Pages

Saturday, October 27, 2007

তোমাকে খুঁজে পেতে কতদূর যেতে পারি?-২

এখানে আগের পর্ব

ঘ.
বিশ্বের প্রায় সকল সভ্য জাতির শিক্ষিত মানুষেরা মনে হয় স্টিফেন হকিংয়ের ' এ্যা ব্রিফ হিস্টরী অব টাইম' বইটি পড়েছেন অথবা বইটির বক্তব্য সম্পর্কে অবহিত। বইটি বেস্ট সেলার হয়েছিলো। বহু ভাষায় অনূবাদ হয়েছে। অনেক দেশের আকাশে বাতাসে একটা গুজবও ছড়িয়েছিলো এই মর্মে যে, নাস্তিকতার পক্ষে বইটি একটি মজবুত দলিল। বইটিতে না কি বিজ্ঞানী দেখিয়েছেন, আল্লাহ-খোদা নাই, আল্লাহ-খোদার দরকার নাই।আমি 'ব্রিফ হিস্টরী'সহ হকিংয়ের 'ব্ল্যাক হোল এ্যান্ড বেবী ইউনিভার্সেস' এবং বিভিন্ন গ্রন্থে থাকা বিক্ষিপ্ত প্রবন্ধগুলোও পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম ২০০০ সালে। এ বিষয়ে বিভিন্ন এ্যানসাইক্লোপেডিয়ার টীকাগুলোও পড়েছিলাম এবং 'ব্রিফ হিস্টরী' সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা ভাঙ্গার সেই ঐতিহাসিক সাক্ষাতকার, যা বিবিসি নিয়েছিলো, সেটাও পড়েছিলাম। কোথাও 'নাস্তিকতার পক্ষে দলিল' পেলাম না।বিস্ময়কর হলো, ইংরেজীভাষী বিবিসি'র প্রতিবেদক এবং 'স্টিফেন হকিং/এ্যা লাইফ ইন সায়েন্স' গ্রন্থের লেখকদ্বয়ও (মাইকেল হোয়াট ও জন গ্রিবিন) তাঁকে নাস্তিক মনে করেছিলেন। সবাইকে বোকা বানিয়ে বিবিসি'র সাক্ষাতকারে জানালেন আসল কথা হকিং।

'Stephen: All that my work has shown is that you don't have to say the way the universe began was the parsonnal whim of God.'(আমার ওইসব কাজ এটাই দেখিয়েছে, তুমি এরকম বলতে পার না যে, খোদার উদ্দেশ্যহীন খেয়ালের ফলে মহাবিশ্বের সূত্রপাত হয়েছে।) ১৯৯২ সালের ক্রিসমাস দিনে বিবিসি সম্প্রচার করেছিলো সাক্ষাতকারটি। হকিং এও জানালেন- 'It says nothing about whether or not God exists- just that he is not arbitrary.'হকিং আসলে বইটিতে কিছু হাইপথেটিক্যাল কথা বলেছিলেন বাক্যের আগে পরে মাঝখানে If, may, এবং shall/will এর পরিবর্তে would ব্যবহার করে।তিনি স্বীকারও করেছেন, বইটিতে অতি কথনের (ফ্লিপেন্ট টৌন) আশ্রয় নিয়েছিলেন। 'ব্রিফ হিস্টরী' প্রকাশের প্রায় এক যুগ পরে তিনি সানডে টেলিগ্রাফকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, I am afraid that however clever we may become we will never be able to travel faster than light. If we could travel faster than light, we could go back in time.'ঙ.ক্লাসিক ফিজিক্সের প্রতি অন্যান্য বিজ্ঞান-গবেষণা, শিল্প সাহিত্য দর্শন চর্চাকারীদের নজর রাখতেই হয়। উঁচুমানের পদার্থ বিজ্ঞানীদের ধ্যান এখন অদ্বিতীয়ত্বের (singularity) ধারণায় সমুজ্জল। আইনস্টইনের 'চতুর্থমাত্রা' শক্তি এক মাত্রা থেকে এলো কি না, তার গাণিতিক প্রমান পাওয়ার অপেক্ষায় মানবজাতি। আইনস্টাইন তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যায় করেছেন গ্রাভিটি, ইলেক্ট্রোমেগনেটিজম, স্ট্রং ফোর্স, উইক ফোর্স- এই চার শক্তি একই শক্তির বিভিন্ন রূপ, তা দেখার জন্য। কিন্তু তাঁর প্রচেষ্টা অসম্পন্ন থেকে গেছে। তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁর অসম্পন্ন ইকুয়েশনের সমাধান বের করার জন্য স্টিফেন হকিং সুকঠিন প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিলেন তাঁর বন্ধু রজার পেনরোজকে সাথে নিয়ে। স্টিফেনকে বলা হতো পজেটিভিস্ট আর পেনরোজকে প্লাটুনিস্ট। তাঁদের 'বিড়াল মৃত+বিড়াল জীবিত' বিতর্ক খুব আলোচিত পদার্থবিদদের কাছে।হকিং ও পেনরোজ মিলে আইনস্টাইনের জেনারেল রিলেটিভিটির সূত্র ধরে যে তত্বটি প্রমান করেছেন, সেই তত্বটি তাঁদেরকে মুশকিলে ফেলে দিয়েছে। কারণ এর ফলে ফিল্ড ইকুয়েশন নির্ভুলভাবে করা যাচ্ছে না। এতে দেখা যাচ্ছে ল অব ফিজিক্স ভেঙ্গে পড়ছে। তাঁদের তত্ব দেখিয়েছে, মহাবিশ্বের অতীতে এক অদ্বিতীয়ত্বে ছিলো। আর আইনস্টাইনের 'জেনারেল রিলেটিভিটি' এই ভবিষ্যত ধারণাই দিচ্ছে যে এর দ্বারা মহাবিশ্বের ভবিষ্যত ধারণা পাওয়া যাবে না। এটি হলো সাধারণ আপেক্ষিক তত্বের দুর্বলতা।বিজ্ঞানীদের টার্গেট এখন এমন একটি 'পূর্ণাঙ্গ তত্ব' যা সকল ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে। (চলবে)