Pages

Tuesday, September 18, 2007

আমার দেশের জন্য প্রাণ কাঁদে

আমার দেশের জন্য প্রাণ কাঁদে।
বছরের পর বছর ধরে পরবাসে থে'কে বুঝেছি স্বদেশপ্রেম; বুঝেছি স্বাদেশিকতা; বুঝেছি নিজের দেশ ও মানুষের নৈকট্য ছেড়ে দূরে থাকার যাতনা; বুঝেছি নিজের ভাষার, নিজের সংস্কৃতির, নিজের ভৌগলিক পরিবেশ ও অবস্থানের মাহাত্ম্য।দিবসের কর্মক্লান্তি নিয়ে ঘরে ফিরে টিভি চালু করি। আমার দেশের চ্যানেলগুলোতে চোখ রাখি। কখনো কখনো পেয়ে যাই চিত্রায়িত মর্মস্পর্শী দেশাত্মবোধক গান-
সব ক'টা জানালা খুলে দাও না..........ওরা আসবে চুপি চুপি, যারা এ দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেলো প্রাণ..............
অথবা
এই পদ্মা এই মেঘনা এই যমুনা সুরমা নদী তটে......কিংবামন পাখিটা যায়রে উড়ে যায় ধান শালিকের গাঁয়.......

দেশের দৃশ্য আর সুরের মাধুর্যে হারিয়ে যাই; অন্তরে দোলা লাগে; আবেগে আপ্লুত হই। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। আহা আমার দেশ, আমার সবুজ শ্যামল বাংলাদেশ।আমি নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হই-আজকাল অজস্র ভালোবাসার ডাক শুনি। আমার মা বাবা ভাই বোন বন্ধু স্বজন সকলেই হাজারবার ডাকেন আমাকে।

আমার জন্মভুমির সবুজ ঘাস, দিগন্ত বিস্তৃত ধানি জমি আর কৈশোরের স্মৃতি জড়ানো হাকালুকির হাওর এবং দূর পাড়া গাঁ'র ধুলোউড়া মাটিপথের স্মৃতিদৃশ্য আমাকে আকুল করে।আমাকে দু'হাতে ডাকে, গ্রীস্মের দুপুর; দুরন্ত বালক বালিকাদের নদী ও পুকুরে ঝাপ দেয়া, আম জাম কাঁঠাল পাকা সন্ধ্যায় কোকিলের ডাক, বর্ষার ঝিমঝিম বৃষ্টি, শরতের কাশফুল আর সাদা মেঘদের একাকার রূপ; হেমন্তের শিশির ভেজা স্নিগ্ধ সকাল; সোনালি ফসল ভরা মাঠ; নবান্নের উৎসব; কৃষকের প্রাণখোলা হাসি; শীতের নরম রোদের পরশ; আগুনঝরা ফাগুনের আবাহন; দোয়েলদের নেবু শাখায় বসে শিস দেয়া; চা বাগানের ছায়াদানকারী ইউক্যালিপটাসের পাতাগুলোর তিরিতিরি নড়তে থাকা; বায়তুল মোকাররম ও শাহজালাল মসজিদের আজান; সুরমা নদীর উজানে বেয়ে চলা মাঝির গান, আবদুল আলীমের পল্লীগীতি, লালনগীতি, হাসনগীতি, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, জীবনানন্দ বাবুর কবিতা, বাংলা একাডেমীর বইমেলা, অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, আমার সিলেট শহরের অলিগলি; একান্ত কিছু স্মৃতির জাফলং, মাধবকু্ন্ডের জলপ্রপাত, চট্টগ্রামের ফয়েসলেক, সুন্দরবনের সেগুন জারুল সুন্দরীদের ছায়ায় ব্যাঘ্রশাবকদের খেলা,হরিণের পাল এবং,হাঁ এবং হঠাৎ রেগে ওঠে গর্জে উঠা আব্বার মায়াবী ধমক ইত্যাদি আমাকে গভীর মমতায় ডাকে। আমি এইসবের আহবানকে প্রত্যাখ্যান করতে পারি না। আমার প্রতিদিনের সকল কাজের মাঝে এইসবের আকুল আহবান আমাকে আন্দোলিত করে। আসো, এসে যাও, ফিরে আসো নিজের জন্মভুমিতে, আপন মায়ের মাটিতে।মা তো আমাকে সারাক্ষণ ডাকেন- আয় বাবা আয়, অনেক তো রইলি বিদেশে, এবার দেশে ফিরে আয়, আমার বুকের মানিক তুই বাবা, তোকে আমি অনেকদিন পর চোখের সামনে দেখতে পেলে আমার পরাণ জুড়িয়ে যাবে।আমার মায়ের কোন তুলনা নেই। একটি গান মনে পড়ে-মধুর আমার মায়ের হাসি চাঁদের মুখে ঝরেমাকে মনে পড়ে আমার মাকে মনে পড়ে।

জানি, এইসবই আবেগের কথা। স্বপ্নময়তার কথা। জীবন যাপনের বাস্তবতা অন্যরকম। কঠিন কঠোর। পরবাসে আসতে হয়েছিলো অর্থনৈতিক অবস্থার কারণেই। জগত ভ্রমণের সখ জেগেছিলো কৈশোরে। কিন্তু নানান উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত জীবনের এই পর্যায়ে নিজকে ভিন্ দেশের কর্মস্থলে দেখতে ভালো লাগছে না। বেশ ক'বছর পর গত বছর দেশে গিয়েছিলাম। পুরোনো পেশায় (সাংবাদিকতা) ঢুকে যেতে চেয়েছিলাম। ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকও পরামর্শ দিলেন- আরো ক'টা বছর থাকেন বিদেশে। দেশের পরিস্থিতি টালমাটাল। ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমি জানি, আমার দেশের অধিকাংশ রাজনীতিক যদি দুর্বৃত্ত না-হতো, আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম। আর আমি এও জানি, আমার দেশের অজস্র সূর্য সন্তানেরা মধ্যপ্রাচ্য আফ্রিকা ইউরোপ আমেরিকাকে নিজ নিজ কর্মদক্ষতার দৌলতে গৌরবান্বিত করেছে।
আমি নিশ্চুপ নিথর নিস্তব্ধ হয়ে চ্যানেল আইতে দেখি হায়দার হোসেন গাইছেন-
কী দেখার কথা কী দেখছি
কী শুনার কথা কী শুনছি
কী বলার কথা কী বলছি...............

সারওয়ার চৌধুরী আবুধাবী ইউএই

সামহোয়ারইন ব্লগে রাজাকার বিরোধী আন্দোলন এবং ব্রাত্য রাইসু'র রাজাকার সন্তানের পক্ষাবলম্বনের প্রাসঙ্গিকতা


অবশেষে ব্রাত্য রাইসুও রাজাকার সন্তানদের পক্ষে কথা বলেছেন। তাই অনেকে তাকে তিরস্কার করছেন।কেন? তিনি সুবিচারের কথা বলেছেন এই অপরাধে। ঘৃণার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এই অপরাধে।দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বমানবতার সাথে এক হওয়ার কথা বলেছেন এই অপরাধে।

আসল কথাটা হলো, যার দৃষ্টিক্ষমতা যদ্দুর তিনি তদ্দুরই দেখবেন। আর অন্যের আমার চেয়ে দেখার ক্ষমতা বেশি থাকতে পারে তা স্বীকার না-করা এক ধরণের কূপমন্ডুকতা।

উল্লেখ্য, সেই পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশ কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন হয়েছে। আন্তর্জাতিক অনেক বিষয়ে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও পাকিস্তানের সাথে কন্ঠ মিলাতে হয়। তাছাড়া ঢাকা চেম্বার, দিল্লি চেম্বার ইসলামবাদ চেম্বার সদস্যরা গলায় গলায় ভাব করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর রাজনীতিকরাও ইন্টারলিংকও রাখেন পরস্পরের প্রতি। আর মিডিয়ায় তাদের ভাষায় কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছে না। এখানে সততা কোথায়? নাকি এইসব শুধু পাবলিককে চুতিয়া বানাবার জন্য? এইসব বিরোধিতার মধ্যে কি রাজনীতির ব্যবসা ফুটে উঠে না?

ব্রাত্য রাইসুদেরকে তথাকথিত হিংসা-বিদ্বেষের রাজনীতির পক্ষ বিপক্ষের রাজনীতির মাপকাঠিতে বিচার করা ঠিক না। তারা রাজনৈতিক দলের সাথে অঙ্গিকারাবদ্ধ না।আর কোন মানুষ সব বিষয়ে কারো বিপক্ষে যেতে পারে না। একটি বিষয়ে যিনি বিপক্ষে অন্য অনেক বিষয়ে তিনি আপনার পক্ষের হতে পারেন। মানুষ তো অনেকানেক বিষয়ের সাথে জীবন যাপন করে।

এই ব্লগটাই কি দেশের সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে? নিশ্চয়ই না। অতএব কারো কোন বিষয়ে বিপক্ষাবলম্বনের ব্যাপারটি সংযত মাত্রাজ্ঞানের আলোকে বিচার করাই কি উচিত না?আরেকটি ব্যাপার, আমরা বাঙালি, আমরা বাংলাদেশী। আমাদের একটা কমন সংস্কৃতি আছে। আবার ধর্মীয় সংস্কারের আলোকে আমাদের সংস্কৃতিতে পার্থক্য আছে। এমতাবস্থায় কেউ যদি কারো দেশজ সংস্কৃতির সাথে একাত্মতাকে ধর্মবিরোধী বলে সেটা অবিচার। আবার কেউ তার ধর্মীয় সংস্কৃতির গুণকীর্তন করাটাকে বাঁকা চোখে দেখে সেটাও অবিচার।

বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ ধর্মপ্রাণ। এখানে যে-কোন বিতর্কিত ইস্যুর ধর্মীয় ফায়সালা পাবলিক চায়। নইলে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যারা কথা বলেন, তাদেরকে যে-বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে, তা হলো, কেন যুদ্ধাপরাধীদের আজো বিচার হয় না। কারা এর পেছনে?
বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় চিরস্থায়ী শত্রুমিত্রের ধারণাকে সম্মান করা হয় না। ভিয়েতনামের কাছে সম্মুখযুদ্ধে পরাজিত আমেরিকা এখন চুটিয়ে ব্যবসা করছে ওই দেশটির সাথে। কেউ বলতে পারেন এতে বন্ধুত্ব নেই। ব্যবসা করছে দু'পক্ষ আর দু'পক্ষই লাভের হিসাব গুনছে। ওখানে যদি বন্ধুত্ব নাই থাকে থাক্, পরস্পরের প্রয়োজন তো পূরণ হচ্ছে।


আমরা চাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক অবিলম্বে এবং যাকে তাকে রাজাকার বলাও বন্ধ হোক।

অতঃপর দেখলাম মৃতদেহটি আমারই!

অবাক হওয়ার ঘোর কাটছে না। পৃথিবীতে এমন ঘটনা হয়েছে কি কখনো! আমার জানা নেই।
বহুতল ভবনের উপর থেকে পড়ে একটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। খবরটি পুরো এলাকায় ঢেউ তুলেছে। প্রতিবেশীরা বিমর্ষ, বেদনাপ্লুত। চাপা ক্রন্দন, চিৎকার ক্রন্দ্ন কিংবা বিলাপ নেই। অথচ দরদভারাক্রান্ত চারপাশ।


এই লোক আত্মহত্যা করার মানুষ না। নিশ্চয় কেউ করেছে হত্যা। কিংবা দুর্ঘটনার শিকার।
ঘটনাস্থল লোকারণ্য। পুলিশ গোয়েন্দারাও এসেছেন। মানুষেরা লোকটি ভালো ছিলো তাই এক নজর দেখে আহা আহা করে চলে যাচ্ছে।

আমিও খবরটি শুনে আকুল হয়ে দৌড়ে যাই অকুস্থলে। বিস্ময়করভাবে দেখলাম, লুঙি ও গ্যান্জি পরা মানুষটি কয়েকটি কপি হয়ে পড়ে আছেন। কপিগুলো আলাদা আলাদা। পতিত হওয়ার সময়, পতিত হওয়ার কিছুক্ষণ পর, তার কিছুক্ষণ পর কী অবস্থায় ছিলো মানুষটি।

অবাক হওয়ার কথা না! এরকম হয় কীভাবে? জীবন্ত কপি মানুষের!
তার চেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপারটি হলো, মৃতদেহটিকে ভালো করে দেখলাম এবং পুলিশ ও গোয়েন্দাদেরকে বললাম, আপনারা নিশ্চিত হতে পারেন- এ আমারই মৃতদেহ, কোন সন্দেহ নেই তাতে।

কিন্তু আমি তো শুয়েছিলাম আমার নির্ধারিত কক্ষে! পড়ে গিয়ে মৃত্যু হলো কখন কীভাবে আমার তা জানা নেই।আমি নিজেও ভয় পেলাম, বিস্মিত হলাম। মনে হলো আমার সম্পূর্ণ অস্তিত্বটাই প্রশ্নবোধক চিহ্ন।
কী এর তাৎপর্য? কেন এমন হলো? আমার ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর এর জবাব খুঁজতে থাকি।



নোটঃ একজন বিখ্যাত লেখক, নাম ভুলে গেছি, তিনি নাকি প্রতিরাতের স্বপ্ন লিপিবদ্ধ করে রাখতেন।

সামহোয়ারব্লগের ভার্চুয়াল ফাইটিং প্রসঙ্গে


আপনারা যারা শুধু ভার্চুয়াল ফাইটিং করছেন করুন। আমি কিন্তু সকল ব্লগ-বাড়িতে ধর্ণা দেই। কারো বাড়িতে মন্তব্য-উপহার দেই বেশি, কাউকে কম। কমবেশি নির্ভর করে পোস্টের ওজনের উপর।
কারণ কি জানেন?
কারণ, এই সামহোয়ার ভার্চুয়াল দেশটির ব্লগ-বাড়ির সদস্যরা, মানে ব্লগাররা সকলেই মানুষ।মানুষ হচ্ছে এক বিস্ময়কর ক্ষমতাধর অথচ অসহায় প্রাণী। মানুষ সৃস্টিশীল মানুষ ধ্বংসশীল। মানুষের আছে বিস্ময়কর প্রতিভার ক্ষমতা।আবার দেখুন, মানুষের কপালের নীচে আছে মাত্র দু'টি চোখ। পেছন থেকে আক্রমণ করে খুব সহজেই মানুষকে মেরে ফেলে যায়। ( আধ্যাত্মিক চোখের অধিকারীরা আলাদা, এই ভার্চুয়াল দেশে কেউ আছেন বলে মনে হয় না। ) তাছাড়া মানুষ নিজের মতো করে জীবন যাপন করতে যেয়েও হাসি কান্নার দোলায় দোলে।
দার্শনিক লেখক বার্ণার্ড শ বলেছিলেন, লাইফ ইজ নাথি বাট আন্ডারস্টান্ডিং এ্যান্ড কম্প্রোমাইজিং।
জগতের অধিকাংশ মানুষের বেলায় একটি প্রমানিত সত্য হলো, সুযোগ পেলেই সকল প্রকার নীতি নৈতিকতার মাথা খেয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কারণ শত প্রকার সমৃদ্ধি সত্বেও মানুষ অস্তিত্বের সংকটে ভোগে। আর হ্যাঁ, এটাও সত্য যে, খুব কম সংখ্যক মানুষ প্রতিটি সমাজে আছেন, যারা একটা নীতি বা নৈতিকতা আঁকড়ে ধরে থাকেন আমৃত্যু। ওরা ব্যাতিক্রম।মানুষের সাধারণ স্বভাব হলো এই, যে-মানুষটি কারো জন্য নিষ্ঠুর নির্দয়, সেই মানুষটিই আবার কারো জন্য খুব দয়ালু-দয়াল বাবা সাঁই। আবার যার প্রতি নির্দয় হয়, তার প্রতি সময়ের ব্যবধানে সদয় হয়।
জগতের কল্যাণ অকল্যাণের ধারণাটি আপেক্ষিক্ একটি কল্যাণমুলক কাজ একটি জনগোষ্ঠীর সকলের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। কারো জন্য অকল্যাণকর হয়ে দেখা দেয়। ফলে বিরোধ সৃষ্টি হয়, আন্দোলন-সংগ্রামের উপলক্ষ তৈরী হয়।
বর্তমান বিশ্বের সবচে' ক্ষমতাধর মানুষটি হলেন জর্জ ডব্লিউ বুশ। তার সাম্রাজ্যবাদী নীতি সমর্থন করে না বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ। 'উইথ মি অর এগেইন্সট মি' এই নীতি প্রয়োগ করে তিনি বিশ্বে সরদারী করছেন। কিন্তু নিরপেক্ষ বিচারের কথা যদি বলি, তাহলে বলতে হয়, এই বুশ মধ্যপ্রাচ্যের লাখো লাখো নারী পুরুষ শিশুর অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছেন, আবার এই বুশই আফ্রিকার লাখো লাখো কঙ্কালসার নারী পুরুষ শিশুর খাদ্য বস্ত্র বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। যদিও দশ আনা লুট করে পাঁচ আনা বন্টন করে দেখাচ্ছেন আর পাঁচ আনা আমেরিকান মহান জাতির খেদমতে ব্যয় করছেন।
