Pages

Tuesday, September 18, 2007

সামহোয়ারব্লগের ভার্চুয়াল ফাইটিং প্রসঙ্গে


আপনারা যারা শুধু ভার্চুয়াল ফাইটিং করছেন করুন। আমি কিন্তু সকল ব্লগ-বাড়িতে ধর্ণা দেই। কারো বাড়িতে মন্তব্য-উপহার দেই বেশি, কাউকে কম। কমবেশি নির্ভর করে পোস্টের ওজনের উপর।
কারণ কি জানেন?
কারণ, এই সামহোয়ার ভার্চুয়াল দেশটির ব্লগ-বাড়ির সদস্যরা, মানে ব্লগাররা সকলেই মানুষ।মানুষ হচ্ছে এক বিস্ময়কর ক্ষমতাধর অথচ অসহায় প্রাণী। মানুষ সৃস্টিশীল মানুষ ধ্বংসশীল। মানুষের আছে বিস্ময়কর প্রতিভার ক্ষমতা।আবার দেখুন, মানুষের কপালের নীচে আছে মাত্র দু'টি চোখ। পেছন থেকে আক্রমণ করে খুব সহজেই মানুষকে মেরে ফেলে যায়। ( আধ্যাত্মিক চোখের অধিকারীরা আলাদা, এই ভার্চুয়াল দেশে কেউ আছেন বলে মনে হয় না। ) তাছাড়া মানুষ নিজের মতো করে জীবন যাপন করতে যেয়েও হাসি কান্নার দোলায় দোলে।
দার্শনিক লেখক বার্ণার্ড শ বলেছিলেন, লাইফ ইজ নাথি বাট আন্ডারস্টান্ডিং এ্যান্ড কম্প্রোমাইজিং।
জগতের অধিকাংশ মানুষের বেলায় একটি প্রমানিত সত্য হলো, সুযোগ পেলেই সকল প্রকার নীতি নৈতিকতার মাথা খেয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কারণ শত প্রকার সমৃদ্ধি সত্বেও মানুষ অস্তিত্বের সংকটে ভোগে। আর হ্যাঁ, এটাও সত্য যে, খুব কম সংখ্যক মানুষ প্রতিটি সমাজে আছেন, যারা একটা নীতি বা নৈতিকতা আঁকড়ে ধরে থাকেন আমৃত্যু। ওরা ব্যাতিক্রম।মানুষের সাধারণ স্বভাব হলো এই, যে-মানুষটি কারো জন্য নিষ্ঠুর নির্দয়, সেই মানুষটিই আবার কারো জন্য খুব দয়ালু-দয়াল বাবা সাঁই। আবার যার প্রতি নির্দয় হয়, তার প্রতি সময়ের ব্যবধানে সদয় হয়।
জগতের কল্যাণ অকল্যাণের ধারণাটি আপেক্ষিক্ একটি কল্যাণমুলক কাজ একটি জনগোষ্ঠীর সকলের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। কারো জন্য অকল্যাণকর হয়ে দেখা দেয়। ফলে বিরোধ সৃষ্টি হয়, আন্দোলন-সংগ্রামের উপলক্ষ তৈরী হয়।
বর্তমান বিশ্বের সবচে' ক্ষমতাধর মানুষটি হলেন জর্জ ডব্লিউ বুশ। তার সাম্রাজ্যবাদী নীতি সমর্থন করে না বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ। 'উইথ মি অর এগেইন্সট মি' এই নীতি প্রয়োগ করে তিনি বিশ্বে সরদারী করছেন। কিন্তু নিরপেক্ষ বিচারের কথা যদি বলি, তাহলে বলতে হয়, এই বুশ মধ্যপ্রাচ্যের লাখো লাখো নারী পুরুষ শিশুর অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছেন, আবার এই বুশই আফ্রিকার লাখো লাখো কঙ্কালসার নারী পুরুষ শিশুর খাদ্য বস্ত্র বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। যদিও দশ আনা লুট করে পাঁচ আনা বন্টন করে দেখাচ্ছেন আর পাঁচ আনা আমেরিকান মহান জাতির খেদমতে ব্যয় করছেন।
যাক্ এবার আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গে একটু বলি। দাবী আদায়ের আন্দোলনের এক ঐতিহাসিক পটভূমিতে আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু হয়েছিলো। আমাদের সাহিত্যাঙ্গনের একটি অন্যতম প্রধান ব্যর্থতা হলো, এই মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিশ্বমানের সফল কোন উপন্যাস গল্প নাটক চলচ্চিত্র আমরা তৈরী করতে পারি নি। শ্রদ্ধাভাজন জহির রাহয়ানের কাজ দেশের বাইরে সমাদৃত হয়েছে কিন্তু সমগ্রকে স্পর্শ করতে পারে নি। আমি এখানে সামগ্রিক সফলতার কথা বলছি্ যেমনটি সফল হয়েছে যুদ্ধের পটভূমিতে রচিত উপন্যাস (উপন্যাসেরও অধিক) 'ওয়ার এ্যান্ড পিস'। লেখক লিও টলস্টয়। সভ্য দুনিয়ার সকল জাতির কাছে বইটি সমাদৃত। কেন? সংক্ষেপে উত্তরঃ যুদ্ধের বিবদমান দু'টি পক্ষের প্রতি মানবিক বিবেচনা রাখা হয়েছে। দু'টি পক্ষের অবস্থানকে মানবিক মানদন্ডে বিচার করা হয়েছে এবং অমোঘ নিয়তির হস্তক্ষেপের বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সুগভীর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। ওখানে কাউকে ধোয়া তুলসি পাতা আর কাউকে জানোয়ার বলা হয় নি।
দু'দিন আগে শ্রদ্ধাভাজন নাট্যকার ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ টিভি টক শোতে জানালেন, ভারতের সেই জেনারেল অরোরা'র সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তিনি। অরোরা আমাদের বিজয় দিবসকে স্বীকার করে না। ওরা বলে ওই দিনটি ওদের বিজয়ের। আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধকে ওরা বলে পাক-ভারত যুদ্ধ। ভারতের শিক্ষিত সমাজের অনেককে বলতে শুনেছি, 'ইট ওয়াজ দ্যা ভিক্টরী ডে ফর ইন্ডিয়া'। অথচ সত্য হলো এই, আমাদের দুঃসাহসী দামাল সন্তানদের অল আউট গরিলা আক্রমণে পাক সেনারা পর্যুদস্থ হয়ে আত্মসমর্পনে বাধ্য হয়েছিলো। প্রতিবেশি সাহায্যকারী বন্ধুদের এই আচরণ আমাদেরকে কষ্ট দেয়।
পরিশেষে, এই সামহোয়ার ব্লগের অনেকে এজেন্ডা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রতিপক্ষকে তাড়িয়ে দেয়ার মনোভাব ব্যাক্ত করেন। কেউ কেউ প্রতিপক্ষের ব্লগ এড়িয়ে যান। কিংবা মন্তব্য করলেও তা হয় তীব্র নেতিবাচক। রেটিং কমান নয়তো রেটিং করেন না। আমি সকল ব্লগ-বাড়িতে ধর্ণা দেই মানবিক মুল্যবোধের তাগিদে। যিনি আমাকে তিরস্কার করেন তার ভালো পোস্টে গিয়ে সরল স্বীকারোক্তি লিখি। সর্বোচ্চ রেটিং দাগাই।
বিভাজন খিস্তি-খেউড় গালাগালিতে যারা আনন্দ পান তাদের উদ্দেশে আমার বলার কিছু নেই।

No comments: