Pages

Wednesday, October 27, 2010

এথিক্সও যেনো তোর বিরহে নিরংকুশ উন্মন

লতাগুল্মেরও আর্তনাদ, ফুল পাখি সবুজ অবুঝ স্বপ্ন

তিন মাত্রার দুনিয়াদারি, বেশ বেশ!

ভালো কলা কৌশল লেনদেন শূন্যে ভাসমান!

বহুদূরে বসে যে মনপাঠ করো, বুঝি, এও বুঝি

ঘটনাচক্রে এইমতের উর্ম্মি কেন এতো উন্মাদ উতলা!

প্রায় প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা, আহত স্বপ্নগুলো

এথিক্সের দিকে মোটেও নজর রাখে না।

একটি নিহত স্বপ্নের আলোকিত মুখমন্ডল দেখে

এথিক্স ভয় পেয়ে যায়, এথিক্স পালাতে চায়!

ধরো, পাখিটির, ফুলটির, সবুজের অবুঝ স্বপ্নটির

নাম রাখা হলো স্বপ্ন-যৌবন-ছায়া

ওটা তুমিও হতে পারো ।

ওই জল টলমল উজ্জল চোখ, ঠোঁট কপোলে প্রশান্ত আহবান!

বেশ চনমন সৃজন প্রমোদে এলোকেশ আহলাদ ছড়ায়

গায়-

জানি, তোকে ভালোবাসলে কেয়ামত কেয়ামত, মৃত্যু আলিঙ্গন

তবু তুই ছাড়া আমি নেই তুই-ই অনুখন।

আমার কোনো হৃদয় নেই রে

নেই,নেই কোনো বোধের উদ্বোধন

আমার এথিক্সের হৃদয় তোর হয়ে থাকলো নিরংকুশ উন্মন

জানি, তোকে ভালোবাসলে কেয়ামত কেয়ামত, মৃত্যু আলিঙ্গন!

২৩/১০/২০১০

চেতনার বড়াই, বুদ্ধির লজ্জা এবং উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতার অন্তর কথা

(ব্রাত্য রাইসু'র 'বলো জয় মা তারা বলো নারায়ে তাকবীর' শীর্ষক নোটে ব্রাত্য রাইসু ও সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ'র তর্কাতর্কি পাঠ শেষে মন্তব্য আকারে প্রকাশিত নীচের লেখাটি ২১/১০/২০১০ তারিখে।)

ব্রাত্য রাইসুদা এবং সুব্রতদা'র মন্তব্যগুলো পড়ে মনে হলো-শব্দে শব্দে কিলিং গেইম বেশ শাণিত, টনটন!আমি অধম এবার কিছু কথা করিবো বর্ণন!

ধর্ম চেতনা, ভাষার চেতনা, দেশভিত্তিক জাতীয়তার চেতনা এবং ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক স্বার্থের চেতনার দ্বারা মানুষ মানুষে সংঘর্ষ রক্তপাত হয়ে আসছে। প্রতিটি মানুষ যুদ্ধে লিপ্ত নিজ নিজ জীবন নিয়ে। চেতনাগুলোর সাথে মানুষের কোনো না কোনোভাবে জড়িয়ে থাকাটা বিস্ময়কর বাস্তবতা।

উপমহাদেশের হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গাগুলোর পেছনে শুধু ধর্মীয় চেতনা কার্যকর না। শুধু তাকাই না দৃশ্যপটে, দেখতে চেষ্টা করি ভালোভাবে।মানুষকে অসভ্যও বানায় বাজার-লেনদেন/ক্ষমতার লিপ্সা। টিকে থাকার লড়াইয়ে বুদ্ধিজীবিও ক্রেতা বিক্রেতা। বুদ্ধিজীবিও বাজারের তাজা মাল।ষোল সতের বছর আগের কথা, দেশে থাকতে কিছুদিন সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে ছিলাম। চোরা কারবারিদের সাথে একান্তে আলাপ করে বুঝেছি, সীমান্তে গুলি বিনিময়/মানুষ মারার অন্যতম প্রধান কারণ বিডিআর বিএসএফ কর্তক অবৈধ 'মাল কামানো' নিয়ে ভাগাভাগি বরাবর না-হওয়াতে।

