Pages

Sunday, December 2, 2007

হ্যাঁ, তোমাকেই বলছি

হ্যাঁ, তোমাকেই বলছি। তুমি আলোচিত, সমালোচিত, নিন্দিত, নন্দিত। তোমার উপস্থিতিতে কেউ আনন্দিত; কেউ খুব বেশি আনন্দিত। আবার কারো এলার্জিক রিএকশন শুরু হয়ে যায়। অসহ্য লাগে। তা প্রকাশ পায় কারো উল্টাপাল্টা লাগামহীন আচরণের মাধ্যমে। যে যা-ই বলুক, তুমি তো তুমিই।
দেখা গেছে, তুমি সেই সবুজ গাঁয়ের দুরন্ত প্রাণোচ্ছল বালিকাটির মতো সর্বত্র হেসে খেলে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করো। সকলের দ্বারে দ্বারে যাও সাবলিল হাসির উজ্জলতা নিয়ে। কখনো কারো জানালা দিয়ে দুষ্টুমি করে দেখো, কখনো কানামাছি খেলো, কখনো গোল্লাছুট! হঠাত্ কারো মাথায় হাওয়াভর্তি বেলুন ফাটিয়ে হাসতে হাসতে একাকার হয়ে যাও!ভালো কথা হলো এই, যোগাযোগের সমস্যা আক্রান্ত অগণন বাঙালি নারীর মধ্য থেকে বেরিয়ে এসেছো তুমি অনন্যা এক নারী। অনেক মানুষের ভীড়ে তোমার যোগ যোগ্যতা প্রশংসনীয়। সবাই তা পারে না। কেউ পারতে চায় না। আমাদের সমাজের যথেষ্ট মানুষের মন মস্তিষ্ক নানাবিধ সংস্কারাচ্ছন্ন। অধিকাংশ সঠিকভাবে ভালোবাসার রঙের বহু বর্ণিলতা শনাক্ত করতে পারে না। তাছাড়া গানকে বাণ ভাবে, বাণকে শান ভাবে। চিলে কান নিয়ে গেছে বললে চিলের পিছে দৌড়ায়। কানে হাত দিয়ে দেখে না আসলে চিলে কান নিয়ে যায় নি।আমি বিশ্বাস করি, তোমার কোন দুরভীসন্ধি নেই যোগাযোগের ক্ষেত্রে। তুমি কথা বলো, কথা শোনো, ভাব বিনিময় করো, আনন্দ শেয়ার করো। তুমি দেশের কথা বলো, দশের কথা বলো, তুমি ভালোবাসার কথা বলো। যারা তোমাকে তিরস্কারের বাণ মারে, তারা ভুল করে। যারা তোমার সর্বপ্লাবি মায়াকে ভুলভাবে নিয়ে অন্য মাত্রিক অধিক গহনে যেতে চায়, তারাও ভুল করে। এই দুই প্রকারের 'ওরা' আসলে নিজেদের শুণ্যতা নিজেদের দৈন্যতা নিজেদের দুর্বলতাই প্রকাশ করছে। কেউ নিজেই যদি নিজের পথে গর্ত খুঁড়ে রাখে আর সেই গর্তে নিজেই প'ড়ে হাত পা ভাঙ্গে, তার জন্য সে নিজেই দায়ী। অন্যকে দায়ী করার কোন মানে হয় না।
সুতরাং তুমি তোমার মতো করে হেসে খেলে বেড়াতে থাকো। কেউ যদি নিজেই নিজের সর্বনাশ ডেকে আনে তার জন্য তুমি দায়ী হবে কেন? তোমাকে মহিমাময়ী বা আনন্দময়ী হিসেবে দেখতে ভালো লাগে। তোমার ভালোবাসার বিক্রম নিত্য নতুন সুন্দর বিপ্লব নিয়ে আসুক। তোমাকে কেউ চিনে না, তোমাকে নিয়ে সন্দিহান। এই ব্যাপারটি একটা দার্শনিক সত্যের মতো। প্রতিটি মানুষ তার নিজের কাছেও অচেনা। তাই নিজের আচরণেও বিস্মিত হয়! আশ্চর্য হয়ে বলে, 'অনেক মানুষের ভীড়ে এই আমি আসলে কোন জন!'
তুমি জানো কি এই জগতে কে চালাক কে বোকা?
মানুষ কি তার দুঃখবোধ কিংবা আনন্দবোধের উপলক্ষ ঠিক সময়ে প্রকাশ করতে পারে? অথবা প্রকাশ করা উচিত কি? মানুষের দুঃখ ও আনন্দের সাথে বুদ্ধির প্রসঙ্গ কি জড়িত নয়?আনন্দ ও দুঃখ প্রকাশ করা দরকার বা ভালো। আবার প্রকাশ না-করাও প্রয়োজন কখনো। প্রকাশ পেলে জটিলতা দেখা দেয়। শত্রুপক্ষ আক্রমণের সূত্র পেয়ে যায়। প্রতিটি মানুষের শত্রু মিত্র আছে। শত্রুরা দুর্বল দিকগুলো খুঁজতে থাকে সব সময়। সচেতন মানুষ এ ব্যাপারে সতর্ক। একটু অসতর্কতা বড় বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। একটি ভুলের মাশুল জীবনভর দিতে হয়।মানুষের বুদ্ধির ব্যাপারটাও আপেক্ষিক কখনো কোন আনন্দ বা দুঃখের বিষয়গুলো যথাযথভাবে প্রকাশ করতে পারলেই লক্ষে পৌঁছা যায় অথবা ঈস্পিত সাফল্য আসে। আবার এই সাফল্য অন্য কোন ক্ষেত্রে অসফল হওয়ার কারণও হতে পারে। একই বিষয়ের দু'টি দিক। নেতিবাচক ও ইতিবাচক। এ ব্যাপারে বুদ্ধির যথার্থতা নিরুপন সম্ভব নয়। যে মানুষটিকে নিরেট বোকা ভাবা হয়, সেই মানুষটি অপক্ষোকৃত অধিক বুদ্ধিসম্পন্ন বলে স্বীকৃত মানুষটির চেয়ে অধিক সফল হতে পারে ক্ষেত্র বিশেষে।
আমি দেখি
চালাক মানুষটি সব ক্ষেত্রে চালাক নয়, বোকা মানুষটিও সব ক্ষেত্রে বোকা নয়। সকল মানুষের মধ্যে বোকামি আছে, চালাকিও আছে মাত্রা সাপেক্ষে। এবং ধরা খাওয়া থেকে বাদ পড়ে না কেউ। মন্ত্রী-মিনিস্টারের চুরিও ধরা পড়ে, গাঁয়ের গরু চোরও ধরা পড়ে, বাজারের পকেটমারও ধরা পড়ে, ধূর্ত রাজনীতিকের মুখোশও খসে পড়ে, ঘুষখোর আমলাকে একদিন হায় হায় করতে হয়, বুদ্ধিজীবিকে ক্ষেত্র বিশেষে বুদ্ধিহীন শনাক্ত করা সম্ভব হয়। সবাই সব ক্ষেত্রে সফল হয় না, সবাই সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয় না।
রবীন্দ্রনাথ 'নৌকাডুবি'তে বলেছেন একটা ফালতু কথা। বলেছেন, 'পুরুষের বুদ্ধি খড়গের মতো, শান বেশি না দিলেও কেবল ভারে অনেক কাজ করিতে পারে, মেয়েদের বুদ্ধি কলম কাটা ছুরির মতো, যতই ধার দেও না কেন, তাতে বৃহত্ কাজ চলে না।'মার্কিন পররাস্ট্র মন্ত্রী কন্ডলিজা রাইসকে রবীন্দ্রনাথের এই কথা শোনালে তার প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে, একবার ভাবুন! তবে হ্যাঁ, এ ব্যাপারে তার প্রতিক্রিয়া যা-ই হোক, কন্ডলিজার বুকেও জীবনের কোনো না কোনো ব্যর্থতার বেদনা নেই, এমন বলা যাবে না। বেচারি চির কুমারী!
আমি দেখি
উইনস্টন চার্চিল, হিটলার, মুসোলিনি, বুশ, ব্লেয়ার, সাদ্দাম, বাদশা ফাহাদ, খোমেনী, জেনারেল মোশারফ, জিন্নাহ গান্ধী, হাসিনা, খালেদা, এরশাদ, মেনন, গোলাম আজম, নিজামী, জেনিফার লোপাজ, মার্কস, লেনিন, এডওয়ার্ড সাঈদ, আইনস্টাইন, নেলসন মেন্দেলা, শেক্সপিয়র, বারট্রান্ড রাসেল, ভিনসেন্ট ভ্যানগগ, সালভাদল ডালি,এবং আমাদের বঙ্গভবনের দারোয়ান, এইসব মানুষগুলো চালাক মানুষ এবং সমান্তরালে বোকা মানুষও বটে! আর জর্জ হার্বাট বলেছিলেন, 'কেউ এতো বেশি চালাক হয় না যে, অন্য তাকে অতিক্রম করতে পারবে না।'
আর আমি?
হা হা হা। আমি তো মাঝে-মধ্যে পৃথিবীর সকল প্রেমের প্রসঙ্গ থেকে মুখ ফিরিয়ে মগ্ন চৈতন্যের অন্তরে গিয়ে নজরুলের গান শুনে শুনে নতুন হয়ে যাই! এই যেমন ধরো-
বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিস নে আজি দোল
আজো তার ফুল কলিদের ঘুম টুটে নি তন্দ্রাতে বিলোল.....
আর তুমি সকল বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে সূর্যের হাসি ফোটাবে এই প্রত্যাশায় থাকতে চাই অনন্তকাল হে বীরাঙ্গনা!!হ্যাঁ, তোমাকেই বলেছি এবং তোমাকে বলার মাধ্যমে সমাজের অজস্র 'তুমি'দেরও বলেছি! পরিশেষে সেই চিরন্তন পংক্তিগুলো-
প্রথম যেদিন তুমি এসেছিলে ভবে
কেঁদেছিলে একা তুমি হেসেছিলো সবে
এমন জীবন তুমি করিবে গঠন
মরণে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভূবন

No comments: