Pages

Saturday, October 27, 2007

আপনাকে আগুনে জ্বলতে হবে, জ্বালাতেও হবে!


অ.
আপনাকে আগুনে জ্বালানো হবে। পুড়ে মরতে রাজি আছেন?
আপনার জবাবঃ না, আমি জ্বলতে চাই না। কিছুতেই জ্বলতে চাই না। অপরাধী হই যদি অন্য শাস্তি দেন, আগুনে পোড়াবেন না।

আগুনে পুড়ে মরা! লোমহর্ষক!! ভয়ংকর!!একটি মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করে মারার দৃশ্য কোন সুশীল মানুষ দেখতে চাইবেন না এইটাই স্বাভাবিক, লোকে বলে।অথচ সত্য হলো, আগুন আবিস্কারের পর থেকে মহাপ্রলয় পর্যন্ত অগ্নিদহন চলছে, চলবে।আগুন ছাড়া সভ্যতা অচল আন্ধার উত্তাপহীন হিমশীতল।আগুন জ্বলছে সর্বত্র। বহ্নুত্সবে মেতে আছে মানবজাতি।ঘরে আগুন বাইরে আগুন; নগর বন্দর গ্রাম পথ ঘাট; এ্যাকচুয়েল জগত ভার্চুয়াল জগত মনোজগত সবখানে অগ্নিদহন চলছে। উনুনের আগুন.. বুননের আগুন.. গ্যাসের আগুন.. বাঁশের আগুন.. কাঠের আগুন.. বিজলীর আগুন..কয়লার আগুন..রাজনীতির আগুন..দেহের আগুন.. মনের আগুন.. ইত্যাকার অজস্র আগুন ছড়িয়ে আছে সবদিকে। আগুনে জ্বলার গানও আমাদের ভালো লাগে-'প্রেমের আগুনে প্রেমের আগুনে প্রেমের আগুনে জ্বলে গেলাম সজনী গোপীরিতি আজো শিখলাম না'কিংবা'সখী গো অন্তর জ্বালাইলায় পীরিতে'অথবা'আগুন লাগাইয়া দিলো কোণে হাছন রাজার মনে'নয়তো'আমার কি সুখে দিন রজনী কেউ জানে নাকুহু স্বরে মনের আগুন আর জ্বালাইও না'প্রেমের আগুনে জ্বলার মধ্যে নাকি বিরহানন্দ আছে। বিরহের মাঝে আনন্দ! ওরে বাবা! ভাবজগতের কথাবার্তা আপাতত থাক্। অগ্নিদহনের অন্য প্রসঙ্গগুলো দেখি।

আ.
বলা হয় আগুনের ব্যবহার শেখার মধ্য দিয়ে সভ্যতার শুরু। অথচ দোজখের কিংবা নরকের আগুনে জ্বলার সুসংবাদ দিলেই চেহারাখানা মলিন হয়ে যায় অগণন মানব মানবীর।রাগ করে কাউকে যদি বলেন, 'যা ব্যাটা জাহান্নামে যা।' ওই ব্যাটা শক্তি সামর্থে আপনার সমপর্যায়ের হলে দ্বিগুণ ভলিউমে ত্রিগুণ জ্বলে ওঠে জবাব দেবে- 'যা যা জাহান্নাম তোর লাইগা বানানো হইসে।'জাহান্নামের আগুন তো পরে আসবে। জগতের বহুবিধ আগুনে জ্বলে-পুড়ে অবস্থা লেজেগোবরে; অধিকাংশ মানবগোষ্ঠীর নাভিশ্বাস উঠছে। ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের লেলিহান শিখা মানুষের মনের অঙ্গনে। কেউ জ্বালায় কেউ জ্বলে। কেউ আগুন লাগায়, কেউ পাল্টা প্রতিশোধ নিতে লাগায়।আপনি আগুনে জ্বলতে চান না কিন্তু আক্রান্ত হলে নিজেও অন্যকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেন।'আগুন নিয়ে খেলা! দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা!' ওটা একটা জ্বলন্ত অগ্নিগিরি। বিস্ফোরিত হয়ে লাভা উদগীরণ শুরু হলে চৌদ্দগোষ্ঠী পুইড়া শেষ।'বাস্তবের অগ্নিকান্ডে মানুষের সর্বনাশ হয়। মানুষের মন-মস্তিস্কের আগুন কি কম ভয়ংকর? মানুষের রোষাণলে জনপদ ধ্বংস হয়। তীব্র অসন্তোষের দাবানল যদি নেভানো না-হয়, দেশ জাতির অস্তিত্ব নিদারুন সংকটে পতিত হতে বাধ্য।ব্যাক্তিমানুষ জাতিমানুষ হিংসার আগুনেও জ্বলে। কোন কারণ ছাড়া-অন্যায়ভাবে অন্য ব্যাক্তিকে অন্য জাতিকে হিংসা-বিদ্বেষের আগুনে জ্বালানো হয়। সম্প্রদায়ের কুশিক্ষা সাম্প্রদায়িক আগুন লাগায়।জগতমন্ডলের ইতিহাসটাই হলো আগুনে পোড়ার ইতিহাস। জ্বলেছে, জ্বালিয়েছে। জ্বালিয়েছে, জ্বলেছে।বর্তমান আর ভবিষ্যতটাও একই রকম। জ্বলন-পোড়ন থেকে মুক্তি কি নাই মানব জাতির?শত সহস্র অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা থাকা সত্বেও মানুষের জ্বলে-পুড়ে শেষ হওয়ার ইতি নেই!

ই.
আগুন সৃষ্টিশীল। আগুন ধ্বংসশীল। আগুন মায়ার। আগুন ছায়ার। আগুন ভালোবাসার। আগুনে জীবন। আগুনে মরণ। আগুনে স্মরণ। আগুনে শরণ। বড় বিস্ময়কর এই আগুন!