিবসের যে-কোনো সময় প্রেমকথা উঁকি দিলে সে কষ্ট সমুদ্রে সন্তরণ করে আর ভাবে-মিছে দুনিয়ার সব সাময়িক ভেল্কিবাজি। তবু সে মন থেকে মুছে ফেলতে পারে না ওই দূর আকাশের নক্ষত্রটির কথা। কোনো কোনো দিন সে কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরেই স্নান করে। আজ সকালে গোসল সেরেই গিয়েছিলো তাই শুধু হাত মুখ ধুয়ে এসে হালকা প্রসাধন লাগায় হাতে মুখে। রাতের খাবারের সময় আসতে দু’ঘন্টা বাকি। বিছানায় বসে ল্যাপটপ খুলে অন লাইনে দু্নিয়া দেখবে কি না ভাবতে ভাবতে ল্যাপটপ ছাড়াই বালিশ পিঠে লাগিয়ে হেলান দেয় পালংকের কোণায়। একটা আপেল হাতে নিয়ে চোখ মুদে কিছুক্ষণের জন্য। কর্মকর্তা পদের চাকরিটা ভালোই চলছে। চোখ বুজে সে কথা বলে নক্ষত্রটির সাথে।

- কেমন আছো?
- ভালো আছি মানে আরেকটি মিথ্যা যোগ।
- কেন ভালোবাসো আমাকে?
- ভালোবাসবার জন্যেই ভালোবাসা ছাড়া থাকা যায় না।
- ভালোবাসা বুঝি না!
- না বোঝা ভালো। বুঝলে সমস্যা বিরাট। বুঝে ফেললে তুমি নিজকে হারাবে।
- কি চাও আমার কাছে?
- কিছু চাই না যে তা নিশ্চিত কিন্তু ভালোবাসি।
- নক্ষত্র আসলে কি জানো প্রিয়তমা?
- জানি, তবে তুমি কি বলতে চাও শুনি, বলো।
- নক্ষত্রের নিয়তি আমৃত্যু জ্বলতে থাকা, কারণে অকারণে পুড়তে থাকা.....
- হুমম......
- একটি কবিতা শুনবে?
- শোনাও

জ্বলো আগুন জ্বলো অশ্রু টলোমলো


একটি শব্দ ঘুমে
একটি শব্দ চুমে
একটি শব্দ জাগে
একটি অস্তরাগে !
কিছু শব্দ হারিয়ে গেছে ওই পারের ওই সবুজ পাতার বনে। বাঘের গালে হঠাৎ ভীষণ রাগে মারি চড়; বাঘ বললো- কেন মামা এত্তো জোরে চড়? জবাব দেয়ার প্রয়োজনবোধ করি না; পথের কতো দূর বাকি দেখি; পথের শেষ নেই......

বাঘেরাও প্রেমফুলরঙমায়া বোঝে, বোঝে প্রিয় শব্দ কেন ক্ষত বিক্ষত হয়; বাঘের চোখেও প্রজাপতি-সময় দোল খায়; বিপন্ন সবুজ জনপদটিকে যারা বর্ণহীন গন্ধহীন বানাতে চায়, এই বাঘেরা তাদের বিনাশ করতেই পারে; যে-কারণে শব্দ-অক্ষর-প্রিয় কথা নিরন্তর বিপন্ন, যা জাগে তা জাগে না, যা ঘুমায় তা ঘুমায় না, যা হারায় তা হারিয়ে যায়- কচু পাতায় বৃষ্টি ফোটার পতন ঠিক যেমন....

শব্দ কিছু যাদুর বাক্সে প্রিয় মন রেখেছে; সে এমন এক যাকে কখনো বলা হয় নি- সুগন্ধ পুস্প ফুটেছে; অথচ সে জানে আমার দু’হাতে রোদ বৃষ্টি সকাল দুপুর সন্ধ্যা ও রাত আগুনে পোড়া......
জ্বলো আগুন জ্বলো
পুড়ো কায়া পুড়ো
অশ্রু টলোমলো
জ্বলো আগুন জ্বলো।

কবিতা শুনে সে চোখ খুলে সবুজ ডিস্টেম্পার করা দেয়ালের দিকে তাকায়। অপলক দৃষ্টিপাত। যেনো সে দেয়ালেই অনেক কিছু দেখতে পাচ্ছে। হয়তো সে দেখছে লেবু শাখায় বসে থাকা দোয়েলটির ভেজা চোখ। হয়তো তার চোখের সামনে পরিশ্রান্ত সুদর্শন এক পথিক সুর্যাস্ত দেখে দেখে শোকার্ত হচ্ছে। হয়তো দেখছে প্রবল ঝড়ের কবলে নিশ্চুপ নিরুদ্বিগ্ন দাঁড়িয়ে আছে একটি মানুষ। সে ভাবে, ‘একটা চিঠিও নাই ডাক বাক্সে, বার বার এসে ফিরে যাই’। - এই কথা পাঠ করে ভেজা চোখে সে কেন গুন গুন করেছিলো- ‘মায়াবন বিহারিনী হরিণী/গহন স্বপন সঞ্চারিনী/কেন তারে ধরিবারে করি পণ/ অকারণ’। সে ভাবে, স্ত্রী অথবা স্বামী হওয়া মানেই জীবনের সব কিছু পাওয়া নয়।

রাতের খাবার শেষে ঘুমিয়ে পড়ে সে। ঘুম ঘোরে স্বপ্ন দেখে, ইচ্ছে করলেই সে দু’হাত দু’দিকে মেলে পাখির মতো উড়ে যেতে পারে অনেক দূর। সকাল সাতটায় যখন ঘুম ভাঙ্গলো, সে চমকে যায় এই কারণে যে, তার পরনে একটি সাত রঙা শাড়ী। এই শাড়ী কোত্থেকে এলো! ‘এটা আমি কখন পরলাম! আশ্চর্য!’- তার বিস্ময়। এই বিস্মিত হওয়ার ব্যাপারটাও কাউকে বলবে না, এমন চিন্তা করতে করতে তার মনে হলো সে শুনতে পাচ্ছে- অগণন শিশু তাকে মা মা বলে ডাকছে।