Pages

Thursday, December 20, 2007

শালার পোড়া কপাইল্যা রাজনীতি!!

রাজনীতি রাজনীতি রাজনীতি! শালার পোড়া কপাইল্যা রাজনীতি। কালো রাজনীতি কহে, তুমি সোনার খনি হইলেও আমি বলিব তুমি কয়লার খনি। তুমি অশ্বডিম্ব। তুমি কিছু না। তোমার অস্তিত্ব আমি স্বীকার করিব না। আমার দলে আসিলে তুমি যদি তাম্র হও, আমি বলিব, তুমি মহামুল্যবান হিরা-ডায়মন্ড মনিমুক্তা প্লাটিনাম, তুমি অসাধারণ, তুমি মহা মহা কিছু।ক্ষমতা আর স্বার্থ সিদ্ধির জন্য যাহা যাহা করিবার প্রয়োজন তাহাই করা হইতেছে যুগ যুগ ধরিয়া। ধর্ম অধর্ম নীতি নৈতিকতা আদর্শ হাওয়া হইয়া যায় চোখের পলকে। শত্রু মিত্র হইয়া যায়, মিত্র শত্রু হইয়া যায়। উল্টি পল্টি উষ্ঠা বিষ্ঠা খাইয়া কহে আমি যাহা করিয়াছি ঠিক করিয়াছি।উপমহাদেশে ইসলামের পতাকাবাহী কংগ্রেসী মোল্লাতন্ত্র ছিলো। বিজেপি'র ছাতার নিচেও মোল্লারা আছেন। আবার ইসলামী রাজনীতিঅলাদের ছায়াতলেও আছেন ঠাকুরপুত্রগণ। ক্ষমতার পাওয়া যাইবে না দেখিয়া মুফতী সাহেব তার মান্যবর শায়খুল হাদীসের বিরোধিতায় আদাজল খেয়ে লাগলেন। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা মৌলবাদীদের সাথে হাত মিলাইলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীরা স্বাধীনতাবিরোধিদের সাথে গলা মিলাইয়া ক্ষমতায় যাওয়ার পথ পরিস্কার করিলেন। নিজের দুই চর্ম চক্ষে দেখিয়াছি, ধানের শিষঅলাদের তাড়া খাইয়া নৌকাঅলাদের হাই কমান্ডের কয়েকজন নিজেদের মঞ্চ ত্যাগ করিয়া পাশবর্তী দাড়িপাল্লাঅলাদের মঞ্চের কাছে গিয়া আশ্রয় চাহিয়া জান বাঁচাইয়া ছিলেন। দাড়িপাল্লাঅলারা ধানেররশিষঅলাদের পিছু ধাওয়া করিয়া তাড়াইয়া দিয়াছিলো। সময়ের পরিক্রমায় আবার এমন সময় আসিল তাহারা ত্রয়ী শক্তি ঐক্যবদ্ধ হইয়া আন্দোলন করিলেন।স্বৈরাচারের পতনের একদিন আগে দেখিয়াছিলাম টেলিভীশনে, স্বৈরাচারকে রক্ষার জন্য সাদা দাড়ি পাগড়িঅলা বুযুর্গেরা দোয়া করিতেছেন। সকলেই জানেন, স্বৈরাচার লেডি কিলার টাইপ লোক। এক সাক্ষাতকারে বলিয়াছিলেন, 'আমার তো এ্যাথলেটিক্সের ফিগার, মেয়েরা পছন্দ করে, আমি কি করবো।' তিনি মহাখালির নিউ ডিওএইচএস এর যে বাসায় গভীর রাতে 'প্লেজার ট্রিপ' মারিতে যাইতেন, এর পাশবর্তী আমার এক আত্মীয়ের বাসায় কয়েকদিন ছিলাম। প্রত্যক্ষদর্শীদের নিকট হইতে কিছু কাহিনীও শুনিয়াছি। যাক, তিনিই আমাদেরকে দীর্ঘকাল শাসন করিয়াছেন। তিনি দেখাইতেছিলেন, সবার উপরে ডান্ডা সত্য তাহার উপরে নাই। কিন্তু পাবলিক পরে দেখাইয়াছে, ডান্ডাবাজীকেও ধরাশায়ী করা সম্ভব।এখন দেখিতেছি, যাহারা আপ্রাণ চেষ্টা করিয়া বাংলাদেশের জন্মের বিরোধিতা করিয়াছিলো, তাহারা বলিতেছে, তাহারা ওইসব কিছু করে নাই! বলিতেছে, দেশে মুক্তিযুদ্ধই হয় নাই! দেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নাই!কাহাকে কি বলিব! ঠেলার নাম বাবাজী! দৌড়ের মধ্যে সবাই। ধরো মারো খাও ভাগো। বাই হুক অর বাই ক্রোক দে ওয়ান্ট টু এ্যাচিভ দেয়ার টার্গেট। গোস্বায়-রাগে আমি জ্বলিয়া উঠিয়াছিলাম যখন দেখিয়াছিলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জলিলকে ইসলামের কথা বলায় রাজাকার আখ্যা দেয়া হইয়াছিলো! এখনো সেই রকম হইতেছে।
এই ভার্চুয়াল জগতেও তাহাই হইতেছে। আমাকে যাহারা তাহাদের প্রতিপক্ষ ভাবিতেছেন, তাহাদের একজন আমার ব্লগে বলিয়াছিলেন, আপনার লেখাটি ভালো হইয়াছে। আমি যাহা বলিব তাহা মানিলে ইহাকে টপ রেটেড করার ব্যবস্থা করিব। আমি তাহার কথা শুনিয়া হাসিয়াছিলাম। আমি মিথ্যাচারের রাজনীতির সাথে নিজকে জড়িত করিতে পারিতেছি না বলিয়া আমার উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়া হইয়াছে। যাহারা সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে জিরো ডিগ্রিতে অবস্থান করিতেছে। তাহারা আমাকে গালাগালিও করে। তাহাদের গালাগালিতে আমার কি হইবে? কিছুই হইবে না।
আমি বরাবরের মতো রাজনীতি নিরপেক্ষ থাকিয়া যাহার কাছে এক বিন্দু সত্য ও সৌন্দর্য দেখি, তাহাকে গিয়া বাহবা দেই, নিজেও আমোদিত হই। কিন্তু মতান্ধেরা ইহা সহিতে পারে না। আমি কখনোই তীব্র পক্ষপাতদুষ্ট হইয়া অপর পক্ষের কোন সততা ও সৌন্দর্য্যকে অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যান করি না। যাহারা এমন করিয়া আনন্দ পাইতে চায়, তাহাদের অন্তঃসারশুণ্যতা দেখিয়া আমার হাসি পায়!!!

Sunday, December 2, 2007

ওরা পারে, আমি পারি না

ব্যবসা সূত্রে কিছু আরব তরুনদের সাথে আমার পরিচয় আছে। কখনো কেএফসি বা বার্গার কিং-এ ওদের সঙ্গে আড্ডা মারা লাগে খাতির রাখার জন্যই। ব্যাপারটা একটু অসাধারণ এই জন্যে যে, বাঙালি ইন্ডিয়ান পাকিস্তানী কাউকে চৌকস আরবদের সাথে আড্ডা মারতে সচরাচর দেখা যায় না। প্রধান কারণ ল্যাক অব এ্যাডজাস্টমেন্ট ডিউ টু ল্যাঙ্গুয়েজ এ্যান্ড কালচার। বনেদী শিক্ষিত আরবেরা অনেকটা ফরাসীদের মতো ভালো ইংরেজি জানা থাকলেও নিজের ভাষাকে প্রাধান্য দেয় ভিনদেশিদের সাথে কথা বলার সময়। কেউ আরবী না-জানে যদি বলবে ইংরেজিতে।
আমি কথ্য আরবী বলতে পারি অনর্গল। আরব ঐতিহ্যের ব্যাপারেও নলেজ আছে। আরবী লিখতেও পারি। তুমুল আড্ডায় আরবী বরাবর শব্দ খুঁজে না পেলে কখনো ইংরেজি চালিয়ে দেই ধুমাধুম। ফলে ভাটা পড়ে না। গতি বরাবর থাকে। কেউ আবার আমার ব্রিটিশ এ্যাক্সেন্ট ইংরেজি শুনে মনোযোগি হতে বাধ্য হয়। আমার আওয়াজ বড়। ষড়যন্ত্রকারীদের মতো ফুসুরফুসুর-ফিসফিস করে কথা বলতে পারি না।
বেশিরভাগ আনস্কিলড লেবার পেশায় বাঙালি থাকার কারণে বহু আরবদের মধ্যে বাঙালি ও বাংলাদেশ সম্পর্কে নানা ভুল ধারনা আছে। আমি কথা প্রসঙ্গে তাদের ভুল ভেঙ্গে দেই। ডেসপারেটলি বলি, তোদের তুলনায় বহু গুণ বেশি মাল্টিমিলিয়নিয়ার আমার দেশে আছে। তোরা দেশি বিদেশি মিলে জনসংখ্যা সাড়ে চার মিলিয়ন আর আমাদের পপুলেশন একশ' পঁচিশ মিলিয়নের উপর। আমাদের গৌরবোজ্জল স্বাধীনতা যুদ্ধের গল্পও বলি তাদের। কিছু এনলাইটেন্ড আরব সন্তান, যারা লন্ডন আমেরিকা ঘুরে এসেছে, তারা ওখানকার ব্রিলিয়ান্ট বাঙালিদের দেখেছে, তাই তারা বাঙালির তারিফ করে।
একদিন এক পাকিস্তানী পাঠানকে মারতে উদ্যত হয়েছিলাম। শালা বেওকুফ চট করে বলে বসে-' আরে বাঙালি কেয়া লাড়াই কারেগা, বাঙালি ডরতা হ্যায়।' আমি তত্ক্ষনাত গর্জে উঠে বলি, 'আবে উজবুক জাহিল! তুঝকো কেয়া পাতা, যা তেরা বাপকো যা কে পুছ- বাঙালি আপনা আজাদী কা লাড়াই ক্যায়সে কিয়া থা, কিতনা পাঠানকো জানসে মারা আওর কিতনা আখের সারেন্ডার করকে আপনা জান বাচায়া।' (আবে উজবুক মূর্খ! তোর বাপেরে গিয়া জিগা, বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ কেমতে করসিলো, কতো পাঠানেরে জানে মারসিলো আর কতো পাঠান শেষে সারেন্ডার কইরা নিজেগো জান বাচাইসিলো!) মারামারি অবশ্য হয় নি। আশপাশের লোকজন ধরাধরি করায়।
যাক্, যে-প্রসঙ্গে বলছিলাম তা ভিন্ন।
আমার ব্যবসায়িক সম্পর্কের ওই আরব তরুনদেরকে আজব চিড়িয়া মনে হয়। আজান হলে মসজিদে যাবে, নামাজ পড়বে, তসবিহ হাতে নিয়ে ঘুরবে। আবার সুদের ব্যবসার সাথেও জড়িত (ব্যাংক না, গোষ্ঠিভিত্তিক সূদি মহাজনগিরি), ঘুষও খাবে এবং প্রতি সপ্তায় দুই/তিনটা মাইয়া ইস্তেমাল করবে খুব স্বাভাবিক আনন্দে। জোয়ান বুড়ো অধিকাংশ আরবের আড্ডার প্রধান আলোচ্য নারী সম্ভোগ। কে কয়জন ভিনদেশি তরুনী আনতে পেরেছে স্পনসর হয়ে ভিজিটে, সেটা তাদের বাহাদুরী! আমি হতবাক হই, আবু জেহেল আবু লাহাবের এই আধুনিক বংশধরদের দেখে! আবু বকর, ওসমান, ওমর, আলী রাঃ প্রমুখের উত্তরসূরীর সংখ্যা খুবই কম।
ব্যবসায়িক সম্পর্কের দুই তরুন একদিন আমাকে নতুন আগত 'সুপার্ব আইটেম' সম্ভোগের আমন্ত্রণ জানালো। বিশ্বাস করুন, বললো, 'যেটা পছন্দ হয় নিবে। তোমার এক টাকাও দিতে হবে না। তুমি আমাদের বন্ধু।' আমি বললাম, 'আমার দ্বারা সম্ভব না।' এক তরুন আমাকে চেতানোর জন্য বললো, 'বুঝেছি, তোমার মেশিন অকেজো।' আমি বললাম, 'মেশিন ঠিক আছে, ফাসকেলাস। কিন্তু নারীর যৌবন নিয়ে এমন খেলা চাই না আমি।' তরুনটি বললো, 'রোহ রোহ রোহ ইনতা তা'বান।'(যাও যাও যাও তুমি বেকার)। সে আরো বললো, 'ওই মেয়েরা পয়সা কামাচ্ছে এনজয় করছে, আমরাও এনজয় করছি, পয়সা দিচ্ছি। দু'দিনের দুনিয়া, এমন মজা ছাড়তে পারি না।' ওদের বউ বাচ্চা আছে তবু ওরা তা করে হামেশা।আমি বললাম, 'তোমরা পারো, আমি পারি না। আনা খউফ মিনাল্লাহ (আমি আল্লাহকে ডরাই), আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, লা তাকরাবুজ্জিনা-ব্যভিচারের নিকটবর্তী হইও না।'

হোয়াট এ্যা সারপ্রাইজ!!!

পৃথিবীতে কিছু মানুষ এক্সট্রা সেনসরি পারসেপশন ক্ষমতা নিয়ে আসে। তাঁদের বিস্ময়কর কর্মক্ষমতা প্রমান করে- তাঁদের রয়েছে একেবারে জেনুইন প্যারানরমাল পাওয়ার। বৃটিশ গীতিকার রোজমেরি ব্রাউন, আমেরিকার জীন ডিক্সন -(যিনি প্রেসিডেন্ট কেনেডির মৃত্যু সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন বরাবর), ফ্রান্সের নস্ট্রাডমাস, লেখক আর্থার কেনান ডুয়েল এবং দানিয়েল ডি হোম প্রমুখ।এই এক্সট্রা সেনসরি পারসেপশন এর ব্যাপারটি নিয়ে আমি বিভিন্ন সময় ভাবি। মাইন্ড অভার ম্যাটার! বিস্ময়করই বটে!
ইস! আমার যদি অমন ক্ষমতা হতো!!
তবে বাস্তবে না-হলেও স্বপ্নে, ঘুমের ঘোরে, আমি অতীতে আমার মানবীয় শরীর নিয়ে দু'দিকে দু'হাত মেলে পাখির মতো উড়ে গিয়েছি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে। ব্যাপারটি আমাকে খুব আনন্দ দিয়েছে। আমি ধ্যানমগ্ন হয়ে অতীত ভ্রমনের চেষ্টা করেছি। সুদূর অতীত- নিউটন, গ্যালিলিও, শেক্সপিয়রের সময়ে। পারি নি। পারার কথাও না।একদিন আমার এক ফিলিস্তিনি বন্ধু বলেছিলো, 'আলোর চেয়ে দ্রুত গতি আছে একটা জিনিসের।' আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করি-'কী সেটা?' সে হাস্যোজ্জল হয়ে বললো, 'থিংকিং-থট, থিংক ক্যান মোভ ফাসটার দ্যান লাইট স্পিড।' মানে 'চিন্তা'র কথা।
দু'জনেই হাসলাম। সে বললো,'স্টিফেন হকিংয়ের কাছে একটা চিঠি লেখা যায় এই মর্মে যে,স্যার ওয়ান থিং ক্যান গো ফাসটার দ্যান ফোটন-লাইট। ইট ইজ থিংক।'আবার দু'জনে হাসলাম। আমি বললাম 'বেচারা হকিং মটর নিউরন রোগাক্রান্ত। নইলে ধমক দিয়ে তোমার পেশাব ছুটাই দিতো।
'যাক, ঘটনা বলি একটা-
শেষ রাত পর্যন্ত জাগা থাকি ব'লে বেশ কয়েক বছর আমি ভোর কিংবা প্রত্যুষ দেখি না। ঘুমাই ভোরের কিছুক্ষণ আগে। খুব জরুরী হলে দুই/তিন ঘন্টা ঘুমিয়ে উঠে পড়ি। নইলে টাইট ঘুম শেষে উঠি বেলা এগারটায়। রাত জাগা পাখি হওয়ার অভ্যাসটা হয়েছে দেশে থাকতে পত্রিকায় নাইট শিফটে দায়িত্ব পালন করায়। মফস্বলের দৈনিক পত্রিকা অফিসে কলমের গুতোগুতি শেষ হতো রাত দু'টায়। তারপর ঘন্ঠাখানেক পার হতো গপসপে।
এখন তো পরবাসে ভিন্ন পেশায়।
সেদিন শেষ রাতেও ঘুম আসছিলো না। চলে গেলাম জগিং করতে কর্নিশে। সাগর পারের প্রলম্বিত পার্ক ওটা। শুরু করলাম ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ-দৌড়। দৌড়ালে ক্লান্তি আসবে। ক্লান্তি এলে ঘুম আসবে। কিছুক্ষণ দৌড়ে বসলাম একটা বেঞ্চে। দৌড় মানসিক অস্থিরতা কমাতেও সাহায্য করে তা জানতাম। কখনো কখানো গভীর চিন্তা আক্রান্ত হলে আমি হাঁটতে থাকি উদ্দেশ্যহীন পথে পথে।প্রায় দশ মিনিট বসে উঠি ঘরে ফেরার জন্য।বিস্ময়কর ঘটনাটা ঘটলো তখন। সাগর উপর দিয়ে চারটি মানুষ উড়ে এলো আমার সামনে। এসেই সমস্বরে সালাম দিলো- 'আসসালামু আলাইকুম'। হতবাক আমি ওয়ালাইকুম সালাম বলে কিছু বুঝার চেষ্টা করছি। ওরা এক সাথে হেসে ওঠলো। ওদের মুখ নাই। গলা পর্যন্ত মানুষ। মুখমন্ডল মাথা নাই। গলা কাটা। তাজা রক্ত দেখা যাচ্ছে। অথচ মুখ বরাবর শুন্যতা থেকে বেরিয়ে আসছে ওদের কন্ঠধ্বনি। খুব স্বাভাবিক-রিলাক্সড। আমি বললাম, 'কে আপনারা? আপনাদের মাথামুখ কই? স্বাভাবিক জিন্দা আছেন কেমন করে? উড়ে এলেনই বা কেমন করে? ওরা একসাথে হেসে উঠলো এবং বললো- 'আমাদেরকে আপনি চিনেন আবার চিনেন না।' ওরা দু'জন পুরুষ দু'জন নারী। পোশাকে দেহাবয়বে কন্ঠের আওয়াজে বুঝতে পারলাম। বললো, 'আমরা আপনার শুভাকাঙ্খি। ভয় পাবেন না। আমরা ভার্চুয়াল জগতের মানুষ। চেনা কিন্তু অচেনা। ব্লগিং করি আপনার সাথে। আপনার লেখার সমর্থন করি।' একজন নারী কন্ঠ বললো 'আমি ইচ্ছাকৃত মজা করার জন্য আপনার বিরোধিতা করি।' আমি বললাম, কিন্তু এভাবে এখন এখানে এলেন! আমি ঠিক কিছু বুঝতে পারছি না! আপনাদের গলা কাটা কেন? ডান পাশের নারী কন্ঠ বললো, জগতের অনেক কিছুই বুঝার সাধ্যের বাইরে। থ্রিল এভরিহোয়ার! ডু নট গেট সিরিয়াস! আমরা ঠিক আছি। ভালো থাকবেন। যান ঘরে গিয়ে ঘুমান।' আমি জানতে চাই, আপনারা সবাই একে অন্যের পরিচিত?' সমস্বর জবাব 'না না, আমরা যাই। বাই বাই।' আমি বলি, 'আরো কিছু কথা বলুন।' ওরা সমস্বরে বললো, নো মোর টু ডে, বা বাই।'ওরা দু'হাত দু'দিকে মেলে ধরে উড়ে চলে গেল সমুদ্রের উপর দিয়ে।আমি ঘরের দিকে হাঁটতে শুরু করি। কিছুই বুঝলাম না এই ঘটনার আগামাথা! হোয়াট এ্যা সারপ্রাইজ!!!