যাক্ এবার আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গে একটু বলি। দাবী আদায়ের আন্দোলনের এক ঐতিহাসিক পটভূমিতে আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু হয়েছিলো। আমাদের সাহিত্যাঙ্গনের একটি অন্যতম প্রধান ব্যর্থতা হলো, এই মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিশ্বমানের সফল কোন উপন্যাস গল্প নাটক চলচ্চিত্র আমরা তৈরী করতে পারি নি। শ্রদ্ধাভাজন জহির রাহয়ানের কাজ দেশের বাইরে সমাদৃত হয়েছে কিন্তু সমগ্রকে স্পর্শ করতে পারে নি। আমি এখানে সামগ্রিক সফলতার কথা বলছি্ যেমনটি সফল হয়েছে যুদ্ধের পটভূমিতে রচিত উপন্যাস (উপন্যাসেরও অধিক) 'ওয়ার এ্যান্ড পিস'। লেখক লিও টলস্টয়। সভ্য দুনিয়ার সকল জাতির কাছে বইটি সমাদৃত। কেন? সংক্ষেপে উত্তরঃ যুদ্ধের বিবদমান দু'টি পক্ষের প্রতি মানবিক বিবেচনা রাখা হয়েছে। দু'টি পক্ষের অবস্থানকে মানবিক মানদন্ডে বিচার করা হয়েছে এবং অমোঘ নিয়তির হস্তক্ষেপের বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সুগভীর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। ওখানে কাউকে ধোয়া তুলসি পাতা আর কাউকে জানোয়ার বলা হয় নি।
দু'দিন আগে শ্রদ্ধাভাজন নাট্যকার ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ টিভি টক শোতে জানালেন, ভারতের সেই জেনারেল অরোরা'র সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তিনি। অরোরা আমাদের বিজয় দিবসকে স্বীকার করে না। ওরা বলে ওই দিনটি ওদের বিজয়ের। আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধকে ওরা বলে পাক-ভারত যুদ্ধ। ভারতের শিক্ষিত সমাজের অনেককে বলতে শুনেছি, 'ইট ওয়াজ দ্যা ভিক্টরী ডে ফর ইন্ডিয়া'। অথচ সত্য হলো এই, আমাদের দুঃসাহসী দামাল সন্তানদের অল আউট গরিলা আক্রমণে পাক সেনারা পর্যুদস্থ হয়ে আত্মসমর্পনে বাধ্য হয়েছিলো। প্রতিবেশি সাহায্যকারী বন্ধুদের এই আচরণ আমাদেরকে কষ্ট দেয়।
পরিশেষে, এই সামহোয়ার ব্লগের অনেকে এজেন্ডা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রতিপক্ষকে তাড়িয়ে দেয়ার মনোভাব ব্যাক্ত করেন। কেউ কেউ প্রতিপক্ষের ব্লগ এড়িয়ে যান। কিংবা মন্তব্য করলেও তা হয় তীব্র নেতিবাচক। রেটিং কমান নয়তো রেটিং করেন না। আমি সকল ব্লগ-বাড়িতে ধর্ণা দেই মানবিক মুল্যবোধের তাগিদে। যিনি আমাকে তিরস্কার করেন তার ভালো পোস্টে গিয়ে সরল স্বীকারোক্তি লিখি। সর্বোচ্চ রেটিং দাগাই।
বিভাজন খিস্তি-খেউড় গালাগালিতে যারা আনন্দ পান তাদের উদ্দেশে আমার বলার কিছু নেই।

সন্ধ্যা আমাকে কিছু অস্পস্ট অন্ধকার দেবে

রাত্রীর কাছ থেকে নয়, সন্ধ্যার কাছে চেয়েছিলাম এক প্রস্ত চাদরের সমপরিমাণ কিছু অস্পস্ট অন্ধকার।মুলতঃ আমার ততটুকু অন্ধকার দরকার, যতটুকু অমলিন অন্ধকারের ছোঁয়া দিয়ে শিল্পী প্রাণবন্ত করে তোলেন আলোকিত শিল্পের অবয়ব।
আলো আছে। আলো আছে আমার কাছে প্রয়োজনের চাইতেও অধিক। আলোর অভাবে আমার পথচলা বিঘ্নিত হয় না কখনো। মানুষেরাও বলে আমার কাছে নাকি অনেক প্রকার আলো সমবেত হয় প্রতিদিন। আমিও দেখি, আলোগুলো প্রকারভেদে প্রকাশিত।
কিন্তু সারাক্ষণ আলোয় আলোয় থাকা কিংবা আলো নিয়ে মাতামাতি নাড়াচাড়া অথবা বলতে পারেন প্রতিদিন আলোদের প্রেমে পড়ে থাকতে থাকতে আমি কিছু আলোহীনতার প্রয়োজন অনুভব করছি।
আমি জানি, আলোদের বহুমূখী শক্তি আছে। আলোগুলো পারে মুহুর্তেই রাত্রীর নিকষ অন্ধকারদের বিলীন করে দিতে। আমি প্রতিদিন দেখি, অজস্র বহুমূখী অন্ধকার আলোদের কাছে পরাজিত হয়।
তবু আমার কেন জানি মনে হলো, হতে পারে মানব জনমের মর্মে আছে তা, আলোগুলোকে মহিমান্বিত করার জন্য আমার কিছু অস্পস্ট আঁধার দরকার। সন্ধ্যা বলেছে, আমার যতটুকু দরকার ততটুকু সে দেবে দ্বিধাহীন। বিনিময়ে কিছু চাইবে না আমার কাছে।
কেননা সন্ধ্যা জানে, আমার জীবন জগত পরিভ্রমন শেষে সন্ধ্যার ঘাট হয়ে উড়ে যাবে অনন্তের দিকে।

Tumi sundor tai cheye thaki priyo

সুন্দর। সবাই সুন্দরকে পেতে চায়। যিনি বলেন তার সুন্দর না হলেও চলে তিনিও একটা নির্দিষ্ট মাত্রার সৌন্দর্যকে ধারণ করেন। অন্যের তুলনায় হয়তো তার সৌন্দর্যবোধ সামনের কাতারে আসতে পারে না।সুন্দরের জন্যও মানুষ প্রাণপণ লড়াই করে। সেটা হয় এভাবে, নিজের সৌন্দর্যবোধকে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে জীবন যাপনের পাশাপাশি তা লালন করার জন্য মানুষকে একটা নির্দিষ্ট স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে হয়।সেই স্বাধীনতার ব্যাপ্তি ব্যাক্তি থেকে সমাজ রাষ্ট্র পর্যন্ত বিস্তৃত। আমরা অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষসমেত আমাদের সাংস্কৃতিক স্বকীয়তার সৌন্দর্যবোধকে লালন করার জন্য সার্বভৌমত্ব অর্জনের লড়াই করেছি, স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেছি। তার আগে আমাদের সংস্কৃতির প্রাণ, আমাদের ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করেছি। উর্দূকে চাপিয়ে দেয়ার প্রয়াসকে উড়িয়ে দিয়েছি। কেননা আমাদের সৌন্দর্যবোধের সবগুলো শাখা প্রশাখাকে কিংবা অবলম্বনকে আমরা পরাধীন রাখতে পারি না।আবার বিস্ময়কর ব্যাপারটি হলো, বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিটি মানুষের মতো, প্রতিটি বাঙালিও ব্যাক্তিগত সৌন্দর্যবোধকে গুরুত্ব দেয়। ব্যাক্তির সুন্দরতা কখনো কখনো পরিবার ও সমাজের অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেই অসন্তোষের আগুন নেভানোর জন্য সুন্দর ভারসাম্য দরকার। ভারসাম্য-সুন্দর মানুষের প্রজ্ঞা থেকে বের হয়। যে-পরিবারে যে-সমাজে ভারসাম্য-সুন্দর প্রবল, সেই পরিবারে সেই সমাজে অসন্তোষ খুব প্রভাব ফেলতে পারে না।তাছাড়া নারী-সুন্দর পুরুষ-সুন্দরের লৈঙ্গিক লড়াই তো আছেই। সেখানেও ভারসাম্য-সুন্দর দিতে পারে ভালোবাসা-সুন্দরের সুনিবিড় ছায়া।
আসুন আমরা সবাই মিলে গাই-এই লভিনু সঙ্গ তব সুন্দর ওহে সুন্দর.......(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
কিংবা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরস্পরকে মুল্যায়ন করতে গিয়ে গেয়ে উঠি-
তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সে কি মোর অপরাধ...........(কাজী নজরুল ইসলাম)