বেশ কয়েক বছর আগে, কাশ্মীর ইস্যুতে, হঠাত পেয়েছিলাম,পাকিস্তানী এক টিভি চ্যানেলে (নাম মনে নেই)তিন ধর্ম পন্ডিতের বিতর্ক। তিন মানে হিন্দু মুসলিম খৃষ্টান। (হিন্দু যদিও স্থানকেন্দ্রিক/দরিয়ার কিনারা কেন্দ্রিক শব্দ, কিন্তু শব্দটি উপমহাদেশের একটি বৃহত জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় পরিচয়কে ধারণ করছে) তো,বিতর্কের এক পর্যায়ে পাদ্রী মিয়াসাহেব প্রশ্ন উত্থাপন করলেন, বাংলা তরজমা এভাবে- 'ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতের যে-সব মুসলিম গোষ্ঠীসমূহ কাশ্মিরের মুসলমানদের জন্য জান কোরবান করতে প্রস্তুত, তারা কেন তাদের ঈমানী ভাই ফিলিস্তিনি মুসলমানদের জন্য বাদ-প্রতিবাদ করে না জোরালোভাবে? পাদ্রী সাহেব যৌক্তিকভাবে তার প্রশ্নের মধ্যেই এই ইশারা দিলেন যে, ভারতের সাথে ইসরাইলের গভীর কূটনৈতিক তায়াল্লুক আছে। ভারত যদি ফিলিস্তিনে ইসরাইলী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠায়, তাইলে গভীর তায়াল্লুকের তাপ শীতল হয়ে যাবে। আর ঈমানী দরদ সবার জন্য সমানতালে থাকাটাই বিধেয়, কারো জন্য কম কারো জন্য বেশি হবার সুযোগ কই! সুতরাং এখানে ঈমানী দরদ মূখ্য নয়, রাষ্ট্রকেন্দ্রিক গোষ্ঠীকেন্দ্রিক অর্থনীতিভিত্তিক স্বার্থের আগুন প্রজ্বলিত। বুঝার বিষয় হলো, পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রনমুক্ত করে ওই মুসলমানগুলোকে ভারতের অধীন করার প্রচেষ্টার মানে কি? পাকিস্তানই বা কেন ধর্মের দোহাই দিয়ে তাদেরকে কব্জায় রাখতে চায়!

আর পাকিস্তানী চেম্বার কমার্স, ইন্ডিয়ার চেম্বার কমার্স, বাংলাদেশের চেম্বার কমার্স নেতা ফায়দা হাসিলের জন্য মোয়ামেলা করে দিলে-জানে, মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার কামাইয়ের চুক্তিতে সই করে, তখন তারা বেশ রোমান্টিক অনুভবে উদ্দীপিত হন। তখন তাদের মধ্যকার হিন্দু মুসলিম ক্রিস্টান ধর্ম, দেশ, ভাষা চেতনা জিরো ডিগ্রিতে নেমে আসে।আরবদের মধ্যে দেখি, ভাষাভিত্তিক জাতীয়তার চেতনা একেবারে দগদগে। কিন্তু ফায়দা লুটার মওকা পেলে ওদেরও মাথা ক্রিয়াশীল থাকে মুনাফার চেতনা। পরিস্কার বলে, 'ফিল বিজনেস মাআফি আখু আবু' অর্থাত 'ব্যবসাতে বাপ-বেটা বা কোনো প্রকার ভাইয়ালি নাই।' এক সিরিয়ান খুব সিরিয়াসলি বলেছিলো, আমার মায়ের পেটের ভাইটা বেআক্কেল, আর ওই সিন্ধী হিন্দু ব্যবসায়ীটা ব্রেইনি, সে আমাকে অনেক লাভ দেয়, আমার ভাই যদি ওই সিন্ধী হিন্দু ব্যবসায়ীটার সাথে ঝগড়া করে,তাহলে আমার ভাইকে মাইরা ভর্তা বানাইয়া ফেলবো।'!

দুনিয়ার মানুষকে, নেতাদেরকে, বুদ্ধিজীবিদেরকে নাচাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। বোকা নেতারা, বোকা বুদ্ধিজীবিরা একেকটা ইস্যু বানিয়ে বকবক করতে থাকে বছরের পর বছর।

ধরিত্রির দেশগুলোর সীমান্তের লড়াই, ব্যক্তি মানুষের বাড়ী-ঘরের সীমানা নিয়ে লড়াই আর ধান ক্ষেতের আইল ঠেলাঠেলি নিয়ে লড়াই, এইসব লড়াইয়ের পেছনে শুধ মতলব, শুধু স্বার্থ। ধর্ম বা আদর্শ, নৈতিকতার বাঘা বুলি ক্যামোফ্লাজ মাত্র কখনো মনে হয়!

জগতে মুলতঃ সকল শ্রেণীর, সকল জাতের, সকল মতের, বুদ্ধিজীবী, অবুদ্ধিজীবী সকলেই 'লাভের পিঁপড়া' হতে চায়। কেউ 'লোকসানের গোবরে পোকা' হতে চায় না স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে। এথিক্স বেচারা কেবল নীরবে অশ্রু মোছে!

সাম্প্রদায়িক চেতনার কারণেই সীমান্তে কিলিং হচ্ছে না। অনেকগুলো চেতনার সাথে বৈষয়িক ও রাজনৈতিক হীন তৎপরতা শামিল আছে। ব্যক্তি স্বার্থ ও গোষ্ঠী স্বার্থ আদায়ের প্রয়াসকে স্পিরিটেড আপ করার জন্য, বদ উদ্দেশ্যের চেতনায় মানুষকে যুক্ত করার জন্য উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতাকে ইস্যু বানানো হয়েছে। উজ্জল দৃষ্টান্ত- জিন্নাহ আর নেহেরুর ব্যক্তিগত জিদাজিদিকে 'সাম্প্রদায়িকতা'র রঙ লাগিয়ে মানুষগুলোকে জড়ানো হয়েছে এবং মারা হয়েছে!

উপমহাদেশের কূপমন্ডুক/মূর্খ/অনালোকিত মানুষগুলোর মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা বিদ্যমান, আর এটাকে ব্যবহার করে আসছে চতুর শয়তানেরা।

Monday, October 4, 2010

প্রভাবশালী ভাষাদের হায়াত মউত চিন্তা এবং আরবী ভাষার বিস্ময় প্রসঙ্গ!

বিস্ময়করই লাগে! মানচিত্রের দিকে তাকান, কোথায় ইয়েমেন আর কোথায় সিরিয়া, কোথায় মধ্য আফ্রিকা, আর সেই আটলান্টিকের পূর্ব পারের দেশ মরক্কো; এতো বিস্তৃত ভূখন্ডে বসবাস করনেওয়ালা মানুষগুলোর স্থানীয় ডায়ালেক্টের ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও একটা কমন আরব ভাষা এই বিস্তারিত অঞ্চলের মানুষগুলো বুঝে, ভাব বিনিময় করে! উচ্চারণে পার্থক্য আছে কিন্তু সহজেই ইয়েমেনের মানুষ মরক্কোর মানুষের মনের ভাব বুঝে ফেলে! সোমালিয়ার মানুষের আরবী সিরিয়রা বুঝে,কাতারের মানুষ বুঝে সাহারার পশ্চিমের মানুষগুলোর আরবী!

এবার ভারতবর্ষের দিকে তাকান, মালায়ালাম ভাষা ভালো করে না শিখলে হায়দ্রাবাদি বা গুজরাটিরা কিছুই বুঝবে না!অবশ্য তামিল, মালায়ালাম, কানাড়ি ভাষার শব্দে যথেষ্ট মিল আছে।

ওদিকে প্রাচীন লাতিন ভাষার সাথে ইংরেজি ফ্রেঞ্চ ইতালীয় জার্মান স্পেনিশ ভাষার গভীর সম্পর্ক থাকা সত্বেও প্রত্যেকটি ভাষা আলাদা বৈশিষ্টে প্রস্ফুটিত। এক গবেষণায় প্রকাশ, হিব্রু ভাষার সাথে প্রাচীন ভারতের ভাষার সম্পর্ক আছে। কাশ্মিরী অজস্র শব্দের কাছাকাছি হিব্রু শব্দাবলি আছে।