হ্যাঁ, তোমাকেই বলছি

হ্যাঁ, তোমাকেই বলছি। তুমি আলোচিত, সমালোচিত, নিন্দিত, নন্দিত। তোমার উপস্থিতিতে কেউ আনন্দিত; কেউ খুব বেশি আনন্দিত। আবার কারো এলার্জিক রিএকশন শুরু হয়ে যায়। অসহ্য লাগে। তা প্রকাশ পায় কারো উল্টাপাল্টা লাগামহীন আচরণের মাধ্যমে। যে যা-ই বলুক, তুমি তো তুমিই।
দেখা গেছে, তুমি সেই সবুজ গাঁয়ের দুরন্ত প্রাণোচ্ছল বালিকাটির মতো সর্বত্র হেসে খেলে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করো। সকলের দ্বারে দ্বারে যাও সাবলিল হাসির উজ্জলতা নিয়ে। কখনো কারো জানালা দিয়ে দুষ্টুমি করে দেখো, কখনো কানামাছি খেলো, কখনো গোল্লাছুট! হঠাত্ কারো মাথায় হাওয়াভর্তি বেলুন ফাটিয়ে হাসতে হাসতে একাকার হয়ে যাও!ভালো কথা হলো এই, যোগাযোগের সমস্যা আক্রান্ত অগণন বাঙালি নারীর মধ্য থেকে বেরিয়ে এসেছো তুমি অনন্যা এক নারী। অনেক মানুষের ভীড়ে তোমার যোগ যোগ্যতা প্রশংসনীয়। সবাই তা পারে না। কেউ পারতে চায় না। আমাদের সমাজের যথেষ্ট মানুষের মন মস্তিষ্ক নানাবিধ সংস্কারাচ্ছন্ন। অধিকাংশ সঠিকভাবে ভালোবাসার রঙের বহু বর্ণিলতা শনাক্ত করতে পারে না। তাছাড়া গানকে বাণ ভাবে, বাণকে শান ভাবে। চিলে কান নিয়ে গেছে বললে চিলের পিছে দৌড়ায়। কানে হাত দিয়ে দেখে না আসলে চিলে কান নিয়ে যায় নি।আমি বিশ্বাস করি, তোমার কোন দুরভীসন্ধি নেই যোগাযোগের ক্ষেত্রে। তুমি কথা বলো, কথা শোনো, ভাব বিনিময় করো, আনন্দ শেয়ার করো। তুমি দেশের কথা বলো, দশের কথা বলো, তুমি ভালোবাসার কথা বলো। যারা তোমাকে তিরস্কারের বাণ মারে, তারা ভুল করে। যারা তোমার সর্বপ্লাবি মায়াকে ভুলভাবে নিয়ে অন্য মাত্রিক অধিক গহনে যেতে চায়, তারাও ভুল করে। এই দুই প্রকারের 'ওরা' আসলে নিজেদের শুণ্যতা নিজেদের দৈন্যতা নিজেদের দুর্বলতাই প্রকাশ করছে। কেউ নিজেই যদি নিজের পথে গর্ত খুঁড়ে রাখে আর সেই গর্তে নিজেই প'ড়ে হাত পা ভাঙ্গে, তার জন্য সে নিজেই দায়ী। অন্যকে দায়ী করার কোন মানে হয় না।
সুতরাং তুমি তোমার মতো করে হেসে খেলে বেড়াতে থাকো। কেউ যদি নিজেই নিজের সর্বনাশ ডেকে আনে তার জন্য তুমি দায়ী হবে কেন? তোমাকে মহিমাময়ী বা আনন্দময়ী হিসেবে দেখতে ভালো লাগে। তোমার ভালোবাসার বিক্রম নিত্য নতুন সুন্দর বিপ্লব নিয়ে আসুক। তোমাকে কেউ চিনে না, তোমাকে নিয়ে সন্দিহান। এই ব্যাপারটি একটা দার্শনিক সত্যের মতো। প্রতিটি মানুষ তার নিজের কাছেও অচেনা। তাই নিজের আচরণেও বিস্মিত হয়! আশ্চর্য হয়ে বলে, 'অনেক মানুষের ভীড়ে এই আমি আসলে কোন জন!'
তুমি জানো কি এই জগতে কে চালাক কে বোকা?
মানুষ কি তার দুঃখবোধ কিংবা আনন্দবোধের উপলক্ষ ঠিক সময়ে প্রকাশ করতে পারে? অথবা প্রকাশ করা উচিত কি? মানুষের দুঃখ ও আনন্দের সাথে বুদ্ধির প্রসঙ্গ কি জড়িত নয়?আনন্দ ও দুঃখ প্রকাশ করা দরকার বা ভালো। আবার প্রকাশ না-করাও প্রয়োজন কখনো। প্রকাশ পেলে জটিলতা দেখা দেয়। শত্রুপক্ষ আক্রমণের সূত্র পেয়ে যায়। প্রতিটি মানুষের শত্রু মিত্র আছে। শত্রুরা দুর্বল দিকগুলো খুঁজতে থাকে সব সময়। সচেতন মানুষ এ ব্যাপারে সতর্ক। একটু অসতর্কতা বড় বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। একটি ভুলের মাশুল জীবনভর দিতে হয়।মানুষের বুদ্ধির ব্যাপারটাও আপেক্ষিক কখনো কোন আনন্দ বা দুঃখের বিষয়গুলো যথাযথভাবে প্রকাশ করতে পারলেই লক্ষে পৌঁছা যায় অথবা ঈস্পিত সাফল্য আসে। আবার এই সাফল্য অন্য কোন ক্ষেত্রে অসফল হওয়ার কারণও হতে পারে। একই বিষয়ের দু'টি দিক। নেতিবাচক ও ইতিবাচক। এ ব্যাপারে বুদ্ধির যথার্থতা নিরুপন সম্ভব নয়। যে মানুষটিকে নিরেট বোকা ভাবা হয়, সেই মানুষটি অপক্ষোকৃত অধিক বুদ্ধিসম্পন্ন বলে স্বীকৃত মানুষটির চেয়ে অধিক সফল হতে পারে ক্ষেত্র বিশেষে।
আমি দেখি
চালাক মানুষটি সব ক্ষেত্রে চালাক নয়, বোকা মানুষটিও সব ক্ষেত্রে বোকা নয়। সকল মানুষের মধ্যে বোকামি আছে, চালাকিও আছে মাত্রা সাপেক্ষে। এবং ধরা খাওয়া থেকে বাদ পড়ে না কেউ। মন্ত্রী-মিনিস্টারের চুরিও ধরা পড়ে, গাঁয়ের গরু চোরও ধরা পড়ে, বাজারের পকেটমারও ধরা পড়ে, ধূর্ত রাজনীতিকের মুখোশও খসে পড়ে, ঘুষখোর আমলাকে একদিন হায় হায় করতে হয়, বুদ্ধিজীবিকে ক্ষেত্র বিশেষে বুদ্ধিহীন শনাক্ত করা সম্ভব হয়। সবাই সব ক্ষেত্রে সফল হয় না, সবাই সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয় না।
রবীন্দ্রনাথ 'নৌকাডুবি'তে বলেছেন একটা ফালতু কথা। বলেছেন, 'পুরুষের বুদ্ধি খড়গের মতো, শান বেশি না দিলেও কেবল ভারে অনেক কাজ করিতে পারে, মেয়েদের বুদ্ধি কলম কাটা ছুরির মতো, যতই ধার দেও না কেন, তাতে বৃহত্ কাজ চলে না।'মার্কিন পররাস্ট্র মন্ত্রী কন্ডলিজা রাইসকে রবীন্দ্রনাথের এই কথা শোনালে তার প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে, একবার ভাবুন! তবে হ্যাঁ, এ ব্যাপারে তার প্রতিক্রিয়া যা-ই হোক, কন্ডলিজার বুকেও জীবনের কোনো না কোনো ব্যর্থতার বেদনা নেই, এমন বলা যাবে না। বেচারি চির কুমারী!
আমি দেখি
উইনস্টন চার্চিল, হিটলার, মুসোলিনি, বুশ, ব্লেয়ার, সাদ্দাম, বাদশা ফাহাদ, খোমেনী, জেনারেল মোশারফ, জিন্নাহ গান্ধী, হাসিনা, খালেদা, এরশাদ, মেনন, গোলাম আজম, নিজামী, জেনিফার লোপাজ, মার্কস, লেনিন, এডওয়ার্ড সাঈদ, আইনস্টাইন, নেলসন মেন্দেলা, শেক্সপিয়র, বারট্রান্ড রাসেল, ভিনসেন্ট ভ্যানগগ, সালভাদল ডালি,এবং আমাদের বঙ্গভবনের দারোয়ান, এইসব মানুষগুলো চালাক মানুষ এবং সমান্তরালে বোকা মানুষও বটে! আর জর্জ হার্বাট বলেছিলেন, 'কেউ এতো বেশি চালাক হয় না যে, অন্য তাকে অতিক্রম করতে পারবে না।'
আর আমি?
হা হা হা। আমি তো মাঝে-মধ্যে পৃথিবীর সকল প্রেমের প্রসঙ্গ থেকে মুখ ফিরিয়ে মগ্ন চৈতন্যের অন্তরে গিয়ে নজরুলের গান শুনে শুনে নতুন হয়ে যাই! এই যেমন ধরো-
বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিস নে আজি দোল
আজো তার ফুল কলিদের ঘুম টুটে নি তন্দ্রাতে বিলোল.....
আর তুমি সকল বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে সূর্যের হাসি ফোটাবে এই প্রত্যাশায় থাকতে চাই অনন্তকাল হে বীরাঙ্গনা!!হ্যাঁ, তোমাকেই বলেছি এবং তোমাকে বলার মাধ্যমে সমাজের অজস্র 'তুমি'দেরও বলেছি! পরিশেষে সেই চিরন্তন পংক্তিগুলো-
প্রথম যেদিন তুমি এসেছিলে ভবে
কেঁদেছিলে একা তুমি হেসেছিলো সবে
এমন জীবন তুমি করিবে গঠন
মরণে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভূবন

আমাদের মূর্খতা আমাদের কূপমন্ডুকতা

মানুষ রাজনীতি করে। প্রাধান্য বিস্তারের লড়াই করে। মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণ দিতেও প্রস্তুত হয়। জঙ্গলের বন্য প্রাণীরাও ক্ষমতার লড়াই করে। ওদের লড়াই আর মানুষের লড়াইয়ের মধ্যে পার্থক্যটা কি? পার্থক্যটা কি সাংস্কৃতিক নয়? জঙ্গলের প্রাণীদের সংস্কৃতি পুরোটাই প্রাকৃতিক। মানুষেরও প্রাকৃতিক সংস্কৃতিক আছে। পাশাপাশি আছে প্রজ্ঞাজাত সংস্কৃতি। মানুষের সংস্কৃতি চর্চার পেছনে জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টিও ক্রিয়াশীল। একটা নীতি নৈতিকতাকে ধরে মানুষ সামাজিকভাবে নিরাপত্তা বলয় তৈরী করতে চায়। কারণ যেখানে অস্তিত্ব আছে সেখানে অস্তি্ত্বের সংকট আছে। সকল প্রকার প্রাণী, মানুষসহ, অস্তিত্বের সংকটে ভোগে। মানুষ মাথা খাটিয়ে সংকট উত্তরণের উপায় উদ্ভাবনের চেষ্টা করে। অন্য প্রাণীরা মানুষের মতো মাথা খাটাতে পারে না।শেষ রক্ষা কারো হয় না। তবু মানুষ একটা গড়পড়তা জীবনকালের হিসাব করে। ওই জীবনকালটুকু নিরুপদ্রব রাখার জন্য মানুষকে মাথা ঘামাতে হয়। এইজন্য মানুষ ঘরের আশ্রয় নেয়, সমাজ সংসার বানায়, দেশ রাষ্ট্র বানায়। এতেও সমস্যা দেখা দেয়। পক্ষ বিপক্ষের খেলা শুরু হয়। তখন ভারসাম্য রক্ষা জরুরী হয়ে পড়ে। ব্যাক্তিকে সমবায়ের আশ্রয় নিতে হয়। সমাজকে সংঘটিত হয়। দেশকেও অন্যান্য দেশের সাথে মিলিত প্রয়াস নিতে হয়। বিশ্বের জাতি-রাষ্ট্রগুলো এখন কোন না কোন ভাবে সমবায় বদ্ধ নইলে সুপার পাওয়ারগুলো গিলে খাবে। বিশ্বায়নের ফর্মুলা দেখিয়ে যতই বিশ্বগ্রামের কথা বলা হোক না কেন, সুপার পাওয়াগুলো নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

২.
সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে হলে একজন মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর নিশ্চয়তা থাকতে হবে। আমরা সবাই জানি, মৌলিক চাহিদাগুলো হলো, খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা চিকিতসা।একটি জাতির, একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ মানুষ যদি এই মৌলিক চাহিদা সংকটে থাকে, তাহলে ওই জাতির প্রধান সংকটই হলো ঐ পাঁচটি মৌলিক চাহিদার সংকট।আমাদের দেশটি জন্মের পর থেকেই এই সংকটে জর্জরিত। দুঃখজনক ও ক্ষুব্ধ হওয়ার বিষয় হলো এই, সেই জন্মলগ্ন থেকেই যারা বিদ্যায় বুদ্ধিতে অর্থে বিত্তে সামর্থবান, যারা শাসন করেছেন, যারা জাতির বিবেকের আসনে অধিষ্ঠিত, তারা এই জাতির প্রধান সংকট দূরীকরণে ব্যর্থ হয়েছেন। পাঁচটি মৌলিক সমস্যার একটিরও নিশ্চয়তা অর্জন সম্ভব হয় নি। কারো কারো ব্যাক্তিক প্রয়াস কিংবা দলীয় প্রচেষ্টা কিছু কিছু ক্ষেত্রে যত্সামান্য অগ্রগতি দিয়েছে মাত্র। কিন্তু জাতীয় সংকটের সামনে সে সব সাফল্য উল্লেখযোগ্য হতে পারে না। কেননা অধিকাংশ মানুষ সংকট কবলিত।দলীয় সংকীর্ণতা, কূপমন্ডুকতা, কুসংস্কারাচ্ছন্নতা, স্বার্থান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা আমাদের এতোটাই প্রবল যে, আমরা আজো জাতীয় সমস্যা, জাতীয় সংকট উত্তরণের উপায় উদ্ভাবনে ঐক্যবদ্ধ হতে পারছি না।
আমাদের রাজনীতিকেরা বছরের পর বছর ধরে কিছু ইস্যু জিইয়ে রাখছেন উদ্দেশ্যমুলকভাবে। যার ফলে জাতি বহুধা বিভক্ত। জাতির পিতা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, স্বাধীনতার ঘোষক, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, গণতন্ত্র না সমাজতন্ত্র না অন্য কিছু, ইত্যাকার বিষয়গুলোর ব্যাপারে এই সংকটাপন্ন জাতি কেন ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না? কেন গরীব মানুষগুলোকে বছরের পর বছর ধরে খেলনার পুতুলের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে? কেন তাদের ভোট নিয়ে তাদেরকে ঠকানো হয়? কেন শিক্ষাঙ্গনগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত রাখা হলো না বিগত বছরগুলোতে? কেন তরুণদের বেকারত্ব দূরিকরণে ঐকমত্য হয় না? দেশের সূর্য সন্তানেরা অন্যদেশে গিয়ে অন্যদেশকে আলোকিত করছে। দেশে কেন তাদের মুল্য নাই?কেন জামায়াত নেতারা আজ মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেন? মুক্তিযুদ্ধের সময় গোলাম আযম, নিজামী মুজাহিদদের ভূমিকা পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো। ধর্ম রক্ষার জন্য তার উদ্ভট স্বপ্নে বিভোর ছিলো। এখন তারা তাদের নিজস্ব ইসলামী ব্যাখ্যা দিয়ে কেনো জাতীয়তার প্রসঙগটিকে ঘোলাটে করেন। ১৯৭১ থেকে ৭৫ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অনেক ভুল ছিলো। তাই বলে তাঁর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বকে খাটো করে দেখার সুযোগ নাই। কেন জাতির পিতার কথা উঠলেই ইসলামী জাতীয়তাকে সামনে নিয়ে আসা হবে? (ইসলামী?দের দ্বারা)। রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের জাতীয়তা সারা বিশ্বে একটি স্বীকৃত বাস্তবতা। ধমীয় জাতীয়তা তো আছেই তার জায়গাতে। প্রবাসে দুই জাতীয়তার পরিচয় দিতে হয়। এক ধমীয়,দুই দেশীয়। ভাষাভিত্তিক ও ভৌগলিক জাতীয়তার শত দূর্বলতা থাকা সত্তেও দেশভিত্তিক জাতীয়তাকে মেনে নিতেই হবে। নইলে দেশপ্রেমের প্রশ্ন আসবেই।
ইতিহাস তো ভরে আছে ইসলামি(?) রাজনীতির পতাকাবাহীদের দ্বারা ছড়ানো ঘৃণা আর বিদ্বেষে। সেই টু নেশন থিওরীর পক্ষে উপমহাদেশের ততকালিন বাঘা বাঘা মাওলানারা একমত হতে পারেন নি। ভারতের দেওবন্দকেন্দ্রিক বেশুমার মাওলানারা টু নেশন থিওরীর বিরোধিতা করেছিলেন। দুই পক্ষের কাছেই কোরআন হাদিস ইজমা কিয়াসের দলিল। তবু কেন এই বিদ্বেষ রক্তপাতের ধারাবাহিকতা? আমার বুঝে আসে না খোলাফায়ে রাশেদিনের সময়কার ইতিহাস কেন এতো রক্তাক্ত? সেখানে কি 'হক' আর 'বাতিল'র লড়াই ছিলো? ওখানে কারা সত্যের পতাকাবাহী আর কারা মিথ্যার পতাকাবাহী ছিলেন? সাহাবায়ে কেরামের উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট তা কোরআনে বলা হয়েছে। ( মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ, ওয়াল্লাজিনা মায়াহু.........)(ব্যাপারগুলো কেউ বুঝিয়ে দিলে উপকৃত হই।)ইয়েমেন থেকে উত্তরদিকে সিরিয়া আর পশ্চিমদিকে আটলান্টিকের পূর্বপারের দেশ মরক্কো পর্যন্ত বিস্তৃত আরবীভাষীদের বিশাল ভূখন্ড অনেকগুলো রাষ্ট্রে বিভক্ত। খুব কাছ থেকে দেখছি, এই বিভিন্ন রাস্ট্রের আরবীভাষীদের নিজস্ব দেশীয় মায়াটান খুব শক্ত। তাদের কাছে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তার গুরুত্বের চাইতে দেশভিত্তিক জাতীয়তার গুরুত্ব বেশি। ওখানেও 'আবু আল ওয়াতান' বা জাতির পিতারা আছেন।
যাক্ অপরদিকে আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হর হামেশা যারা সরব, তাদের ছায়ায় ধর্মবিরোধী কিছু চরমপন্থী লোক কেন আশ্রয় পায়? অতি ধার্মিকতা আর তীব্র ধর্ম বিরোধিতা একই মুদ্রার এপিট ওপিট। এই দু'পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ অনিবার্য। বাঙালি সংস্কৃতির মূলে আছে মরমী ভাবধারা, যা মোটেই ধর্ম বিরোধী নয়। আর নাস্তিকতা হলো আলোচনার কেন্দ্রে আসার বেইসলেস আস্ফালন। কেননা 'হিউম্যান জিনস আর কনজেনিটেলি বিলিভারস'। আর নাস্তিকতার সাথে বাঙালির শিকড়ের কোন সম্পর্ক নেই। তবে কেন ওরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের মায়াবী আদরে লালিত হবে? ব্যাক্তি ধর্মহীন থাকতে চায় থাকুক। ব্যাক্তি অতি ধার্মিক হতে চায় হোক। ওরা রাজনীতিতে আসলেই সমস্যা। অন্যের উপর তাদের দর্শন, তাদের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার জোর জবরদস্তি শান্তি বিনষ্ট করবেই।কোরআন একটি মাল্টিলেয়ার্ড মিনিংফুল ঐশি গ্রন্থ। বহুমাত্রিক এর ব্যাঞ্জনা। এই গ্রন্থের শাব্দিক অর্থ নিয়ে কাউকাউ করার কোন মানে হয় না।
ধর্ম বিদ্বেষ মানে সালাতে মগ্ন মানুষটিকে ধাক্কা মারা; ধর্ম বিদ্বেষ মানে শ্রীকৃষ্ণের বন্দনায় বাধ সাধা; ধর্ম বিদ্বেষ মানে 'জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর'এর ভেতর ডুবে থাকা সুবোধ মানুষটিকে আঘাত করা; ধর্ম বিদ্বেষ মানে রবিবাসরীয় চার্চের সারিতে ঢিল মারা; ধর্ম বিদ্বেষ মানে মহাবৈশ্বিক সিস্টেমের বিরুদ্ধে বিষোদগার। ধর্ম বিদ্বেষ মানে একটা বিশৃঙ্খলা সৃস্টি করা।
রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু জাতীয় সমস্যাগুলোর সমাধানে আন্তরিক না- হওয়া কি আমাদের মূর্খতা আমাদের কূপমন্ডুকতা নয়?বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আমাদের দেশে বিনিয়োগ করে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার কামাচ্ছে। আর আমাদের সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে চুরি চুরি চুরি এবং রাজনীতি। অর্থনীতির একটা কথা আছে- যেখানে মানুষ আছে, সেখানে বাজার আছে, সেখানে অফুরান সম্ভাবনা আছে, সেখানে অর্থ বিত্তের সম্ভাবনা আছে।বর্তমান বিশ্বের অনেক দেশ আছে যাদের জনসংখ্যা আট দশ পনর বিশ তিরিশ মিলিয়ন। ওরা এই জনসম্পদ নিয়েই সমৃদ্ধ। আর আমাদের জনসংখ্যা এক শ' ছাব্বিশ মিলিয়ন প্রায়। তবু আমরা দারিদ্রতার অতলে অন্তরীণ!!

Friday, November 23, 2007

কবি'র ক্ষমতা

অলংকৃত শব্দ কিংবা বাক্যের ভেতর থেকে
সুন্দর বেরিয়ে এলে তুমি যেতে পারবে না কবিকে রেখে
একা। তোমার পিছু নেবেন কবি পথে পথে
যতদূর তুমি যাবে ততদূর পর্যন্ত কোনোমতে
হলেও তোমার সাথে থাকার চেষ্ট করবেন কবি।

কবিকে তুমি বিজ্ঞানী বলতে পারো
এইজন্যে যে নিয়ম-সূত্রের হিসেব ছাড়া তারও
আবিস্কারের ক্ষমতা আছে। সারাক্ষণ
শব্দ ও বাক্যের অন্তর খুঁড়ে খুঁড়ে তিনি হন
সুন্দরতম ভাষা ও বোধের উদ্ভাবক।

কবি'র ভাষা কিংবা শব্দ আততায়ী হতে পারে
এবং সহজেই মনের দরোজার কড়াও নাড়ে।

'মনের মানুষ'র প্রেম/সারওয়ার চৌধুরী

'ঠিক যে দরবেশও খানা পিনা করে, তুমি যে-বস্তু খাদ্য থেকে গ্রহন করো দরবেশেরও সেটা দরকার
কিন্তু মানুষের আহার থেইকা দরবেশ অন্য যে বস্তু সংশ্লেষণ করে তুমি তার সন্ধান এখনও জানো না
তোমার খাদ্য একদিকে রূপান্তরিত হয় জীব দেহে আর অন্যদিকে পরিত্যক্ত হয় মিউনিসিপ্যালিটির বর্জ্যে
অথচ দরবেশের আহার রুপান্তরিত হয় আল্লার নূরে-মানুষের খাদ্য থেকে সালোক সংশ্লেষণের সেই তরিকা তুমি জানো না।
সিদ্ধির মাত্রা অনুযায়ী দরবেশের আহার কমে, তার আকাংখা শুকনা চামড়ার মতো খইসা যায়

অথচ ফরহাদ তোমার শরীর কেন মোটা হইতে থাকে? গালে চিকনাই? কামনা বাসনা শেষ হয় না?
দেখো, দরবেশ যখন মরে তুমি তখনো তাকে জ্যান্তই ইহলোকে ঘোরাফিরা করতে দেখ-এই এক মৃত্যু!
আজরাইলের জন্য দরবেশ অপেক্ষা করে না, অথচ জবরদস্তি ছাড়া আজরাইল তোমার জান নিতে পারবো না।
.............
তুমি খাদ্য খাইলেই কেন সেটা হিংসার শরীর হয়, তোমার নিঃশ্বাস কেন পরিণত হয় কামে এবং ক্রোধে?

অথচ দরবেশ একই আহার পরিণত করে নিহেতু প্রেমে-কীভাবে সেটা ঘটে একবারও তা ভাইবা দেখলা না।'

প্রেম/ফরহাদ মজহার

দরবেশ কি মানুষ? হ্যাঁ মানুষ। সাধারণ মানুষ না। অসাধারণ। সাধারণ মানুষের সারি থেকে অসাধারণের সারিতে উন্নীত। কারো ইনবর্ন ফ্যাকাল্টিও থাকতে পারে। উত্তরণ ঘটে সংস্কারের ধারায়। ধৌতকরণ প্রক্রিয়ার অবশেষ ময়লামুক্ত-বিশুদ্ধ। বাংলার ভাব জগতের ভাষায় যাকে বলা হয় 'সহজ মানুষ'। এই 'সহজ মানুষ' দরবেশ। অধম থেকে উত্তমে রুপান্তরিত। অধমের মানবীয় জীবনাচার উত্তমের মধ্যে থাকা সত্তেও অধম থেকে আলাদা।
সিগমুন্ড ফ্রয়েডের ভাষ্যকার জ্যাক লাকাঁ মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন বলে জানা গেলো। এগো ও সাবজেক্ট। সাবজেক্টকে জার্মান ভাষায় বলা হয় 'সুবিয়েক্ট'। আর ফরাসি ভাষায় 'সুজে'। এই 'সুজে' শব্দটির সাথে কাকতালীয়ভাবে বাংলার 'সহজ মানুষ' এর মিল আছে। (এই তথ্য পাওয়া গেছে পন্ডিত লেখক সলিমুল্লাহ খানের একটি লেখায়।)
আসল কথা হলো, দরবেশ ইন্দ্রিয় দমনে তত্পর। সুকঠিন যোগ-সাধনে মগ্ন। তাই তাঁর খাদ্য সালোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে বিশেষ আলোকের রূপ ধরে। তিনি সারাক্ষণ 'অধরা মানুষ' ধরার সাধনায় ডুবে আছেন। তাঁর মধ্যে সাধারণ মানুষের মতো দৈহিক কাম তৃষ্ণার পাশাপাশি 'মনের মানুষ'কে ধরার তৃষ্ণা ক্রিয়াশীল। ধীরে ধীরে, ধাপে ধাপে দরবেশের ষড়ঋপু লুপ্ত হতে থাকে। আর নিজের সাথে নিজের দেখা হয়ে যায়। এই অবস্থায় দরবেশ 'জ্যান্তে-মরা'। এ প্রসঙ্গে আহমাদ ছফা'র 'ওঙ্কার' গল্পের বোবা বউয়ের 'বাংলা' বলেই জ্ঞান হারানোর ব্যাপারটি 'সহজ মানুষ'র প্রতীকী ব্যাঞ্জনা।

Wednesday, November 21, 2007

এক আহত পথিকের কথা


জিউস কন্যা আর্টিমিসের তীব্রতা ধার করে এনে

ভালোবাসা তার বক্ষে মেরেছে কথার তীর, বিষমাখা...

ভূপাতিত পড়ে থাকা পৃথিবীর পথে অচেনা পথিক
এতোটুকু শুশ্রুষা দেয়ার কেউ নেই
কারো জানা নেই তার আহত হওয়ার খবর
কেউ জানে না এই পথিকের হৃদপিন্ড বিক্ষত, রক্তাক্ত

ভালোবাসার জন্য মরুভূমির পথে দিন রাত যদিও
পথিক বঙ্কিম পথে যেতে পারে না কিছুতেই
আর্টিমিস-ভালোবাসা তা টের পেয়েছিলো শতভাগ

যে-ভালোবাসার জন্য পথিক কেঁদেছে নিভৃতে একাকি
বছরের পর বছর, দিনের পর দিন
এই কথা জানে পৃথিবী ও তার কক্ষপথের ঘূর্ণন
কিন্তু মানুষেরা জানে না
সেই ভালোবাসা আর্টিমিস হয়ে মেরেছে তীর
যখন সে পরিশ্রান্ত-ক্লান্ত বহুবিধ দুঃখের প্রান্তরে
যন্ত্রণা কাতর পথিকেরে আমি দেখে বেদনা ভারাক্রান্ত হয়েছি

এবং শুনিয়েছি কাজী নজরুল ইসলাম-
'মুসাফির মোছরে আঁখি জল ফিরে চল আপনারে নিয়া...

Tuesday, November 6, 2007

তুমি কোন কাননের ফুল, পর্ব-৩

মত্স্যকন্যা বললো, যাক ওসব কথা। বলুন কেমন আছেন আপনি?ভালো। -বলি আমি।সে প্রশ্ন করে-গত রাতে ঘুম হয়েছিলো?আমার জবাব-হ্যাঁ, তবে প্রায় এক ঘন্টা বিছানায় এপাশ ওপাশ ফিরেছি। বারবার মনে পড়েছে- বিস্ময়কর এক মত্তস্যকন্যার সাক্ষাত পেয়েছি। ব্যাপারটা কি! মত্তস্যকন্যা তাইলে শুধু ফ্যান্টাসি না। বাস্তব। বিস্ময়কর বাস্তব!সাগরকন্যা বললো-আমার দেরি হওয়াতে আপনি বিচলিত হয়েছিলেন?আমি বলি-হ্যাঁ। একবার মনে হয়েছিলো, হয়তো আর আসবেন না। আপনি পূর্ণ মানবি রূপ ধারণ করতে পারবেন না। খামাখা বলেছিলেন। আচ্ছা, ইয়ে, আপনার কি মানবী রূপে মানুষের সমাজে স্থায়ী হওয়ার বাসনা হয় না?-হয়। কিন্তূ সম্ভব না।-কেন?-বিশেষ ক্ষমতাটা সীমিত। রিমোট কন্ট্রল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত মনে হয়।-রিমোট কন্ট্রল কার হাতে?-বলতে পারেন খোদার হাতেই।-মানবী হওয়ার প্রক্রিয়াটা কি রকম?-ইচ্ছে করলেই হতে পারি। শর্ত হলো, ইচ্ছেটার পেছনে মহত উদ্দেশ্য থাকতে হবে। কখনো নির্ভেজাল বিনোদনের চান্স পাই।-নির্ভেজাল বিনোদন মানে?-মানে হলো, যে বিনোদনের ফলে কারো কোন প্রকার ক্ষতির সম্ভাবনা জিরো। এই যেমন ধরুন, আপনার সঙ্গে কথা বলার জন্য মানবী রূপ ধারণ করার পেছনে মহত উদ্দেশ্য এবং বিনোদন দুটাই ছিলো।-মহত উদ্দেশ্যটা কী?-ওরে বাব্বা, ওইটা তো এখনি বলা যাবে না। এতো জলদি উপসংহারে যেতে চান?-না না ঠিক আছে। আপনার মর্জি। উপসংহার দেরিতেই আসুক।আমি জিগ্যেস করি-আচ্ছা, এই যে বললেন, মানবীরূপে সীমিত সময় পর্যন্ত থাকার কথা, অর্থাত্ আমি জানতে চাইছি, সীমিত সময়ের সীমা টের পান কীভাবে?সে বলে-সময় শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে সিগন্যাল পাই। সিগন্যালটা এ রকম,- 'আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি, মত্স্যকন্যা রূপ ধারণের জন্য প্রস্তুত হও এবং মনে মনে ইচ্ছেটা শাণিত করো।' একবার আমি, দেরি করতে চেয়েছিলাম। দেখি, আমার সমস্ত শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। মনে হলো, আমার শরীর কিছুক্ষণ পর বিস্ফোরিত হবে। আমি তাড়াতাড়ি মত্স্যকন্যা রূপ ধারণের ইচ্ছে জাগাই আমার মস্তিস্কে।তখন, মানে সেই দিনগুলোতে, আমরা, আমি আর আমার মা,প্রাচিন হেলিক নগরীর একটি দালানে থাকতাম। দালানটা কোথায় জানেন?আমি বলি-আপনি ভূমধ্যসাগরে তলিয়ে যাওয়া আটলান্টিস নগরীর কথা বলছেন?সে বলে-হ্যাঁ, দার্শনিক প্লেটো ওটাকে আটলান্টিস বলতেন। খৃষ্টপূর্ব ৩৭০ সালের কথা, তখন গ্রীক সভ্যতার সুবর্ণকাল। আধুনিক সমাজ সংস্কৃতি সমৃদ্ধ আচিয়ান লীগ কনফেডারেশনের রাজধানী ছিলো আটলান্টিস। প্রত্নতাত্তিকরা একে নাম দিয়েছেন হেলিক। এই নগরী, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ভূমিকম্প ও সুনামীর আঘাতে সমুদ্রের তলদেশে চলে যায়।আমি জানতে চাই-আপনি লেখাপড়া করলেন কীভাবে? আপনার অভিভাবক কে ছিলেন?পূর্ণ মানবী মত্স্যকন্যা বললো-আমাকে এখন মত্স্যকন্যা ডাকার দরকার নাই। আমার সমস্যা হবে। আপনি আমাকে 'ম' বলে ডাকবেন।-'ম' মানে কী?-'ম' মানে ম। ম অর্থহীন। আবার ম অনেক প্রকার শব্দের অদ্যাক্ষর। যার যা খুশি মনে করুক। আর অভিভাবক তো বাবাই ছিলেন।-বাবার কাছে গেলেন কীভাবে?গম্ভীর হয়ে ম বলতে শুরু করলো-মা মত্স্যমানবী হয়ে সমুদ্র গর্ভে চলে যাওয়ার পর, বাবা মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন নি। দু'একদিন পর পর শহর ছেড়ে নিকটবর্তী গ্রামে চলে যেতেন। গ্রামের পথে পথে মাইলের পর মাইল হাঁটতেন একা একা। বাবা ছিলেন শিক্ষক। কলেজের অধ্যাপক। আত্মীয়-স্বজন বন্ধুরা বাবাকে বুঝাতেন। পরামর্শ দিতেন- 'আপনি পুরুষ মানুষ। এতোটা ভেঙ্গে পড়া মানায় না। আবার বিয়ে করুন। সংসারী হোন।' বাবা মাথা নেড়ে না করতেন। কারো প্রশ্নের দীর্ঘ জবাব দিতেন না। সংক্ষিপ্ত, হাঁ অথবা না। একবার শুধু তার প্রিয় বন্ধুটির এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন-'তোমরা আমাকে প্রশ্ন করো না। আমি এই জগতের লীলা কিছুই বুঝি না। আমি এক মূর্খ, বেওকুফ।' আসলে বাবা ছিলেন একজন মেধাবী অধ্যাপক। কলেজের ছাত্রদের প্রিয় শিক্ষক। ইতিহাস পড়াতেন। খুব মনোযোগে ছাত্ররা তাঁর ক্লাশ করতো। আমি একদিন শুনি, বাবা তার বন্ধুকে বলছেন, -'এই যে এতোটা মনোযোগে ছাত্রদেরকে ইতিহাস পড়াই, ওরাও খুব মনোযোগে বক্তৃতা শুনে, নোট করে। এই শিক্ষার কোন মানে নেই আমি দেখতে পাচ্ছি। কেননা ইতিহাস থেকে তো মানুষ শিক্ষা নেয় না। যদি শিক্ষা নিতো, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যুদ্ধ করতো না, রক্তপাত করতো, হত্যা ধর্ষণ ষড়যন্ত্র করতো না। বার্নার্ড শ এর কথাটা ফেলে দেয়া যায় না। সভ্যতার ইতিহাসেই দেখো, ইতিহাস ভালো জানেন এমন অজস্র বিদ্বান লোকেরা জঘন্য ইতিহাসের জনম দিয়েছে।' যাক বললো, ও হ্যাঁ বাবার অভিভাবকত্বের কথা বলছিলাম। মা মত্স্যকন্যা হয়ে যাওয়ার পর, প্রতিমাসে একবার বাবা আসতেন সমুদ্র সৈকতে। সন্ধ্যার সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে, মনে মনে মাকে ডাকতেন-'তুমি আমাকে দেখা দিয়ে যাও।' সূর্য ডুবে গেলে, আঁধার ঘন হতে থাকলে, সৈকতে বেড়াতে আসা মানুষেরা, দম্পতিরা, প্রেমিক প্রেমিকারা, আশ্রয়মুখো হতে শুরু করে। বাবার ঘরে ফেরার সময় হয় না। বাবা বসে থাকেন একটা বালুর ঢিবিতে। সমগ্র জনপদে অন্ধকার প্রগাঢ় হলে মা উঠে আসেন সমুদ্র গর্ভ থেকে। বাবার মনের অন্ধকার দূর হয়। বাবা দেখতে পান, আলোকবর্তিকার মতো আমার মায়ের মুখমন্ডল। দু'জনে কথা হয় পাঁচ/সাত মিনিট। মা এর বেশি থাকতে পারেন না পৃথিবীর প্রকৃতিক পরিবেশে। মা বাবা কথা বলার সময় ওদের মাঝখানে দূরত্ব থাকে প্রায় দশ হাত। বাবা আরো কাছে গিয়ে মায়ের মুখমন্ডলে হাত বুলাতে চাইলে মা মানা করেন। জানিয়ে দেন, আরো কাছে আসলে মায়ের মারাত্মক ক্ষতি হবে। বাবা থামেন। জিগ্যেস করেন, 'তোমার চেহারা এতো আলোময় হলো কি করে?' মা বলেন, 'আমি জানি না। খোদা ভালো জানেন।' এইভাবে কিছু কথাবার্তা হওয়ার পর মা বিদায় নেন বাবার কাছ থেকে।অতঃপর তিন মাসের মাথায় যেদিন সাক্ষাত হয় বাবার সঙ্গে, সেদিন মা আমাকে সঙ্গে নিয়ে আসেন সমুদ্র সৈকতে।আমি তখন পনর দিনের শিশু। বাবা আমাকে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে কাঁদেন। ডুকরে ডুকরে কাঁদেন। কান্না থামাতে পারেন না। মা বলেন, 'কান্না থামাও, কথা শোন। মেয়ে মত্স্যকন্যা হয়েই জন্ম নিয়েছে। তবে সম্পূর্ণ আলাদা প্রকৃতির এক সাগরকন্যা হবে। সমুদ্রজগতের বাদবাকি মত্স্যকন্যাদের মতো হবে না। আমি মহান প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা করেছি তাকে বিশেষ ক্ষমতা দেয়ার জন্য। তিনি আমার প্রার্থনা মঞ্জুর করেছেন মর্মে স্বপ্নে জানতে পেরেছি। এই বিশেষ ক্ষমতা বলে সে পৃথিবীর যে-কোন জনপদে পূর্ণ মানবী রূপে মানুষের সমাজে যেতে পারবে। স্কুল কলেজে লেখাপড়া করতে পারবে। তুমিই ওর অভিভাবক থাকবে। তবে নামে মাত্র। তোমার এক টাকাও খরচ করতে হবে না। শেরাটন হোটেলের পাশের পার্কে ঘুরতে ঘুরতে, হাঁটতে হাঁটতে ম এর কথা শুনছিলাম খুব মনোযোগি ছাত্রের মতো। ওর কথা বলার ভঙ্গিও চমতার। গলার আওয়াজও মধুর। সম্মোহন আছে। সে জানালো, ছয় বছর বয়সে বাবার অভিভাবকত্বে স্কুলে ভর্তি হয়। তার মা তার বাবাকে বলে দিয়েছিলেন ওর মত্স্যকন্যা পরিচয় গোপন রাখতে। বিশেষ ক্ষমতার জন্যই এই গোপনীয়তা।(সকল বিশেষ ক্ষমতার সাথে গোপনীয়তার একটা সম্পর্ক আছে।)ওর বাবা আত্মীয় বন্ধুদের বলেছিলেন, এই মেয়ে তার পালক মেয়ে। ফুটন্ত ফুলের মতো মেয়ে। ঘরে বাইরে সকলেই মায়া করে। ছাত্রী হিসেবেও মেধাবী। সহপাটিদের কেউ কেউ হিংসা করে। সে মনে মনে বলে- আমার প্রতি হিংসা বা ঈর্ষা করে তো কারো লাভ হবে না।স্কুলের সবগুলো পরীক্ষায় সে প্রথম হতো। একদিন তার এক সহপাটি জিগ্যেস করেছিলো, সে রাতে কয় ঘন্টা পড়ালেখা করে। সে জবাবে বলেছিলো, 'এক সেকেন্ডও না। পড়ালেখা করার জন্য স্কুলে আসি, স্কুল ছুটি,পড়ালেখাও ছুটি।' স্কুল কলেজ ছুটি হলে ছাত্র ছাত্রীরা ফিরে যেতো যার যার বাড়ি ঘরে। ম তার বাপের বাড়ির পথে কিছুণ হাঁটতে হাঁটতে এক সময় সুযোগ বুঝে হাওয়া হয়ে যায়। মুহুর্তেই সে চলে গেছে বঙ্গোপসাগরে তার মায়ের ক্ষণস্থায়ী সাগরালয়ে।আমি জানতে চাই-সাগরালয় মানে?ম বলে-সাগরালয় মানে সমুদ্র গহনের বাড়ি।সমুদ্র তলায় বাড়ি আছে নাকি? কী রকম? কে বানিয়ে দেয়? - আমি জিগ্যেস করি।সে বলে-আমরা বানাই। দেখতে সুন্দর না। তবু নিরাপত্তার কাম চলে। সমুদ্র তলায় মিলিয়ন মিলিয়ন বাড়ি ঘর আছে।আমার প্রশ্ন-কী দিয়ে বানান বাড়ি?সে জানায়-সমুদ্র মহাসমুদ্রের তলদেশে কিসের অভাব? সব কিছু পাওয়া যায় জলময় জগতের প্রাণীগুলোর জন্য। প্রাণী মানে লিভিং ক্রিয়েচার তো সমুদ্র জগতেই বেশি। এই গ্রহের, এই পৃথিবীর প্রাণীজগতের শতকরা সাতান্নব্বই ভাগের আবাসস্থল হলো মহাসমুদ্রের মহাগহন এলাকা। আপনার তো জানা আছে, ভূপৃষ্ঠের তিন ভাগের দুই ভাগ হলো জলজ এলাকা, মহাসামুদ্রিক এলাকা। আমি ও আমার মা পাথর ও কল কারখানার ধ্বংসাবশেষ দিয়ে ঘেরাও করে অস্থায়ী ঠিকানা বানাই। ওটা বানাই এমনি মজা করার জন্য। আমরা নিরাপদে ঘুমাই সাগর-পাহাড়ের গুহায়। ঘুমানোর আগে গুহার মুখে সাগর-বনের ঝোপ ঝাড় রেখে দেই। যাতে হিংস্র সন্ত্রাসী তিমি কিংবা অক্টোপাসেরা মনে করে- এখানে কোন গুহা নেই। আটলান্টিকের খুনি তিমিগুলো মারাত্মক ভয়ংকর। ওরা দল বেঁধে অভিযান চালায়। ওদের রাজ্যে ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত।ওদের রাজ্য মানে? - আমি প্রশ্ন করি।ম বলে-ওদের দেশ। ভারতের চাইতে বিশাল এলাকা জুড়ে আছে আটলান্টিকে ওরা। ওই বিস্তৃত অঞ্চল হলো ওদের দেশ। সাগর মহাসাগরগুলোতে সামুদ্রিক প্রাণীদের দেশ বিভক্ত আছে। স্বাধীন পরাধীন দেশ আছে। সামুদ্রিক জায়েন্ট কিলাররা অন্যদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে। হত্যা ধর্ষণ করে। মহাসাগরগুলোর বিস্তারিত অন্তরদেশে কুবলাই খান, চেঙ্গিস খান, হালাকু খান, হিটলার, মুসোলিনি, সাদ্দাম, বুশ, ব্লেয়ারদের মতো প্রাণী আছে।আমার জানতে ইচ্ছে করে-নিউটন,আইনস্টাইন,ব্রাট্রান্ড রাসেল, মিলটন, শেক্সপিয়র, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দদের মতো কেউ নেই?ম বললো-না না, ওদের মতো কেউ নেই। থাকলে আমার মোটেই ইচ্ছে হতো না পূর্ণ মানবী হয়ে মানুষের সমাজে থেকে যেতে। আর টাইটানিক নামের বিশাল জাহাজটিও আটলান্টিকের তলায় পড়ে থাকতো না। ভাঙ্গাচোরা ওই জাহাজটিকে সন্ত্রাসী তিমি আর অক্টোপাশেরা খুন খারাবীর দূর্গ হিসাবে ব্যবহার করতে পারতো না।আমি বলি-আটলান্টিক তো ইংরেজি 'এস' অক্ষরের মতো। কোথাও আটাশ হাজার ফুট গভীর, কোথাও সতের হাজার ফুট, আর কোথাও বারো হাজার ফুট গভীর।ম মাথা নেড়ে সায় দিলো-ঠিক বলেছেন।আমি ম এর পাশে হাঁটতে হাঁটতে ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দৃষ্টি দিয়ে ব্রাশ করি। ম আমার দিকে না তাকিয়ে দূর নক্ষত্র খচিত আকাশের দিকে দৃষ্টি রেখে হাঁটতে হাঁটতে বললো--কি দেখছেন কি ভাবছেন বলবো?-বলুন।-ভাবছেন 'একেবারে লেটেস্ট ফ্যাশনের পোশাক পরা এই সুন্দরী নারীকে কাল দেখলাম মত্স্যকন্যা রূপে আজ দেখছি পূর্ণ মানবী রূপে। বিস্ময়কর! সত্যি বিস্ময়কর লীলা! ঠিক বললাম কী?আমি স্বীকার করি-হ্যাঁ ঠিক তাই। আচ্ছা, ইয়ে, স্কুল কলেজে লেখাপড়া করলেন কী উদ্দেশ্যে? চাকরী-------পড়ালেখা করেছি, করি এবং করবো শুধু জ্ঞানক্ষুধা মিটানোর জন্য। চাকরী কিংবা রোজগারের দরকার নেই আমার। সমুদ্র জগতে বেশির ভাগ সময় থাকি, খাই, ঘুমাই। ওখানে কোন কিছু কিনে খেতে হয় না। বাজার নাই, সরকার নাই, সমাজ নাই; কূটনীতি নাই, দুর্নীতি নাই; ইন্টারনেট নাই; ব্লগিং নাই; গালাগালি নাই; নারী পুরুষের বিশেষ অঙ্গ প্রদর্শন নাই; পাসওয়ার্ড হ্যাকিং করে কাউকে অপমান করা নাই; জমি খরিদ বিকি নাই; রিয়েল এস্টেটের ব্যবসাও কেউ করে না; অতএব চাকরী করে দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়িয়ে জমি বা ফ্লাট কেনার কোন সম্ভাবনাও নেই। ওখানে জোর যার মুল্লুক তার নীতিটাই চলে। বিশৃঙ্খলার মধ্যেও একটা শৃঙ্খলা আছে বলে মনে হয়। একটা মজার ব্যাপার বলি। আমার এই দুই প্রকার জীবন যাপনে আনন্দ পাই। মানুষ হয়ে মানুষের বোধ ও উপলব্ধির শরিক হতে ভাল লাগে। আবার মত্স্যকন্যা হয়ে ফিরে যাই যখন সমুদ্রজগতে, মনে হয়, এই আমি নতুন ভূবনে এলাম। সব কিছু নুতনভাবে পাই মনে হয়। আর সমুদ্রজগতের প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব মনোরম। পাহাড় টিলা গাছপালা সবুজ ঘাস লতাগুল্ম এবং বহু প্রকার বর্ণিল ছোট বড় মাছের খেলা দেখতে ভালো লাগে। তাছাড়া বিচিত্র বিস্ময়কর আকৃতির প্রাণীগুলোর চলাফেরা দেখলে মাথা ঘুরে যায়। সামুদ্রিক ঘোড়াগুলোর মশকারী দেখে হাসতে হাসতে গালের মাংসে ব্যাথা করে।আমি প্রশ্ন করি-আর মহাসামুদ্রিক মহাতংক, বিশাল দানব আকৃতির একটা তিমি আপনার দিকে ধেয়ে আসতে দেখলে কেমন লাগে?-অবশ্যই ভালো লাগার কথা না। ওই রকম অবস্থা কখনো হয় না। কারণ আট/দশটা হাতির সমান একেকটা বিশালাকার তিমির দৃষ্টি শক্তির চেয়ে আমার, শুধু আমার না, সকল সাগর কন্যার দৃষ্টি শক্তি দ্বিগুণ বেশি। আমাদের তো ওদের রাজ্যে থাকার প্রয়োজন পড়ে না। কখনো ওদের দেশের ভেতর দিয়ে অন্য প্রাণীদের দেশে যাই তিমি বা অন্য হিংস্রদের চোখে ধুলো দিয়ে। ওরা আকারে বিশাল। কিন্তূ আমাদের মতো চালাক না। সাইজে বড়, স্বভাবে হিংস্র, খুনী, 'লাকিন মখ মাফী'। 'লাকিন মখা ফী' কথাটার অর্থ জানেন?আমি একটু হেসে বলি-জানি। এটা কথ্য আরবী। অর্থ হলো, 'কিন্তূ ব্রেইন নাই-বুদ্ধি নাই'।ম বললো-বুদ্ধি যে একেবারে নাই তা না। গুন্ডামীও দেখায়। সমুদ্রপৃষ্টে এসে লাফালাফি করে। বুদ্ধি তুলনামুলক কম আর কি। মানুষের বুদ্ধির মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়। মানুষ বিশালাকারে তিমি শিকার করে সৈকতে শুইয়ে রাখে। সত্যিই (একটু দাঁড়িয়ে আমার দিকে চেয়ে) মানুষ বড় বিস্ময়কর প্রাণী। মানুষের কোন তুলনা হয় না।আমি বলি-মানুষ ইতর প্রাণীর চেয়েও নিকৃষ্ট ইতরামী করে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে মানুষের হিংস্রতা জঙ্গলের কিংবা মহাসামুদ্রিক জানোয়ারদের হিংস্রতার চাইতে অনেক বেশি।ম বললো-তবু সামগ্রিক বিচারে মানুষের সৃষ্টিশীলতা এবং মেধা মনন চর্চার কোন তুলনা হয় না। জঘন্য মানুষটিও ভালো মানুষে পরিণত হতে পারে।আমি বলি-কিন্তূ কিছু লোক, পৃথিবীর সকল সমাজেই, মরণ কবুল করবে তবু ভালো হবে না। দিনের পর দিন হাজারো অপরাধে ডুবে থাকে। মানুষের স্বভাবের উপর এক সায়েন্টিফিক লেখায় পড়েছিলাম, কিছু মানুষ জেনিটিক্যালি অপরাধপ্রবণতা নিয়েই জন্মে। (অসমাপ্ত)

তুমি কোন কাননের ফুল (পর্ব-২)

প্রথম পর্ব এখানে, ক্লিক করুনআমার ঘরে আসলেন কী করে? আমার গালে এতো জোরে থাপ্পড় মারলেন কেন? আমি বলি, আমি অস্ট্রেলিয়া থেকে এই মুহুর্তে এসেছি তোমাকে একটা থাপ্পড় মারার জন্য। সে টেবিলের ড্রয়ার টান দিয়ে পিস্তল বের করতে গেলে আমি বলি, আমাকে গুলি করার ভয় দেখাইও না। কোন লাভ হবে না। আমি ইচ্ছে করলে তোমার পিস্তল দিয়ে তোমাকে গুলি করে মেরে ফেলতে পারবো। সেটা আমি করবো না। কারণ এতে আমার বিশেষ ক্ষমতার অপব্যবহার হবে। বুঝতেই পারছো, যে মেয়েটি হাজার কিলোমিটার পথ মুহুর্তেই পাড়ি দিতে পারে, তার ক্ষমতা তোমাদের কল্পনার সুপারম্যানের চাইতেও বিস্ময়কর। এই কথা বলতেই আমি দেখি, লোকটার গুন্ডামার্কা চোখের দৃষ্টি ভীতু চোরের দৃষ্টিতে রূপান্তরীত হলো। সে পিস্তলটা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে বললো, আই এ্যাম সরি, আই এপোলোজাইস- আমারে মাফ কইরা দেন। জীবনে আর কখনো এমন কাজ করবো না। আমি বলি, ঠিক আছে আপাতত মাফ করলাম। তবে তোরা আমেরিকানরা, সবাই না, অনেকেই, হাড়ে হাড়ে বজ্জাত; সাংঘাতিক শয়তানী করে নিজেরা নির্দোষ বলে চিল্লা-চিতকার করিস।এই পর্যন্ত একটানা কথা বলে মত্স্যকন্যা থামে। ওর লেজটাকে ডান দিকে বাঁকা করে হাতের নাগালে এনে, লেজের মাথাটা একটু চুলকালো। বললো, সরি, একটা চিংড়ি চিমটি কাটলো মনে হয়।আমি বলি,আপনি পূর্ণ মানবী হয়ে পার্কে চলে আসুন। বসে আলাপ করবো। আপনার কাছ থেকে আমার অনেক কিছু জানার আছে। তারপর বলুন, তারপর কী করলেন ওই আমেরিকান লোকটাকে?সে বলে,কি আর করবো। বললাম, যাও বাতরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে স্লিপিং গাউন পরে শুয়ে পড়ো।তাকে বাতরুমে ঢুকিয়ে আমি চলে যাই আটলান্টিকের অতলে। ও আচ্ছা, ভালো কথা, আজ তো অনেক কথা শুনার সময় নাই। কার সময় নাই জানেন?কার? -আমি জিগ্যেস করি।আপনার। -সে বলে। আরো বললো-আপনাকে ঘরে যেতে হবে এখন। ঘুমাতে হবে না? যান যান ঘরে গিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমান।আমি বলি-আজ তো ঘুম আসবে না মনে হয়। আপনার সাক্ষাত আপনার কথাবার্তা শুনে আমার মস্তিষ্ক খুব এক্সাইটেড হয়েছে। ডিপ ফ্রিজের ভেতর মাথা ঢুকিয়ে রাখলেও বোধ হয় ঠান্ডা হবে না।সে বলে-আরে যান যান। আমি জানি, মানুষের জীবন এমনিতেই থ্রিল, রোমান্স আর সাসপেন্স ভরা। তবু মানুষ খায়, ঘুমায়, বিনোদনে অংশ নেয়, পলিটিক্স করে, সন্তান জন্ম দেয়। পুরুষদের অনেকে শত টেনশন মাথায় নিয়ে নিজের বউয়ের সঙ্গে মার্কেটে ঘুরতে ঘুরতে অন্যের বউয়ের কোমরের দিকে চেয়ে থাকে। কোন কোন নারীও তদনুরূপ। যান, ঘরে গিয়ে ঘুমান। কাল দেখা হবে। শেরাটন হোঠেলের পাশের পার্কের প্রথম সারির শেষ মাথার বেঞ্চে বসে থাকবো সন্ধ্যায়। আমার পরনে থাকবে সাদা ট্রপিক্যাল জিন্স আর সবুজ শার্ট। চোখে থাকবে ক্রিস্টাল চশমা। আশেপাশের লোকজন দেখবে, আমি আপনাকে দূর থেকে হাতের ইশারায় ডাকছি এবং আগে সালাম করবো স্থানীয় আরবী মেয়েদের কায়দায়। কুশল বিনিময়ের পর আমরা ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলবো। আর আমার সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি কাউকে এখন বলবেন না। আপনাকে বলে দিবো কীভাবে দুনিয়াবাসীকে জানাবেন। যান, এখন গিয়ে ঘুমান নিশ্চিন্তে। আবারো বলছি, কোন দুশ্চিন্তা করবেন না। আমার দ্বারা আপনার কোন ক্ষতি হবে না। বাই, গুড বাই।এতোটুকু পর্যন্ত কথা বলার পর, আমি দেখলাম, মত্স্যকন্যা মুখে হাসি নিয়ে, খুব দ্রুত ছোট হতে শুরু করেছে। ওর আকার আকৃতি ছোট হচ্ছে। ছোট হচ্ছে ছোট হচ্ছে ছোট হচেছ। অবশেষে এক বিন্দু। অতঃপর বিন্দু নাই। কিচ্ছু নাই। পানি শুধু পানি। সাগরের স¡চ্ছ পানি। আমি সাগরের পানির দিকে তাকিয়ে আওয়াজ দিলাম-মত্স্যকন্যা আপনি কি আছেন ওখানে?এমন সময় পেছন থেকে এক ভারতীয় আমার কাছাকাছি এসে, একবার সাগরের পানির দিকে আরেকবার আমার মুখের দিকে তাকালো। কিছু বুঝতে না পেরে আমাকে জিগ্যেস করলো-আপ কিস্কে সাথ বাত কররাহা হ্যায়? পানি মে তো কোই নেহি হ্যায়!আমি বলি-নেহি কুচœনেহি।লোকটি তার পথে চলতে চলতে একা একা বলে, ইস দুনিয়ামে বহত পুরানা পাগল হ্যায়, ইয়ে নয়া পাগল কাঁহাসে আগিয়া হ্যায়।দ্বিতীয় দিনওর কথামতো পর দিন সন্ধ্যায় আমি যাই শেরাটন হোটেলের পাশের পার্কে। গিয়ে দেখি, ওই বেঞ্চে কেউ নাই। আশে পাশেও কেউ নাই। ব্যাপার কী? এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। হাঁটছি। মনে হচ্ছে এই বুঝি দেখা যাবে তাকে। না কি কোন গড়বড় হলো ? কোথায় সে এখন? কোন সাগরের অতলে? না কি কোন জনপদে? আসলো না কেন? কোন ক্ষুধার্ত হিংস্র তিমি ওকে মেরে খেয়ে ফেলেছে কী? না না ওই সব বিপদের আশংকা নেই। ওর বিশেষ ক্ষমতা আছে। সাগরের হিংস্র হায়ওয়ানদের চুতিয়া বানানোর মতো বুদ্ধি ওর আছে। কেনো আমার সঙ্গে এতো কথা বললো? বিস্ময়কর এক মত্স্যকন্যা! চমতার কিছু কথা বলেছে! ওর কাছ থেকে আরো অনেক বিষয় জানা দরকার। হয়তো সে আমার কাছ থেকে কোন তথ্য পেতে চাইছে। আমি তো সরলমনে যা জানি তা বলবো। সে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যে, এই বিস্ময়কর সৃষ্টির ভেতর হয়তো অগণন রহস্য ভান্ডার। অজানা রহস্যের প্রতি আমার খুব আকর্ষণ। ইস্ কাল রাত আরো এক দুই ঘন্টা ওর সঙ্গে আলাপ করলাম না কেন? না না আমি তো আলাপচারিতার ইতি টানি নি। সে-ই বলেছিলো,'যান, এখন যান, ঘুমান গিয়ে নিশ্চিন্তে।' এর পর বিস্ময়করভাবে ছোট হতে হতে নাই হয়ে গেলো। আজব কারিশমা! সে কি আমাকে কাবু করার চেষ্টা করবে? ওর অরিজিন তো মানব সন্তান। সব শেষে বলে বসে যদি-'আমি তোমাকে ভালবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি বাচঁবো না। আমাকে তুমি বিয়ে করো।' তাইলে তো সর্বনাশ! অর্ধেক মাছ অর্ধেক নারীকে আমি বিয়ে করবো কীভাবে? আজ পর্যন্ত পূর্ণ মানবীদের কেউ আমাকে পটাতে পারে নি বা আমার দ্বারা কাউকে পটানো সম্ভব হয় নি।(হয়তো হিসাব মিলে নি। হিসাব ক'রে প্রেম করে কি কেউ?) শেষ পর্যন্ত মত্স্যকন্যার কাছে ধরা খাবো! নাহ্ হতে পারে না। আরে ধুর্ এসব চিন্তার কোন মানে নেই। বিপদের সম্ভাবনার কল্পনা করে পেরেশান হওয়াকে মনোবিজ্ঞানীরা প্যারানয়া রোগ বলে। আর এই আধা মাছ আধা মাইয়া তো সাংঘাতিক! চিন্তা পড়তে পারে। ওর সামনে উল্টাপাল্টা চিন্তা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নইলে ধরা খাওয়ার আশংকা আছে। কিন্তূ আজ আসবে কি সে? পূর্ণ মানবী ধারণ করার বিশেষ ক্ষমতা সত্যি তার আছে কী? না কি গত রাতে ভূয়া বাহাদূরী দেখিয়েছে। সমুদ্র কিনার তো এখান থেকে কাছে। রাস্তা পার হয়ে নিরাপত্তা বেস্টনি পর্যন্ত যেতে দু'মিনিটও লাগবে না। প্রায় সাত কিলোমিটার লম্বা কর্ণিশ। গতকালের জায়গাটা এখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে। আমার হাতেও এখন সময় বেশি নেই। ওর জন্য এক ঘন্টা সময় হাতে নিয়ে এসেছি। এক ঘন্টা পর ব্যবসায়িক কাজে অন্য জায়গায় যেতে হবে।আমি ভাবতে ভাবতে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার পাশে এসেছি সমুদ্র কিনারে যাওয়ার জন্য। এই সময় আমার সামনে, বিপরীত দিকে থেকে আসা এক কিশোর বললো-হ্যালো, পেছনে তাকান, একজন আপনাকে ডাকছেন। আমি এবাউট টার্ণ করি। তাকে দেখতে পাই। মত্স্যকন্যা পূর্ণ মানবী রূপে এসেছে। আমি দ্রুত হাঁটি ওর দিকে। সে বেঞ্চটিতে বসে আছে। আমি কাছে যেতেই দাঁড়িয়ে সালাম করে। আমি জবাব দেই। সে বলে-সরি একটু দেরী হয়ে গেলো। চলুন, হাঁটি।আমি তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত বিস্ময়মাখা দৃষ্টি রাখি। নিখুঁত এক সুন্দরী। রুচিশীল। অতিমাত্রিকতার ছায়া নেই। পরিচ্ছেদের সবখানে পরিমিতিবোধের প্রভাব আছে। ফুলেল মোহময়তা ছড়ায় তার অস্তিত্ব। আমি ধ্যানমগ্ন হওয়ার উপক্রম হতেই সে কথা বলে-কী ব্যাপার! এতো কী দেখছেন? বেশি দেখবেন না। বেশি দেখলে শরীরের প্রেমে পড়ে যাবেন। লাভ হবে না। কেননা আমি প্রেমের প্রসঙ্গ আসলেই পালাই।আমি বলি-না না পালানোর দরকার পড়বে না। কারণ ওই রকম প্রেমের আশংকা নেই। আমি যা দেখছি, সেটা হলো, যে কোন সুন্দরের কাছে চুম্বক আছে। তা মনোযোগ আকর্ষণ করে দর্শকদের। এটাই কি স্বাভাবিক না?সে বলে-ধন্যবাদ। আপনার চিন্তাও পরিশীল। আমি জানতে চাই-ইচ্ছে করে দেরী করলেন? না কি.......সে বললো-আরে না না, ইচ্ছে করে না। একটা ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিলাম। অবশ্য সমাধানও দিয়ে এসেছি।আমি প্রশ্ন করি-কী রকম ঝামেলা? কী রকম সমাধান? কোথায়? সমুদ্রে না জনপদে?সে হেসে বললো-চারটা প্রশ্ন! আচ্ছা যাক, ছোট ছোট বাক্য। মাফ করা গেলো। শুনুন,আপনার মতো আমার এক বান্ধবী আছে সুইডেনে। সপ্তাহে অন্তত একবার ওর সঙ্গে দেখা করি। এই কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত ওর কাছে ছিলাম। সুইডেন দেশটা খুব শান্ত। এই অর্থে যে, যুগের যুগ ধরে ওখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। তো আমি, সুইডিশ বান্ধবীটির সঙ্গে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংকে নিয়ে আলোচনা করছিলঅম। এক পর্যায়ে আমি একটু চড়া ভলিউমে বলি, হকিং তো রাজনীতিকদের মতো স্ট্যান্টবাজি করেছেন। সিদ্ধান্তে পৌঁছার আগেই চেঁচামেচি করেছেন। তার 'এ্যা ব্রিফ হিস্টরী অব টাইম' বইটিতে তত্ত্ব সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন কম। খামাখা হাউকাউ করেছেন বেশি আল্লাহ-খোদা সম্পর্কে। একজন বড় মাপের বিজ্ঞানী এই কাজ করবেন কেন? তার ব্ল্যাকহোল গবেষণায় ভুলের কথা বেশ কয়েক বছর পর মিডিয়াকে জানিয়েছেন।আমাদের পাশে,ম-কন্যা বলতে থাকে, একটু দূরে, দুই জন ব্রিটিশ ছোকড়া বসেছিলো। হকিং সম্পর্কে আমার কথা শুনে, আমাদের কাছে এক ছোকড়া এসে বললো, আমরা ক্যামব্রিজের ছাত্র। হকিংয়ের ভক্ত। হকিং সম্পর্কে আলতুফালতু কথা বলবে না। সে অনেক বিজ্ঞানী। তুমি কী বিজ্ঞানী? আমি বলি, আমি বিজ্ঞানী না, কিন্তূ বিজ্ঞানী যদি মতলববাজ রাজনীতিকদের মতো খামাখা হাউকাউ করেন, তা সহজে বুঝতে পারি। ছোকড়াটি বললো, যাও যাও, হকিং সম্পর্কে উল্টাপাল্টা কথা বলবে না। নইলে.......ম-কন্যা বললো, আমি চিল্লিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠি। বলি, হেই পোলা ভূতের বাচ্চা জানোয়ার, নইলে কি করবি? ছোকড়া বললো, দুইজন হ্যান্ডসাম যুবক দুইটা সুন্দরী মাইয়াকে নির্জন জায়গায় নিয়া কি করতে পারে বুঝতেই পারছো। আমি বলি, আহা হা হা রে আমার সোনা বন্ধু, হ্যান্ডসাম যুবক! আসো আসো কাছে আসো, হাতে হাত ধরি নিয়ে চলো নির্জনে। ছোকড়া দুটি গুন্ডামী কায়দায় কাছে আসে। একটা আমার হাত ধরতেই অন্য হাতে ঘুষি মারি থুতনীতে। শুরু হয় ঢুসঢাস। আমি কারাতে কায়দায় দুই ছোকড়ার পাছায় দুইটা লাথি মারি। পাঁচ/ছয় সেকেন্ডের মাথায় পুলিশ আসে। পুলিশকে সব কথা বলি। পুলিশ ওদের ধরে নিয়ে যায়। আমি আমার বান্ধবীকে তার ঘরে পৌছে দিয়ে আপনার কাছে চলে আসি। মজার ব্যাপার হলো, যে-ছোকড়াটিকে আমি গালি দিয়েছিলাম, তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবার সময় সে আমার উদ্দেশে বলছিলো - তুমি গালিটা ভুল দিয়েছিলে। ভূতের বাচ্চা জানোয়ার হয় না। ভূতের বাচ্চা ভূত হয়। আমি বলি, আরে যা যা, গালিতে ভুল হলে অসুবিধা নেই। তোমরা বিজ্ঞানের ছাত্ররা, বিজ্ঞানীরা সমিকরণগুলো শুদ্ধ করো, নইলে খবর আছে।(চলবে)

তুমি কোন কাননের ফুল (পর্ব-১)

আমি নিশ্চিত জানি
আমি একা হাঁটছি পৃথিবীর পথে।না না একটু ভুল হলো। ঠিক একা না। আমার সঙ্গে পৃথিবীর অনেকেই হাঁটছেন। সবাই আমরা একসঙ্গে হাঁটছি। সত্য হলো এই,ওরা আমার সঙ্গি হয়েও আমার সাথি না। ওদের কাউকে আমি চিনি না। আবার চিনিও।এইভাবে চিনি-ওরা সবাই মানুষ।সত্য বললাম কি? ওরা সবাই মানুষ? এই যে প্রতিদিন এই রাজধানী শহরটির রাজপথ গলিপথের ফুটপাত ধরে আমার সঙ্গে হাঁটে, ওরা সবাই মানুষ?ওদের অজস্র পরিচয় আছে। কেউ বাঙালি, কেউ জাপানি, কেউ বৃটিশ, কেউ আরবী, কেউ পশ্চিমি, কেউ পুবাল, কেউ গরিব,কেউ ধনি, কেউ কালো, কেউ সাদা, কেউ বাদামি, কেউ বিবাহিত, কেউ অবিবাহিত, কেউ চির কুমার, কেউ চির কুমারী, কেউ নারী কেউ পুরুষ, কেউ ভালো মানুষ, কেউ খারাপ মানুষ, কেউ অর্থনীতিক, কেউ রাজনীতিক, কেউ গনিতবিদ, কেউ হাওয়াবিদ, কেউ খাওয়াবিদ, কেউ যন্ত্রবিদ, কেউ মন্ত্রবিদ, কেউ খেলোয়াড়, কেউ শুধু বেচারা দর্শক ইত্যাকার পরিচয় তো আছেই, তার ওপর আছে একেকজনের মাল্টিলেয়ারড পরিচিতি। যেমনঃ আবদুস সালাম। লোকটা বাঙ্গালি, লোকটা ঢাকার, লোকটা মিরপুরের, কিংবা লোকটা চট্টগ্রামের হাটহাজারির কদলপুরের,লোকটা খানদানি-উচ বংশীয় কিংবা রাইয়ত-প্রজার গোষ্ঠীর,লোকটা সাধু কিংবা অসাধু , লোকটা অমুকের ভাই; তমুকের শালা কিংবা কারো জামাই কারো শশুর কারো বাবা কারো পুত্র কারো বন্ধু, কেউ তাকে ভালোবাসে, কেউ তার উপস্থিতি সহ্য করতে পারে না। এই রকম অনেক পরিচিতি প্রতিটি মানুষের আছে।আমি প্রতিদিন পথ চলি এইসব মানুষের সঙ্গে। পথ চলি মানে পায়ে পায়ে হাঁটি, কখনো পায়ে পায়ে দৌড়াই, কখনো সড়কপথে রেলপথে হাওয়াই পথে বাহন হয়ে দৌড়তে হয়। সকলেই দৌড়ায় পথে পথে।আমি আশ্চর্য হয়ে আমার নিজের দৌড়ের দিকে এবং মানুষের দৌড়ের দিকে তাকিয়ে থাকি।কারণ, আমিসহ সকল মানুষ নানা প্রকার কাজ-কামের মধ্য দিয়ে মৃত্যুর দিকে প্রাণপণ দৌড় প্রতিযোগিতায় মশগুল।অথচ মানুষগুলো বেঁচে থাকার জন্যই মিলিয়ন প্রকার দৌড় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। একদিন এক মিসকিন পথিক, যিনি অন্ধ এবং বয়স সত্তুর কিংবা পচাত্তুর হবে, আমাকে মিনতি করে বললেন, এক টাকা দিতে। ওই টাকা দিয়ে রুটি কিনে খাবেন বলে জানালেন। প্রশ্ন করেছিলাম, বাইচা থাকার মধ্যে কি আনন্দ পাইতাছেন চাচা? জবাব দিলেন, না বাবা আনন্দ নাই, তয় মরতে চাই না, খিদার জ্বালা থাইকা বাচতে চাই বাবা। আমি বলি, এইভাবে কতদিন বাঁচবেন চাচা, মরতে তো হইবোই। বললেন, মইরা তো যামুই, জিন্দা তাহনের লাইগা চেস্টা করন আর কি। আমি বেচারার হাতে পাঁচ টাকা দিয়ে নিজের কাজের দিকে চলে যাই।আচ্ছা, আপাতত মানবজাতির মৃত্যুমুখী দৌড় প্রসঙ্গে বেশী কথা না বলে একটি গল বলা শুরু করি। হাঁ হাঁ দৌড়ের কথা আরো আছে। পরে বলবো, কথা দিচ্ছি।গলটা হলো-সেদিন আমি শিল্পোন্নত আরব নগরীটির সাগর পারের পার্কের ভেতর দিয়ে হাঁটছিলাম রাত বারটার কিছু পরে কিংবা আগে।হাঁটতে হাঁটতে আমি কিছুক্ষণ পর পর সমুদ্রের দিকে এবং সমুদ্রের উপরের আকাশের দিকে তাকাচ্ছিলাম।কিছুক্ষন হাঁটার পর পাশবর্তী রেলিং ( নিরাপত্তা বেস্টনী ) ধরে আবছা দৃশ্যমান সাগরের পানির দিকে তাকিয়ে থাকি।হঠাত দেখি, আলোকিত অবয়বের এক মত্সকুমারী আমার দিকে তাকিয়ে হেসে উঠে।আমি হতবাক। কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে কথা বলে-ভয় পাবেন না। চিত্কার করবেন না। কাউকে বলার চেষ্টাও করবেন না। আমি এক মত্স্যকন্যা। আমাকে এখন শুধু আপনিই দেখতে পাচ্ছেন বিশেষ কারণে। আশপাশের ওই মানুষগুলো আমাকে দেখছে না। আমার কথাও শুনতে পাচ্ছে না। ওদেরকে আপনি কিচ্ছু বলবেন না। আমার সাথে সানন্দে কথা বলুন। ওদেরকে কিছু বললে ওরা আপনাকে পাগল খেতাব দিয়ে দৌড়াবে। দুশ্চিন্তা আক্রান্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি শতবর্ষী এক মত্স্যকুমারী। আমি আপনার কোন ক্ষতি করবো না।সে একটু থেমে মুচকি হাসে আর লেজ নাড়ায়। আমি মন্ত্রমুগ। পোষ মানা ময়না পাখির মতো নিশ্চিন্ত হয়ে কথা বলি-আমি সত্যি ভীষণ হতবাক। গলের বইয়ে পড়েছিলাম সাগরকন্যার কথা। এখন আপনি আমার সামনে। আমি কি ঠিক দেখছি না কি ভুল দেখছি! হঠাত্ আমার চোখের সামনে অস্তিত্ববান হলেন কি করে? গভীর সমুদ্র থেকে ছুটে আসতে দেখলাম না! আপনি কি আমার কাছে কিছু চাইতে এসেছেন? সমুদ্র গহনে শত বছর ধরে বেঁচে আছেন? আপনার মুখমন্ডল এতো মসৃণ, এতো সুন্দর কেন? একশ' বছরেও আপনি যৌবনবতী? মনে হয় পঁচিশ/তিরিশ। আমি......মত্স্যকন্যা হাস্যোজ্বল মুখে বললো-একটু থামুন। আপনি তো ভয়ংকর সমস্যা আক্রান্ত। একটা প্রশ্নের জবাব পাওয়ার অপেক্ষা না করে প্রশ্নের পর প্রশ্নের শিকল বানিয়ে ফেলছেন কেন? যাক আপনাকে 'সরি' বলতে হবে না। আমি না হয় ধরে নিলাম আপনি 'সরি' বলেছেন।আমার বিস্ময়ের মাত্রা বাড়তে থাকে।সে আরো বলে-আপনারা মানে,আপনাদের সভ্য মানব সমাজ এই 'সরি' বা 'দুঃখিত' শব্দটাকে যখনতখন যত্রতত্র ব্যবহার করে ফেলে। খামাখা ইচ্ছে করে অন্যের ক্ষতি ক'রে বলে 'সরি'। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য যারা দুঃখ প্রকাশ করে, তাদের না হয় মাফ করা যায়। কিন্তূ মজার ব্যাপার হলো, ইচ্ছাকৃত যারা অন্যের ক্ষতি করে, তাদেরকে সব সময় ধরা যায় না। একটা বাহানা বানিয়ে দেখিয়ে দেবে সেটা অনিচ্ছাকৃত। আপনারা খুব কৌশলী প্রাণী। তবে অতি চালাকের গলায় দড়ি লেগে যায় কখনো কখনো। ও হ্যাঁ, আপনার প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি।আপনি ভুল দেখছেন না। গোলক ধাঁধাঁয়ও পড়েন নি। আমি আমার সীমিত বিশেষ ক্ষমতা বলে আপনার সামনে অস্তিববান হয়েছি। আপনার কাছ থেকে কিছু চাইতে এসেছি কি না তা এখন বলবো ন। আমি আপনার কোন ক্ষতি করবো না। আমি যৌবনবতী, তবে নবায়নকৃত। পঁচিশ বছর অন্তর নবায়ন করা হয় আমাদের যৌবন। মত্স্যকন্যারা তিন শ' বছর পরে মরে যায়। আমার যৌবন নবায়ন করেছেন খোদা। তিনবার নবায়ন করা হয়েছে।আমি মত্স্যকুমারীর সমস্ত শরীরের দিকে চোখ বুলাই। ভয় থ্রিল সাসপেন্স রোমান্স আমাকে ঘিরে রেখেছে। সে আবার কথা বলে-এভাবে তাকাচ্ছেন কেন? সাগরকন্যা সম্পর্কে আপনি কি জানেন?আমি বলি-১৮৩৬ সালে লেখা ডেনিশ লেখক হ্যান ক্রিশ্চিয়ান এ্যান্ডরসন'র 'দি লিটল মারমেইড' পড়েছি আমি। এতোটুকু জানি যে, আপনারা ৩০০ বছর বাঁচেন। এরপর মরে সমুদ্রের ফেনা হয়ে যান।আমি জানতে চাইলাম-কিন্তূ আপনি আমাকে মিথ্যা বললেন কেন?কোন মিথ্যা? -মত্স্যকন্যার প্রশ্ন।এই যে বললেন আপনার বয়স একশো বছর।না মিথ্যা বলিনি। তাছাড়া আমি অন্য মত্স্যকন্যাদের মত না। আলাদা প্রকৃতির। আমার কিছু বিশেষ ক্ষমতা আছে। লজ্জা-শরম আছে। দেখতেই তো পাচ্ছেন। আমি অন্যদের মতো নেংটা নই। আবৃত করে রাখি নিজেকে। বক্ষবন্ধনীটার দিকে আপনার নজর পড়ছে দেখতে পাচ্ছি। বন্ধনীটা কুমীরের চামরায় তৈরী। আমি নিজেই বানিয়েছি। আর বিশেষ ক্ষমতা বলেই আপনার সাথে আপনাদের বাংলা ভাষায় কথা বলছি।আমি হতবাক হয়ে ওর লেজের দিকে দৃষ্টি দিলাম। বিস্ময়ের ঘোর কাটার কোন সম্ভাবনা নেই। আমার মনে পড়লো হ্যান ক্রিশ্চিয়ান এ্যান্ডরসনের 'দি লিটল মারমেইড'র সাগরকন্যাটির কথা।তখনি আমার সামনের মত্স্যকন্যা বললো-আপনাকে একটা সারপ্রাইজ দেই?আমি জানতে চাই-কী সেটা?সে বললো-আপনার চিন্তাপাট করলাম এই মাত্র। আপনি এ্যান্ডারসনের মত্স্যকুমারীর কথা ভাবছেন। ওই সাগরকন্যার বেদনাভরা পরিণতি আপনাকে আবিস্ট করে বার বার, যখনি আপনার মনে পড়ে। কি মিথ্যে বলেছি?না না মিথ্যে বলেন নি, সত্য বলেছেন। আপনিও কি মিথ্যে বলেন? -আমার আগ্রহ।মিথ্যা বলার সুযোগ আসে নি জীবনে। সে বললো।বুঝলাম না কি বলতে চান? -আমি বলি।সত্যি বুঝেন নাই? -বড় ভাইয়ের বউয়ের কায়দায় সে বলে।না। -হাদারামের মতো বলি আমি।আপনাকে বেকুব বললে তো আপনি নারাজ হবেন, তাই না? -মোনালিসার দৃষ্টি ছড়িয়ে প্রশ্ন করে মত্স্যকন্যা।আমি দেখি, মুখে হাসি আছে তার। তবে ওর মাছের লেজ ডানে বামে নড়ছেই। শরীরচর্চার বুকডন আসনের মতো অনেকটা দু'হাত সামনের দিকে ভাঁজ করে রেখে, পানির উপরে মাথা তুলে সে কথা বলছে। সমুদ্রের আসল ঢেউয়ের আঘাত এখানে নেই। ওয়েভব্রেকার করা হয়েছে মাটি ভরাট করে। ওই ভরাট জায়গাটি মিনি শহরে বিবর্তিত হচ্ছে। যাক্ তার প্রশ্নে আমি প্রথমে আঁতে ঘা অনুভব করতে শুরু করছিলাম। সাথে সাথে মনে হলো কোন চমতার কারণ আসতে পারে সামনে। আমি সাদ্দাম হোসেনের একগুঁয়েমীর অভিনয় করি, বলি-আমাকে বেকুব মনে হলে বেকুব বলবেন।না না আমি আপনাকে বেকুব বলে নিজে বেকুব হতে চাই না। -সরল প্রেমিকার মতো বলে মত্স্যকন্যা।আমি বলি-বলুন, মিথ্যে বলার সুযোগ আসে নি মানে কী?সে বলে-মানে এতো লম্বা জীবনে কখনো প্রেমের বাহানা করার এবং সংসার জীবন যাপন করার সুযোগ পাই নি। করতে চাই নি বলতে পারেন।আমার মগজে গম্ভীর দার্শনিক বক্তব্যের ধাক্কা লাগে। ভাবি, এই আধা মাছ আধা মাইয়া তো জবরদস্ত একখান কথা কইলো। আমি কিছু বলার আগেই মত্স্যকন্যা বললো-আমি যে মিথ্যে বলি নি আপনি টের পাইলেন মনে হচ্ছে।আমি বলি-মিথ্যে বলেন নি। ভাবছি, আপনার মাথায় তো মানব সমাজের অনেক খবর আছে।সে বলে-অনেক না। খুব সামান্য। কিছু কিছু জানি। আপনি আমার সাক্ষাতার নেয়া শুরু করলেন যে? ব্যাপার কি?আমি বলি-আপনি আমাকে চমকের পর চমক দিচ্ছেন? ফলে আপনার সম্পর্কে জানার আগ্রহ বাড়ছে। মাথায় কেবল প্রশ্ন তৈরী হচ্ছে। আপনি সাক্ষাতার নেয়ার ব্যাপারটি সম্পর্কেও জানেন দেখছি।মত্স্যকন্যা একসাথে দুই চোখ মুদে আবার খুলে চমতকার রিলাক্স মুডে বলে-জানি মানে? আমি তো সাক্ষাতার নেই মাঝে-মধ্যে।আমি জানতে চাই-কার সাক্ষাতার নিয়েছেন? কীভাবে নিয়েছেন? কখন নিয়েছেন? কোথায় নিয়েছেন?লেখাপড়া জানেন? কোথায় লেখাপড়া করেছেন?থামুন থামুন। আপনি আবারো প্রশ্নের শিকল বানানো শুরু করে দিয়েছেন। -ছোট ভাইয়ের বিয়ের জন্য কনে দেখতে যাওয়া বড় আপার মতো হাসিমাখা কথা বলে অর্ধেক মাছ অর্ধেক নারীটি।বলে-শুনুন,পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশিস্টজনদের সাক্ষাতকার আমি নিয়েছি শুধুমাত্র নিজের জ্ঞানতৃষ্ণা মেটাবার জন্য। কোন পত্রিকা কিংবা ম্যাগাজিনে ছাপানোর জন্য না কিংবা কোন টিভি চ্যানেলে প্রচার করার জন্য না। কী ভাবছেন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে? ভাবছেন-> অর্ধেক মাছের শরীর নিয়ে মানুষের সমাজে কিভাবে যাই?> লেখাপড়া কোথায় কীভাবে করলাম?কী এ প্রশ্ন দু'টি এসেছে মাথায়?হ্যাঁ, তবে আরো এক বস্তা পরিমান প্রশ্ন ইতোমধ্যে তৈরী হয়ে গেছে।ভালো কথা। বস্তার মুখ খুলে হাজার প্রশ্ন এক সাথে আমার উপর ঢেলে দিবেন না। ধীরে ধীরে, স্টেপ বাই স্টেপ। -কলেজের বয়স্ক অধ্যাপিকার মতো বলে সে। পার্থক্য শুধু এই, অধ্যাপিকারা এ রকম কথা বলার সময় হাসেন না। মত্স্যকন্যার মুখে হাসি লেগে আছে।সে চোখে মুখে গাম্ভির্য্য এনে বলে-মানুষের জগত সংসারে আমি যাই পূর্ণ মানবী রূপে। সুন্দরী স্মার্ট তরূণীর রূপ ধারণ করে। আমার মুখমন্ডল, এখন আপনি যা দেখতে পাচ্ছেন,এটাই থাকে। আমি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছি পূর্ণ মানবী রূপে। কেউ টের পায় নি। এটা হয়েছে আমার মায়ের দোয়ায়। আমার মা ও বাবা মানব সন্তান ছিলেন। খোদার কসম খেয়ে মিথ্যা বলার অপরাধে আমার মাকে খোদা মত্স্যকন্যা বানিয়ে দেন। তখন আমার মা বাবা জাহাজে করে দুর দেশে যাচ্ছিলেন। মধ্য দুপুরে লাঞ্চ করে, জাহাজে শুয়েছিলেন বিশ্রাম নেয়ার জন্য। ঘন্টাখানেক ঘুম শেষে জেগে দেখেন মা মত্স্যকন্যা হয়ে গেছেন। বাবা বিস্ময়ে ভয়ে চিতকার করতেই মা থামান। বলেন,আমি স্বপ্নে দেখেছি,মত্স্যকন্যার রূপ হলো আমার সেই মিথ্যে কথাটির শাস্তি। তোমার সঙ্গে আর থাকতে পারবো না। সমুদ্র গভীরে চলে যাচ্ছি। আমাকে মাফ করে দিও। আমার পেটে তোমার সন্তান। পূর্ণ মানব হয়ে জন্মালে যে কোন উপায়ে তোমার কাছে পাঠিয়ে দেবো। আর মত্স্যকন্যা হয় যদি,সমুদ্র গহনের জগতেই থাকবে। তবে খোদার কাছে প্রার্থনা করবো তিনি যেনো সন্তানটিকে বিশেষ ক্ষমতা দেন, যাতে সে পৃথিবীতে মানুষের সমাজে ইচ্ছেমতো আসতে পারে।যাই, তোমার ভালবাসা সঙ্গে নিয়ে যাইযাই. মাঝে মাঝে তোমার দেখা পাওয়ার আশা বুকে নিয়ে যাইআমি যাই, তুমি থাকো, সুখে থাকো, কাউকে বিয়ে করে বাকী জীবন পার করোআমি যাই গো যাই, খোদা হাফেজ।কবিতার ভাষায় কথা ক'টি বলে মা আমার সাগরে ঝাঁপ দেন এবং তলিয়ে যান।আমি জিগ্যেস করি-আপনার মায়ের সেই মিথ্যে কথাটি কী ছিলো?মত্স্যকন্যা বলে-সেটা খুব সাধারণ একটা মিথ্যা। সেটা এখন আপনাকে বলবো না। পরে বলবো।আমি বলি-বিস্ময়কর! অবাক হলাম! অবাক হলাম এ জন্যে যে, এই আরব দেশে, এক যুগ ধরে ব্যবসায়িক লেনদেন করার সময় দেখেছি, অজস্র নারী পুরুষ কথায় কথায় কসম খায়। খোদার কসম খেয়ে অবলীলায় মিথ্যে কথা বলে। চট করে বলে, 'ওয়াল্লা ওয়াল্লা কসম বিল্লাহ আনা মা কাজ্জাব আলাইক।' মানে......আমাকে থামিয়ে মত্স্যকন্যা জানায়-থাক অনুবাদ করতে হবে না। আরবি ভাষা আমি বুঝি। পৃথিবীর প্রধান ভাষাগুলো আমার মেমরীতে আছে। সেটা খোদার বিশেষ দান। অনুবাদটা বলি?আমি হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়ি।সে বলে-'ওয়াল্লা ওয়াল্লা কসম বিল্লাহ আনা মা কাজ্জাব আলাইক।' এখানে 'ওয়াল্লা ওয়াল্লা' এবং 'কসম বিল্লাহ'একই অর্থবোধক। ওরা কথা বলতে দুটিই ব্যবহার করে। কথাটার ইংরেজি তরজমা হলো- ইন গডস নেম, আই এ্যাম নট লাইং টু ইউ। আর বাংলা অনুবাদ হলো, 'খোদার কসম, আমি আপনাকে মিথ্যা বলছি না।'আমি জানতে চাই-আপনি পড়ালেখা কোথায় করেছেন?সে জানায়-বর্তমানে আপনাদের বাংলাদেশের রাজধানী, ইরানে, মিসরে, স্পেনে, লন্ডনে, সুইডেনে, আর আমেরিকায়। প্রতিষ্ঠানে খুব বেশী পড়ি নি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছি। তবে পড়াশুনা সব সময় করি। কোন বিষয়ে জানার ইচ্ছে হলে পৃথিবীর যে কোন দেশের পাবলিক লাইব্রেরীতে ঢুকে পড়ি। তিন/চার ঘন্টা গভীর মনোযোগে বইয়ের পাতায় চোখ বুলাই। গতকাল বিকেলেও এ দেশের কালচারাল ফাউন্ডেশনের পাঠাগারে ছিলাম। সন্ধার পর আপনাকে পাঠাগারে ঢুকতে দেখেছি। আপনি আমাকে দেখেন নি। আপনি গতকাল ইয়া বড় মেক্রপেডিয়া নিয়ে বসেছিলেন ঘন্টাখানেক।আমি বিস্ময়মাখা হাসি দিয়ে বলি-ঠিক বলেছেন। আমারও বিভিন্ন বিষয় জানার আগ্রহ প্রবল। তাই অবসরে বইয়ের জগতে ডুব দেই। কখনো কখনো কম্পিউটারে ওয়েবসাইটে ঘুরে বেড়াই।মত্স্যকন্যা বলে-আমিও মাঝে-মধ্যে ইন্টারনেট ক্যাফেতে গিয়ে ইচ্ছেমত ব্রাউজ করি। মজা করার জন্য চ্যাটিং রুমে ঢুকি। একদিন রিলিজিয়ন রুমে ঢুকলাম, সিরিয়াস ধর্মীয় বিতর্কে অংশ নেয়ার জন্য। ওরে বাবা! ওখানে দেখি, পোলা মাইয়ারা সেক্স চ্যাটিং করছে। আমি বেরিয়ে যাবো ভাবছি, এমন সময়, একষট্টি বছর বয়সের এক পোলা আমাকে পারসোনাল চ্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানায়। প্রশ্ন করে, ইউ এফএম? আমি লিখি, রেডিওর শর্ট মিটার ব্যান্ডে আমি দেশ বিদেশের গান শুনি। এফএম ভালো লাগে না। ওই ব্যাটা প্রশ্ন করে, কী বলছো তুমি? আমি লিখি, তোমার প্রশ্নের উত্তর লিখেছি। সে লিখে,আমি জানতে চেয়েছি, তুমি মেইল না ফিমেইল? আমি লিখি, ও আচ্ছা, তো এফ আর এম এর মাঝখানে অবলিগ বা স্পেস দাও নি কেন? আমি তো সুন্দরী মাইয়া। সে লিখলো,আমি সেক্সের জন্য পাগল হয়ে আছি। তুমি কোথায়? হারি আপ কাম অন ডিয়ার! আমি লিখি, আমি এখন অস্ট্রেলিয়াতে। একটা থাপ্পর মাইরা তোমার বত্রিশটা দাত ফালাইয়া দিলে পাগলামী ছুইটা যাইবো। রিলিজিয়ন রুমে ঢুকে ফাইজলামী। অসভ্য কোথাকার! সে লিখে, আমি তো নিউইয়র্কে। তুমি সারা জীবন চেষ্টা করলেও অস্ট্রেলিয়া থেকে নিউইয়র্কের কাউকে থাপ্পর মারতে পারবে না।মত্স্যকন্যা একটু নড়েচড়ে আরো বললো-আমি আমার বিশেষ ক্ষমতা বলে মুহুর্তেই লোকটির নিউইয়র্কের বাড়ির বেডরুমে গিয়ে ঢুকি। দেখি, সে আন্ডারওয়ার পরে বসে কম্পিউটারে আমার উদ্দেশে বারবার বাজ করছে। আমি পেছন থেকে বাঁ হাতে ওর গালে একটা মিডিয়াম ওজনের থাপ্পড় লাগিয়ে বলি, হারামজাদা, রিলিজিয়ন রুমে ঢুকে সেক্সের পাগলামী আর কোন দিন করবি না। সে ধড়ফড় ক'রে উঠে বলে, কে আপনি কে?

ভালোবাসা কিংবা ভেতরে বাহিরে মূর্ত বহু বর্ণিল মায়া


ভালোবাসা কি?
মানবজাতির প্রজ্ঞার সামনে এ এক জটিল প্রশ্ন। যথাযথ সংগায়ন কঠিন। কারণ বহুমূখী এর ব্যাঞ্জনা।
ভালোবাসার প্রকারভেদের ভেতরেই কি এর সংগা লুকিয়ে আছে?
মূল কথনে যাবার আগে কিছু পংক্তি তুলে ধরি
এ জীবনের আঁধার পথে
পাও যদি কেউ এমন প্রাণ
যে তোমাকেই ভালোবাসে
আপন হৃদয় করবে দান।
প্রাণ খুলে তায় ভালোবাসো
জড়িয়ে ধরো বক্ষে থাকে
ত্যাগ করো সব তার খাতিরে
তুচ্ছ করো জগতটাকে।
--ওমর খৈয়াম

কলঙ্কী বলিয়া ডাকে সব লোকে
তাহাতে নাই দুখ
তোমার লাগিয়া কলঙ্কের হার
গলায় পড়িতে সুখ
--চন্ডীদাস

চাও নাহি চাও ডাকো নাহি ডাকো
কাছেতে আমার থাকো নাই থাকো
যাব সাথে সাথে র'ব পায় পায় র'ব গায় গায় মিশি
--রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

প্রেম এক, প্রেমিকা সে বহু
বহু পাত্রে ঢেলে পি'ব সেই প্রেম
সে সবার লোহু
--কাজী নজরুল ইসলাম

ব্যাস, আর উদ্ধৃতি না। এবার ভালোবাসার প্রকারভেদের ভেতরে গিয়ে ঢুকি। উপরোল্লিখিত উদ্ধৃতিগুলোতে মূলত নারী পুরুষের চিরন্তন প্রেম ভাবনার প্রকাশ রয়েছে। কিন্তু ভালোবাসা অগণন প্রকারে মূর্ত।
১.
সম্পর্কের ভেতরে ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে। সম্পর্ক স্থান কাল পাত্রকে কেন্দ্র করেও রচিত হতে পারে। একট স্থানের জন্য, একটা পাত্রের জন্য, একটা নির্দিস্ট সময়ের জন্য ভালোবাসাবোধ তৈরী হতে পারে। স্থানটি পাত্রটি সময়টি হারিয়ে গেলে কিংবা হাতছাড়া হলে বেদনাপ্লুত হতে হয়; ফিরে পেতে মন আকুল হয়।
২.
পিতামাতার ভালোবাসা, ভাইবোনের ভালোবাসা, স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা, আত্মীয় কিংবা বন্ধুর ভালোবাসা তো আছেই। সমাজ সংসারের ভারসাম্য রক্ষায় এইসব ভালোবাসা গুরুত্ববহ। এই ক্ষেত্রে দায়বোধের সমান্তরালে ভালোবাসাবোধ সক্রিয় থাকলে মায়াময় একটা আবহ তৈরী হয়। কখনো দেখা যায়, রক্তের সম্পর্কের নিকটজনের চেয়ে দূরের বন্ধু বান্ধবী অনেক বেশি আপন হয়ে যায়।
৩.
আবহমান সমাজ সভ্যতার পরতে পরতে যৌক্তিক বিচার বিন্যাস কার্যকর হয়, সফল হয়, ভালোবাসার স্পর্শে। মায়াহীন সিদ্ধান্ত আর যান্ত্রিক উত্পাদন একই অর্থ বহন করে। যান্ত্রিকতা প্রয়োজন পূরণ করতে পারে কিন্তু অনিন্দ্য আবেশে জড়াতে পারে না।
৪.
ভালোবাসা এক প্রকারের শক্তি। এটোমিক প্রচন্ডতাও থেমে যেতে পারে পারে ভালোবাসার যথাযথ ব্যবহারে। ভালোবাসার শক্তি সমৃদ্ধি আনে, সুস্থতা আনে, শুদ্ধতা আনে। ভালোবাসাথেরাপি রোগ নিধনও করতে পারে। কেননা কখনো কষ্টের কান্তার পেরিয়ে অনুপম অনুভূতিও এনে দেয় ভালোবাসা।
৫.
নারী পুরুষের দেহের কামনায়ও ভালোবাসার মিশ্রণ আছে। এখানে পারস্পরিক প্রয়োজন পূরণের তাগিদের ভেতরে যদি ভালোবাসা অনুপস্থিত থাকে, তাহলে মধুর মিলন হবার সম্ভাবনা শুণ্য। সেক্ষেত্রে ওষ্ঠাধরের চুম্বন যৌনতার একটা দায়সারা গোছের শারীরিক অনুভূতি দেবে কিন্তু সাগরের উত্থাল উর্মির মতো দুই দেহের রক্ত কণিকাদের উদ্বাহু নৃত্য মন প্রাণ আকুল করবে না; খুব সহজ স্বাভাবিক মহুয়া মাতাল বোধের কুঞ্জে প্রবেশ করবে না দুই প্রাণ দুই দেহ।যৌনতার সাথে ভালোবাসার একটা সম্পর্ক আছে মাত্র। যৌনতার তৃষ্ণাই ভালোবাসা না। ধর্ষণে জৈবিক তৃষ্ণা মিটে ধর্ষকের শুধু। ওখানে মনের ছোঁয়া থাকে না। 'তব অঙ্গ লাগি মোর অঙ্গ কাঁদে'-এখানে ভালোবাসা আর যৌনতার তৃষ্ণা একাকার। ভালোবাসামাখা যৌনতার অনুভূতি নিঃসন্দেহে এক বিস্ময়কর অতুলনীয় অনুভবের জগতে সন্তরণ করায়।
৬.
কখনো মেধা কখনো দেহের সৌষ্ঠব কখনো আচরণের শৈল্পিক প্রকাশ ভালোবাসাবোধ সৃষ্টি করতে পারে। কবিকে শিল্পীকে লেখককে দার্শনিককে বিজ্ঞানীকে চিত্রকরকে কিংবা বিশেষ আলোকিত মানব মানবীকে আমরা ভালোবাসি কেন? সে ভালোবাসাটাও কি কম গভীর? প্রিয় শিল্পীর মৃত্যুতে শোকাহত হতে হয় নিদারুণ। কোন বড় মাপের মেধাবী মানব মানবীর জীবনাবসানে লাখো মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়, অশ্রুর ধারা নামে, নির্বাক হতে হয়, স্বাভাবিক জীবন যাপন এলোমেলো হয়ে যায়। শুধুমাত্র লেখা পড়ে পাঠক মহলে সংশ্লিষ্ট লেখকের জন্য মায়া অনুভব হয়। হয়তো জীবতকালে কখনো ওই লেখককে সরজমিনে এক নজর দেখার সুযোগ হয় নি। তবু তাঁর সৃষ্টি-কর্ম পাঠকের মন ছুঁয়েছে বলেই ভালোবাসাবোধ তৈরী হয়।
৭.
কখনো মনে হয় ভালোবাসা আর সুন্দর একই মুদ্রার এপিট ওপিট। মনে হয় স্পেসটাইম বা টাইমস্পেস এর মতো। যাহা সময় তাহা স্থান, যাহা স্থান তাহাই সময়। সুন্দর মিলিয়ন প্রকার। ভালোবাসাও মিলিয়ন প্রকার। সুন্দর আকর্ষণ করে। ভালোবাসাও আকর্ষণ করে। দূর বহুদূর হতে অনুভূতি ছুটে আসে আর যায় মনের অলিন্দে। ভালোবাসা সুবোধ দেয়, ইতিবাচকতা দেয়। সুন্দরও সুবোধ দেয়, ইতিবাচকতা দেয়। ভালোবাসা প্রাণজ দোলা দেয়; সুন্দরও প্রাণজ দোলা দেয়।
৮.
ভ্রাম্যমান মানুষের মনের সাথে ভালোবাসাও ঘুরে বেড়ায়। কখন কোথায় যায় ঠিক নাই। স্থির থাকে না। ভালোবাসাও কমে বাড়ে। বিকৃত হয়,বিভাজিত হয়, কৃত্রিম হয়। ভালোবাসাকে ব্যবহার করে মানুষ অপকর্মও করে। যে ভালোবাসায় সহজ স্বাভাবিকতা নেই, সেখানে মধুরতাও নেই। ভড়ং দিয়ে ভালোবাসাকে অলংকৃত করা যায় না। ভালোবাসাকে চাপিয়ে দেয়া যায় না। জোরপূর্বক ভালোবাসাও যায় না।ভালোবাসা মানুষকে নিদারুণ অসহায় বানায়। ভালোবাসার গহনে সাঁতার কাটতে কাটতে দিকভ্রান্তিও আসে। পাপ পূণ্যের ভেদাভেদ ভূলে যায়। জাগতিক অনেক চেতনা চাপা পড়ে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের আচরণ হয়ে ওঠে শিশুসুলভ।
৯.
ভালোবাসা সৃস্টিশীল। ভালোবাসার সম্মিলিত পরশে ব্যক্তি সমাজ রাষ্ট্র প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়, অনুপ্রাণীত হয়। ভালোবাসার প্রাখর্য্য বন্ধ দুয়ার খুলে দেয়। প্রিয়তমার/প্রিয়তমের প্রতীক্ষার প্রহরে কন্ঠের কারুকাজে সুন্দরম শব্দ বিন্যাসে গীতল মাধুরী ছড়িয়ে ভালোবাসা প্রকাশিত হয়। ভালোবাসা সমুদ্রের ঢেউ হয়, ভালোবাসা ঝর্ণাধারা হয়, ভালোবাসা স্রোতস্বীনি নদী হয়, ভালোবাসা বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে আকাশ ও চোখের গহন থেকে। ভালোবাসা সবুজ ঘাসের গালিছায় জোছনাশোভিত হয়। ভালোবাসার পরশে মায়ের কোলের প্রানবন্ত ফুলের মতো শিশুটি খিলখিল করে হেসে ওঠে।
১০.
বিস্ময়কর সত্য হলো এই, ভালোবাসার জন্য মানুষ ধ্বংসের খেলায় মাতে, রাজনীতি করে, কূটনীতি করে, যুদ্ধ করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায়। জগতের জাতিতে জাতিতে গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পেছনে নিজ নিজ পক্ষের জন্য ভালোবাসা ক্রিয়াশীল। যদিও এই প্রকারের ভালোবাসায় যথেষ্ট মূর্খতা অন্ধতা বিদ্যমান। নিজ নিজ ধর্মের ভালোবাসার ডাকে অন্ধ মানুষ ধর্মযুদ্ধেও লিপ্ত হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াইগুলো সত্যিই বেদনাদায়ক। অথচ প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলোর মূল বাণীতে মানবজাতির জন্য ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। তবু অবস্থানগত বাধ্যতা নির্মমতা নিয়ে আসে। মানুষ নিজকে, নিজেদেরকে ভালোবেসে অন্যের ভালোবাসাকে আঘাত করে।
১১.
পশু পাখির ভালোবাসা দেখেছেন? আমি দেখেছি, চৈত্রের নিস্তব্দ দুপুরে অথবা শীতার্ত সন্ধ্যায় গায়ে গায়ে লেগে শিরীষের নিভৃত ডালে বসে আছে দু'টি ঘুঘু। আমি দেখেছি, গলায় গলা জড়িয়ে প্রশান্ত ছিলের পারে বসে থাকে হংস আর হংসিনী। মায়ের উষ্ণ ডানার অন্দরে বসে শুধু চোখ মুখ বের করে তাকিয়েছে মুরগী ছানারা। আমি বলেছি, 'বাচ্চারা মুখ লুকাও নইলে চিল নেউল দেখে ফেলবে।' সাথে সাথে ওরা ঢুকে গেছে মমতার অন্তঃপুরে। আমি দেখেছি, পরস্পরের কোলে মুখ লুকিয়ে ঘুমিয়েছে কুকুর কুকুরী।
১২.
ভালোবাসা আবেগজাত এক অদৃশ্য চেতনা। বাংলার ভাববাদী দর্শনের ভেতরে শুধু প্রেম আর প্রেম। তাই শত দুঃখ কষ্টে থেকেও বাঙালি মরমী সংগীতের সুধা পান করে করে অনিন্দ্য আনন্দে ভাসে। মরমী ভাবনায় নারী পুরুষের দেহজ প্রেমের রূপকে প্রকাশ পায় অনন্তের প্রেম। রাধা-কৃষ্ণ, লাইলি-মজনু, শিরী-ফরহাদ, রোমিও-জুলিয়েট ইত্যাকার সবাই প্রেম প্রকাশের উপলক্ষ। ওরা প্রতীক। ওরা উপমা। ওরা দৃষ্টান্ত। বিচ্ছেদ বিরহের গান গজলগুলো সমর্পিত আত্মার আহাজারি; পরমাত্মার বিচ্ছেদে জীবাত্মার বেদনাপ্লুত ক্রন্দন।মরমি সাধকেরা প্রেমাগুনে পুড়ে আংগারা হন; প্রেম দরিয়ায় তরী ভাসান; হৃদপিঞ্জরের পাখিকে দর্শনের চেষ্টা করেন।আর উজান গাঙ্গের নাইয়া মানে শত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে ছুটে চলা প্রেমিক প্রেমিকা। এই প্রেমের হিসাব বড় আজব; খুব চমৎকার। জাগতিক অংকের হিসাবটা হলো, এক+এক=দুই। কিন্তু এই প্রেমের হিসাবে ১+১=১ হতে হয়। ব্যাপারটি পুরোপুরি সাইকোলজিক্যাল। ব্যাপারটি মেন্টাল; ব্যাপারটি অদৃশ্যের; ব্যাপারটি মনের; ব্যাপারটি অরূপের। মেটেরিয়েলটা, বস্তুটা, দেহটা মাধ্যম মাত্র। আমার মনে হয়, মহাবিশ্বের সকল সৃষ্টিই প্রতীক।এই জগতমন্ডল প্রতীকায়িত। এই জগতে মায়া আছে, মায়ার বন্ধন আছে, আবার বিচ্ছেদও আছে। বিচ্ছেদ মায়ার অনুভূতিকে শাণিত করে। আবার মায়া জীবনকে উজ্জীবিতও করে, অনুপ্রাণিত করে। মায়া সৃষ্টিশীলতাকে ধারণ করে আদি থেকে অন্তের দিকে ছুটে চলেছে নিরন্তর।

প্রাসঙ্গিক দ্রস্টব্যঃ
জীবনের কঠিন বাস্তবতার সাথে লড়তে লড়তে পর্যুদস্থ পথিক বলেন, 'ভালোবাসা-টাসা কিছু নাই রে ভাই! শুধু প্রয়োজনে দিন যাপন আর কাজ করে যাওয়া।' কথাটা অভিমান থেকে বের হয়। তিনিও তার নিজের জীবনকে ভালোবেসে এবং তার জীবনের সাথে জড়িত অন্যান্য ভালোবাসার প্রসঙ্গগুলোকে রক্ষার তাগিদেই জীবনের ঘানি টানতে থাকেন।

Saturday, October 27, 2007

তোমার বুকের মধ্যদেশে ঘুমিয়েছিলাম শিশুর মতো

তোমার বুকের
মধ্যদেশে
ঘুমিয়েছিলাম
শিশুর মতন
মুখ লুকিয়ে
সাগর পারের
আকাশ তলে.....
সপ্তঋষি
তাকিয়েছিলো
অবাক ছিলো
তোমার ছায়া
আমার মায়া
খেলতেছিলো
শিশুর মতোন
আপন মনে
আমি বলি-
লুকোচুরি
খেলতে জানো?
বললে তুমি-
জানি জানি
অনেক জানি
ভড়ং টড়ং
নরম গরম
কানামাছি
অনেক জানি....
আমি বলি-
ভড়ং খেলা
কেমনে খেলে
শেখাও যদি
খেলতে পারি
বললে তুমি-
এই বাড়িটা
শিল্প বাড়ি
আমার তোমার
মনের বাড়ি
ভড়ং খেলা
এইখানেতে
নিষেধ-মানা
আমি বলি-
থাকুক তবে
ভড়ং খেলা
নরম গরম
কানামাছি
আজকে শুধু
ঘুরে ঘুরে
দেখবো বাড়ি...
ঘুরতে ঘুরতে
দেখতে দেখতে
শিল্প বাড়ির
মোহে পাগল
হলাম আমি যেই
ডাকলে তুমি 'এই
কুম্ভকর্ণ ওঠো এখন'
একটু রেগে
একটু জেগে
আমি আবার
ঘুমের দেশে
তোমার বুকের
মধ্যদেশে
ফের ঘুমাই ফের ঘুমাই..
.তোমার আমার
মনের বাড়ি
অতুল অতুল
ফুলেল ফুলেল
বকুল বকুল
পাগল আমি
পাগল তুমি
লোকে বলে
বলুক বলুক......
একটু পরে
হাতের কাছের
সিডির বাটন
চেপে দিয়ে
বললে শোন-
'মেরা পিয়া গায়া রেঙ্গুন
কিয়া হ্যায় উহাঁসে টেলিফোন
তোমহারি ইয়াদ ছাতাতি হ্যায়
জিয়া মে আগ্ লাগাতি হ্যায়'.......

তোমাকে খুঁজে পেতে কতদূর যেতে পারি?-২

এখানে আগের পর্ব

ঘ.
বিশ্বের প্রায় সকল সভ্য জাতির শিক্ষিত মানুষেরা মনে হয় স্টিফেন হকিংয়ের ' এ্যা ব্রিফ হিস্টরী অব টাইম' বইটি পড়েছেন অথবা বইটির বক্তব্য সম্পর্কে অবহিত। বইটি বেস্ট সেলার হয়েছিলো। বহু ভাষায় অনূবাদ হয়েছে। অনেক দেশের আকাশে বাতাসে একটা গুজবও ছড়িয়েছিলো এই মর্মে যে, নাস্তিকতার পক্ষে বইটি একটি মজবুত দলিল। বইটিতে না কি বিজ্ঞানী দেখিয়েছেন, আল্লাহ-খোদা নাই, আল্লাহ-খোদার দরকার নাই।আমি 'ব্রিফ হিস্টরী'সহ হকিংয়ের 'ব্ল্যাক হোল এ্যান্ড বেবী ইউনিভার্সেস' এবং বিভিন্ন গ্রন্থে থাকা বিক্ষিপ্ত প্রবন্ধগুলোও পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম ২০০০ সালে। এ বিষয়ে বিভিন্ন এ্যানসাইক্লোপেডিয়ার টীকাগুলোও পড়েছিলাম এবং 'ব্রিফ হিস্টরী' সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা ভাঙ্গার সেই ঐতিহাসিক সাক্ষাতকার, যা বিবিসি নিয়েছিলো, সেটাও পড়েছিলাম। কোথাও 'নাস্তিকতার পক্ষে দলিল' পেলাম না।বিস্ময়কর হলো, ইংরেজীভাষী বিবিসি'র প্রতিবেদক এবং 'স্টিফেন হকিং/এ্যা লাইফ ইন সায়েন্স' গ্রন্থের লেখকদ্বয়ও (মাইকেল হোয়াট ও জন গ্রিবিন) তাঁকে নাস্তিক মনে করেছিলেন। সবাইকে বোকা বানিয়ে বিবিসি'র সাক্ষাতকারে জানালেন আসল কথা হকিং।

'Stephen: All that my work has shown is that you don't have to say the way the universe began was the parsonnal whim of God.'(আমার ওইসব কাজ এটাই দেখিয়েছে, তুমি এরকম বলতে পার না যে, খোদার উদ্দেশ্যহীন খেয়ালের ফলে মহাবিশ্বের সূত্রপাত হয়েছে।) ১৯৯২ সালের ক্রিসমাস দিনে বিবিসি সম্প্রচার করেছিলো সাক্ষাতকারটি। হকিং এও জানালেন- 'It says nothing about whether or not God exists- just that he is not arbitrary.'হকিং আসলে বইটিতে কিছু হাইপথেটিক্যাল কথা বলেছিলেন বাক্যের আগে পরে মাঝখানে If, may, এবং shall/will এর পরিবর্তে would ব্যবহার করে।তিনি স্বীকারও করেছেন, বইটিতে অতি কথনের (ফ্লিপেন্ট টৌন) আশ্রয় নিয়েছিলেন। 'ব্রিফ হিস্টরী' প্রকাশের প্রায় এক যুগ পরে তিনি সানডে টেলিগ্রাফকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, I am afraid that however clever we may become we will never be able to travel faster than light. If we could travel faster than light, we could go back in time.'ঙ.ক্লাসিক ফিজিক্সের প্রতি অন্যান্য বিজ্ঞান-গবেষণা, শিল্প সাহিত্য দর্শন চর্চাকারীদের নজর রাখতেই হয়। উঁচুমানের পদার্থ বিজ্ঞানীদের ধ্যান এখন অদ্বিতীয়ত্বের (singularity) ধারণায় সমুজ্জল। আইনস্টইনের 'চতুর্থমাত্রা' শক্তি এক মাত্রা থেকে এলো কি না, তার গাণিতিক প্রমান পাওয়ার অপেক্ষায় মানবজাতি। আইনস্টাইন তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যায় করেছেন গ্রাভিটি, ইলেক্ট্রোমেগনেটিজম, স্ট্রং ফোর্স, উইক ফোর্স- এই চার শক্তি একই শক্তির বিভিন্ন রূপ, তা দেখার জন্য। কিন্তু তাঁর প্রচেষ্টা অসম্পন্ন থেকে গেছে। তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁর অসম্পন্ন ইকুয়েশনের সমাধান বের করার জন্য স্টিফেন হকিং সুকঠিন প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিলেন তাঁর বন্ধু রজার পেনরোজকে সাথে নিয়ে। স্টিফেনকে বলা হতো পজেটিভিস্ট আর পেনরোজকে প্লাটুনিস্ট। তাঁদের 'বিড়াল মৃত+বিড়াল জীবিত' বিতর্ক খুব আলোচিত পদার্থবিদদের কাছে।হকিং ও পেনরোজ মিলে আইনস্টাইনের জেনারেল রিলেটিভিটির সূত্র ধরে যে তত্বটি প্রমান করেছেন, সেই তত্বটি তাঁদেরকে মুশকিলে ফেলে দিয়েছে। কারণ এর ফলে ফিল্ড ইকুয়েশন নির্ভুলভাবে করা যাচ্ছে না। এতে দেখা যাচ্ছে ল অব ফিজিক্স ভেঙ্গে পড়ছে। তাঁদের তত্ব দেখিয়েছে, মহাবিশ্বের অতীতে এক অদ্বিতীয়ত্বে ছিলো। আর আইনস্টাইনের 'জেনারেল রিলেটিভিটি' এই ভবিষ্যত ধারণাই দিচ্ছে যে এর দ্বারা মহাবিশ্বের ভবিষ্যত ধারণা পাওয়া যাবে না। এটি হলো সাধারণ আপেক্ষিক তত্বের দুর্বলতা।বিজ্ঞানীদের টার্গেট এখন এমন একটি 'পূর্ণাঙ্গ তত্ব' যা সকল ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে। (চলবে)

আপনাকে আগুনে জ্বলতে হবে, জ্বালাতেও হবে!


অ.
আপনাকে আগুনে জ্বালানো হবে। পুড়ে মরতে রাজি আছেন?
আপনার জবাবঃ না, আমি জ্বলতে চাই না। কিছুতেই জ্বলতে চাই না। অপরাধী হই যদি অন্য শাস্তি দেন, আগুনে পোড়াবেন না।

আগুনে পুড়ে মরা! লোমহর্ষক!! ভয়ংকর!!একটি মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করে মারার দৃশ্য কোন সুশীল মানুষ দেখতে চাইবেন না এইটাই স্বাভাবিক, লোকে বলে।অথচ সত্য হলো, আগুন আবিস্কারের পর থেকে মহাপ্রলয় পর্যন্ত অগ্নিদহন চলছে, চলবে।আগুন ছাড়া সভ্যতা অচল আন্ধার উত্তাপহীন হিমশীতল।আগুন জ্বলছে সর্বত্র। বহ্নুত্সবে মেতে আছে মানবজাতি।ঘরে আগুন বাইরে আগুন; নগর বন্দর গ্রাম পথ ঘাট; এ্যাকচুয়েল জগত ভার্চুয়াল জগত মনোজগত সবখানে অগ্নিদহন চলছে। উনুনের আগুন.. বুননের আগুন.. গ্যাসের আগুন.. বাঁশের আগুন.. কাঠের আগুন.. বিজলীর আগুন..কয়লার আগুন..রাজনীতির আগুন..দেহের আগুন.. মনের আগুন.. ইত্যাকার অজস্র আগুন ছড়িয়ে আছে সবদিকে। আগুনে জ্বলার গানও আমাদের ভালো লাগে-'প্রেমের আগুনে প্রেমের আগুনে প্রেমের আগুনে জ্বলে গেলাম সজনী গোপীরিতি আজো শিখলাম না'কিংবা'সখী গো অন্তর জ্বালাইলায় পীরিতে'অথবা'আগুন লাগাইয়া দিলো কোণে হাছন রাজার মনে'নয়তো'আমার কি সুখে দিন রজনী কেউ জানে নাকুহু স্বরে মনের আগুন আর জ্বালাইও না'প্রেমের আগুনে জ্বলার মধ্যে নাকি বিরহানন্দ আছে। বিরহের মাঝে আনন্দ! ওরে বাবা! ভাবজগতের কথাবার্তা আপাতত থাক্। অগ্নিদহনের অন্য প্রসঙ্গগুলো দেখি।

আ.
বলা হয় আগুনের ব্যবহার শেখার মধ্য দিয়ে সভ্যতার শুরু। অথচ দোজখের কিংবা নরকের আগুনে জ্বলার সুসংবাদ দিলেই চেহারাখানা মলিন হয়ে যায় অগণন মানব মানবীর।রাগ করে কাউকে যদি বলেন, 'যা ব্যাটা জাহান্নামে যা।' ওই ব্যাটা শক্তি সামর্থে আপনার সমপর্যায়ের হলে দ্বিগুণ ভলিউমে ত্রিগুণ জ্বলে ওঠে জবাব দেবে- 'যা যা জাহান্নাম তোর লাইগা বানানো হইসে।'জাহান্নামের আগুন তো পরে আসবে। জগতের বহুবিধ আগুনে জ্বলে-পুড়ে অবস্থা লেজেগোবরে; অধিকাংশ মানবগোষ্ঠীর নাভিশ্বাস উঠছে। ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের লেলিহান শিখা মানুষের মনের অঙ্গনে। কেউ জ্বালায় কেউ জ্বলে। কেউ আগুন লাগায়, কেউ পাল্টা প্রতিশোধ নিতে লাগায়।আপনি আগুনে জ্বলতে চান না কিন্তু আক্রান্ত হলে নিজেও অন্যকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেন।'আগুন নিয়ে খেলা! দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা!' ওটা একটা জ্বলন্ত অগ্নিগিরি। বিস্ফোরিত হয়ে লাভা উদগীরণ শুরু হলে চৌদ্দগোষ্ঠী পুইড়া শেষ।'বাস্তবের অগ্নিকান্ডে মানুষের সর্বনাশ হয়। মানুষের মন-মস্তিস্কের আগুন কি কম ভয়ংকর? মানুষের রোষাণলে জনপদ ধ্বংস হয়। তীব্র অসন্তোষের দাবানল যদি নেভানো না-হয়, দেশ জাতির অস্তিত্ব নিদারুন সংকটে পতিত হতে বাধ্য।ব্যাক্তিমানুষ জাতিমানুষ হিংসার আগুনেও জ্বলে। কোন কারণ ছাড়া-অন্যায়ভাবে অন্য ব্যাক্তিকে অন্য জাতিকে হিংসা-বিদ্বেষের আগুনে জ্বালানো হয়। সম্প্রদায়ের কুশিক্ষা সাম্প্রদায়িক আগুন লাগায়।জগতমন্ডলের ইতিহাসটাই হলো আগুনে পোড়ার ইতিহাস। জ্বলেছে, জ্বালিয়েছে। জ্বালিয়েছে, জ্বলেছে।বর্তমান আর ভবিষ্যতটাও একই রকম। জ্বলন-পোড়ন থেকে মুক্তি কি নাই মানব জাতির?শত সহস্র অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা থাকা সত্বেও মানুষের জ্বলে-পুড়ে শেষ হওয়ার ইতি নেই!

ই.
আগুন সৃষ্টিশীল। আগুন ধ্বংসশীল। আগুন মায়ার। আগুন ছায়ার। আগুন ভালোবাসার। আগুনে জীবন। আগুনে মরণ। আগুনে স্মরণ। আগুনে শরণ। বড় বিস্ময়কর এই আগুন!

Friday, October 19, 2007

তোমার অন্তর্গত সুন্দর ভালোবাসার লাগি আমি শুণ্য হবো

Pain makes you grow.........
even though its difficult at the time
OLIVIA NEWTON-JOHN



অন্তিম কথা শুরুতেঃ

অনুভবের অতলে সন্তরণ করো যদি আমাকে খুঁজে পাবার সম্ভাবনা আছে...সম্পর্কের স্থিতি তুমি যেমতে চাহিবে সেমতই অগ্রগণ্য...সকল প্রকার ভালোবাসায় আমার বিশ্বাসকে গহনে নিয়ে যেও... আমি অস্তিত্বের শুণ্যতা কোলে তুলে নেব... তোমার অন্তর্গত সুন্দর ভালোবাসার লাগি আমি শুণ্য হবো, শুণ্য... শৈশবে আমি নিম শিরীষের ডালে কিংবা বনঝোপের অন্তরে ক্যামোফ্লাজ ঢাকা হতাম পাখিদের সাথে একাত্ম হবো বলে..দোয়েল শ্যামা ঘুঘু বুলবুল বুঝে নিয়েছিলো আমার নিয়ত ভালো-ভালোবাসা...কেননা বনের পাখিদের খুব কাছে পেয়েও ধরে ফেলার চেষ্টায় পাগল হতাম না..

শুরু এখান থেকেঃ
তুমি কে গো দূরের মায়াবীনি...আমাকে ভিজিয়ে রাখো সারাক্ষণ- সকাল দুপুর সন্ধ্যা...জীবন ভ্রমণ পথে আমরা কি প্রথাসিদ্ধ শুদ্ধ হতে চাই? বহু নিকষ আঁধার রাত পেরিয়েছি একা...বহু সন্ধ্যা ছিলো দীপহীন মলিন...এখন সন্ধ্যাবাতি হাতে তুমি হাসো আর বর্ষণ করো অকৃত্রিম প্রেমের বৃষ্টি...
ওগো মায়ার নারী...আমি তো ঘরের মায়া দূরে ঠেলে দেয়া এক পথিকপ্রবর, যাযাবর হতে চলেছিলাম...তুমি শোনালে ঘরের মায়ার আবাহন...আমি থমকে দাঁড়িয়েছি ঠায়...কতদূর যেতে হবে পথে পথে সুদূরের দিকে? তোমার কি ঘরের মায়া আছে? পৃথিবীটাও প্রতি সেকেন্ডে তিরিশ কিলোমিটার বেগে ভ্রাম্যমান দিনরাত...আমাকে জানিয়ে দিও প্রণয়ের ঘরে বসত করা আমার ভালো হবে কি না....


দূরের মোহমায়ামণি গো.....তুমি ভার্চুয়াল নও এ্যাকচুয়াল, বিশুদ্ধ এ্যাকচুয়াল ভালোবাসার কথা বললেই আমি বেদনা ভেজা হই, উজ্জীবিত হই....চুপচাপ দেখি আমাদের শরত প্রকৃতি ডাক দেয়.....এসো হে আগুন ঝরা ফাগুন, এসো হে পলাশ শিমুল কৃষ্ণচূড়ার দিন....

তোমাকে খুঁজে পেতে কতদূর যেতে পারি?-১

ক.
বিজ্ঞানীরা নানা প্রকার পরীক্ষা/নিরীক্ষার মাধ্যমে জগতমন্ডলের নিয়ম/সূত্রের বাস্তবতা দেখিয়েছেন। (ল অব কজ এ্যান্ড ইফেক্ট)আবিস্কৃত সূত্রের দূর্বলতাও চিহ্নিত হয়ে আসছে। আংকিক বিশ্লেষনের মাধ্যমে উন্নততর সূত্রও আবিস্কৃত হচ্ছে। আবার অধিবিদ্যার অনেক প্রকার প্রশ্নের জবাবও দিতে পারছেন না বস্তু পন্ডিত-বিজ্ঞানীরা। যেমনঃ চুম্বক লোহাকে আকর্ষণ করে কেন? এর কোন সদুত্তর নেই হাতে কলমে প্রমানের জগতে। শুধু বলা হলো, 'পারহেপস ইট হেজ বিন অরডার্ড টু ডু সো বাই ইটস ক্রিয়েটর।' দি মিস্ট্রিয়াস ইউনিভার্স-স্যার জেমস জিন)

খ.

বিজ্ঞানীরা প্রাণকে জানার জন্য গবেষণা চালালেন এই আশায় যে, জীবন মৃত্যুর রহস্য এতে জানা হয়ে যাবে। কিন্তু ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে খুঁজতে খুঁজতে প্রোটোপ্লাজমের কাছে গিয়ে ক্লান্ত পথিক বিজ্ঞানী। আর আগে যাওয়া সম্ভব না। প্রোটোপ্লাজমকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় বিশ্লেষণ করে লক্ষ্যে পৌঁছা যাচ্ছে না। প্রোটোপ্লাজম সেল ভাঙ্গলে ওখানে আর প্রাণ থাকছে না। 'দি মুমেন্ট উই ব্রেক ইট লাইফ ভেনিশেস।...........সায়েন্স উইল অলওয়েজ রিমেইন ইন দ্যা ডার্ক রিগার্ডিং দ্য রিয়েলিটি অব লাইফ।'বলা হলো, মানুষের অস্তিত্ব বিষয়ে মানুষের অজ্ঞতা সুগভীর। আর রাসায়নিক বিশ্লেষনের ক্ষেত্রে অজ্ঞতাটুকু(কেমিক্যাল এনালাইসিস) অধিক অধিক গভীরতর। (ম্যান, দি আননৌন-ডঃ এ্যালেক্সিস ক্যারল)। আমরা জানি না আমাদের হাড্ডি মাংস রক্ত প্রত্যঙ্গের সাথে মানসিক ও আধ্যাত্মিক সম্পর্ক কি। আমরা জানি না নীতিজ্ঞান, সুবিচার কিংবা দুঃসাহসের একটা ঈস্পিত মাত্রা কীভাবে অর্জন সম্ভব। বুদ্ধিবৃত্তিক, নৈতিক, অলৌকিক কার্যাবলীর আপেক্ষিক সম্পর্ক কী? আমরা জানি না।

গ.

কল্পবিজ্ঞানের স্পেসশীপে মানুষ অতীতে যেতে পারে। ভবিষ্যতেও ভ্রমণ করে। কিন্তু বাস্তবে? অসম্ভব জানালেন বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবী মানুষটি। নাম তাঁর স্টিফেন হকিং। তিনিই আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্বের একটি দুর্বলতা চিহ্নিত করেছেন বলে জানা যায়। তিনি বললেন, অতীতে বা ভবিষ্যতে যেতে হলে আলোর চেয়ে অধিক গতি সম্পন্ন বাহন দরকার। তিনি অংক করে জানালেন সেই গতি সম্ভব না। আলোর গতিটাই সর্বোচ্চ।কিছু সীমা কিছু সীমাবদ্ধতা মেনে নিতেই হয়? সসীম কিরূপে অসীমের খেলা বুঝে! বস্তুর জ্ঞান যেখানে গিয়ে থামে সেখান থেকে শুরু হয় অধিবিদ্যা? ভালোবাসার অনুভবের কী রাসায়নিক ব্যাখ্যা দিবে হে বস্তুবিজ্ঞানী বন্ধু! প্রিয়তম কিংবা প্রিয়তমার নিকটবর্তী হওয়ার আকূলতাটুকু কীভাবে বিশ্লেষণ করা যায়? দেহের জন্য দেহের আকর্ষণের ভেতরে যে অস্ফুট-ভাষাহীন প্রপঞ্চ লুকিয়ে আছে তারে আমি কীমতে প্রকাশ করি? যদ্দুর প্রকাশ পায় তার অধিক অপ্রকাশ রয়ে যায়। ক্রম সম্প্রসারণশীল। ক্রম বর্ধনশীল। কোন সুদূরে গিয়ে থেমেছে এই ক্রমের ইতি! সসীমের সীমা আছে। তাই খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্তি আসে। অসীম অক্লান্ত অহর্নিশ কিন্তু অনন্তের আবরণে আপনারে রেখেছেন ঢাকি!?
(চলবে)

Tuesday, September 18, 2007

আমার দেশের জন্য প্রাণ কাঁদে

আমার দেশের জন্য প্রাণ কাঁদে।
বছরের পর বছর ধরে পরবাসে থে'কে বুঝেছি স্বদেশপ্রেম; বুঝেছি স্বাদেশিকতা; বুঝেছি নিজের দেশ ও মানুষের নৈকট্য ছেড়ে দূরে থাকার যাতনা; বুঝেছি নিজের ভাষার, নিজের সংস্কৃতির, নিজের ভৌগলিক পরিবেশ ও অবস্থানের মাহাত্ম্য।দিবসের কর্মক্লান্তি নিয়ে ঘরে ফিরে টিভি চালু করি। আমার দেশের চ্যানেলগুলোতে চোখ রাখি। কখনো কখনো পেয়ে যাই চিত্রায়িত মর্মস্পর্শী দেশাত্মবোধক গান-
সব ক'টা জানালা খুলে দাও না..........ওরা আসবে চুপি চুপি, যারা এ দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেলো প্রাণ..............
অথবা
এই পদ্মা এই মেঘনা এই যমুনা সুরমা নদী তটে......কিংবামন পাখিটা যায়রে উড়ে যায় ধান শালিকের গাঁয়.......

দেশের দৃশ্য আর সুরের মাধুর্যে হারিয়ে যাই; অন্তরে দোলা লাগে; আবেগে আপ্লুত হই। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। আহা আমার দেশ, আমার সবুজ শ্যামল বাংলাদেশ।আমি নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হই-আজকাল অজস্র ভালোবাসার ডাক শুনি। আমার মা বাবা ভাই বোন বন্ধু স্বজন সকলেই হাজারবার ডাকেন আমাকে।

আমার জন্মভুমির সবুজ ঘাস, দিগন্ত বিস্তৃত ধানি জমি আর কৈশোরের স্মৃতি জড়ানো হাকালুকির হাওর এবং দূর পাড়া গাঁ'র ধুলোউড়া মাটিপথের স্মৃতিদৃশ্য আমাকে আকুল করে।আমাকে দু'হাতে ডাকে, গ্রীস্মের দুপুর; দুরন্ত বালক বালিকাদের নদী ও পুকুরে ঝাপ দেয়া, আম জাম কাঁঠাল পাকা সন্ধ্যায় কোকিলের ডাক, বর্ষার ঝিমঝিম বৃষ্টি, শরতের কাশফুল আর সাদা মেঘদের একাকার রূপ; হেমন্তের শিশির ভেজা স্নিগ্ধ সকাল; সোনালি ফসল ভরা মাঠ; নবান্নের উৎসব; কৃষকের প্রাণখোলা হাসি; শীতের নরম রোদের পরশ; আগুনঝরা ফাগুনের আবাহন; দোয়েলদের নেবু শাখায় বসে শিস দেয়া; চা বাগানের ছায়াদানকারী ইউক্যালিপটাসের পাতাগুলোর তিরিতিরি নড়তে থাকা; বায়তুল মোকাররম ও শাহজালাল মসজিদের আজান; সুরমা নদীর উজানে বেয়ে চলা মাঝির গান, আবদুল আলীমের পল্লীগীতি, লালনগীতি, হাসনগীতি, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, জীবনানন্দ বাবুর কবিতা, বাংলা একাডেমীর বইমেলা, অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, আমার সিলেট শহরের অলিগলি; একান্ত কিছু স্মৃতির জাফলং, মাধবকু্ন্ডের জলপ্রপাত, চট্টগ্রামের ফয়েসলেক, সুন্দরবনের সেগুন জারুল সুন্দরীদের ছায়ায় ব্যাঘ্রশাবকদের খেলা,হরিণের পাল এবং,হাঁ এবং হঠাৎ রেগে ওঠে গর্জে উঠা আব্বার মায়াবী ধমক ইত্যাদি আমাকে গভীর মমতায় ডাকে। আমি এইসবের আহবানকে প্রত্যাখ্যান করতে পারি না। আমার প্রতিদিনের সকল কাজের মাঝে এইসবের আকুল আহবান আমাকে আন্দোলিত করে। আসো, এসে যাও, ফিরে আসো নিজের জন্মভুমিতে, আপন মায়ের মাটিতে।মা তো আমাকে সারাক্ষণ ডাকেন- আয় বাবা আয়, অনেক তো রইলি বিদেশে, এবার দেশে ফিরে আয়, আমার বুকের মানিক তুই বাবা, তোকে আমি অনেকদিন পর চোখের সামনে দেখতে পেলে আমার পরাণ জুড়িয়ে যাবে।আমার মায়ের কোন তুলনা নেই। একটি গান মনে পড়ে-মধুর আমার মায়ের হাসি চাঁদের মুখে ঝরেমাকে মনে পড়ে আমার মাকে মনে পড়ে।

জানি, এইসবই আবেগের কথা। স্বপ্নময়তার কথা। জীবন যাপনের বাস্তবতা অন্যরকম। কঠিন কঠোর। পরবাসে আসতে হয়েছিলো অর্থনৈতিক অবস্থার কারণেই। জগত ভ্রমণের সখ জেগেছিলো কৈশোরে। কিন্তু নানান উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত জীবনের এই পর্যায়ে নিজকে ভিন্ দেশের কর্মস্থলে দেখতে ভালো লাগছে না। বেশ ক'বছর পর গত বছর দেশে গিয়েছিলাম। পুরোনো পেশায় (সাংবাদিকতা) ঢুকে যেতে চেয়েছিলাম। ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকও পরামর্শ দিলেন- আরো ক'টা বছর থাকেন বিদেশে। দেশের পরিস্থিতি টালমাটাল। ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমি জানি, আমার দেশের অধিকাংশ রাজনীতিক যদি দুর্বৃত্ত না-হতো, আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম। আর আমি এও জানি, আমার দেশের অজস্র সূর্য সন্তানেরা মধ্যপ্রাচ্য আফ্রিকা ইউরোপ আমেরিকাকে নিজ নিজ কর্মদক্ষতার দৌলতে গৌরবান্বিত করেছে।
আমি নিশ্চুপ নিথর নিস্তব্ধ হয়ে চ্যানেল আইতে দেখি হায়দার হোসেন গাইছেন-
কী দেখার কথা কী দেখছি
কী শুনার কথা কী শুনছি
কী বলার কথা কী বলছি...............

সারওয়ার চৌধুরী আবুধাবী ইউএই

সামহোয়ারইন ব্লগে রাজাকার বিরোধী আন্দোলন এবং ব্রাত্য রাইসু'র রাজাকার সন্তানের পক্ষাবলম্বনের প্রাসঙ্গিকতা


অবশেষে ব্রাত্য রাইসুও রাজাকার সন্তানদের পক্ষে কথা বলেছেন। তাই অনেকে তাকে তিরস্কার করছেন।কেন? তিনি সুবিচারের কথা বলেছেন এই অপরাধে। ঘৃণার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এই অপরাধে।দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বমানবতার সাথে এক হওয়ার কথা বলেছেন এই অপরাধে।

আসল কথাটা হলো, যার দৃষ্টিক্ষমতা যদ্দুর তিনি তদ্দুরই দেখবেন। আর অন্যের আমার চেয়ে দেখার ক্ষমতা বেশি থাকতে পারে তা স্বীকার না-করা এক ধরণের কূপমন্ডুকতা।

উল্লেখ্য, সেই পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশ কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন হয়েছে। আন্তর্জাতিক অনেক বিষয়ে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও পাকিস্তানের সাথে কন্ঠ মিলাতে হয়। তাছাড়া ঢাকা চেম্বার, দিল্লি চেম্বার ইসলামবাদ চেম্বার সদস্যরা গলায় গলায় ভাব করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর রাজনীতিকরাও ইন্টারলিংকও রাখেন পরস্পরের প্রতি। আর মিডিয়ায় তাদের ভাষায় কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছে না। এখানে সততা কোথায়? নাকি এইসব শুধু পাবলিককে চুতিয়া বানাবার জন্য? এইসব বিরোধিতার মধ্যে কি রাজনীতির ব্যবসা ফুটে উঠে না?

ব্রাত্য রাইসুদেরকে তথাকথিত হিংসা-বিদ্বেষের রাজনীতির পক্ষ বিপক্ষের রাজনীতির মাপকাঠিতে বিচার করা ঠিক না। তারা রাজনৈতিক দলের সাথে অঙ্গিকারাবদ্ধ না।আর কোন মানুষ সব বিষয়ে কারো বিপক্ষে যেতে পারে না। একটি বিষয়ে যিনি বিপক্ষে অন্য অনেক বিষয়ে তিনি আপনার পক্ষের হতে পারেন। মানুষ তো অনেকানেক বিষয়ের সাথে জীবন যাপন করে।

এই ব্লগটাই কি দেশের সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে? নিশ্চয়ই না। অতএব কারো কোন বিষয়ে বিপক্ষাবলম্বনের ব্যাপারটি সংযত মাত্রাজ্ঞানের আলোকে বিচার করাই কি উচিত না?আরেকটি ব্যাপার, আমরা বাঙালি, আমরা বাংলাদেশী। আমাদের একটা কমন সংস্কৃতি আছে। আবার ধর্মীয় সংস্কারের আলোকে আমাদের সংস্কৃতিতে পার্থক্য আছে। এমতাবস্থায় কেউ যদি কারো দেশজ সংস্কৃতির সাথে একাত্মতাকে ধর্মবিরোধী বলে সেটা অবিচার। আবার কেউ তার ধর্মীয় সংস্কৃতির গুণকীর্তন করাটাকে বাঁকা চোখে দেখে সেটাও অবিচার।

বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ ধর্মপ্রাণ। এখানে যে-কোন বিতর্কিত ইস্যুর ধর্মীয় ফায়সালা পাবলিক চায়। নইলে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যারা কথা বলেন, তাদেরকে যে-বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে, তা হলো, কেন যুদ্ধাপরাধীদের আজো বিচার হয় না। কারা এর পেছনে?
বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় চিরস্থায়ী শত্রুমিত্রের ধারণাকে সম্মান করা হয় না। ভিয়েতনামের কাছে সম্মুখযুদ্ধে পরাজিত আমেরিকা এখন চুটিয়ে ব্যবসা করছে ওই দেশটির সাথে। কেউ বলতে পারেন এতে বন্ধুত্ব নেই। ব্যবসা করছে দু'পক্ষ আর দু'পক্ষই লাভের হিসাব গুনছে। ওখানে যদি বন্ধুত্ব নাই থাকে থাক্, পরস্পরের প্রয়োজন তো পূরণ হচ্ছে।


আমরা চাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক অবিলম্বে এবং যাকে তাকে রাজাকার বলাও বন্ধ হোক।

অতঃপর দেখলাম মৃতদেহটি আমারই!

অবাক হওয়ার ঘোর কাটছে না। পৃথিবীতে এমন ঘটনা হয়েছে কি কখনো! আমার জানা নেই।
বহুতল ভবনের উপর থেকে পড়ে একটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। খবরটি পুরো এলাকায় ঢেউ তুলেছে। প্রতিবেশীরা বিমর্ষ, বেদনাপ্লুত। চাপা ক্রন্দন, চিৎকার ক্রন্দ্ন কিংবা বিলাপ নেই। অথচ দরদভারাক্রান্ত চারপাশ।


এই লোক আত্মহত্যা করার মানুষ না। নিশ্চয় কেউ করেছে হত্যা। কিংবা দুর্ঘটনার শিকার।
ঘটনাস্থল লোকারণ্য। পুলিশ গোয়েন্দারাও এসেছেন। মানুষেরা লোকটি ভালো ছিলো তাই এক নজর দেখে আহা আহা করে চলে যাচ্ছে।

আমিও খবরটি শুনে আকুল হয়ে দৌড়ে যাই অকুস্থলে। বিস্ময়করভাবে দেখলাম, লুঙি ও গ্যান্জি পরা মানুষটি কয়েকটি কপি হয়ে পড়ে আছেন। কপিগুলো আলাদা আলাদা। পতিত হওয়ার সময়, পতিত হওয়ার কিছুক্ষণ পর, তার কিছুক্ষণ পর কী অবস্থায় ছিলো মানুষটি।

অবাক হওয়ার কথা না! এরকম হয় কীভাবে? জীবন্ত কপি মানুষের!
তার চেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপারটি হলো, মৃতদেহটিকে ভালো করে দেখলাম এবং পুলিশ ও গোয়েন্দাদেরকে বললাম, আপনারা নিশ্চিত হতে পারেন- এ আমারই মৃতদেহ, কোন সন্দেহ নেই তাতে।

কিন্তু আমি তো শুয়েছিলাম আমার নির্ধারিত কক্ষে! পড়ে গিয়ে মৃত্যু হলো কখন কীভাবে আমার তা জানা নেই।আমি নিজেও ভয় পেলাম, বিস্মিত হলাম। মনে হলো আমার সম্পূর্ণ অস্তিত্বটাই প্রশ্নবোধক চিহ্ন।
কী এর তাৎপর্য? কেন এমন হলো? আমার ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর এর জবাব খুঁজতে থাকি।



নোটঃ একজন বিখ্যাত লেখক, নাম ভুলে গেছি, তিনি নাকি প্রতিরাতের স্বপ্ন লিপিবদ্ধ করে রাখতেন।

সামহোয়ারব্লগের ভার্চুয়াল ফাইটিং প্রসঙ্গে


আপনারা যারা শুধু ভার্চুয়াল ফাইটিং করছেন করুন। আমি কিন্তু সকল ব্লগ-বাড়িতে ধর্ণা দেই। কারো বাড়িতে মন্তব্য-উপহার দেই বেশি, কাউকে কম। কমবেশি নির্ভর করে পোস্টের ওজনের উপর।
কারণ কি জানেন?
কারণ, এই সামহোয়ার ভার্চুয়াল দেশটির ব্লগ-বাড়ির সদস্যরা, মানে ব্লগাররা সকলেই মানুষ।মানুষ হচ্ছে এক বিস্ময়কর ক্ষমতাধর অথচ অসহায় প্রাণী। মানুষ সৃস্টিশীল মানুষ ধ্বংসশীল। মানুষের আছে বিস্ময়কর প্রতিভার ক্ষমতা।আবার দেখুন, মানুষের কপালের নীচে আছে মাত্র দু'টি চোখ। পেছন থেকে আক্রমণ করে খুব সহজেই মানুষকে মেরে ফেলে যায়। ( আধ্যাত্মিক চোখের অধিকারীরা আলাদা, এই ভার্চুয়াল দেশে কেউ আছেন বলে মনে হয় না। ) তাছাড়া মানুষ নিজের মতো করে জীবন যাপন করতে যেয়েও হাসি কান্নার দোলায় দোলে।
দার্শনিক লেখক বার্ণার্ড শ বলেছিলেন, লাইফ ইজ নাথি বাট আন্ডারস্টান্ডিং এ্যান্ড কম্প্রোমাইজিং।
জগতের অধিকাংশ মানুষের বেলায় একটি প্রমানিত সত্য হলো, সুযোগ পেলেই সকল প্রকার নীতি নৈতিকতার মাথা খেয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কারণ শত প্রকার সমৃদ্ধি সত্বেও মানুষ অস্তিত্বের সংকটে ভোগে। আর হ্যাঁ, এটাও সত্য যে, খুব কম সংখ্যক মানুষ প্রতিটি সমাজে আছেন, যারা একটা নীতি বা নৈতিকতা আঁকড়ে ধরে থাকেন আমৃত্যু। ওরা ব্যাতিক্রম।মানুষের সাধারণ স্বভাব হলো এই, যে-মানুষটি কারো জন্য নিষ্ঠুর নির্দয়, সেই মানুষটিই আবার কারো জন্য খুব দয়ালু-দয়াল বাবা সাঁই। আবার যার প্রতি নির্দয় হয়, তার প্রতি সময়ের ব্যবধানে সদয় হয়।
জগতের কল্যাণ অকল্যাণের ধারণাটি আপেক্ষিক্ একটি কল্যাণমুলক কাজ একটি জনগোষ্ঠীর সকলের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। কারো জন্য অকল্যাণকর হয়ে দেখা দেয়। ফলে বিরোধ সৃষ্টি হয়, আন্দোলন-সংগ্রামের উপলক্ষ তৈরী হয়।
বর্তমান বিশ্বের সবচে' ক্ষমতাধর মানুষটি হলেন জর্জ ডব্লিউ বুশ। তার সাম্রাজ্যবাদী নীতি সমর্থন করে না বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ। 'উইথ মি অর এগেইন্সট মি' এই নীতি প্রয়োগ করে তিনি বিশ্বে সরদারী করছেন। কিন্তু নিরপেক্ষ বিচারের কথা যদি বলি, তাহলে বলতে হয়, এই বুশ মধ্যপ্রাচ্যের লাখো লাখো নারী পুরুষ শিশুর অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছেন, আবার এই বুশই আফ্রিকার লাখো লাখো কঙ্কালসার নারী পুরুষ শিশুর খাদ্য বস্ত্র বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। যদিও দশ আনা লুট করে পাঁচ আনা বন্টন করে দেখাচ্ছেন আর পাঁচ আনা আমেরিকান মহান জাতির খেদমতে ব্যয় করছেন।
যাক্ এবার আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গে একটু বলি। দাবী আদায়ের আন্দোলনের এক ঐতিহাসিক পটভূমিতে আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু হয়েছিলো। আমাদের সাহিত্যাঙ্গনের একটি অন্যতম প্রধান ব্যর্থতা হলো, এই মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিশ্বমানের সফল কোন উপন্যাস গল্প নাটক চলচ্চিত্র আমরা তৈরী করতে পারি নি। শ্রদ্ধাভাজন জহির রাহয়ানের কাজ দেশের বাইরে সমাদৃত হয়েছে কিন্তু সমগ্রকে স্পর্শ করতে পারে নি। আমি এখানে সামগ্রিক সফলতার কথা বলছি্ যেমনটি সফল হয়েছে যুদ্ধের পটভূমিতে রচিত উপন্যাস (উপন্যাসেরও অধিক) 'ওয়ার এ্যান্ড পিস'। লেখক লিও টলস্টয়। সভ্য দুনিয়ার সকল জাতির কাছে বইটি সমাদৃত। কেন? সংক্ষেপে উত্তরঃ যুদ্ধের বিবদমান দু'টি পক্ষের প্রতি মানবিক বিবেচনা রাখা হয়েছে। দু'টি পক্ষের অবস্থানকে মানবিক মানদন্ডে বিচার করা হয়েছে এবং অমোঘ নিয়তির হস্তক্ষেপের বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সুগভীর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। ওখানে কাউকে ধোয়া তুলসি পাতা আর কাউকে জানোয়ার বলা হয় নি।
দু'দিন আগে শ্রদ্ধাভাজন নাট্যকার ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ টিভি টক শোতে জানালেন, ভারতের সেই জেনারেল অরোরা'র সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তিনি। অরোরা আমাদের বিজয় দিবসকে স্বীকার করে না। ওরা বলে ওই দিনটি ওদের বিজয়ের। আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধকে ওরা বলে পাক-ভারত যুদ্ধ। ভারতের শিক্ষিত সমাজের অনেককে বলতে শুনেছি, 'ইট ওয়াজ দ্যা ভিক্টরী ডে ফর ইন্ডিয়া'। অথচ সত্য হলো এই, আমাদের দুঃসাহসী দামাল সন্তানদের অল আউট গরিলা আক্রমণে পাক সেনারা পর্যুদস্থ হয়ে আত্মসমর্পনে বাধ্য হয়েছিলো। প্রতিবেশি সাহায্যকারী বন্ধুদের এই আচরণ আমাদেরকে কষ্ট দেয়।
পরিশেষে, এই সামহোয়ার ব্লগের অনেকে এজেন্ডা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রতিপক্ষকে তাড়িয়ে দেয়ার মনোভাব ব্যাক্ত করেন। কেউ কেউ প্রতিপক্ষের ব্লগ এড়িয়ে যান। কিংবা মন্তব্য করলেও তা হয় তীব্র নেতিবাচক। রেটিং কমান নয়তো রেটিং করেন না। আমি সকল ব্লগ-বাড়িতে ধর্ণা দেই মানবিক মুল্যবোধের তাগিদে। যিনি আমাকে তিরস্কার করেন তার ভালো পোস্টে গিয়ে সরল স্বীকারোক্তি লিখি। সর্বোচ্চ রেটিং দাগাই।
বিভাজন খিস্তি-খেউড় গালাগালিতে যারা আনন্দ পান তাদের উদ্দেশে আমার বলার কিছু নেই।

সন্ধ্যা আমাকে কিছু অস্পস্ট অন্ধকার দেবে

রাত্রীর কাছ থেকে নয়, সন্ধ্যার কাছে চেয়েছিলাম এক প্রস্ত চাদরের সমপরিমাণ কিছু অস্পস্ট অন্ধকার।মুলতঃ আমার ততটুকু অন্ধকার দরকার, যতটুকু অমলিন অন্ধকারের ছোঁয়া দিয়ে শিল্পী প্রাণবন্ত করে তোলেন আলোকিত শিল্পের অবয়ব।
আলো আছে। আলো আছে আমার কাছে প্রয়োজনের চাইতেও অধিক। আলোর অভাবে আমার পথচলা বিঘ্নিত হয় না কখনো। মানুষেরাও বলে আমার কাছে নাকি অনেক প্রকার আলো সমবেত হয় প্রতিদিন। আমিও দেখি, আলোগুলো প্রকারভেদে প্রকাশিত।
কিন্তু সারাক্ষণ আলোয় আলোয় থাকা কিংবা আলো নিয়ে মাতামাতি নাড়াচাড়া অথবা বলতে পারেন প্রতিদিন আলোদের প্রেমে পড়ে থাকতে থাকতে আমি কিছু আলোহীনতার প্রয়োজন অনুভব করছি।
আমি জানি, আলোদের বহুমূখী শক্তি আছে। আলোগুলো পারে মুহুর্তেই রাত্রীর নিকষ অন্ধকারদের বিলীন করে দিতে। আমি প্রতিদিন দেখি, অজস্র বহুমূখী অন্ধকার আলোদের কাছে পরাজিত হয়।
তবু আমার কেন জানি মনে হলো, হতে পারে মানব জনমের মর্মে আছে তা, আলোগুলোকে মহিমান্বিত করার জন্য আমার কিছু অস্পস্ট আঁধার দরকার। সন্ধ্যা বলেছে, আমার যতটুকু দরকার ততটুকু সে দেবে দ্বিধাহীন। বিনিময়ে কিছু চাইবে না আমার কাছে।
কেননা সন্ধ্যা জানে, আমার জীবন জগত পরিভ্রমন শেষে সন্ধ্যার ঘাট হয়ে উড়ে যাবে অনন্তের দিকে।

Tumi sundor tai cheye thaki priyo

সুন্দর। সবাই সুন্দরকে পেতে চায়। যিনি বলেন তার সুন্দর না হলেও চলে তিনিও একটা নির্দিষ্ট মাত্রার সৌন্দর্যকে ধারণ করেন। অন্যের তুলনায় হয়তো তার সৌন্দর্যবোধ সামনের কাতারে আসতে পারে না।সুন্দরের জন্যও মানুষ প্রাণপণ লড়াই করে। সেটা হয় এভাবে, নিজের সৌন্দর্যবোধকে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে জীবন যাপনের পাশাপাশি তা লালন করার জন্য মানুষকে একটা নির্দিষ্ট স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে হয়।সেই স্বাধীনতার ব্যাপ্তি ব্যাক্তি থেকে সমাজ রাষ্ট্র পর্যন্ত বিস্তৃত। আমরা অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষসমেত আমাদের সাংস্কৃতিক স্বকীয়তার সৌন্দর্যবোধকে লালন করার জন্য সার্বভৌমত্ব অর্জনের লড়াই করেছি, স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেছি। তার আগে আমাদের সংস্কৃতির প্রাণ, আমাদের ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করেছি। উর্দূকে চাপিয়ে দেয়ার প্রয়াসকে উড়িয়ে দিয়েছি। কেননা আমাদের সৌন্দর্যবোধের সবগুলো শাখা প্রশাখাকে কিংবা অবলম্বনকে আমরা পরাধীন রাখতে পারি না।আবার বিস্ময়কর ব্যাপারটি হলো, বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিটি মানুষের মতো, প্রতিটি বাঙালিও ব্যাক্তিগত সৌন্দর্যবোধকে গুরুত্ব দেয়। ব্যাক্তির সুন্দরতা কখনো কখনো পরিবার ও সমাজের অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেই অসন্তোষের আগুন নেভানোর জন্য সুন্দর ভারসাম্য দরকার। ভারসাম্য-সুন্দর মানুষের প্রজ্ঞা থেকে বের হয়। যে-পরিবারে যে-সমাজে ভারসাম্য-সুন্দর প্রবল, সেই পরিবারে সেই সমাজে অসন্তোষ খুব প্রভাব ফেলতে পারে না।তাছাড়া নারী-সুন্দর পুরুষ-সুন্দরের লৈঙ্গিক লড়াই তো আছেই। সেখানেও ভারসাম্য-সুন্দর দিতে পারে ভালোবাসা-সুন্দরের সুনিবিড় ছায়া।
আসুন আমরা সবাই মিলে গাই-এই লভিনু সঙ্গ তব সুন্দর ওহে সুন্দর.......(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
কিংবা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরস্পরকে মুল্যায়ন করতে গিয়ে গেয়ে উঠি-
তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সে কি মোর অপরাধ...........(কাজী নজরুল ইসলাম)