Pages

Sunday, December 2, 2007

ওরা পারে, আমি পারি না

ব্যবসা সূত্রে কিছু আরব তরুনদের সাথে আমার পরিচয় আছে। কখনো কেএফসি বা বার্গার কিং-এ ওদের সঙ্গে আড্ডা মারা লাগে খাতির রাখার জন্যই। ব্যাপারটা একটু অসাধারণ এই জন্যে যে, বাঙালি ইন্ডিয়ান পাকিস্তানী কাউকে চৌকস আরবদের সাথে আড্ডা মারতে সচরাচর দেখা যায় না। প্রধান কারণ ল্যাক অব এ্যাডজাস্টমেন্ট ডিউ টু ল্যাঙ্গুয়েজ এ্যান্ড কালচার। বনেদী শিক্ষিত আরবেরা অনেকটা ফরাসীদের মতো ভালো ইংরেজি জানা থাকলেও নিজের ভাষাকে প্রাধান্য দেয় ভিনদেশিদের সাথে কথা বলার সময়। কেউ আরবী না-জানে যদি বলবে ইংরেজিতে।
আমি কথ্য আরবী বলতে পারি অনর্গল। আরব ঐতিহ্যের ব্যাপারেও নলেজ আছে। আরবী লিখতেও পারি। তুমুল আড্ডায় আরবী বরাবর শব্দ খুঁজে না পেলে কখনো ইংরেজি চালিয়ে দেই ধুমাধুম। ফলে ভাটা পড়ে না। গতি বরাবর থাকে। কেউ আবার আমার ব্রিটিশ এ্যাক্সেন্ট ইংরেজি শুনে মনোযোগি হতে বাধ্য হয়। আমার আওয়াজ বড়। ষড়যন্ত্রকারীদের মতো ফুসুরফুসুর-ফিসফিস করে কথা বলতে পারি না।
বেশিরভাগ আনস্কিলড লেবার পেশায় বাঙালি থাকার কারণে বহু আরবদের মধ্যে বাঙালি ও বাংলাদেশ সম্পর্কে নানা ভুল ধারনা আছে। আমি কথা প্রসঙ্গে তাদের ভুল ভেঙ্গে দেই। ডেসপারেটলি বলি, তোদের তুলনায় বহু গুণ বেশি মাল্টিমিলিয়নিয়ার আমার দেশে আছে। তোরা দেশি বিদেশি মিলে জনসংখ্যা সাড়ে চার মিলিয়ন আর আমাদের পপুলেশন একশ' পঁচিশ মিলিয়নের উপর। আমাদের গৌরবোজ্জল স্বাধীনতা যুদ্ধের গল্পও বলি তাদের। কিছু এনলাইটেন্ড আরব সন্তান, যারা লন্ডন আমেরিকা ঘুরে এসেছে, তারা ওখানকার ব্রিলিয়ান্ট বাঙালিদের দেখেছে, তাই তারা বাঙালির তারিফ করে।
একদিন এক পাকিস্তানী পাঠানকে মারতে উদ্যত হয়েছিলাম। শালা বেওকুফ চট করে বলে বসে-' আরে বাঙালি কেয়া লাড়াই কারেগা, বাঙালি ডরতা হ্যায়।' আমি তত্ক্ষনাত গর্জে উঠে বলি, 'আবে উজবুক জাহিল! তুঝকো কেয়া পাতা, যা তেরা বাপকো যা কে পুছ- বাঙালি আপনা আজাদী কা লাড়াই ক্যায়সে কিয়া থা, কিতনা পাঠানকো জানসে মারা আওর কিতনা আখের সারেন্ডার করকে আপনা জান বাচায়া।' (আবে উজবুক মূর্খ! তোর বাপেরে গিয়া জিগা, বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ কেমতে করসিলো, কতো পাঠানেরে জানে মারসিলো আর কতো পাঠান শেষে সারেন্ডার কইরা নিজেগো জান বাচাইসিলো!) মারামারি অবশ্য হয় নি। আশপাশের লোকজন ধরাধরি করায়।
যাক্, যে-প্রসঙ্গে বলছিলাম তা ভিন্ন।
আমার ব্যবসায়িক সম্পর্কের ওই আরব তরুনদেরকে আজব চিড়িয়া মনে হয়। আজান হলে মসজিদে যাবে, নামাজ পড়বে, তসবিহ হাতে নিয়ে ঘুরবে। আবার সুদের ব্যবসার সাথেও জড়িত (ব্যাংক না, গোষ্ঠিভিত্তিক সূদি মহাজনগিরি), ঘুষও খাবে এবং প্রতি সপ্তায় দুই/তিনটা মাইয়া ইস্তেমাল করবে খুব স্বাভাবিক আনন্দে। জোয়ান বুড়ো অধিকাংশ আরবের আড্ডার প্রধান আলোচ্য নারী সম্ভোগ। কে কয়জন ভিনদেশি তরুনী আনতে পেরেছে স্পনসর হয়ে ভিজিটে, সেটা তাদের বাহাদুরী! আমি হতবাক হই, আবু জেহেল আবু লাহাবের এই আধুনিক বংশধরদের দেখে! আবু বকর, ওসমান, ওমর, আলী রাঃ প্রমুখের উত্তরসূরীর সংখ্যা খুবই কম।
ব্যবসায়িক সম্পর্কের দুই তরুন একদিন আমাকে নতুন আগত 'সুপার্ব আইটেম' সম্ভোগের আমন্ত্রণ জানালো। বিশ্বাস করুন, বললো, 'যেটা পছন্দ হয় নিবে। তোমার এক টাকাও দিতে হবে না। তুমি আমাদের বন্ধু।' আমি বললাম, 'আমার দ্বারা সম্ভব না।' এক তরুন আমাকে চেতানোর জন্য বললো, 'বুঝেছি, তোমার মেশিন অকেজো।' আমি বললাম, 'মেশিন ঠিক আছে, ফাসকেলাস। কিন্তু নারীর যৌবন নিয়ে এমন খেলা চাই না আমি।' তরুনটি বললো, 'রোহ রোহ রোহ ইনতা তা'বান।'(যাও যাও যাও তুমি বেকার)। সে আরো বললো, 'ওই মেয়েরা পয়সা কামাচ্ছে এনজয় করছে, আমরাও এনজয় করছি, পয়সা দিচ্ছি। দু'দিনের দুনিয়া, এমন মজা ছাড়তে পারি না।' ওদের বউ বাচ্চা আছে তবু ওরা তা করে হামেশা।আমি বললাম, 'তোমরা পারো, আমি পারি না। আনা খউফ মিনাল্লাহ (আমি আল্লাহকে ডরাই), আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, লা তাকরাবুজ্জিনা-ব্যভিচারের নিকটবর্তী হইও না।'

1 comment:

sarwar chowdhury said...

সামহোয়ার ইন-এ যারা মন্তব্য করেছেন-

ফাহমিদুল হক বলেছেন: আপনার অভিজ্ঞতার বয়ান আমাদের পূর্বধারণাকে পোক্ত করলো।

মামু বলেছেন: আরবীয় সম্ভোগের গল্প, ভালই লাগল।

বিবর্তনবাদী বলেছেন: আরবের মেয়েদের চোখ কি ছবির মতই সুন্দর। যদি তাই হয় তবে, শুধু কিছুক্ষণ চোখ দেখবার (আর কিছু না) জন্য কিছু পয়সা খরচ করতে কোন বাঁধা নেই।
ভাই, ঐ হালা পাঞ্জাবিকে চান্স পাইয়াও দুই একটা লাথি দিতে পারলেন না শুনে খুবই হতাশ হইলাম। ওগো লগে একটা কথাই চলে। কথাটা হইল, "হাত থাকতে মুখে কি"। তবুও, আপনেরে ধন্যবাদ, প্রমান দিলেন, আমরা ওগো মত আকামে হাত চালাই না।
ধন্যবাদ।

নাজিরুল হক বলেছেন: এই জন্যই তো সউদিরা ছুটি পেলেই দুবাই চলে যায়। সেদিন আমার এক সউদি বন্ধু মোবাইল দিয়ে ক্যাপচার করা ছবি ও ভিডিও দেখালো।
অবাক হইলাম।

অমি রহমান পিয়াল বলেছেন: আপনার উর্দুটাও জটিল। পাকিস্তানীরা দেশী ভাই ভাইবা বসতে পারে। ভালো লেখা। ৫

নাজিম উদদীন বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
মু'তা বিয়ে বা একরাতের বিয়ে নিয়ে লিখবেন।