ভাষাবিদের মতে, হিব্রু ও আরবী সেমিটিক ভাষার অন্তর্ভূক্ত। শব্দে শব্দে যথেষ্ট মিল থাকা সত্বেও হিব্রু আর আরবীর দুরত্ব যথেষ্ট। বিস্তারিত আরবভাষী মাঝখানে থাকা ইসরাইলের হিব্রুভাষীরা মূলতঃ ধর্মীয় কারণেই অনেক দূরে সাংস্কৃতিকভাবে। যদিও এটা ঠিক যে, আরবভাষী মানেই সবাই মুসলিম না, আরবী জবানওয়ালা লাখো লাখো মসিহি ও ইয়াহুদ বসবাস করেন এই বিস্তারিত জনপদে। বেশি পরিমানে খৃস্টান আছেন মিশর ও লেবাননে।

আরবী ও হিব্রু প্রসঙ্গে নীচের উদ্ধৃতাংশটি পড়ুন-

'A second thing to consider is grammatical number. English has singular and plural only. Arabic has singular, dual and plural, the plural denoting three or more. Thus we have: safina-- one ship; safinatein--two ships; sufun--three or more ships. This is completely general in Arabic, applying to all nouns. Hebrew has a dual too, but it is limited to select nouns for things that come in pairs: misparayim--pair of scissors; yadayim--two hands; yomayim--two days. One would surmise that, at one time, Hebrew also had a full- fledged dual, which withered over the centuries, while the Arabic dual remained intact, closer to the prototype.'

আরবিতেও ঈআদ মানে এক হাত, ঈআদাইন অর্থাত দুই হাত। ইয়াওম মানে দিন, ইয়াওমিন মানে দুইদিন।

উল্লেখ করা বিধেয় যে, ফ্রেঞ্চ ইতালীয় পর্তুগীজ স্পেনিশ রোমানীয় ভাষাসহ ইউরোপ আমেরিকার ২৫টি ডায়ালেক্টের অরিজিন হলো প্রাচীন রোমান ভাষা, যার মূল নাম লাতিন। (এই দুনিয়ার মানুষের এক সময়ের প্রবল প্রভাবশালী লাতিন ভাষা এখন এক মৃত ভাষা হিসাবে পরিগণিত!)

স্পেনিশ আরব কানেকশন: ওদিকে দ্রুত সম্প্রসারণশীল প্রভাবশালী একটি ভাষা স্পেনিশ। দক্ষিণ আমেরিকার অথিকাংশ দেশসহ পৃথিবীর পঞ্চাশাধিক দেশে নেটিভ ভাষা হিসাবে স্পেনিশ বিস্তর মানুষের অন্তরে জায়গা করে নিয়েছে। এই ভাষাটার অরিজিনও ল্যাটিন। আর স্পেনিশ ভাষার পরতে পরতে ভরে আছে আরবী শব্দাবলী একটু অদল-বদল হয়ে।

আফিয়া আরবী মানে ক্ষমা করা।

আলাফিয়া স্পেনিশ মানে ওই একই।

এখানে দেখুন স্পেনিশ ভাষায় আরবীর প্রভাব তালিকাসহ http://en.wikipedia.org/wiki/Arabic_influence_on_the_Spanish_language#List_of_words_of_Arabic_origin তো বলছিলাম, বিস্ময়কর লাগে, এতো বিস্তারিত ভূখন্ড জুড়ে একটা কমন ভাষা ধর্ম নির্বিশেষে কিভাবে ভাব বিনিময়ের মাধ্যম হয়ে আছে! অন্যতম একটা কারণ শব্দ সম্ভার যথেষ্ট, একই অর্থবোধক অনেকগুলো শব্দ, একেক দেশে একেকটা ব্যবহৃত কিন্তু অর্থ সবার জানা!

Saturday, March 13, 2010

তোমার মায়ার মাহাত্ম্য বুকে নিয়ে চলে যাবো পৃথিবী ছেড়ে!


একটা পথও এমন নেই, যে-পথে স্বপ্নদের সাথে খেলতে খেলতে তোমার কাছে পৌঁছে যেতে পারি অক্ষত; সবগুলো পথ আমাকে ডাকে; সকলেই খোলামেলা দেখায় তাদের যা কিছু সুন্দর; আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি না- সকল পথের পাশে কেনো কিছু সুন্দর ফুল কিছু সুন্দর পাখি কিছু জোছনাময় শিশু আর কিছু মায়াবী প্রসন্না থাকে!

তবে কিছু পথে স্বেচ্ছায় একা একা কিছুদূর হেঁটে যেতে যেতে দেখেছি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা মনোহর কুহক আর ক্যামোফ্লাজ; বিভ্রান্তির আয়োজন শনাক্তকরণে খুব বেশি দূর যেতে হয় না আমাকে; উপরে আকাশ আছে নিশ্চিত এই বিশ্বাস অক্ষুন্ন; চলতে পথে আকাশকে প্রখর কিংবা নরম দৃষ্টির ছোঁয়া দেই না ; যদি মর্ত্যের পিচ্ছিল পথে চলতে পা পিছলে যায় এই ভয়ে;

প্রীতির বায়ুমন্ডলেও সাঁতার কাটি কখনো সতর্ক, কেউ যেনো হনন করতে না-পারে; আমি হেঁটে যেতে যেতে কিছুদূর উড়েও যেতে পারি; উড়ু উড়ু মন স্বপ্নদের সাথে ওড়ে আনন্দে;
মাধ্যাকর্ষণ সত্যি বড় প্রেমময়! বাইরে যেতে দ্যায় না, নিশ্চিন্ত থাকো, মহাশুন্যের স্থান-কাল আমার ভেতরেও আছে

আজকাল খুব বেশি তোমাকে দেখা যায় আমার ভাবের সবুজ ভূবনে; প্রতিদিন কিছু প্রিয়ংকর বোধ পাঠাও; বোধের বিভাতে শোভিত চিত্রকল্প- যার অন্তর তুমি,দেখে দেখে খুব মুগ্ধ হই গো নীলসুরভী, মুগ্ধ হই; বেঁচে থাকা ভালো লাগে; পথে পথে ক্ষত বিক্ষত হওয়ার বেদনা ভুলে যাই নিমিষে; তোমাকে হৃদয়ে ধারণ করে বুঝলাম ফিরোজা-নীল রঙে এতো খুশবো মধুর

তাও বলে রাখি- যদি লোমহর্ষক আহত হই, যদি মুমুর্ষাবস্থা হয় পথে, যদি হদস্পন্দন থেমে যেতে চায় ক্ষরণে ক্ষরণে, তোমার মায়ার মাহাত্ম্য বুকে নিয়ে চলে যাবো পৃথিবী ছেড়ে! তুমি খুশবোময় থাকবার চেষ্টা করো মৃত্যু অবধি।

সে অতঃপর পুস্পিত


বিকশিত হওয়ার স্বপ্নের সাথে সারাক্ষণ কথা বলতে বলতে সংকোচ বিদীণ করার সম্ভাবনা তার চোখের সামনে ফুলপরীদের উদ্বাহু নৃত্য হয়ে ভাসে। তার দেহ জাগে, মন জাগে. আত্মা জাগে; তার অন্তর্গত ছত্রিশ রাগিনী জাগে কিন্তু সে রাগান্ধ হয় না।

দুপুরের উত্তাপে সে মনোহর পুস্পিত। রোদের মায়ায় আচ্ছাদিত হতে পারলে তার ভালো লাগে প্রিয় মানুষের হাতে গ্রীবা স্পর্শের মতোন। সে দুপুরের কাছে অনুনয় করে- ‘প্রিয় দুপুর, আমাকে তুমি কখনো সন্ধ্যাভাষা দিও না’। তার সুমধুর ঢুন্ঢন অথবা প্রিয় প্রত্যয় কখনো পাকা সোনালি ধান ছড়ার দোলা, কখনো পাহাড়ি গাঙ্গের বাঁশ ঝাড়ের নিচে গর্তে লুকিয়ে থাকা শিং মাছের সক্রোধ ঘা। সে মা হতে চায়, সে মা হতে চায় না। প্রিন্সেস ডায়নার করুণ মৃত্যু তাকে ভাবায় আবার ভাবায়ও না। সিলভিয়া প্লাথ মস্ত ভুল করেছিলেন, তা সে জানে।

সংগীতের সপ্ত সুরেই সে উতলা হয়। আকাশের কান্না সে হাতের মুঠোয় লুকিয়ে রাখে। কাউকে দেখায় না। যৌবনের সুবিমল ইচ্ছাকেও না। সে নিজগুণে সকাল দুপুর সন্ধ্যা ও রাতের কাছে পরম শ্রদ্ধেয়া হয়ে উঠতে চায়। তার জানা আছে-চব্বিশ ঘন্টা সময়ের মধ্যে, পৃথিবী পৃষ্টে কোথাও না কোথাও নিরন্তর কল্যাণ পথের আহবান- আজান ধ্বনিত হচ্ছে। এবং এও জানে, পৃথিবীর সময়ের ভেতরে কোথাও না কোথাও, প্রজননের প্রয়োজনে অথবা নষ্ট হবার বিনোদন তৃষ্ণায় নারী পুরুষ ইচ্ছায় অনিচ্ছায় চুমু খায়, দেহ সুখ বিনিময়ে লিপ্ত হয়। মনে পড়ে না, কে তাকে বলেছিলো- ‘ভালোবাসার মানুষটির একটি ছোট্ট চুম্বন পাওয়া মানে জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট অর্জন’। বিড়বিড় করলো সে- হুমম........রঙের কথা ঢঙের কথা আলতু ফালতু যথা তথা। সে ভাবে, পৃথিবীতে প্রতি সেকেন্ডেই জন্ম মৃত্যু হত্যা লুন্ঠন চুরি ষড়যন্ত্র এবং পুঁজা এবাদত ইত্যাদি চলছেই। পৃথিবীতে অজস্র ‘শান্তি প্রক্রিয়া’ চলছে অথচ অধিকাংশ নিদারুণ অশান্ত। প্রতি ঘন্টায় অজস্র প্রেমের কবিতা লেখা হচ্ছে। দেশে দেশে প্রেম আছে আবার নাইও। দুইটাই সত্য।

সকল প্রকার যোগ বিয়োগ নিয়ে পৃথিবী দৌড়তে থাকে তার কক্ষপথে প্রতি সেকেন্ড তিরিশ কিলোমিটার বেগে।

কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরতে আজ দেরি হয়েছে। ঘরে ফেরার পথে টের পেলো একটা মিশ্র অনুভূতি- ক্লান্তি এবং কাজ সারার আনন্দ উভয়ে কূটনৈতিক শিষ্টাচারসম্মত করমর্দন করে মুচকি হাসে। ঘরে ফিরে কাপড় বদলাবার সময় টের পায় অনুপেক্ষনীয় প্রিয় বোধের তৃষ্ণা কিছু বলতে চায়। সে বিষাদাক্রান্ত হয়ে বলে- ‘নাহ’। তাছাড়া দিবসের যে-কোনো সময় প্রেমকথা উঁকি দিলে সে কষ্ট সমুদ্রে সন্তরণ করে আর ভাবে-মিছে দুনিয়ার সব সাময়িক ভেল্কিবাজি। তবু সে মন থেকে মুছে ফেলতে পারে না ওই দূর আকাশের নক্ষত্রটির কথা। কোনো কোনো দিন সে কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরেই স্নান করে। আজ সকালে গোসল সেরেই গিয়েছিলো তাই শুধু হাত মুখ ধুয়ে এসে হালকা প্রসাধন লাগায় হাতে মুখে। রাতের খাবারের সময় আসতে দু’ঘন্টা বাকি। বিছানায় বসে ল্যাপটপ খুলে অন লাইনে দু্নিয়া দেখবে কি না ভাবতে ভাবতে ল্যাপটপ ছাড়াই বালিশ পিঠে লাগিয়ে হেলান দেয় পালংকের কোণায়। একটা আপেল হাতে নিয়ে চোখ মুদে কিছুক্ষণের জন্য। কর্মকর্তা পদের চাকরিটা ভালোই চলছে। চোখ বুজে সে কথা বলে নক্ষত্রটির সাথে।

- কেমন আছো?
- ভালো আছি মানে আরেকটি মিথ্যা যোগ।
- কেন ভালোবাসো আমাকে?
- ভালোবাসবার জন্যেই ভালোবাসা ছাড়া থাকা যায় না।
- ভালোবাসা বুঝি না!
- না বোঝা ভালো। বুঝলে সমস্যা বিরাট। বুঝে ফেললে তুমি নিজকে হারাবে।
- কি চাও আমার কাছে?
- কিছু চাই না যে তা নিশ্চিত কিন্তু ভালোবাসি।
- নক্ষত্র আসলে কি জানো প্রিয়তমা?
- জানি, তবে তুমি কি বলতে চাও শুনি, বলো।
- নক্ষত্রের নিয়তি আমৃত্যু জ্বলতে থাকা, কারণে অকারণে পুড়তে থাকা.....
- হুমম......
- একটি কবিতা শুনবে?
- শোনাও

জ্বলো আগুন জ্বলো অশ্রু টলোমলো


একটি শব্দ ঘুমে
একটি শব্দ চুমে
একটি শব্দ জাগে
একটি অস্তরাগে !
কিছু শব্দ হারিয়ে গেছে ওই পারের ওই সবুজ পাতার বনে। বাঘের গালে হঠাৎ ভীষণ রাগে মারি চড়; বাঘ বললো- কেন মামা এত্তো জোরে চড়? জবাব দেয়ার প্রয়োজনবোধ করি না; পথের কতো দূর বাকি দেখি; পথের শেষ নেই......

বাঘেরাও প্রেমফুলরঙমায়া বোঝে, বোঝে প্রিয় শব্দ কেন ক্ষত বিক্ষত হয়; বাঘের চোখেও প্রজাপতি-সময় দোল খায়; বিপন্ন সবুজ জনপদটিকে যারা বর্ণহীন গন্ধহীন বানাতে চায়, এই বাঘেরা তাদের বিনাশ করতেই পারে; যে-কারণে শব্দ-অক্ষর-প্রিয় কথা নিরন্তর বিপন্ন, যা জাগে তা জাগে না, যা ঘুমায় তা ঘুমায় না, যা হারায় তা হারিয়ে যায়- কচু পাতায় বৃষ্টি ফোটার পতন ঠিক যেমন....

শব্দ কিছু যাদুর বাক্সে প্রিয় মন রেখেছে; সে এমন এক যাকে কখনো বলা হয় নি- সুগন্ধ পুস্প ফুটেছে; অথচ সে জানে আমার দু’হাতে রোদ বৃষ্টি সকাল দুপুর সন্ধ্যা ও রাত আগুনে পোড়া......
জ্বলো আগুন জ্বলো
পুড়ো কায়া পুড়ো
অশ্রু টলোমলো
জ্বলো আগুন জ্বলো।

কবিতা শুনে সে চোখ খুলে সবুজ ডিস্টেম্পার করা দেয়ালের দিকে তাকায়। অপলক দৃষ্টিপাত। যেনো সে দেয়ালেই অনেক কিছু দেখতে পাচ্ছে। হয়তো সে দেখছে লেবু শাখায় বসে থাকা দোয়েলটির ভেজা চোখ। হয়তো তার চোখের সামনে পরিশ্রান্ত সুদর্শন এক পথিক সুর্যাস্ত দেখে দেখে শোকার্ত হচ্ছে। হয়তো দেখছে প্রবল ঝড়ের কবলে নিশ্চুপ নিরুদ্বিগ্ন দাঁড়িয়ে আছে একটি মানুষ। সে ভাবে, ‘একটা চিঠিও নাই ডাক বাক্সে, বার বার এসে ফিরে যাই’। - এই কথা পাঠ করে ভেজা চোখে সে কেন গুন গুন করেছিলো- ‘মায়াবন বিহারিনী হরিণী/গহন স্বপন সঞ্চারিনী/কেন তারে ধরিবারে করি পণ/ অকারণ’। সে ভাবে, স্ত্রী অথবা স্বামী হওয়া মানেই জীবনের সব কিছু পাওয়া নয়।

রাতের খাবার শেষে ঘুমিয়ে পড়ে সে। ঘুম ঘোরে স্বপ্ন দেখে, ইচ্ছে করলেই সে দু’হাত দু’দিকে মেলে পাখির মতো উড়ে যেতে পারে অনেক দূর। সকাল সাতটায় যখন ঘুম ভাঙ্গলো, সে চমকে যায় এই কারণে যে, তার পরনে একটি সাত রঙা শাড়ী। এই শাড়ী কোত্থেকে এলো! ‘এটা আমি কখন পরলাম! আশ্চর্য!’- তার বিস্ময়। এই বিস্মিত হওয়ার ব্যাপারটাও কাউকে বলবে না, এমন চিন্তা করতে করতে তার মনে হলো সে শুনতে পাচ্ছে- অগণন শিশু তাকে মা মা বলে ডাকছে।