Pages

Thursday, December 20, 2007

শালার পোড়া কপাইল্যা রাজনীতি!!

রাজনীতি রাজনীতি রাজনীতি! শালার পোড়া কপাইল্যা রাজনীতি। কালো রাজনীতি কহে, তুমি সোনার খনি হইলেও আমি বলিব তুমি কয়লার খনি। তুমি অশ্বডিম্ব। তুমি কিছু না। তোমার অস্তিত্ব আমি স্বীকার করিব না। আমার দলে আসিলে তুমি যদি তাম্র হও, আমি বলিব, তুমি মহামুল্যবান হিরা-ডায়মন্ড মনিমুক্তা প্লাটিনাম, তুমি অসাধারণ, তুমি মহা মহা কিছু।ক্ষমতা আর স্বার্থ সিদ্ধির জন্য যাহা যাহা করিবার প্রয়োজন তাহাই করা হইতেছে যুগ যুগ ধরিয়া। ধর্ম অধর্ম নীতি নৈতিকতা আদর্শ হাওয়া হইয়া যায় চোখের পলকে। শত্রু মিত্র হইয়া যায়, মিত্র শত্রু হইয়া যায়। উল্টি পল্টি উষ্ঠা বিষ্ঠা খাইয়া কহে আমি যাহা করিয়াছি ঠিক করিয়াছি।উপমহাদেশে ইসলামের পতাকাবাহী কংগ্রেসী মোল্লাতন্ত্র ছিলো। বিজেপি'র ছাতার নিচেও মোল্লারা আছেন। আবার ইসলামী রাজনীতিঅলাদের ছায়াতলেও আছেন ঠাকুরপুত্রগণ। ক্ষমতার পাওয়া যাইবে না দেখিয়া মুফতী সাহেব তার মান্যবর শায়খুল হাদীসের বিরোধিতায় আদাজল খেয়ে লাগলেন। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা মৌলবাদীদের সাথে হাত মিলাইলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীরা স্বাধীনতাবিরোধিদের সাথে গলা মিলাইয়া ক্ষমতায় যাওয়ার পথ পরিস্কার করিলেন। নিজের দুই চর্ম চক্ষে দেখিয়াছি, ধানের শিষঅলাদের তাড়া খাইয়া নৌকাঅলাদের হাই কমান্ডের কয়েকজন নিজেদের মঞ্চ ত্যাগ করিয়া পাশবর্তী দাড়িপাল্লাঅলাদের মঞ্চের কাছে গিয়া আশ্রয় চাহিয়া জান বাঁচাইয়া ছিলেন। দাড়িপাল্লাঅলারা ধানেররশিষঅলাদের পিছু ধাওয়া করিয়া তাড়াইয়া দিয়াছিলো। সময়ের পরিক্রমায় আবার এমন সময় আসিল তাহারা ত্রয়ী শক্তি ঐক্যবদ্ধ হইয়া আন্দোলন করিলেন।স্বৈরাচারের পতনের একদিন আগে দেখিয়াছিলাম টেলিভীশনে, স্বৈরাচারকে রক্ষার জন্য সাদা দাড়ি পাগড়িঅলা বুযুর্গেরা দোয়া করিতেছেন। সকলেই জানেন, স্বৈরাচার লেডি কিলার টাইপ লোক। এক সাক্ষাতকারে বলিয়াছিলেন, 'আমার তো এ্যাথলেটিক্সের ফিগার, মেয়েরা পছন্দ করে, আমি কি করবো।' তিনি মহাখালির নিউ ডিওএইচএস এর যে বাসায় গভীর রাতে 'প্লেজার ট্রিপ' মারিতে যাইতেন, এর পাশবর্তী আমার এক আত্মীয়ের বাসায় কয়েকদিন ছিলাম। প্রত্যক্ষদর্শীদের নিকট হইতে কিছু কাহিনীও শুনিয়াছি। যাক, তিনিই আমাদেরকে দীর্ঘকাল শাসন করিয়াছেন। তিনি দেখাইতেছিলেন, সবার উপরে ডান্ডা সত্য তাহার উপরে নাই। কিন্তু পাবলিক পরে দেখাইয়াছে, ডান্ডাবাজীকেও ধরাশায়ী করা সম্ভব।এখন দেখিতেছি, যাহারা আপ্রাণ চেষ্টা করিয়া বাংলাদেশের জন্মের বিরোধিতা করিয়াছিলো, তাহারা বলিতেছে, তাহারা ওইসব কিছু করে নাই! বলিতেছে, দেশে মুক্তিযুদ্ধই হয় নাই! দেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নাই!কাহাকে কি বলিব! ঠেলার নাম বাবাজী! দৌড়ের মধ্যে সবাই। ধরো মারো খাও ভাগো। বাই হুক অর বাই ক্রোক দে ওয়ান্ট টু এ্যাচিভ দেয়ার টার্গেট। গোস্বায়-রাগে আমি জ্বলিয়া উঠিয়াছিলাম যখন দেখিয়াছিলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জলিলকে ইসলামের কথা বলায় রাজাকার আখ্যা দেয়া হইয়াছিলো! এখনো সেই রকম হইতেছে।
এই ভার্চুয়াল জগতেও তাহাই হইতেছে। আমাকে যাহারা তাহাদের প্রতিপক্ষ ভাবিতেছেন, তাহাদের একজন আমার ব্লগে বলিয়াছিলেন, আপনার লেখাটি ভালো হইয়াছে। আমি যাহা বলিব তাহা মানিলে ইহাকে টপ রেটেড করার ব্যবস্থা করিব। আমি তাহার কথা শুনিয়া হাসিয়াছিলাম। আমি মিথ্যাচারের রাজনীতির সাথে নিজকে জড়িত করিতে পারিতেছি না বলিয়া আমার উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়া হইয়াছে। যাহারা সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে জিরো ডিগ্রিতে অবস্থান করিতেছে। তাহারা আমাকে গালাগালিও করে। তাহাদের গালাগালিতে আমার কি হইবে? কিছুই হইবে না।
আমি বরাবরের মতো রাজনীতি নিরপেক্ষ থাকিয়া যাহার কাছে এক বিন্দু সত্য ও সৌন্দর্য দেখি, তাহাকে গিয়া বাহবা দেই, নিজেও আমোদিত হই। কিন্তু মতান্ধেরা ইহা সহিতে পারে না। আমি কখনোই তীব্র পক্ষপাতদুষ্ট হইয়া অপর পক্ষের কোন সততা ও সৌন্দর্য্যকে অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যান করি না। যাহারা এমন করিয়া আনন্দ পাইতে চায়, তাহাদের অন্তঃসারশুণ্যতা দেখিয়া আমার হাসি পায়!!!

Sunday, December 2, 2007

ওরা পারে, আমি পারি না

ব্যবসা সূত্রে কিছু আরব তরুনদের সাথে আমার পরিচয় আছে। কখনো কেএফসি বা বার্গার কিং-এ ওদের সঙ্গে আড্ডা মারা লাগে খাতির রাখার জন্যই। ব্যাপারটা একটু অসাধারণ এই জন্যে যে, বাঙালি ইন্ডিয়ান পাকিস্তানী কাউকে চৌকস আরবদের সাথে আড্ডা মারতে সচরাচর দেখা যায় না। প্রধান কারণ ল্যাক অব এ্যাডজাস্টমেন্ট ডিউ টু ল্যাঙ্গুয়েজ এ্যান্ড কালচার। বনেদী শিক্ষিত আরবেরা অনেকটা ফরাসীদের মতো ভালো ইংরেজি জানা থাকলেও নিজের ভাষাকে প্রাধান্য দেয় ভিনদেশিদের সাথে কথা বলার সময়। কেউ আরবী না-জানে যদি বলবে ইংরেজিতে।
আমি কথ্য আরবী বলতে পারি অনর্গল। আরব ঐতিহ্যের ব্যাপারেও নলেজ আছে। আরবী লিখতেও পারি। তুমুল আড্ডায় আরবী বরাবর শব্দ খুঁজে না পেলে কখনো ইংরেজি চালিয়ে দেই ধুমাধুম। ফলে ভাটা পড়ে না। গতি বরাবর থাকে। কেউ আবার আমার ব্রিটিশ এ্যাক্সেন্ট ইংরেজি শুনে মনোযোগি হতে বাধ্য হয়। আমার আওয়াজ বড়। ষড়যন্ত্রকারীদের মতো ফুসুরফুসুর-ফিসফিস করে কথা বলতে পারি না।
বেশিরভাগ আনস্কিলড লেবার পেশায় বাঙালি থাকার কারণে বহু আরবদের মধ্যে বাঙালি ও বাংলাদেশ সম্পর্কে নানা ভুল ধারনা আছে। আমি কথা প্রসঙ্গে তাদের ভুল ভেঙ্গে দেই। ডেসপারেটলি বলি, তোদের তুলনায় বহু গুণ বেশি মাল্টিমিলিয়নিয়ার আমার দেশে আছে। তোরা দেশি বিদেশি মিলে জনসংখ্যা সাড়ে চার মিলিয়ন আর আমাদের পপুলেশন একশ' পঁচিশ মিলিয়নের উপর। আমাদের গৌরবোজ্জল স্বাধীনতা যুদ্ধের গল্পও বলি তাদের। কিছু এনলাইটেন্ড আরব সন্তান, যারা লন্ডন আমেরিকা ঘুরে এসেছে, তারা ওখানকার ব্রিলিয়ান্ট বাঙালিদের দেখেছে, তাই তারা বাঙালির তারিফ করে।
একদিন এক পাকিস্তানী পাঠানকে মারতে উদ্যত হয়েছিলাম। শালা বেওকুফ চট করে বলে বসে-' আরে বাঙালি কেয়া লাড়াই কারেগা, বাঙালি ডরতা হ্যায়।' আমি তত্ক্ষনাত গর্জে উঠে বলি, 'আবে উজবুক জাহিল! তুঝকো কেয়া পাতা, যা তেরা বাপকো যা কে পুছ- বাঙালি আপনা আজাদী কা লাড়াই ক্যায়সে কিয়া থা, কিতনা পাঠানকো জানসে মারা আওর কিতনা আখের সারেন্ডার করকে আপনা জান বাচায়া।' (আবে উজবুক মূর্খ! তোর বাপেরে গিয়া জিগা, বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ কেমতে করসিলো, কতো পাঠানেরে জানে মারসিলো আর কতো পাঠান শেষে সারেন্ডার কইরা নিজেগো জান বাচাইসিলো!) মারামারি অবশ্য হয় নি। আশপাশের লোকজন ধরাধরি করায়।
যাক্, যে-প্রসঙ্গে বলছিলাম তা ভিন্ন।
আমার ব্যবসায়িক সম্পর্কের ওই আরব তরুনদেরকে আজব চিড়িয়া মনে হয়। আজান হলে মসজিদে যাবে, নামাজ পড়বে, তসবিহ হাতে নিয়ে ঘুরবে। আবার সুদের ব্যবসার সাথেও জড়িত (ব্যাংক না, গোষ্ঠিভিত্তিক সূদি মহাজনগিরি), ঘুষও খাবে এবং প্রতি সপ্তায় দুই/তিনটা মাইয়া ইস্তেমাল করবে খুব স্বাভাবিক আনন্দে। জোয়ান বুড়ো অধিকাংশ আরবের আড্ডার প্রধান আলোচ্য নারী সম্ভোগ। কে কয়জন ভিনদেশি তরুনী আনতে পেরেছে স্পনসর হয়ে ভিজিটে, সেটা তাদের বাহাদুরী! আমি হতবাক হই, আবু জেহেল আবু লাহাবের এই আধুনিক বংশধরদের দেখে! আবু বকর, ওসমান, ওমর, আলী রাঃ প্রমুখের উত্তরসূরীর সংখ্যা খুবই কম।
ব্যবসায়িক সম্পর্কের দুই তরুন একদিন আমাকে নতুন আগত 'সুপার্ব আইটেম' সম্ভোগের আমন্ত্রণ জানালো। বিশ্বাস করুন, বললো, 'যেটা পছন্দ হয় নিবে। তোমার এক টাকাও দিতে হবে না। তুমি আমাদের বন্ধু।' আমি বললাম, 'আমার দ্বারা সম্ভব না।' এক তরুন আমাকে চেতানোর জন্য বললো, 'বুঝেছি, তোমার মেশিন অকেজো।' আমি বললাম, 'মেশিন ঠিক আছে, ফাসকেলাস। কিন্তু নারীর যৌবন নিয়ে এমন খেলা চাই না আমি।' তরুনটি বললো, 'রোহ রোহ রোহ ইনতা তা'বান।'(যাও যাও যাও তুমি বেকার)। সে আরো বললো, 'ওই মেয়েরা পয়সা কামাচ্ছে এনজয় করছে, আমরাও এনজয় করছি, পয়সা দিচ্ছি। দু'দিনের দুনিয়া, এমন মজা ছাড়তে পারি না।' ওদের বউ বাচ্চা আছে তবু ওরা তা করে হামেশা।আমি বললাম, 'তোমরা পারো, আমি পারি না। আনা খউফ মিনাল্লাহ (আমি আল্লাহকে ডরাই), আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, লা তাকরাবুজ্জিনা-ব্যভিচারের নিকটবর্তী হইও না।'

হোয়াট এ্যা সারপ্রাইজ!!!

পৃথিবীতে কিছু মানুষ এক্সট্রা সেনসরি পারসেপশন ক্ষমতা নিয়ে আসে। তাঁদের বিস্ময়কর কর্মক্ষমতা প্রমান করে- তাঁদের রয়েছে একেবারে জেনুইন প্যারানরমাল পাওয়ার। বৃটিশ গীতিকার রোজমেরি ব্রাউন, আমেরিকার জীন ডিক্সন -(যিনি প্রেসিডেন্ট কেনেডির মৃত্যু সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন বরাবর), ফ্রান্সের নস্ট্রাডমাস, লেখক আর্থার কেনান ডুয়েল এবং দানিয়েল ডি হোম প্রমুখ।এই এক্সট্রা সেনসরি পারসেপশন এর ব্যাপারটি নিয়ে আমি বিভিন্ন সময় ভাবি। মাইন্ড অভার ম্যাটার! বিস্ময়করই বটে!
ইস! আমার যদি অমন ক্ষমতা হতো!!
তবে বাস্তবে না-হলেও স্বপ্নে, ঘুমের ঘোরে, আমি অতীতে আমার মানবীয় শরীর নিয়ে দু'দিকে দু'হাত মেলে পাখির মতো উড়ে গিয়েছি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে। ব্যাপারটি আমাকে খুব আনন্দ দিয়েছে। আমি ধ্যানমগ্ন হয়ে অতীত ভ্রমনের চেষ্টা করেছি। সুদূর অতীত- নিউটন, গ্যালিলিও, শেক্সপিয়রের সময়ে। পারি নি। পারার কথাও না।একদিন আমার এক ফিলিস্তিনি বন্ধু বলেছিলো, 'আলোর চেয়ে দ্রুত গতি আছে একটা জিনিসের।' আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করি-'কী সেটা?' সে হাস্যোজ্জল হয়ে বললো, 'থিংকিং-থট, থিংক ক্যান মোভ ফাসটার দ্যান লাইট স্পিড।' মানে 'চিন্তা'র কথা।
দু'জনেই হাসলাম। সে বললো,'স্টিফেন হকিংয়ের কাছে একটা চিঠি লেখা যায় এই মর্মে যে,স্যার ওয়ান থিং ক্যান গো ফাসটার দ্যান ফোটন-লাইট। ইট ইজ থিংক।'আবার দু'জনে হাসলাম। আমি বললাম 'বেচারা হকিং মটর নিউরন রোগাক্রান্ত। নইলে ধমক দিয়ে তোমার পেশাব ছুটাই দিতো।
'যাক, ঘটনা বলি একটা-
শেষ রাত পর্যন্ত জাগা থাকি ব'লে বেশ কয়েক বছর আমি ভোর কিংবা প্রত্যুষ দেখি না। ঘুমাই ভোরের কিছুক্ষণ আগে। খুব জরুরী হলে দুই/তিন ঘন্টা ঘুমিয়ে উঠে পড়ি। নইলে টাইট ঘুম শেষে উঠি বেলা এগারটায়। রাত জাগা পাখি হওয়ার অভ্যাসটা হয়েছে দেশে থাকতে পত্রিকায় নাইট শিফটে দায়িত্ব পালন করায়। মফস্বলের দৈনিক পত্রিকা অফিসে কলমের গুতোগুতি শেষ হতো রাত দু'টায়। তারপর ঘন্ঠাখানেক পার হতো গপসপে।
এখন তো পরবাসে ভিন্ন পেশায়।
সেদিন শেষ রাতেও ঘুম আসছিলো না। চলে গেলাম জগিং করতে কর্নিশে। সাগর পারের প্রলম্বিত পার্ক ওটা। শুরু করলাম ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ-দৌড়। দৌড়ালে ক্লান্তি আসবে। ক্লান্তি এলে ঘুম আসবে। কিছুক্ষণ দৌড়ে বসলাম একটা বেঞ্চে। দৌড় মানসিক অস্থিরতা কমাতেও সাহায্য করে তা জানতাম। কখনো কখানো গভীর চিন্তা আক্রান্ত হলে আমি হাঁটতে থাকি উদ্দেশ্যহীন পথে পথে।প্রায় দশ মিনিট বসে উঠি ঘরে ফেরার জন্য।বিস্ময়কর ঘটনাটা ঘটলো তখন। সাগর উপর দিয়ে চারটি মানুষ উড়ে এলো আমার সামনে। এসেই সমস্বরে সালাম দিলো- 'আসসালামু আলাইকুম'। হতবাক আমি ওয়ালাইকুম সালাম বলে কিছু বুঝার চেষ্টা করছি। ওরা এক সাথে হেসে ওঠলো। ওদের মুখ নাই। গলা পর্যন্ত মানুষ। মুখমন্ডল মাথা নাই। গলা কাটা। তাজা রক্ত দেখা যাচ্ছে। অথচ মুখ বরাবর শুন্যতা থেকে বেরিয়ে আসছে ওদের কন্ঠধ্বনি। খুব স্বাভাবিক-রিলাক্সড। আমি বললাম, 'কে আপনারা? আপনাদের মাথামুখ কই? স্বাভাবিক জিন্দা আছেন কেমন করে? উড়ে এলেনই বা কেমন করে? ওরা একসাথে হেসে উঠলো এবং বললো- 'আমাদেরকে আপনি চিনেন আবার চিনেন না।' ওরা দু'জন পুরুষ দু'জন নারী। পোশাকে দেহাবয়বে কন্ঠের আওয়াজে বুঝতে পারলাম। বললো, 'আমরা আপনার শুভাকাঙ্খি। ভয় পাবেন না। আমরা ভার্চুয়াল জগতের মানুষ। চেনা কিন্তু অচেনা। ব্লগিং করি আপনার সাথে। আপনার লেখার সমর্থন করি।' একজন নারী কন্ঠ বললো 'আমি ইচ্ছাকৃত মজা করার জন্য আপনার বিরোধিতা করি।' আমি বললাম, কিন্তু এভাবে এখন এখানে এলেন! আমি ঠিক কিছু বুঝতে পারছি না! আপনাদের গলা কাটা কেন? ডান পাশের নারী কন্ঠ বললো, জগতের অনেক কিছুই বুঝার সাধ্যের বাইরে। থ্রিল এভরিহোয়ার! ডু নট গেট সিরিয়াস! আমরা ঠিক আছি। ভালো থাকবেন। যান ঘরে গিয়ে ঘুমান।' আমি জানতে চাই, আপনারা সবাই একে অন্যের পরিচিত?' সমস্বর জবাব 'না না, আমরা যাই। বাই বাই।' আমি বলি, 'আরো কিছু কথা বলুন।' ওরা সমস্বরে বললো, নো মোর টু ডে, বা বাই।'ওরা দু'হাত দু'দিকে মেলে ধরে উড়ে চলে গেল সমুদ্রের উপর দিয়ে।আমি ঘরের দিকে হাঁটতে শুরু করি। কিছুই বুঝলাম না এই ঘটনার আগামাথা! হোয়াট এ্যা সারপ্রাইজ!!!

হ্যাঁ, তোমাকেই বলছি

হ্যাঁ, তোমাকেই বলছি। তুমি আলোচিত, সমালোচিত, নিন্দিত, নন্দিত। তোমার উপস্থিতিতে কেউ আনন্দিত; কেউ খুব বেশি আনন্দিত। আবার কারো এলার্জিক রিএকশন শুরু হয়ে যায়। অসহ্য লাগে। তা প্রকাশ পায় কারো উল্টাপাল্টা লাগামহীন আচরণের মাধ্যমে। যে যা-ই বলুক, তুমি তো তুমিই।
দেখা গেছে, তুমি সেই সবুজ গাঁয়ের দুরন্ত প্রাণোচ্ছল বালিকাটির মতো সর্বত্র হেসে খেলে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করো। সকলের দ্বারে দ্বারে যাও সাবলিল হাসির উজ্জলতা নিয়ে। কখনো কারো জানালা দিয়ে দুষ্টুমি করে দেখো, কখনো কানামাছি খেলো, কখনো গোল্লাছুট! হঠাত্ কারো মাথায় হাওয়াভর্তি বেলুন ফাটিয়ে হাসতে হাসতে একাকার হয়ে যাও!ভালো কথা হলো এই, যোগাযোগের সমস্যা আক্রান্ত অগণন বাঙালি নারীর মধ্য থেকে বেরিয়ে এসেছো তুমি অনন্যা এক নারী। অনেক মানুষের ভীড়ে তোমার যোগ যোগ্যতা প্রশংসনীয়। সবাই তা পারে না। কেউ পারতে চায় না। আমাদের সমাজের যথেষ্ট মানুষের মন মস্তিষ্ক নানাবিধ সংস্কারাচ্ছন্ন। অধিকাংশ সঠিকভাবে ভালোবাসার রঙের বহু বর্ণিলতা শনাক্ত করতে পারে না। তাছাড়া গানকে বাণ ভাবে, বাণকে শান ভাবে। চিলে কান নিয়ে গেছে বললে চিলের পিছে দৌড়ায়। কানে হাত দিয়ে দেখে না আসলে চিলে কান নিয়ে যায় নি।আমি বিশ্বাস করি, তোমার কোন দুরভীসন্ধি নেই যোগাযোগের ক্ষেত্রে। তুমি কথা বলো, কথা শোনো, ভাব বিনিময় করো, আনন্দ শেয়ার করো। তুমি দেশের কথা বলো, দশের কথা বলো, তুমি ভালোবাসার কথা বলো। যারা তোমাকে তিরস্কারের বাণ মারে, তারা ভুল করে। যারা তোমার সর্বপ্লাবি মায়াকে ভুলভাবে নিয়ে অন্য মাত্রিক অধিক গহনে যেতে চায়, তারাও ভুল করে। এই দুই প্রকারের 'ওরা' আসলে নিজেদের শুণ্যতা নিজেদের দৈন্যতা নিজেদের দুর্বলতাই প্রকাশ করছে। কেউ নিজেই যদি নিজের পথে গর্ত খুঁড়ে রাখে আর সেই গর্তে নিজেই প'ড়ে হাত পা ভাঙ্গে, তার জন্য সে নিজেই দায়ী। অন্যকে দায়ী করার কোন মানে হয় না।
সুতরাং তুমি তোমার মতো করে হেসে খেলে বেড়াতে থাকো। কেউ যদি নিজেই নিজের সর্বনাশ ডেকে আনে তার জন্য তুমি দায়ী হবে কেন? তোমাকে মহিমাময়ী বা আনন্দময়ী হিসেবে দেখতে ভালো লাগে। তোমার ভালোবাসার বিক্রম নিত্য নতুন সুন্দর বিপ্লব নিয়ে আসুক। তোমাকে কেউ চিনে না, তোমাকে নিয়ে সন্দিহান। এই ব্যাপারটি একটা দার্শনিক সত্যের মতো। প্রতিটি মানুষ তার নিজের কাছেও অচেনা। তাই নিজের আচরণেও বিস্মিত হয়! আশ্চর্য হয়ে বলে, 'অনেক মানুষের ভীড়ে এই আমি আসলে কোন জন!'
তুমি জানো কি এই জগতে কে চালাক কে বোকা?
মানুষ কি তার দুঃখবোধ কিংবা আনন্দবোধের উপলক্ষ ঠিক সময়ে প্রকাশ করতে পারে? অথবা প্রকাশ করা উচিত কি? মানুষের দুঃখ ও আনন্দের সাথে বুদ্ধির প্রসঙ্গ কি জড়িত নয়?আনন্দ ও দুঃখ প্রকাশ করা দরকার বা ভালো। আবার প্রকাশ না-করাও প্রয়োজন কখনো। প্রকাশ পেলে জটিলতা দেখা দেয়। শত্রুপক্ষ আক্রমণের সূত্র পেয়ে যায়। প্রতিটি মানুষের শত্রু মিত্র আছে। শত্রুরা দুর্বল দিকগুলো খুঁজতে থাকে সব সময়। সচেতন মানুষ এ ব্যাপারে সতর্ক। একটু অসতর্কতা বড় বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। একটি ভুলের মাশুল জীবনভর দিতে হয়।মানুষের বুদ্ধির ব্যাপারটাও আপেক্ষিক কখনো কোন আনন্দ বা দুঃখের বিষয়গুলো যথাযথভাবে প্রকাশ করতে পারলেই লক্ষে পৌঁছা যায় অথবা ঈস্পিত সাফল্য আসে। আবার এই সাফল্য অন্য কোন ক্ষেত্রে অসফল হওয়ার কারণও হতে পারে। একই বিষয়ের দু'টি দিক। নেতিবাচক ও ইতিবাচক। এ ব্যাপারে বুদ্ধির যথার্থতা নিরুপন সম্ভব নয়। যে মানুষটিকে নিরেট বোকা ভাবা হয়, সেই মানুষটি অপক্ষোকৃত অধিক বুদ্ধিসম্পন্ন বলে স্বীকৃত মানুষটির চেয়ে অধিক সফল হতে পারে ক্ষেত্র বিশেষে।
আমি দেখি
চালাক মানুষটি সব ক্ষেত্রে চালাক নয়, বোকা মানুষটিও সব ক্ষেত্রে বোকা নয়। সকল মানুষের মধ্যে বোকামি আছে, চালাকিও আছে মাত্রা সাপেক্ষে। এবং ধরা খাওয়া থেকে বাদ পড়ে না কেউ। মন্ত্রী-মিনিস্টারের চুরিও ধরা পড়ে, গাঁয়ের গরু চোরও ধরা পড়ে, বাজারের পকেটমারও ধরা পড়ে, ধূর্ত রাজনীতিকের মুখোশও খসে পড়ে, ঘুষখোর আমলাকে একদিন হায় হায় করতে হয়, বুদ্ধিজীবিকে ক্ষেত্র বিশেষে বুদ্ধিহীন শনাক্ত করা সম্ভব হয়। সবাই সব ক্ষেত্রে সফল হয় না, সবাই সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয় না।
রবীন্দ্রনাথ 'নৌকাডুবি'তে বলেছেন একটা ফালতু কথা। বলেছেন, 'পুরুষের বুদ্ধি খড়গের মতো, শান বেশি না দিলেও কেবল ভারে অনেক কাজ করিতে পারে, মেয়েদের বুদ্ধি কলম কাটা ছুরির মতো, যতই ধার দেও না কেন, তাতে বৃহত্ কাজ চলে না।'মার্কিন পররাস্ট্র মন্ত্রী কন্ডলিজা রাইসকে রবীন্দ্রনাথের এই কথা শোনালে তার প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে, একবার ভাবুন! তবে হ্যাঁ, এ ব্যাপারে তার প্রতিক্রিয়া যা-ই হোক, কন্ডলিজার বুকেও জীবনের কোনো না কোনো ব্যর্থতার বেদনা নেই, এমন বলা যাবে না। বেচারি চির কুমারী!
আমি দেখি
উইনস্টন চার্চিল, হিটলার, মুসোলিনি, বুশ, ব্লেয়ার, সাদ্দাম, বাদশা ফাহাদ, খোমেনী, জেনারেল মোশারফ, জিন্নাহ গান্ধী, হাসিনা, খালেদা, এরশাদ, মেনন, গোলাম আজম, নিজামী, জেনিফার লোপাজ, মার্কস, লেনিন, এডওয়ার্ড সাঈদ, আইনস্টাইন, নেলসন মেন্দেলা, শেক্সপিয়র, বারট্রান্ড রাসেল, ভিনসেন্ট ভ্যানগগ, সালভাদল ডালি,এবং আমাদের বঙ্গভবনের দারোয়ান, এইসব মানুষগুলো চালাক মানুষ এবং সমান্তরালে বোকা মানুষও বটে! আর জর্জ হার্বাট বলেছিলেন, 'কেউ এতো বেশি চালাক হয় না যে, অন্য তাকে অতিক্রম করতে পারবে না।'
আর আমি?
হা হা হা। আমি তো মাঝে-মধ্যে পৃথিবীর সকল প্রেমের প্রসঙ্গ থেকে মুখ ফিরিয়ে মগ্ন চৈতন্যের অন্তরে গিয়ে নজরুলের গান শুনে শুনে নতুন হয়ে যাই! এই যেমন ধরো-
বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিস নে আজি দোল
আজো তার ফুল কলিদের ঘুম টুটে নি তন্দ্রাতে বিলোল.....
আর তুমি সকল বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে সূর্যের হাসি ফোটাবে এই প্রত্যাশায় থাকতে চাই অনন্তকাল হে বীরাঙ্গনা!!হ্যাঁ, তোমাকেই বলেছি এবং তোমাকে বলার মাধ্যমে সমাজের অজস্র 'তুমি'দেরও বলেছি! পরিশেষে সেই চিরন্তন পংক্তিগুলো-
প্রথম যেদিন তুমি এসেছিলে ভবে
কেঁদেছিলে একা তুমি হেসেছিলো সবে
এমন জীবন তুমি করিবে গঠন
মরণে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভূবন

আমাদের মূর্খতা আমাদের কূপমন্ডুকতা

মানুষ রাজনীতি করে। প্রাধান্য বিস্তারের লড়াই করে। মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণ দিতেও প্রস্তুত হয়। জঙ্গলের বন্য প্রাণীরাও ক্ষমতার লড়াই করে। ওদের লড়াই আর মানুষের লড়াইয়ের মধ্যে পার্থক্যটা কি? পার্থক্যটা কি সাংস্কৃতিক নয়? জঙ্গলের প্রাণীদের সংস্কৃতি পুরোটাই প্রাকৃতিক। মানুষেরও প্রাকৃতিক সংস্কৃতিক আছে। পাশাপাশি আছে প্রজ্ঞাজাত সংস্কৃতি। মানুষের সংস্কৃতি চর্চার পেছনে জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টিও ক্রিয়াশীল। একটা নীতি নৈতিকতাকে ধরে মানুষ সামাজিকভাবে নিরাপত্তা বলয় তৈরী করতে চায়। কারণ যেখানে অস্তিত্ব আছে সেখানে অস্তি্ত্বের সংকট আছে। সকল প্রকার প্রাণী, মানুষসহ, অস্তিত্বের সংকটে ভোগে। মানুষ মাথা খাটিয়ে সংকট উত্তরণের উপায় উদ্ভাবনের চেষ্টা করে। অন্য প্রাণীরা মানুষের মতো মাথা খাটাতে পারে না।শেষ রক্ষা কারো হয় না। তবু মানুষ একটা গড়পড়তা জীবনকালের হিসাব করে। ওই জীবনকালটুকু নিরুপদ্রব রাখার জন্য মানুষকে মাথা ঘামাতে হয়। এইজন্য মানুষ ঘরের আশ্রয় নেয়, সমাজ সংসার বানায়, দেশ রাষ্ট্র বানায়। এতেও সমস্যা দেখা দেয়। পক্ষ বিপক্ষের খেলা শুরু হয়। তখন ভারসাম্য রক্ষা জরুরী হয়ে পড়ে। ব্যাক্তিকে সমবায়ের আশ্রয় নিতে হয়। সমাজকে সংঘটিত হয়। দেশকেও অন্যান্য দেশের সাথে মিলিত প্রয়াস নিতে হয়। বিশ্বের জাতি-রাষ্ট্রগুলো এখন কোন না কোন ভাবে সমবায় বদ্ধ নইলে সুপার পাওয়ারগুলো গিলে খাবে। বিশ্বায়নের ফর্মুলা দেখিয়ে যতই বিশ্বগ্রামের কথা বলা হোক না কেন, সুপার পাওয়াগুলো নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

২.
সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে হলে একজন মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর নিশ্চয়তা থাকতে হবে। আমরা সবাই জানি, মৌলিক চাহিদাগুলো হলো, খাদ্য বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা চিকিতসা।একটি জাতির, একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ মানুষ যদি এই মৌলিক চাহিদা সংকটে থাকে, তাহলে ওই জাতির প্রধান সংকটই হলো ঐ পাঁচটি মৌলিক চাহিদার সংকট।আমাদের দেশটি জন্মের পর থেকেই এই সংকটে জর্জরিত। দুঃখজনক ও ক্ষুব্ধ হওয়ার বিষয় হলো এই, সেই জন্মলগ্ন থেকেই যারা বিদ্যায় বুদ্ধিতে অর্থে বিত্তে সামর্থবান, যারা শাসন করেছেন, যারা জাতির বিবেকের আসনে অধিষ্ঠিত, তারা এই জাতির প্রধান সংকট দূরীকরণে ব্যর্থ হয়েছেন। পাঁচটি মৌলিক সমস্যার একটিরও নিশ্চয়তা অর্জন সম্ভব হয় নি। কারো কারো ব্যাক্তিক প্রয়াস কিংবা দলীয় প্রচেষ্টা কিছু কিছু ক্ষেত্রে যত্সামান্য অগ্রগতি দিয়েছে মাত্র। কিন্তু জাতীয় সংকটের সামনে সে সব সাফল্য উল্লেখযোগ্য হতে পারে না। কেননা অধিকাংশ মানুষ সংকট কবলিত।দলীয় সংকীর্ণতা, কূপমন্ডুকতা, কুসংস্কারাচ্ছন্নতা, স্বার্থান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা আমাদের এতোটাই প্রবল যে, আমরা আজো জাতীয় সমস্যা, জাতীয় সংকট উত্তরণের উপায় উদ্ভাবনে ঐক্যবদ্ধ হতে পারছি না।
আমাদের রাজনীতিকেরা বছরের পর বছর ধরে কিছু ইস্যু জিইয়ে রাখছেন উদ্দেশ্যমুলকভাবে। যার ফলে জাতি বহুধা বিভক্ত। জাতির পিতা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, স্বাধীনতার ঘোষক, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, গণতন্ত্র না সমাজতন্ত্র না অন্য কিছু, ইত্যাকার বিষয়গুলোর ব্যাপারে এই সংকটাপন্ন জাতি কেন ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না? কেন গরীব মানুষগুলোকে বছরের পর বছর ধরে খেলনার পুতুলের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে? কেন তাদের ভোট নিয়ে তাদেরকে ঠকানো হয়? কেন শিক্ষাঙ্গনগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত রাখা হলো না বিগত বছরগুলোতে? কেন তরুণদের বেকারত্ব দূরিকরণে ঐকমত্য হয় না? দেশের সূর্য সন্তানেরা অন্যদেশে গিয়ে অন্যদেশকে আলোকিত করছে। দেশে কেন তাদের মুল্য নাই?কেন জামায়াত নেতারা আজ মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেন? মুক্তিযুদ্ধের সময় গোলাম আযম, নিজামী মুজাহিদদের ভূমিকা পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো। ধর্ম রক্ষার জন্য তার উদ্ভট স্বপ্নে বিভোর ছিলো। এখন তারা তাদের নিজস্ব ইসলামী ব্যাখ্যা দিয়ে কেনো জাতীয়তার প্রসঙগটিকে ঘোলাটে করেন। ১৯৭১ থেকে ৭৫ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অনেক ভুল ছিলো। তাই বলে তাঁর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বকে খাটো করে দেখার সুযোগ নাই। কেন জাতির পিতার কথা উঠলেই ইসলামী জাতীয়তাকে সামনে নিয়ে আসা হবে? (ইসলামী?দের দ্বারা)। রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের জাতীয়তা সারা বিশ্বে একটি স্বীকৃত বাস্তবতা। ধমীয় জাতীয়তা তো আছেই তার জায়গাতে। প্রবাসে দুই জাতীয়তার পরিচয় দিতে হয়। এক ধমীয়,দুই দেশীয়। ভাষাভিত্তিক ও ভৌগলিক জাতীয়তার শত দূর্বলতা থাকা সত্তেও দেশভিত্তিক জাতীয়তাকে মেনে নিতেই হবে। নইলে দেশপ্রেমের প্রশ্ন আসবেই।
ইতিহাস তো ভরে আছে ইসলামি(?) রাজনীতির পতাকাবাহীদের দ্বারা ছড়ানো ঘৃণা আর বিদ্বেষে। সেই টু নেশন থিওরীর পক্ষে উপমহাদেশের ততকালিন বাঘা বাঘা মাওলানারা একমত হতে পারেন নি। ভারতের দেওবন্দকেন্দ্রিক বেশুমার মাওলানারা টু নেশন থিওরীর বিরোধিতা করেছিলেন। দুই পক্ষের কাছেই কোরআন হাদিস ইজমা কিয়াসের দলিল। তবু কেন এই বিদ্বেষ রক্তপাতের ধারাবাহিকতা? আমার বুঝে আসে না খোলাফায়ে রাশেদিনের সময়কার ইতিহাস কেন এতো রক্তাক্ত? সেখানে কি 'হক' আর 'বাতিল'র লড়াই ছিলো? ওখানে কারা সত্যের পতাকাবাহী আর কারা মিথ্যার পতাকাবাহী ছিলেন? সাহাবায়ে কেরামের উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট তা কোরআনে বলা হয়েছে। ( মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ, ওয়াল্লাজিনা মায়াহু.........)(ব্যাপারগুলো কেউ বুঝিয়ে দিলে উপকৃত হই।)ইয়েমেন থেকে উত্তরদিকে সিরিয়া আর পশ্চিমদিকে আটলান্টিকের পূর্বপারের দেশ মরক্কো পর্যন্ত বিস্তৃত আরবীভাষীদের বিশাল ভূখন্ড অনেকগুলো রাষ্ট্রে বিভক্ত। খুব কাছ থেকে দেখছি, এই বিভিন্ন রাস্ট্রের আরবীভাষীদের নিজস্ব দেশীয় মায়াটান খুব শক্ত। তাদের কাছে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তার গুরুত্বের চাইতে দেশভিত্তিক জাতীয়তার গুরুত্ব বেশি। ওখানেও 'আবু আল ওয়াতান' বা জাতির পিতারা আছেন।
যাক্ অপরদিকে আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হর হামেশা যারা সরব, তাদের ছায়ায় ধর্মবিরোধী কিছু চরমপন্থী লোক কেন আশ্রয় পায়? অতি ধার্মিকতা আর তীব্র ধর্ম বিরোধিতা একই মুদ্রার এপিট ওপিট। এই দু'পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ অনিবার্য। বাঙালি সংস্কৃতির মূলে আছে মরমী ভাবধারা, যা মোটেই ধর্ম বিরোধী নয়। আর নাস্তিকতা হলো আলোচনার কেন্দ্রে আসার বেইসলেস আস্ফালন। কেননা 'হিউম্যান জিনস আর কনজেনিটেলি বিলিভারস'। আর নাস্তিকতার সাথে বাঙালির শিকড়ের কোন সম্পর্ক নেই। তবে কেন ওরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের মায়াবী আদরে লালিত হবে? ব্যাক্তি ধর্মহীন থাকতে চায় থাকুক। ব্যাক্তি অতি ধার্মিক হতে চায় হোক। ওরা রাজনীতিতে আসলেই সমস্যা। অন্যের উপর তাদের দর্শন, তাদের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার জোর জবরদস্তি শান্তি বিনষ্ট করবেই।কোরআন একটি মাল্টিলেয়ার্ড মিনিংফুল ঐশি গ্রন্থ। বহুমাত্রিক এর ব্যাঞ্জনা। এই গ্রন্থের শাব্দিক অর্থ নিয়ে কাউকাউ করার কোন মানে হয় না।
ধর্ম বিদ্বেষ মানে সালাতে মগ্ন মানুষটিকে ধাক্কা মারা; ধর্ম বিদ্বেষ মানে শ্রীকৃষ্ণের বন্দনায় বাধ সাধা; ধর্ম বিদ্বেষ মানে 'জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর'এর ভেতর ডুবে থাকা সুবোধ মানুষটিকে আঘাত করা; ধর্ম বিদ্বেষ মানে রবিবাসরীয় চার্চের সারিতে ঢিল মারা; ধর্ম বিদ্বেষ মানে মহাবৈশ্বিক সিস্টেমের বিরুদ্ধে বিষোদগার। ধর্ম বিদ্বেষ মানে একটা বিশৃঙ্খলা সৃস্টি করা।
রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু জাতীয় সমস্যাগুলোর সমাধানে আন্তরিক না- হওয়া কি আমাদের মূর্খতা আমাদের কূপমন্ডুকতা নয়?বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আমাদের দেশে বিনিয়োগ করে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার কামাচ্ছে। আর আমাদের সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে চুরি চুরি চুরি এবং রাজনীতি। অর্থনীতির একটা কথা আছে- যেখানে মানুষ আছে, সেখানে বাজার আছে, সেখানে অফুরান সম্ভাবনা আছে, সেখানে অর্থ বিত্তের সম্ভাবনা আছে।বর্তমান বিশ্বের অনেক দেশ আছে যাদের জনসংখ্যা আট দশ পনর বিশ তিরিশ মিলিয়ন। ওরা এই জনসম্পদ নিয়েই সমৃদ্ধ। আর আমাদের জনসংখ্যা এক শ' ছাব্বিশ মিলিয়ন প্রায়। তবু আমরা দারিদ্রতার অতলে অন্তরীণ!!