সন্ধ্যাবাতি বলেছেন: সরওয়ার চৌধুরী,
এরকম আরবের সংখ্যা সৌদি আরবে কম, অন্যান্য জায়গায় বেশি, এইটা মনে হয় স্পষ্ট করে বলা দরকার। সৌদি আরবে কাবা, পুরা আরবে কাবা না। লেবানন একটা আরব দেশ, কিন্তু সেখানকার জনসংখ্যার ৫০% এর মতই খ্রীষ্চিয়ান। আমার মনে হয়, আরবদের সম্পর্কে আমাদের আলাদা একটা মোহ থাকে, ভাষাটা শ্রদ্ধা করতে শিখি ছোটবেলা থেকে। নজরুলের গানের আবেগের সাথে আরব দেশ মিশে থাকে। একটা পবিত্র, আধ্যাত্মিক আবেগ। কিন্তু আমরা কখনও ভাবতে শিখি না, আরবরা একটা জাতি। খুবই ডাইভার্স একটা জাতি। আরবি কথা বলে তাই আরব... আফ্রিকা থেকে শুরু করে ফিলিস্তিন, লেবানন, এমনকি সেন্ট্রাল এশিয়াতেও আরবরা আছে। এখন, সেন্ট্রাল এশিয়ার আরবদের যদি কাবার রক্ষক বলা হয়, আমরা দেশী মুসলিমরা কি দোষ করলাম? দুরত্বে তো খুব বেশি না! সৌদি আরবের আরবরাও দুধে ধোয়া তুলসী না, সেও জানি। কিন্তু সেখানকার আইন তো আমার একটু বেশিই গোঁড়া মনে হয়েছে। মনে হয়েছে, ওখানে মদ, মেয়ে মানুষ নিয়ে খেলাটা কঠিন।
তেলের মুখ দেখলো, একশ বছরও হয় নি! এখনও নতুন পয়সার মাথা ঘুরানি কমে উঠে নি! খুবই ফ্রাস্ট্রেইটেড লাগে ওদের দেখলে, কিন্তু আবার মনে হয়, আমরা কি করছি? আমাদের দেশে কি এমন অনেক মুসলিম আছে না, যাদের সামর্থ থাকলে ঠিকই এমন করতো?

মুজিব মেহদী বলেছেন: ছবির চোখগুলোর সৌন্দর্য তো লেখাকে ছাড়িয়ে গেছে মনে হচ্ছে। চোখ দেখে মনে হচ্ছে আরব বণিক হয়ে জন্মালেই ভালো করতাম।
সারওয়ার ভাই, ওরকম একটা আহ্বান আপনি সত্যিই ফেলতে পেরেছিলেন?

দেবদারু বলেছেন: @সারওয়ারচৌধুরী, আপনার সংযম এবং দৃঢ়তার জন্য ৫ দিতেই হবে........... আশা করি বাঙালীরাও আপনার প্রেরণায় দৃঢ়চেতা হবে.........

বন্ধনহীন বলেছেন: আপনার এই লেখায় যতটুকু আত্ম-অহংকার আছে, ততটুকু আছে সরলতা। এই মিক্সারটা অদ্ভুদ। ঠিক মেশে না।

মাথামোটা বলেছেন: সারোয়ার ভাই আপনাকে যত দেকছি ততই মুগ্ধ হচ্চি।
ব্লাক হোল নিয়ে লিখবেন বলে ছিলেন।

আইরিন সুলতানা বলেছেন: আমার একটা হালকা-পাতলা ধারনা ছিল, আরব বলতে আমরা যেমন শ্রদ্ধায় নত হয়ে যাই আর আমেরিকা বললে খুব আঁতেল ভঙ্গিতে তাদের কালচারকে তিরস্কার করি - তা আসলে সম্পূর্ন ঠিক নয় । আবর দেশের বনিকরা ধর্ম পালন করে বটে কিন্তু তারা বস্তুত ভোগ বিলাসী ...

আপনি তো একটা অংশের কথা বললেন - একটা খুব বিতর্কিত খেলা হয় , উটের দৌড়; ওখানে আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের কিছু বাচ্চা ছেলেদের জকি হিসেবে ব্যবার করা হয়। শিশুদের কান্না, চিতকারে উট আরো বেশী ছুটতে থাকে...আর ওইসব আরবদের উল্লাস বাড়তে থাকে....!!!

ললিতা বলেছেন: দারুন অিভজ্ঞতা!!!......৫

আরও চাই অভিজ্ঞতার কথা......
কেমন আছেন সারওয়ার চৌধুরী ভাই?

সিঁদুরে মেঘ বলেছেন: সরল লেখা। ভালো লাগল।
৫......