Pages

Thursday, March 22, 2012

'দিস ইজ এ্যা ডগ বার্কিং': ইউ জি কৃষ্ণমূর্তি (দুই)

ইউ জি কৃষ্ণমূর্তির প্রায় সকল কথোপকথনে কিছু বিষয় ঘুরেফিরে বার বার এসেছে। 'চিন্তা কী', 'মন একটা মিথ যেনো', 'সমস্যা আর সমাধান', 'আত্মা আর শরীর' ইত্যাদি। সমাধানকেই সমস্যার মূল বিবেচনায় রেখে তিনিও সমাধান খোঁজেন এবং সিদ্ধান্ত দেন। তিনি যখন সিদ্ধান্ত দেন,তখনই প্রশ্ন আসে, কিসের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দেন? সিদ্ধান্তগুলো তাঁর মস্তিষ্কজাত অসাধারণ কিছু কি না!

পূর্বের বিজ্ঞানীর আবিস্কার ইউ জি'র অমূল্য বচন হয় কেমনে!

'সায়েন্স এ্যান্ড ইউ জি' শীর্ষক দীর্ঘ রচনাতে তাঁর ভক্ত Professor O S Reddy ইউ জি'র বচনাবলীর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বের করে দেখান। (যদিও ইউ জি কৃষ্ণমূর্তি বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রারও বিরোধিতা করেছেন বেশ কিছু কথোপকথনে জোরালোভাবে।) রেড্ডি'র দীর্ঘ রচনাটিতে ইউ জি'র সকল মূল আর্গুমেন্টকে সামনে এনেছেন।

Professor O S Reddy উল্লেখ করেছেন-

১.

THE UNIQUENESS OF MAN, "Each individual by virtue of his genetic structure is unparalleled, unprecedented, and unrepeatable." -U.G.

পশুর মতো মানুষের জীবন!

জগত পর্যবেক্ষণ করে ইউ জি যদি তাঁর অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা এই উপলব্ধি পেয়ে থাকেন, তাহলে সেটা ভালো বোধ পেয়েছেন বলা যায়। কিন্তু যদি এমন হয়ে থাকে যে, মানুষ অতুলনীয় হওয়ার ব্যাপারটা তিনি পঠন থেকে তাঁর মেমরীতে জমা করেছেন এবং পরে কথোপকথনে বলেছেন, তাহলে এই বিবৃতির জন্য তাঁর বিশেষত্ব থাকে কী? দেখা যায়, মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কোরআনে বলা হয়েছে: لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ ‘নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি উত্তম গঠনে’ (সূরা আত তীন:৪)।

অধ্যাপক রেড্ডি এই অংশের ব্যাখ্যাতে প্রসঙ্গক্রমে দার্শনিক চিত্রশিল্পী লিওনার্দ দা ভিঞ্চির জন্মের কথা এনেছেন। বলেছেন, ভ্রাম্যমান সৈন্যটি কর্তৃক অবলা এক নারীর সাথে বিয়ে বহির্ভূত যৌন মিলনের ফলে গর্ভে আসে এত বড় শিল্পী দা ভিঞ্চি। অধ্যাপক রেড্ডি ইশারায় বোঝালেন এভাবেই অবাধ প্রজনন চালু রাখলে মেধাবী মানুষ আসতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মানবজাতির ইতিহাসে আসা মেধাবী মানুষগুলোর সবাই কী বিয়ে বহির্ভূত যৌন সম্পর্কের দ্বারা এসেছে? নিশ্চয়ই না। অজস্র বিজ্ঞানী দার্শনিক জন্মেছেন বিভিন্ন ধার্মিক পরিবারে, বিবাহিত স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার দৌলতে। দা ভিঞ্চি'র মতো ঘটনাগুলো ব্যতিক্রম। এই ব্যতিক্রমের যথার্থ ব্যাখ্যা কি কেউ জানে না।

অধ্যাপক রেড্ডির মতে, 'If man had functioned as an animal in nature, in tune with it, his sensory system should have been in tune with nature. The fixations of mind are the malignancy of mankind.' জন্তু জানোয়ারের মতো মানুষের জীবন যাপন সম্ভব কী? ফ্রয়েড তো অনেক আগেই দেখিয়ে গেছেন মানুষের 'এ্যানিমালিটি' এবং 'রেশনালিটি'। রেশনালিটির কারণেই মানুষের বিশেষত্ব। কিন্তু প্রকৃতির সাথে মিলবার জন্য মানুষকে পশুর মতোন হতে হবে কেন? ইউ জি তো ফ্রয়েড মিয়াকে গালি দিয়েছেন। বলেছেন, 'ফ্রয়েড একটা ফ্রড (প্রতারক) ছিল। ইউ জি'র ভাষায় মানুষ পশু, তবে 'এ্যাক্সট্রাঅডিনারি এ্যানিম্যাল'।

ইউ জি বলেছেন THE INNATE INTELLIGENCE OF THE BODY এর কথা। এই ব্যাপারটা তো মানবজাতি অনেক আগেই জেনেছে যে, ইমমিউন সিস্টেমের দ্বারা শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অসাধারণ। ইমমিউন সিস্টেম তার নির্ধারিত নিয়মে কাজ করে শরীরে। মানুষের বুদ্ধির সাথে এর কোনো যোগ সাজশের দরকার হয় না। তো, এই ইমমিউন সিস্টেমের ব্যাপারটা ইউ জি মহোদয়ের নতুন কিছু নয়।

২.

প্রফেসর রেড্ডি ইউ জি কৃষ্ণমূর্তির উদ্ধৃতি দিয়েছেন- "Order and disorder occur simultaneously in nature." -- U.G.

এই উদ্ধৃতির পক্ষে প্রফেসর রেড্ডি ব্যাখ্যা দেবার আগে তো ভাবা দরকার ছিলো, 'Einstein's general theory of relativity has proved, from the verification of the perihelion of Mercury, the bending of light due to gravitational effects, red shift, and the phenomenon of black holes.... black holes and gravity are manifestations of order and disorder in the universe.'

আইনস্টাইনের তত্ত্বের ব্যাখ্যা পাঠ করে কেউ এমন অর্ডার-ডিসঅর্ডার সম্পর্কে ডিসকাশন করতে পারে। আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো, কসমোলজিক্যাল কোনো তত্বের ভিত্তিতে কোনো প্রিডিকশনকে অমোঘ বাণী বলার সুযোগ আছে কী? তত্ত্ব তো বাতিলযোগ্যতা ধারণ করে। এমন হতে পারে ভবিষ্যতের মেধাবীরা দেখাবে যুগপত অর্ডার-ডিসঅর্ডার বলে কিছু নেই। যথেষ্ট ব্যতিক্রম আছে। এ ছাড়া প্রফেসর রেড্ডি দেখিয়েছেন ইউ জি 'বস্তুই শক্তি', এমন গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন মানবজাতির উদ্দেশে। আশ্চর্য! মানবজাতি তো পদার্থ বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে বিংশ শতাব্দির মাঝামাঝিতে পেয়ে গেছেন এই তথ্য। অধ্যাপক রেড্ডি নিজেও ব্যাখ্যা দিয়েছেন- 'Mass is energy. Hence the ultimate stuff of the universe is energy. At the subatomic level these subatomic particles are not made of energy, but they are themselves energy. Thus energy interacts with energy. The dancer and the dance are one and the same.' তাহলে 'বস্তুই শক্তি' এই তত্বের জন্য ইউ জি'র কৃতিত্ব কিসে?

ধর্ম সম্পর্কে ইউ জি

ধর্মের অপ্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলতে গিয়ে অধ্যাপক রেড্ডি জানান ইউ জি-র কথা- 'According to him, Hinduism is not a religion. It is a street with a hundred shops, each claiming its wares as the best. For example, Rajneesh's sex shop, J. Krishnamurti's awareness shop, Maharshi Mahesh Yogi's meditation gymnasium, and Satya Sai's magic and mesmerism. The durability of these products is questionable. The teachings of the great founders of religions and saviors of mankind have resulted only in violence which is perpetrated by their followers. Every teacher talks peace, but his teaching resulted in violence in the end.'

ধর্মের শিক্ষা থেকে সংঘাত আসে নি কখনো। সংঘাত এসেছে ধর্মব্যবসায়ীদের কূট কৌশলের কারণে এবং ধর্ম বিরোধীদের প্রতিক্রিয়াশীলতার কারণে। ধার্মিকদের আত্মরক্ষার প্রয়াসটাকে নানা প্রকার রঙ দিয়ে মিথ্যা আরোপ করবার ইতিহাসও আছে। ধর্মগুলোর আগমনের সাথে সাথে সমাজে থাকা পুরাতন ধর্মাবলম্বিদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। প্রকৃত ধার্মিক নিঃস্বার্থ এবং শান্তিকামী। এক কথোপকথনে ইউ জি-ও স্বীকার করেন প্রকৃত ধার্মিক নিঃস্বার্থ।

চিন্তা সম্পকে ইউ জি'র কথা বহু ধরণের

ইউ জি কৃষ্ণমূর্তি চিন্তাকে কখনো শত্রু মনে করেন আবার চিন্তাকেই বোঝেন প্রতিরক্ষার প্রকৌশল হিসাবে। চিন্তার দ্বারা মানুষের উন্নতি হয়েছে প্রচুর তাও জানান। অনুভূতিকে চিন্তা বলেন। উপায় খোঁজাটাও চিন্তা তাঁর মতে। চিন্তার দ্বারা মানুষ প্রকৃতির সূত্রগুলো আবিস্কার করতে পেরেছে, তাও বোঝেন। আবার তিনি বস্তুকে যখন বলেন, ওটাও চিন্তা, তখন হাইয়ার ফিজিক্সের তথ্য 'ইউনিভার্স ইজ মেন্টাল' বা 'থট ওয়ার্ল্ড'র পাশাপাশি চলে যায়। এক পর্যায়ে ইউ জি বলেন, 'চিন্তা বলে আদৌ কিছু নেই'। তার মানে কি চিন্তা দ্বারা তিনি যা কিছু ধরেছেন ওসবও কিছু না?

অধ্যাপক রেড্ডি ইউ জি-কে ব্যাখ্যা করে দেখান, চিন্তা কিভাবে বের হয়। চিন্তা জন্মে বাইরের দৃশ্যাবলির উপস্থিতির কারণে। কিন্তু ইউ জি যখন বলেন, 'চিন্তা বলে আদৌ কিছু নেই', তখন প্রশ্ন জাগে, আসলেই তিনি 'চিন্তা' সম্পর্কে কী বলতে চান?

দিস ডগ বার্কিং

কথোপকথনে (This Is a Dog Barking 1, http://www.youtube.com/watch?v=tHvQiDIjzvQ ) বললেন, শরীরের জন্য কোনো কিছু ভালো নির্ধারণ করা মাত্রই তুমি সমস্যা সৃষ্টি করলে। ব্যর্থতা-হতাশা বলে কিছু নেই। (দেয়ার ইজ নো ফ্রাস্টেশশন) ওই ধারণাটা তোমার উপর আরোপিত। শরীরের সাথে হতাশার কোনো সম্পর্ক নেই। শরীর শুধু চায় বাঁচতে এবং সঙ্গম করতে। (দিস বডি অনলি ইন্টারেস্টেড ইন ঈটিং এ্যান্ড ফাকিং, বলেছেন, দিস ডগ বার্কিং-২-তে এমন কি চলাফেরায় অক্ষম, কঙ্কালসার দেহখানি নিয়ে বিছানায় শোয়া অবস্থায় 'পার্টিং মেসেজ' দেয়ার সময়ও বলেছেন এই কথা।) পিউর এ্যাগজিসটেন্স বলে কিছু নেই। আমি একটা কুকুর ঘেউ ঘেউ করছি। ঘেউ ঘেউ ইংরেজি ভাষায় প্রকাশ পাচ্ছে তোমার সামনে।' বার্কিং-২-তে আরো বলেছেন, নোবেল প্রাইজ নিচ্ছে যে ওই ব্যাটারা, তারা শুধু ভাইব্রেশন তর্জমা করছে আর নোবেল পেয়ে যাচ্ছে, তারা নিজেরাই জানে না ওরা কি বলছে।

অন্যের ব্যাপারে মাথা ঘামাতে হয় কেন?

ইউ জি কৃষ্ণমূর্তির অধিকাংশ কথোপকথন প্রচার করেছেন মহেশ ভাট। কিছু তর্ক মহেশ ভাটের বেশ উপভোগ্য। আবার কিছু তর্কের ধরণে বোঝা যায় মহেশ ভাট বরাবর জবাব দিতে পারেন নি। এই না-পারা হতে পারে প্রশ্ন খুঁজে না-পাওয়া, অথবা ইউ জি'র প্রতি ভক্তির কারণে থেমে যাওয়া।

যেমন, মানুষকে সাহায্য করবার প্রসঙ্গে কথা উঠলে, ইউ জি'র সাফ কথা তিনি কাউকে সাহায্য করতে চান না। শেষ পর্যায়ে মহেশ ভাটকে প্রশ্ন করেন, 'তুমি অন্যের ব্যাপারে মাথা ঘামাও কেন? (হোয়াই আর ইউ কনসার্ন এবাউট আদার?) এই প্রশ্নে আটকে যান মহেশ ভাট।

মানুষকে অন্যের ব্যাপারে মাথা ঘামাতে হয়। কারণ, অন্যের দ্বারা সংঘটিত ঘটনাবলি বিচ্ছিন্ন নয়, সকলের সাথে কোনো না কোনো ভাবে সংশ্লিষ্ট। ইউ জি-ও বলেন 'ইউনিটি অব বীঙ' এর কথা। শত শত বছর ধরে সূফি-সাধকগণও বলেছেন এই ঐক্যের কথা। ইবনে আরাবী'র 'ওয়াহদাতুল ওজুদ'ও তা-ই। তাই ব্যক্তিকে নিজের প্রয়োজনেই অন্যের অসুবিধা দূর করবার প্রয়াস নিতে হয়। অসুস্থ বিকলাঙ্গ অক্ষম অন্যকে সবল সুস্থ ব্যক্তিটি সাধ্যমত সহযোগিতা দেবে, এটা কি বিবেকের দাবী নয়? পৃথিবীতে জন্মান্ধ মানুষও আসে। তাদেরকে কী পথের দিশা দিতে হয় না?

দেয়ানেয়া প্রসঙ্গের ভেতরেই অপেক্ষাকৃত ভালো আর মন্দ

ইউ জি'র মতে কোনো কিছু 'ভালো' নির্ধারণ করলেই সমস্যা দেখা দেয়। অথট তিনি নিজেই তাঁর মর্জিমাফিক ভালত্ববোধ ধরে রেখেছেন আমৃত্যু। তাঁর সেই 'ভালো'টা হলো, সকল প্রতিষ্ঠিত মতাদর্শ/বিজ্ঞান/দর্শন/নৈতিকতা প্রত্যাখ্যান করা। আবার তাঁর কথার মধ্যেই ধর্মীয় ভাব, দর্শন, বিজ্ঞানের দলিল কিঞ্চিত হলেও উপস্থিত। নিজের জীবনের প্রয়োজনে ইউ জিকে সামাজিক দেয়ানেয়া করতে হয়েছে। দেয়ানেয়া প্রসঙ্গের ভেতরেই অপেক্ষাকৃত ভালো আর মন্দ বিরাজমান। এই ভালো মন্দ চর্চার দ্বারা জীবন একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত অর্থবহ নয় কী?

যদি ইউ জি দেখাতে পারতেন, অপেক্ষাকৃত ভালো আর মন্দ নির্ধারণ করা ছাড়া জীবন যাপন সম্ভব, তাহলে মানবজাতি তাঁর কথা মেনে নিতে সহজ হতো। তাঁর নিজস্ব চিন্তা মোতাবেক মানবজাতির ইতিহাসে হোলি ম্যান আনহোলি মাইন্ড শব্দাবলি ব্যবহার করেছেন। তার মানে, তিনিও ভালো আর মন্দ নির্ধারণ করেছেন।

ঘরোয়া বৈঠকি কথোপকথনের সময় বিতর্ককারিদেরকে প্রায়ই ধমক দিয়ে যেনো জোরপূর্বক থামিয়ে দিতে চান। বলেন, 'ইউ অল বাস্টার্ড শিটিং, জাস্ট লিসেন টু মি'। তাঁর পরিস্কার আপত্তি গৌতম বুদ্ধ কোনো অরিজিনাল মানুষ ছিলেন না।

পারভিন ববি'র মতে ইউ জি

এশিয়ার মেরিলিন মনরো বিবেচিত, এক সময়ের জনপ্রিয় বলিউড চিত্র নায়িকা পারভিন ববি'র রচনাতে, 'পারভিন ববি অন ইউ জি'-তে, ইউ জি কৃষ্ণমূর্তি নিজের বিবেচনা মোতাবেক নীতি নৈতিকতা ধরে রাখতেন। ববি জানান, ইউ জি 'রিয়েল মোরালিটি'র পক্ষে থাকতেন। সমাজের সুবিধাবাদীদের নির্মিত 'মোরালিটি'র সমালোচনা করতেন্। যারা তাঁর কাছে পরামর্শ চাইতো, তাদেরকে পরামর্শ দিতেন ব্যক্তিটির জন্য যা ভালো মনে করতেন তা। কখনো স্ত্রীকে দেয়া পরামর্শ স্বামীর বিরুদ্ধে গেলেও কেয়ার করতেন না এবং স্বামীকে প্রয়োজন মনে করলে স্ত্রীর স্বার্থের বিরুদ্ধে উপদেশ দিতেন। কারণ ইউ জি মনে করতেন, প্রতিটি মানুষের সমসা ভিন্ন, সমাধানও ভিন্ন। এখানে একটি প্রশ্ন জাগে, ইউ জি বুঝতে পেরেছেন, 'হিউম্যান নেচার এ্যাগজেক্টলি দি সেইম', তাই ভিন্নতা সত্বেও প্রাকৃতিক ঐক্যের ভিত্তিতে সকলের জন্য প্রযোজ্য নৈতিকতার বিরোধিতা করলেন কেন?

পারভিন ববি'র মূল্যায়নে অতিভক্তির প্রকাশ আছে। যেমন ববি মনে করতেন, ইউ জি 'পারফেক্ট হিউম্যান বিঙ'। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, ৪৯ বছর বয়সে ইউ জি কৃষ্ণমূর্তির ভেতর 'এ্যাক্সট্রাঅডিনারি এ্যানার্জি' এসেছে এবং ওই এ্যানার্জি ইউ জিকে 'পারফেক্ট মানুষ' বানিয়েছে।

''As far as this energy of enlightenment is concerned UG states that there is NOTHING in the universe that this energy cannot do, that this energy can perform any miracle. UG states that this energy is supposed to be all knowing, all seeing, omni-present, omni-potent and supremely intelligent. The man who possesses this energy has no will left to use this energy for any purpose. If anybody is to benefit from this energy that individual has to draw it out of the person who possesses it, by having faith in it, or by being deserving.''

দেখা যাচ্ছে নিজের বিশেষত্ব, কথিত (তথাকথিত বললাম না) 'শক্তি'র ধারক হওয়ার ব্যাপারটা সুচতুরভাবেই ইউ জি প্রচার করেছেন ভক্তদের মাঝে। বিশেষ শক্তি ইউ জি-কে ক্লিনিক্যালি ডেড অবস্থা থেকে বানিয়েছে 'অফশুট মিউট্যান্ট' (offshoot mutant)। ওই 'বিশেষ শক্তি' ইউ জিকে স্বাভাবিক দেহের এ্যানার্জির ক্ষয় হওয়া (ইমমিউন সিস্টেম দূর্বল হতে থাকা) থেকে 'রক্ষা' করে নি। বার্ধক্যপীড়িত হয়েছেন, জীবনের স্বাভাবিকতা মোতাবেক 'নিভে' গেছেন। (অসমাপ্ত) 

তথ্য জরিয়া

http://www.youtube.com/watch?NR=1&feature=endscreen&v=iXyLbU1GGqU

http://www.well.com/user/jct/intro.html

http://hinessight.blogs.com/church_of_the_churchless/2009/02/ug-krishnamurti-intriguing-irritating-inspirational.html

http://www.ugkrishnamurti.net/

http://www.ugkrishnamurti.org/ug/ug_video/index.html

http://ug-k.blogspot.com/

http://www.takuin.com/the-death-of-ug-krishnamurti/

http://tkpi.org/content/teachings-ug-krishnamurti

http://www.inner-quest.org/UG.htm

http://the-natural-state.blogspot.com/

http://ugkrishnamurti.net/ugkrishnamurti-net/SWAN_SONG.htm

http://www.well.com/user/jct/enemy7.htm

http://www.travelswithug.com/

http://sulochanosho.wordpress.com/category/spirituality/

গুরু বিরোধী গুরু এবং তাঁর প্রশ্নোত্তরঃ ইউ জি কৃষ্ণমূর্তি (এক)

'আমার ঘুম বিড়ালের ঘুমের মতন।' আবার বলেন, 'আসলে আমি বুঝিই না ঘুমে আছি না, জেগে আছি। ঘুমন্ত অবস্থা আর জেগে থাকা অবস্থার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কোনো স্বপ্ন দেখি না। ব্যায়াম-ট্যায়াম করার দরকার নাই। আমার টাকা পয়সা ধন দৌলত কিছুরই দরকার নাই, সব নিয়া যাও, ভাগো। ডাক্তারি বিদ্যার দরকার নাই। ৮০ বছর হলো কখনো ডাক্তারের আশ্রয় নেই নাই। আমার কোনো অধিকার নাই, কোনো প্রকার দায়িত্ব কর্তব্যও নাই। তুমি আমার কোনো কাজকে অসামাজিক মনে করলে শাস্তি দিতে পারো। আমি হ্যাঁ না কিছুই বলবো না। মানবজাতির কাউকে আমার সাহায্য করার দরকার নেই।'

এমন কথা শুনলে কেউ তাকে জবরদস্ত পাগল বলতেই পারে। কিন্তু ইউ জি কৃষ্ণমূর্তি পরিস্কার ইংরেজিতে থর থরিয়ে এই কথাগুলো বলেছিলেন বিভিন্ন কথোপকথন ও সাক্ষাতকার দেয়ার সময়। তাঁর ইংরেজি কথা বলার ধরণ আকর্ষণীয়।

পরিচয়ের কিছু ইশারা

কেউ বলেন gentlest human being, কেউ বলেন দুর্দান্ত অভিনেতা, ধোঁকাবাজ, কারো কাছে আধ্যাত্মিক গুরু, কেউ মনে করেন অসাধারণ দার্শনিক, কারো মতে, মানবজাতির সদস্যরা তাঁকে যা-ই মনে করে একেক জন তিনি তা-ই। তবে তাঁর সকল কথোপকথনে তিনি যেভাবে 'the total negation of everything that can be expressed' প্রকাশ করেছেন, তাতে তাঁর মূখ্য পরিচয় নিহিলিস্ট কেউ ধরতে পারে। পন্ডিতদের কেউ কেউ তাঁকে নিহিলিজমের প্রচারক/ব্যাখ্যাতা বিবেচনা করেন। যদিও একসাথে কাছাকাছি বিশ বছর থাকার পরও সুইস নারী ভেলেন্টাইন জানতে চেয়েছিলেন, 'তুমি আসলে কী ইউ জি?' তিনি গুরু বিরোধি হিসাবে ভূমিকা রাখলেও তাঁর জীবদ্দশাতেই সারা দুনিয়ায় বিভিন্ন জাতির শিষ্য জমেছিলো। তিনি মানুষকে দুরে রাখবার কথা প্রচার পেলেও ভিডিওগুলোতে তাঁর 'স্টাইল অব এ্যাক্সপ্রেশন' জানায় আত্ম প্রচারের প্রতি তাঁর সমর্থন ছিলো। তিনি কীভাবে রান্না করতেন তাও ভিডিও করতে দেন। (হয়তো শিষ্যদের অনুরোধে, অনুরোধে সম্মতি দিলে তো নিজের অবস্থান নড়ে যায়।) তিনি কথোপকথনে কারো ব্যাপারে আগ্রহ না-দেখালেও কার্যত তাঁর প্রবণতা সম্পর্কে David Quinn বলেন 'Look deeply into the man and you will see all the con tricks of a typical salesman. UG doesn't really want to repel people. He only wants to be seen to be doing so.'

তাঁর পুরো নাম উপ্পালুরি গোপাল কৃষ্ণমূর্তি জন্ম গ্রহন ১৯১৮ সালের ৯ জুলাই দক্ষিণ ভারতের মছলিপট্টনামে (অন্ধ্র প্রদেশ)। মৃত্যু ২০০৭ সালের ২২ মার্চ, ইতালিতে। তাঁর ভক্ত Professor O S Reddy মনে করেন চার ইঞ্চি লম্বা দুই কান বিশিষ্ট ইউ জি অসাধারণ এক মানুষ। তবে কী কারণে তিনি তাঁর ঘন লম্বা চুল দ্বারা কান দুটি ঢেকে রাখতেন কেউ কেউ জানে না। দেখা গেছে বিশেষ মেধা সম্পন্ন মানুষদের নানা প্রকার বিশেষত্ব থাকে তাদের শরীরের কোথাও না কোথাও। ইউ জি ঘুমাতেন কোবরা সাপের মতো গোল হয়ে। তাঁর আচরণে আত্মগরিমা এবং বিনয় দুইই প্রকাশ পায় বিভিন্ন সময়ে। উত্তরাধুনিকতার বিশেষ অংশের ধারণাবন্দী ইউ জি কৃষ্ণমূর্তি মজার মানুষ বটে। তাঁর অনেক কথোপকথনে ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যবহার করেছেন কোনো ব্যক্তি গোষ্ঠী জাতির উপর শক্ত গালি। যেমন, বাস্টার্ড, স্কাউন্ড্রেল, শীট, ননসেন্স ইত্যাদি।

প্রাসঙ্গিক কিছু প্রশ্নোত্তরের প্র্রশ্ন

ক. 'আমি' না-পাওয়ার বা না-বোঝার এবং 'এ্যানলাইটেনমেন্ট' এর কূল-কিনারা না-পাওয়ার ক্ষোভ সব সময় তাঁর মধ্যে সক্রিয় ছিলো কেন? অথবা ইচ্ছে করেই কী 'পারফেক্ট মানুষ' হতে চান নি?

খ. গোস্বামাখা আবোল-তাবোল কিছু কথা বাদ দিলে, তাঁকে পূর্বজ সাধকদের কিছু চিন্তার ভালো ব্যাখ্যাতা বলা যাবে না কেন?

গ. তিনি কি কখনো কখনো স্বতঃস্ফুর্ত ভাবকে ইচ্ছাকৃত লুকিয়ে রেখেছিলেন?

ঘ. বড় মাপের দ্রষ্টাদের মধ্যে যে-তুচ্ছতাবোধ বা আত্ম ক্ষুদ্রতা শনাক্তকরণ পরিলক্ষিত হয়, তা কি ছিলো ইউ জি কৃষ্ণমূর্তির কথাবার্তায়? কথা বলার সময় তাঁর এমন ভাব কেন যে তিনিই সত্য পেয়েছেন মানব জাতির ইতিহাসে? এমন করণে ভন্ডামির সাথে সম্পর্ক আছে কি না?

ঙ. বিভিন্ন সাক্ষাতকারে গড পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বার বার বলছিলেন 'নাথিং ইজ দেয়ার'। দেখা গেল, এই বিষয়ক তাঁর কথাগুলো মহাত্মা ফরিদ উদ্দিন আত্তার'র 'মনত্বেক আল তায়ের'র সারমর্ম, এবং মহাত্মা ইবনে আরাবী, রুমি, সাদী, মেইস্টার এ্যাখার্ট প্রমুখের কিছু চিন্তার সাথে মিলে যায় কেন? (যদিও ইউ জি ওইসব সকল মহাত্মাকে গালি দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।)

চ. না-পাইলে, না-বুঝিলে অস্বীকার/প্রত্যাখ্যান করতে হবে কী? আঙুর ফল টক বললেই কী টক হয়ে যায়?

ছ. সুইজারল্যান্ডে থাকাকালেই কি ইউ জি নিজের অজান্তে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্রীড়নক হয়েছিলেন? (তাঁর উপর এ্যাসপিওনেজ তত্পরতার অভিযোগগুলো অহেতুক ধরলেও)

জ. তাঁর সমালোচক David Quinn এর মতে- 'And just like all these other gurus, his role-playing only serves to strengthen the delusions of his listeners. His words might be full of fire and brimstone, but deep down everyone knows he is just a harmless puppy'। সত্যিই কী?

ঝ. David Quinn আরো বলেন, 'It is not an expression of his wisdom, but of his ego. At bottom, UG is a coward, and his cowardice literally destroys everything he says. Instead of promoting wisdom, UG is promoting delusions and lies.' সর্বনাশ কী?

বুঝবার কিছু নেই বলেন আবার তিনি কিছু বোঝাতে চান

ভালো মন্দ বিচার এখানে নয়। যুক্তির ওজনের উপর আলোকপাত করা যায় অ-পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থান থেকে। কেউ কেউ তাঁকে স্পিরিচ্যুয়েল শিক্ষক বলেন। তিনি নিজে বলেছিলেন- 'all spiritual discourses as ‘poppycock’ and thrashed the spiritual masters as ‘misguided fools’''। প্রশ্ন উঠেছে, তিনি নিজেকে একজন অভূতপূর্ব মিস্টিক বুঝানোর জন্যই কি তাঁর উনপঞ্চাশ বছর বয়সের 'ক্যালামিটি'কে খুব গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করতেন? সত্য খুঁজে পাওয়ার সাথে অমন ক্যালামিটির কি সম্পর্ক থাকতে পারে?

পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন- "Tell them that there is nothing to understand." কথাটার নির্গলিতার্থ মানুষের বুঝাবুঝিতে স্থুলতা/অপরিপক্কতা আছে। বলা যায়। একেবারেই বুঝাবুঝি নাই কী? তাহলে তিনি কেন সিদ্ধান্তসূচক/বুঝাবুঝির কথা বলেছেন। কনন্ট্রাডিকশন। কাউকে বা কোনো গোষ্ঠীকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে, ওদের উপর গালি ছুঁড়ে বলছিলেন নিজের সিদ্ধান্তের কথা। 'আসলে এটা হলো এই আর ওটা হলো সেই'- এইভাবে প্রত্যয় জানালে তো সিদ্ধান্ত হয়ে যায়। বুঝাবুঝির কিছু না-থাকলে তিনি সিদ্ধান্তসমুহ দিলেন কেন?

তিনি যদিও নিজেকে গুরু বিরোধি জাহির করেছেন। কিন্তু David Quinn বলছিলেন, 'having guru-like hair, being rude to people, abusing his listeners, and treating everyone as if they were infinitely below him. Whenever he opens his mouth he seems to be addressing empty space. In other words, he directs his words into a vacuum, rather than attending closely to the questioner before him. Because he takes little account of the wisdom or character of the person who talks to him, his teachings lack discrimination. The person could well be a genuine human being asking a perfectly valid question, but more often than not UG just abuses him.'

তাঁর কথাবার্তার ধরণ এমন যে, তিনিই শুধু সত্য আবিস্কার করেছেন, বাকী সব সাধক-গুরু-গবেষক কিছু না। এই প্রবণতা কি পারসনালিটি কাল্টকে উস্কে দেয় না? দেখা গেছে, নিজের দিকে আকৃষ্ট করার কৌশল হিসাবে এমন প্রত্যাখ্যান বেশ কার্যকর।

তাঁর চিন্তাও প্রত্যাখ্যান হতে পারে

জীবনের অধিকাংশ বছরগুলো পশ্চিমে, ষাট অধিক সুইজারল্যান্ডে ছিলেন। আমেরিকাতে ছিলেন কিছুকাল। অনেক দেশ ঘুরেছেন। এবং মৃত্যু বরণ করেন ইতালিতে ২০০৭ সালে। বুঝবার কথা বলেছেন, দুনিয়ার বহু কিছিমের মানুষকে পর্যবেক্ষণ করে বুঝেছেন, হিউম্যান নেচার এ্যাগজেক্টলি দি সেইম।

তিনি এমন এক চিন্তাবিদ যিনি মনে করেন 'চিন্তাই শত্রু'। চিন্তার ভেতরে শুধু কি শত্রুতাই বিদ্যমান? চিন্তার ভেতরে বাইনারি অপোজিশান শত্রু ও মিত্র থাকতে কি পারে না? আবার চিন্তা বলতে যদি তিনি দুনিয়াদারির চিন্তাকে বুঝে থাকেন, তাহলে চিন্তার ভেতরে গোলমাল/ঝামেলা/যন্ত্রণা তো আছেই। আর ব্যাপক অর্থে চিন্তা তো অধরা আধেয় সাপেক্ষে। চিন্তা করা মানে রিফ্লেক্ট করা। চিন্তা দ্বারা অধিক চিন্তার গতি পাওয়া। আমাদের চিন্তা গভীরতার দিকে যাওয়া মানে বিষয়ের গভীর গ্রন্থিত অর্থ খোঁজা। কিন্তু 'গভীর' এর শেষ কোথায়, আমরা জানি না। গভীরতার দিক নির্ণয়ের ব্যাপারেও মানুষ অন্ধকারে। যে-কোনো চিন্তা কি বের করে দিতে পারে না শত্রুতা ও বন্ধুত্বের প্রসঙ্গ? নির্দিষ্ট চিন্তাপুঞ্জ খুলেমেলে দেখলেই আমরা ধরতে পারি তার প্রকারভেদ। চিন্তার উপর আমাদের চিন্তা চলতে থাকে। চিন্তার ব্যাপারে ইউ জি'র ইনটারপ্রিটেশন শুধু তাঁর এবং তাও তো তাঁর রিজেকশন ফর্মুলা মোতাবেক প্রত্যাখ্যান হতে পারে।

মানুষ তার আত্মাকে জানতে চায় কেন?

ইউ জি কৃষ্ণমূর্তি জবাব দেন- 'UG rejected the notion of soul or atman and declared that our search for permanence was the cause of our suffering'। সত্যিই কি ভোগান্তির কারণেই মানুষ তার আত্মা- তার অরিজিন জানতে চায়? অনুসন্ধিত্সা কি আসলেই শুধু কষ্টের কারণেই? গৌতম বুদ্ধের চিন্তার প্রতিফলন কৃষ্ণমূর্তির জবাবে। 'দুর্ভোগ' মানে কি 'অ-সুখ'! দুঃখও কি মানুষ উপভোগ করে না? করে বলেই তো 'সেডেস্ট থট' মেশানো গানটি হয়ে যায় 'সুইটেস্ট সঙ' (জন কীটস)। ফলে দেখা যায়, দুঃখবোধও সৃজনশীল একটি অবস্থা।

কৃষ্ণমূর্তি মহোদয়ের কাছ থেকে, মানে তাঁর কথাবার্তার ভেতরে শিক্ষনীয় কিছু আছে কী?

তিনি নিজেই জবাব দিয়েছেন- 'What I am saying is outside the field of teachability; it is simply a description of the way I am functioning.' বলেছেন, 'I have no message for mankind.' ধর্ম বিরোধী কথা বলেছেন নানা প্রকারে আবার প্রার্থনা সম্পর্কে ইউ জি বলেছেন 'It is strengthening the self'।

'ভালোবাসা' একটি বাজে শব্দ

খুব রেগেমেগে বলেছেন 'ভালোবাসা' একটি বাজে শব্দ। ভালোবাসা মানে যৌন তৃষ্ণা'। এখানে প্রথমত 'ভালোবাসা'কে বাজে শব্দ বলবার মধ্য দিয়ে ইউ জি নিজেকে রোদ বৃষ্টির মতো অপক্ষপাতদুষ্ট রাখতে পারেন নি। কোন কিছুর উপর 'বাজে' রিমার্ক রাখার অর্থ বক্তা নিজেকে স্বকল্পিত 'ভালো'র পক্ষে রেখেছেন। আর ভালোবাসা মানেই যৌন তৃষ্ণা তো অবশ্যই না। ভালোবাসার বহু স্পেকট্রাম কোথায় যাবে? তিনি নিজে কামহীন ভালোবাসার আশ্রয়ে বিপদমুক্ত হয়েছিলেন। লন্ডনে হাইড পার্কে পুলিশের সাথে ঝগড়া করে লন্ডনস্থ রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামীজীর ভালোবাসার দৌলতে তিনি আশ্রয় পান। সুইজারল্যান্ডে একেবারে প্রথম দিকে হোটেলের ভাড়া দিতে অপারগ হলে ভেলেনটাইন নামের নারীটির ভালোবাসা তাঁকে সুইজারল্যান্ডে থাকবার ব্যবস্থা করে দেয়।

দারুন ব্যাপার তো!

তিনি তাঁর কথাকে interpret, misinterpret, distort করবারও অধিকার মানুষকে দিয়ে গেছেন। তাঁকে কেউ কেউ ‘enlightened man’ বলতো, এই বলাটাকে তিনি ঘৃণা করতেন। তাঁর মতে 'এ্যানলাইটেনমেন্ট' বলে কিছু নেই। সমালোচকের মতে, তিনি নিজেকে 'এ্যানলাইটেনড' জাহির করবার কৌশল হিসাবে অমন বলতেন। কারণ এমন বললে মানুষ তাঁর ভক্ত হবে বেশি।

তাঁর মতে খোদাকে মানুষ ভয়ের কারণে আবিস্কার করেছে। তাঁর সাফ কথা- 'There is no such thing as objective truth at all. There is nothing which exists outside or independent of our minds.' এই বিবৃতির পক্ষে নিশ্চিত হলেন কোন সত্যের ভিত্তিতে? এই বিবৃতিতে আংশিক প্যানথীইজমের বার্তা পাওয়া যাচ্ছে যেনো!

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, 'I was actually and factually looking for a man like me who is here now.' ভালো কথা। 'পারফেক্ট মানুষ' হতে হলে নিজকে খোঁজতে হয়। এই খোঁজ নেবার কথা সক্রেটিসও বলেছিলেন (নো দাইসেলফ), ইসলামের নবীও বলেছিলেন- মান আরাফা নাফসাহ ফাকাদ আরাফা রাব্বাহ।

কিন্তু আবার তিনি যখন ঘোষণা দিয়ে বসেন- ''There is no way I can tell myself, "Who are you?, What are you? What is there?" তখন তাঁর কাছ থেকে সুস্পষ্ট রিজনিং পেতে চায় মানবজাতি। তিনি কোনো রিজনিং ছাড়াই no way টাইপের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বহু সাক্ষাতকারে। এইভাবে no way বলে থামিয়ে দেয়ার প্রবণতার সাথে মিলে যায়, পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং কর্তৃক রাজনৈতিক সারপ্রাইজ প্রদান, যেমন 'নাথিং ক্যান মোভ ফাস্টার দ্যান লাইট স্পিড'। অথচ এখন মানবজাতি জেনেছে নিউট্রিনো আলোর গতির চাইতে বেশি গতিতে চলে।

মজার বিষয় হলো, মোক্ষ প্রাপ্তির তরিকা থেকে তিনি নিজেকে সরিয়ে এনেছিলেন এই জন্য যে সাধক বলেছিলেন 'রহস্য ভেদ করতে পারবে না'। ইউ জি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন- 'হোয়াট দি হেল উই ডু হেয়ার?' কিন্তু এই তিনিই অবশেষে বললেন- 'There is no way you can experience the Reality of anything.' বললেন- 'actually there is no way the physical eye can look at anything.' একটা সীমা যে আছে তা বুঝতে পারলেন শেষে! এবং আধ্যাত্মিক সাধকদের মতো বললেন- 'So, what I am stressing all the time is how the body, freed from this strangled hold of culture, functions. That's all that I am describing.'

সমস্যার সমাধান পাওয়া কী আসল সমাধান?

কৃষ্ণমূর্তি বলেন- সমস্যা তো জিন্দা থাকে ভুল সমাধান মানুষ বের করে বলে। 'The real problem is the solution. Your problems continue because of the false solutions you have invented.'

তিনিও কি প্রচুর ভুল সমাধান বের করে দিয়েছিলেন মানবজাতির উদ্দেশে?

(অসমাপ্ত)

তথ্য জরিয়া

http://www.ugkrishnamurti.net/

http://www.ugkrishnamurti.org/ug/ug_video/index.html

http://ug-k.blogspot.com/

http://www.takuin.com/the-death-of-ug-krishnamurti/

http://tkpi.org/content/teachings-ug-krishnamurti

http://www.inner-quest.org/UG.htm

http://the-natural-state.blogspot.com/

http://ugkrishnamurti.net/ugkrishnamurti-net/SWAN_SONG.htm

http://www.well.com/user/jct/enemy7.htm

http://www.travelswithug.com/

Monday, January 31, 2011

উদ্ভাসিত মিল প্রেক্ষিতঃ দারওয়াজা খোলো,বংশী বাজিতেছে!

Loving actions are the result of Oneness. বাহ! 'এ্যায় গামে জিন্দেগী কুচ তো দে মাশওয়ারা....কেয়া কারোঁ এ্যায় খোদা!'। আছে আছে মাশওয়ারা আছে! 'প্রাণ সখিরে ঐ শোন কদম্ব তলে বংশী বাজায় কে?' দারওয়াজা খোলো, খোলো দুয়ার, বংশী বাজিতেছে!অজস্র বিরোধের মাঝে ঐক্যের অন্তরঙ্গ সুর। সূর্যালোক, জোছনা আর সম্পর্কগুলোর সকাল দুপুর সন্ধ্যা কিছু যে বলে না এমন নয়। The binding principle of Being in All things দেখতে পারলে অনিন্দ্য পুলক শিহরণ নিশ্চিত।

দুই চোখে একটি দৃশ্যের অন্তর দেখা, দুই পায়ে এক পথ হাঁটা একটি শরীরের স্বপক্ষে, দুই হাতে ছুঁয়ে পাওয়া অমল অনুভব, দুই নাসারন্ধ্রের ঐকমত্যে শ্বাস প্রশ্বাস, আর এইসবের নিয়ন্ত্রণে একটি মন। এই মনটি তার নিজের আয়ত্বে থাকা বহুবিধ প্রত্যঙ্গ সম্বলিত শরীর আকারের মিনি মহাবিশ্বের অগণন বিষয় জানে না বুঝে না সহজে। শুধু গহনে দেখতে পায় ভিন্নতার মাঝে ঐক্য যদি তারে দেখিবার চায়।

কার মেধা বা প্রজ্ঞার সাহস আছে যে দেখাতে পারে, উষ্ণতার ধীরে ধীরে নাই হওয়া আর হিম হিম শীতল শুরু হওয়া ভিন্ন বিন্দু থেকে! ভিন্ন মাত্রা ভিন্ন রূপ ভিন্ন রঙের মাঝে অভিন্নতার অপরূপ দৃশ্যটি দেখতে পারা সত্যিই বিস্ময়কর!

এতো এতো জাতি ভাষা বর্ন গোত্র ও মতাদর্শিক পরিচয়ের অন্তরে মোহন অভিন্নতা কি নেই? সকল প্রকার প্রাণবন্ত ভিন্নতার উপরদেশে একই নীলাকাশ বা ধবল মেঘ অথবা কালোমেঘদের দেখা যায় কি কারণে? এক প্রশ্নের জবাবে আলেম সাহেব জানিয়েছিলেন, প্রাচীন ভারতের আদি ধর্মগ্রন্থ পবিত্র বেদ এর ঈশ্বর বিশ্বাসের শ্লোকগুলোর সাথে ইসলামের একত্ববাদের মিল আছে। ওই কিতাবগুলো এই অঞ্চলের জন্য প্রেরীত পয়গম্বরদের উপর নাজিলকৃত ছহিফা হতে পারে। শ্রী রামাকৃষ্ণ রাওয়ের 'মোহাম্মদ দি প্রফেট' একটি অসাধারণ ছোট পুস্তক। এই পুস্তকের মিলিয়ন মিলিয়ন কপি সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে আছে। পুস্তকটির শেষাংশ নিম্নরূপ-

The same author continues "If this be Islam, says Goethe, do we not all live in Islam?" (Mohammed The ProphetBy Prof. K. S. Ramakrishna Rao, Head of the Department of Philosophy, Government College for Women University of Mysore)

মনোথীস্টিক রিলিজিওন বা একেশ্বরবাদী ধর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত ইসলাম, মসিহি ও ইয়াহুদ, এই তিন ধর্মে বিস্তর বিষয় আছে একই অর্থবহ এবং তাত্পর্যবহ।

বলছিলাম ভিন্নতার মাঝে অভিন্নতার অপরূপ দৃশ্য নিয়ে। জার্মান অস্তিত্ববাদ (মার্টিন হাইডেগার) আর ফরাসি মুল্লুকের অস্তিত্ববাদ (জাঁ পল সার্ত্রে) ভিন্ন হলেও আন্তরিক একটা বোঝাবুঝি আছে। কিন্তু মজার ব্যাপার অস্তিত্ববাদের দুই রঙ আস্তিক্য এবং নাস্তিক্য, বেশ ঝলোমলো। আস্তিক নাস্তিক, এই দুই শব্দে যা প্রকাশ পায় তা কি বুদবুদ এক প্রকার! অস্তিত্ববাদের ভেতরে ভাববাদের রৌশনী দেখিয়েছেন কেউ কেউ।তো দেরিদা কোন পথে ঘুরতে ঘুরতে এসে দাঁড়ালেন প্রায় আটশত বছর আগে ইনতেকাল হওয়া সূফী মহাত্মা ইবনে আরাবীর সাথে! বিস্ময়কর! ইবনে আরাবীর সাথে মিলতে পারলে মহাত্মা রূমী, হাফিজ, সাদী, মনসুর হাল্লাজ, মির্যা গালিব, ইকবাল আর বাকী থাকেন কেমনে? সক্রেটিস বলেছিলেন Know thyself. রসুল মোহাম্মদ স. বলেছেন- মান আরাফা নাফসাহ ফাকাদ আরাফা রাব্বাহ। দুই জনের কথার অর্থ এক অভিন্ন!

এই ফাঁকে আরেকটা মজা- এ্যাথীইজমের ফান্ডামেন্টাল মেসেজগুলোতেও থীইজমের বুনিয়াদী বিশ্বাসের কথা আছে। যেমনঃ 'Search for what is true, even if it makes you uncomfortable.' এবং আরো মজার যে, 'Most atheists follow many of the same "moral rules" as theists.'' কই যাবেন বলুন! ধরিত্রী কমলালেবুর মতো গোলাকার!

ওদিকে দেখা যাক। আমেরিকা থেকে শুরু করে পূর্ব দিকে উপমহাদেশ পর্যন্ত যতোগুলো ভাষা আছে, এই ভাষাগুলোর মধ্য থেকে আরবকে মাঝখানে রেখে বিভক্ত (সাব সাহারীয় আফ্রিকার ভাষাগুলোসহ) করা গেলেও, দেখা যায় একটা আন্তরিক সম্পর্ক তৈরী করে দিয়েছে স্পেনিশ ভাষা। স্পেনিশ ভাষাতে হাজার হাজার আরবী শব্দ। উপমহাদেশের উর্দূ ফারসি হিন্দি সিন্ধি বাংলাসহ অন্যান্য ভাষাতেও আরবী শব্দ বিস্তর। আর ইংরেজি ফরাসী রোমান জার্মান ইত্যাদি ভাষার মূলে লাতিন ভাষা। উল্লেখ্য, স্পেনের আন্দালুসিয়ার দরবেশ ইবনে আরাবী দামেস্কে এসে কিছুকাল জীবন যাপন করে ইহলোক ছেড়ে গিয়েছিলেন।

In the 'Sufism and Deconstruction: A Comparative Study of Derrida and Ibn 'Arabi', The writer Ian Almond, a teacher of English literature at Bosphorus University, raises an intriguing question: "How analogous can the vocabulary of a Sufi saint be to the work of contemporary French theorist?'

সত্যিই তো, এই এ্যানালগাস বা সামঞ্জস্য কি করে এলো! কেন বাউল আবদুল করিমের গানের ভাব আর আমেরিকার জাতীয় কবি ওয়াল্ট হুইটম্যানের কবিতার ভাব এক হয়ে যায়! কেন এতো এতো ভিন্নতা সত্বেও প্রেমের কবিতা/গানগুলোর সারমর্ম অভিন্ন! কেন কেইপটাউনের মানুষটি বাঙালি কবির কবিতা পড়ে চোখের জল মুছে! কেন কুর্দিস্তানের মানুষটির ভালোবাসাবোধ একই রূপে উদ্ভাসিত হয় আর্জেন্টিনার মানুষটির হৃদয়ে! কেন শেইক্সপিয়র ইয়েটস কীটস মিলটন পাবলো নেরুদা মার্কেজ সামস্টিক মানবের মন নাড়া দিতে পারেন!কেন মানবজাতির প্রজ্ঞা হন্যে হয়ে খুঁজছে 'থিওরী অব এ্যাভরিথিং'! কেন আরব সংগীত লিজেন্ড মোহাম্মদ আবদুর স্বর আর্তি যেনো বাংলার মাটিমেশা আবদুল আলীমের কন্ঠের আর্তি! কেন বিথোভেন এর পিয়ানোর ক্রন্দন সকলকে কাঁদায়! কেন এ্যাঙ্গোলার অজপাড়াগাঁয়ে কালো মানবশিশুদের কষ্ট আঁকড়ে বেঁচে থাকার প্রয়াস দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শাদা চামড়ার এক নারী!

আমি আমরা কে?

রূমির ফিউশান-

I am nothing, just a mirror in the palm of your hand,/Reflecting your kindness, your sadness, your anger.

কেনিয়ার ওই হাতিটার বাচ্চা মরে শুকিয়ে বৃক্ষ শাখার মতো পড়ে আছে। শুকনো টুকরোগুলোকে মা-হাতি শুঁড় দিয়ে আদর করে! কান্দে! চিত্কার দ্যায়! জন্মমৃত্যুর সুন্দর রূপ বলবো?তাইলে এতো এতো যুদ্ধ রক্তপাত আদম সুরতের ওরা কি কারণে করে? নাকি ক্রীড়া! কার সাথে কার ক্রীড়া? এই ক্রীড়া তবে বাধ্য হয়ে সারকামটেন্সের কারণে? নাকি অবসেসড? নাকি নিদারুণ ভুল বংশ পরম্পরায়! কেন 'অপরাধী' সত্যের মুখোমুখি হলে শাদা হয়ে যায়! কেন মানুষ শান্তির জন্য যুদ্ধে লিপ্ত! সম্মিলিত এবং ভিন্ন। ভিন্নতা দৃশ্যে আসে একটা স্তর হতে। অভিন্নতা গহনপুরে, কারণ 'দি ডিভাইন এ্যাসেন্স ইজ দি এ্যাসেন্স অব এ্যাভরিথিং'- ইবনে আরাবী জানিয়েছেন। অদ্বৈতবাদের ঝিলিক! সমুদ্র এক, আর ঢেউ আরেক, কিন্তু ঢেউ সমৃদ্রের সাথে সম্পৃক্ত!শুধু প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে দেখি, জন্ম নেয়ার পরক্ষণেই পাখির বাচ্চাগুলো একটু জুইত হয়ে বসার কোশেশ করতেই টুপ করে গাছতলায় পতন, প্রাণ শেষ! ধরিত্রীর যাবতীয় কিছুকে মাধ্যাকর্ষণে ধরে রেখে কক্ষপথে তার দৌড় দৃশ্য দেখি আর বলি, দারওয়াজা খোলো, খোলো দুয়ার, বংশী বাজিতেছে!

৭/১২/২০১০

Wednesday, October 27, 2010

এথিক্সও যেনো তোর বিরহে নিরংকুশ উন্মন

লতাগুল্মেরও আর্তনাদ, ফুল পাখি সবুজ অবুঝ স্বপ্ন

তিন মাত্রার দুনিয়াদারি, বেশ বেশ!

ভালো কলা কৌশল লেনদেন শূন্যে ভাসমান!

বহুদূরে বসে যে মনপাঠ করো, বুঝি, এও বুঝি

ঘটনাচক্রে এইমতের উর্ম্মি কেন এতো উন্মাদ উতলা!

প্রায় প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা, আহত স্বপ্নগুলো

এথিক্সের দিকে মোটেও নজর রাখে না।

একটি নিহত স্বপ্নের আলোকিত মুখমন্ডল দেখে

এথিক্স ভয় পেয়ে যায়, এথিক্স পালাতে চায়!

ধরো, পাখিটির, ফুলটির, সবুজের অবুঝ স্বপ্নটির

নাম রাখা হলো স্বপ্ন-যৌবন-ছায়া

ওটা তুমিও হতে পারো ।

ওই জল টলমল উজ্জল চোখ, ঠোঁট কপোলে প্রশান্ত আহবান!

বেশ চনমন সৃজন প্রমোদে এলোকেশ আহলাদ ছড়ায়

গায়-

জানি, তোকে ভালোবাসলে কেয়ামত কেয়ামত, মৃত্যু আলিঙ্গন

তবু তুই ছাড়া আমি নেই তুই-ই অনুখন।

আমার কোনো হৃদয় নেই রে

নেই,নেই কোনো বোধের উদ্বোধন

আমার এথিক্সের হৃদয় তোর হয়ে থাকলো নিরংকুশ উন্মন

জানি, তোকে ভালোবাসলে কেয়ামত কেয়ামত, মৃত্যু আলিঙ্গন!

২৩/১০/২০১০

চেতনার বড়াই, বুদ্ধির লজ্জা এবং উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতার অন্তর কথা

(ব্রাত্য রাইসু'র 'বলো জয় মা তারা বলো নারায়ে তাকবীর' শীর্ষক নোটে ব্রাত্য রাইসু ও সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ'র তর্কাতর্কি পাঠ শেষে মন্তব্য আকারে প্রকাশিত নীচের লেখাটি ২১/১০/২০১০ তারিখে।)

ব্রাত্য রাইসুদা এবং সুব্রতদা'র মন্তব্যগুলো পড়ে মনে হলো-শব্দে শব্দে কিলিং গেইম বেশ শাণিত, টনটন!আমি অধম এবার কিছু কথা করিবো বর্ণন!

ধর্ম চেতনা, ভাষার চেতনা, দেশভিত্তিক জাতীয়তার চেতনা এবং ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক স্বার্থের চেতনার দ্বারা মানুষ মানুষে সংঘর্ষ রক্তপাত হয়ে আসছে। প্রতিটি মানুষ যুদ্ধে লিপ্ত নিজ নিজ জীবন নিয়ে। চেতনাগুলোর সাথে মানুষের কোনো না কোনোভাবে জড়িয়ে থাকাটা বিস্ময়কর বাস্তবতা।

উপমহাদেশের হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গাগুলোর পেছনে শুধু ধর্মীয় চেতনা কার্যকর না। শুধু তাকাই না দৃশ্যপটে, দেখতে চেষ্টা করি ভালোভাবে।মানুষকে অসভ্যও বানায় বাজার-লেনদেন/ক্ষমতার লিপ্সা। টিকে থাকার লড়াইয়ে বুদ্ধিজীবিও ক্রেতা বিক্রেতা। বুদ্ধিজীবিও বাজারের তাজা মাল।ষোল সতের বছর আগের কথা, দেশে থাকতে কিছুদিন সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে ছিলাম। চোরা কারবারিদের সাথে একান্তে আলাপ করে বুঝেছি, সীমান্তে গুলি বিনিময়/মানুষ মারার অন্যতম প্রধান কারণ বিডিআর বিএসএফ কর্তক অবৈধ 'মাল কামানো' নিয়ে ভাগাভাগি বরাবর না-হওয়াতে।

বেশ কয়েক বছর আগে, কাশ্মীর ইস্যুতে, হঠাত পেয়েছিলাম,পাকিস্তানী এক টিভি চ্যানেলে (নাম মনে নেই)তিন ধর্ম পন্ডিতের বিতর্ক। তিন মানে হিন্দু মুসলিম খৃষ্টান। (হিন্দু যদিও স্থানকেন্দ্রিক/দরিয়ার কিনারা কেন্দ্রিক শব্দ, কিন্তু শব্দটি উপমহাদেশের একটি বৃহত জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় পরিচয়কে ধারণ করছে) তো,বিতর্কের এক পর্যায়ে পাদ্রী মিয়াসাহেব প্রশ্ন উত্থাপন করলেন, বাংলা তরজমা এভাবে- 'ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতের যে-সব মুসলিম গোষ্ঠীসমূহ কাশ্মিরের মুসলমানদের জন্য জান কোরবান করতে প্রস্তুত, তারা কেন তাদের ঈমানী ভাই ফিলিস্তিনি মুসলমানদের জন্য বাদ-প্রতিবাদ করে না জোরালোভাবে? পাদ্রী সাহেব যৌক্তিকভাবে তার প্রশ্নের মধ্যেই এই ইশারা দিলেন যে, ভারতের সাথে ইসরাইলের গভীর কূটনৈতিক তায়াল্লুক আছে। ভারত যদি ফিলিস্তিনে ইসরাইলী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠায়, তাইলে গভীর তায়াল্লুকের তাপ শীতল হয়ে যাবে। আর ঈমানী দরদ সবার জন্য সমানতালে থাকাটাই বিধেয়, কারো জন্য কম কারো জন্য বেশি হবার সুযোগ কই! সুতরাং এখানে ঈমানী দরদ মূখ্য নয়, রাষ্ট্রকেন্দ্রিক গোষ্ঠীকেন্দ্রিক অর্থনীতিভিত্তিক স্বার্থের আগুন প্রজ্বলিত। বুঝার বিষয় হলো, পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রনমুক্ত করে ওই মুসলমানগুলোকে ভারতের অধীন করার প্রচেষ্টার মানে কি? পাকিস্তানই বা কেন ধর্মের দোহাই দিয়ে তাদেরকে কব্জায় রাখতে চায়!

আর পাকিস্তানী চেম্বার কমার্স, ইন্ডিয়ার চেম্বার কমার্স, বাংলাদেশের চেম্বার কমার্স নেতা ফায়দা হাসিলের জন্য মোয়ামেলা করে দিলে-জানে, মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার কামাইয়ের চুক্তিতে সই করে, তখন তারা বেশ রোমান্টিক অনুভবে উদ্দীপিত হন। তখন তাদের মধ্যকার হিন্দু মুসলিম ক্রিস্টান ধর্ম, দেশ, ভাষা চেতনা জিরো ডিগ্রিতে নেমে আসে।আরবদের মধ্যে দেখি, ভাষাভিত্তিক জাতীয়তার চেতনা একেবারে দগদগে। কিন্তু ফায়দা লুটার মওকা পেলে ওদেরও মাথা ক্রিয়াশীল থাকে মুনাফার চেতনা। পরিস্কার বলে, 'ফিল বিজনেস মাআফি আখু আবু' অর্থাত 'ব্যবসাতে বাপ-বেটা বা কোনো প্রকার ভাইয়ালি নাই।' এক সিরিয়ান খুব সিরিয়াসলি বলেছিলো, আমার মায়ের পেটের ভাইটা বেআক্কেল, আর ওই সিন্ধী হিন্দু ব্যবসায়ীটা ব্রেইনি, সে আমাকে অনেক লাভ দেয়, আমার ভাই যদি ওই সিন্ধী হিন্দু ব্যবসায়ীটার সাথে ঝগড়া করে,তাহলে আমার ভাইকে মাইরা ভর্তা বানাইয়া ফেলবো।'!

দুনিয়ার মানুষকে, নেতাদেরকে, বুদ্ধিজীবিদেরকে নাচাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। বোকা নেতারা, বোকা বুদ্ধিজীবিরা একেকটা ইস্যু বানিয়ে বকবক করতে থাকে বছরের পর বছর।

ধরিত্রির দেশগুলোর সীমান্তের লড়াই, ব্যক্তি মানুষের বাড়ী-ঘরের সীমানা নিয়ে লড়াই আর ধান ক্ষেতের আইল ঠেলাঠেলি নিয়ে লড়াই, এইসব লড়াইয়ের পেছনে শুধ মতলব, শুধু স্বার্থ। ধর্ম বা আদর্শ, নৈতিকতার বাঘা বুলি ক্যামোফ্লাজ মাত্র কখনো মনে হয়!

জগতে মুলতঃ সকল শ্রেণীর, সকল জাতের, সকল মতের, বুদ্ধিজীবী, অবুদ্ধিজীবী সকলেই 'লাভের পিঁপড়া' হতে চায়। কেউ 'লোকসানের গোবরে পোকা' হতে চায় না স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে। এথিক্স বেচারা কেবল নীরবে অশ্রু মোছে!

সাম্প্রদায়িক চেতনার কারণেই সীমান্তে কিলিং হচ্ছে না। অনেকগুলো চেতনার সাথে বৈষয়িক ও রাজনৈতিক হীন তৎপরতা শামিল আছে। ব্যক্তি স্বার্থ ও গোষ্ঠী স্বার্থ আদায়ের প্রয়াসকে স্পিরিটেড আপ করার জন্য, বদ উদ্দেশ্যের চেতনায় মানুষকে যুক্ত করার জন্য উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতাকে ইস্যু বানানো হয়েছে। উজ্জল দৃষ্টান্ত- জিন্নাহ আর নেহেরুর ব্যক্তিগত জিদাজিদিকে 'সাম্প্রদায়িকতা'র রঙ লাগিয়ে মানুষগুলোকে জড়ানো হয়েছে এবং মারা হয়েছে!

উপমহাদেশের কূপমন্ডুক/মূর্খ/অনালোকিত মানুষগুলোর মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা বিদ্যমান, আর এটাকে ব্যবহার করে আসছে চতুর শয়তানেরা।

Monday, October 4, 2010

প্রভাবশালী ভাষাদের হায়াত মউত চিন্তা এবং আরবী ভাষার বিস্ময় প্রসঙ্গ!

বিস্ময়করই লাগে! মানচিত্রের দিকে তাকান, কোথায় ইয়েমেন আর কোথায় সিরিয়া, কোথায় মধ্য আফ্রিকা, আর সেই আটলান্টিকের পূর্ব পারের দেশ মরক্কো; এতো বিস্তৃত ভূখন্ডে বসবাস করনেওয়ালা মানুষগুলোর স্থানীয় ডায়ালেক্টের ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও একটা কমন আরব ভাষা এই বিস্তারিত অঞ্চলের মানুষগুলো বুঝে, ভাব বিনিময় করে! উচ্চারণে পার্থক্য আছে কিন্তু সহজেই ইয়েমেনের মানুষ মরক্কোর মানুষের মনের ভাব বুঝে ফেলে! সোমালিয়ার মানুষের আরবী সিরিয়রা বুঝে,কাতারের মানুষ বুঝে সাহারার পশ্চিমের মানুষগুলোর আরবী!

এবার ভারতবর্ষের দিকে তাকান, মালায়ালাম ভাষা ভালো করে না শিখলে হায়দ্রাবাদি বা গুজরাটিরা কিছুই বুঝবে না!অবশ্য তামিল, মালায়ালাম, কানাড়ি ভাষার শব্দে যথেষ্ট মিল আছে।

ওদিকে প্রাচীন লাতিন ভাষার সাথে ইংরেজি ফ্রেঞ্চ ইতালীয় জার্মান স্পেনিশ ভাষার গভীর সম্পর্ক থাকা সত্বেও প্রত্যেকটি ভাষা আলাদা বৈশিষ্টে প্রস্ফুটিত। এক গবেষণায় প্রকাশ, হিব্রু ভাষার সাথে প্রাচীন ভারতের ভাষার সম্পর্ক আছে। কাশ্মিরী অজস্র শব্দের কাছাকাছি হিব্রু শব্দাবলি আছে।

ভাষাবিদের মতে, হিব্রু ও আরবী সেমিটিক ভাষার অন্তর্ভূক্ত। শব্দে শব্দে যথেষ্ট মিল থাকা সত্বেও হিব্রু আর আরবীর দুরত্ব যথেষ্ট। বিস্তারিত আরবভাষী মাঝখানে থাকা ইসরাইলের হিব্রুভাষীরা মূলতঃ ধর্মীয় কারণেই অনেক দূরে সাংস্কৃতিকভাবে। যদিও এটা ঠিক যে, আরবভাষী মানেই সবাই মুসলিম না, আরবী জবানওয়ালা লাখো লাখো মসিহি ও ইয়াহুদ বসবাস করেন এই বিস্তারিত জনপদে। বেশি পরিমানে খৃস্টান আছেন মিশর ও লেবাননে।

আরবী ও হিব্রু প্রসঙ্গে নীচের উদ্ধৃতাংশটি পড়ুন-

'A second thing to consider is grammatical number. English has singular and plural only. Arabic has singular, dual and plural, the plural denoting three or more. Thus we have: safina-- one ship; safinatein--two ships; sufun--three or more ships. This is completely general in Arabic, applying to all nouns. Hebrew has a dual too, but it is limited to select nouns for things that come in pairs: misparayim--pair of scissors; yadayim--two hands; yomayim--two days. One would surmise that, at one time, Hebrew also had a full- fledged dual, which withered over the centuries, while the Arabic dual remained intact, closer to the prototype.'

আরবিতেও ঈআদ মানে এক হাত, ঈআদাইন অর্থাত দুই হাত। ইয়াওম মানে দিন, ইয়াওমিন মানে দুইদিন।

উল্লেখ করা বিধেয় যে, ফ্রেঞ্চ ইতালীয় পর্তুগীজ স্পেনিশ রোমানীয় ভাষাসহ ইউরোপ আমেরিকার ২৫টি ডায়ালেক্টের অরিজিন হলো প্রাচীন রোমান ভাষা, যার মূল নাম লাতিন। (এই দুনিয়ার মানুষের এক সময়ের প্রবল প্রভাবশালী লাতিন ভাষা এখন এক মৃত ভাষা হিসাবে পরিগণিত!)

স্পেনিশ আরব কানেকশন: ওদিকে দ্রুত সম্প্রসারণশীল প্রভাবশালী একটি ভাষা স্পেনিশ। দক্ষিণ আমেরিকার অথিকাংশ দেশসহ পৃথিবীর পঞ্চাশাধিক দেশে নেটিভ ভাষা হিসাবে স্পেনিশ বিস্তর মানুষের অন্তরে জায়গা করে নিয়েছে। এই ভাষাটার অরিজিনও ল্যাটিন। আর স্পেনিশ ভাষার পরতে পরতে ভরে আছে আরবী শব্দাবলী একটু অদল-বদল হয়ে।

আফিয়া আরবী মানে ক্ষমা করা।

আলাফিয়া স্পেনিশ মানে ওই একই।

এখানে দেখুন স্পেনিশ ভাষায় আরবীর প্রভাব তালিকাসহ http://en.wikipedia.org/wiki/Arabic_influence_on_the_Spanish_language#List_of_words_of_Arabic_origin তো বলছিলাম, বিস্ময়কর লাগে, এতো বিস্তারিত ভূখন্ড জুড়ে একটা কমন ভাষা ধর্ম নির্বিশেষে কিভাবে ভাব বিনিময়ের মাধ্যম হয়ে আছে! অন্যতম একটা কারণ শব্দ সম্ভার যথেষ্ট, একই অর্থবোধক অনেকগুলো শব্দ, একেক দেশে একেকটা ব্যবহৃত কিন্তু অর্থ সবার জানা!

Saturday, March 13, 2010

তোমার মায়ার মাহাত্ম্য বুকে নিয়ে চলে যাবো পৃথিবী ছেড়ে!


একটা পথও এমন নেই, যে-পথে স্বপ্নদের সাথে খেলতে খেলতে তোমার কাছে পৌঁছে যেতে পারি অক্ষত; সবগুলো পথ আমাকে ডাকে; সকলেই খোলামেলা দেখায় তাদের যা কিছু সুন্দর; আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি না- সকল পথের পাশে কেনো কিছু সুন্দর ফুল কিছু সুন্দর পাখি কিছু জোছনাময় শিশু আর কিছু মায়াবী প্রসন্না থাকে!

তবে কিছু পথে স্বেচ্ছায় একা একা কিছুদূর হেঁটে যেতে যেতে দেখেছি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা মনোহর কুহক আর ক্যামোফ্লাজ; বিভ্রান্তির আয়োজন শনাক্তকরণে খুব বেশি দূর যেতে হয় না আমাকে; উপরে আকাশ আছে নিশ্চিত এই বিশ্বাস অক্ষুন্ন; চলতে পথে আকাশকে প্রখর কিংবা নরম দৃষ্টির ছোঁয়া দেই না ; যদি মর্ত্যের পিচ্ছিল পথে চলতে পা পিছলে যায় এই ভয়ে;

প্রীতির বায়ুমন্ডলেও সাঁতার কাটি কখনো সতর্ক, কেউ যেনো হনন করতে না-পারে; আমি হেঁটে যেতে যেতে কিছুদূর উড়েও যেতে পারি; উড়ু উড়ু মন স্বপ্নদের সাথে ওড়ে আনন্দে;
মাধ্যাকর্ষণ সত্যি বড় প্রেমময়! বাইরে যেতে দ্যায় না, নিশ্চিন্ত থাকো, মহাশুন্যের স্থান-কাল আমার ভেতরেও আছে

আজকাল খুব বেশি তোমাকে দেখা যায় আমার ভাবের সবুজ ভূবনে; প্রতিদিন কিছু প্রিয়ংকর বোধ পাঠাও; বোধের বিভাতে শোভিত চিত্রকল্প- যার অন্তর তুমি,দেখে দেখে খুব মুগ্ধ হই গো নীলসুরভী, মুগ্ধ হই; বেঁচে থাকা ভালো লাগে; পথে পথে ক্ষত বিক্ষত হওয়ার বেদনা ভুলে যাই নিমিষে; তোমাকে হৃদয়ে ধারণ করে বুঝলাম ফিরোজা-নীল রঙে এতো খুশবো মধুর

তাও বলে রাখি- যদি লোমহর্ষক আহত হই, যদি মুমুর্ষাবস্থা হয় পথে, যদি হদস্পন্দন থেমে যেতে চায় ক্ষরণে ক্ষরণে, তোমার মায়ার মাহাত্ম্য বুকে নিয়ে চলে যাবো পৃথিবী ছেড়ে! তুমি খুশবোময় থাকবার চেষ্টা করো মৃত্যু অবধি।