Pages

Tuesday, November 6, 2007

তুমি কোন কাননের ফুল (পর্ব-১)

আমি নিশ্চিত জানি
আমি একা হাঁটছি পৃথিবীর পথে।না না একটু ভুল হলো। ঠিক একা না। আমার সঙ্গে পৃথিবীর অনেকেই হাঁটছেন। সবাই আমরা একসঙ্গে হাঁটছি। সত্য হলো এই,ওরা আমার সঙ্গি হয়েও আমার সাথি না। ওদের কাউকে আমি চিনি না। আবার চিনিও।এইভাবে চিনি-ওরা সবাই মানুষ।সত্য বললাম কি? ওরা সবাই মানুষ? এই যে প্রতিদিন এই রাজধানী শহরটির রাজপথ গলিপথের ফুটপাত ধরে আমার সঙ্গে হাঁটে, ওরা সবাই মানুষ?ওদের অজস্র পরিচয় আছে। কেউ বাঙালি, কেউ জাপানি, কেউ বৃটিশ, কেউ আরবী, কেউ পশ্চিমি, কেউ পুবাল, কেউ গরিব,কেউ ধনি, কেউ কালো, কেউ সাদা, কেউ বাদামি, কেউ বিবাহিত, কেউ অবিবাহিত, কেউ চির কুমার, কেউ চির কুমারী, কেউ নারী কেউ পুরুষ, কেউ ভালো মানুষ, কেউ খারাপ মানুষ, কেউ অর্থনীতিক, কেউ রাজনীতিক, কেউ গনিতবিদ, কেউ হাওয়াবিদ, কেউ খাওয়াবিদ, কেউ যন্ত্রবিদ, কেউ মন্ত্রবিদ, কেউ খেলোয়াড়, কেউ শুধু বেচারা দর্শক ইত্যাকার পরিচয় তো আছেই, তার ওপর আছে একেকজনের মাল্টিলেয়ারড পরিচিতি। যেমনঃ আবদুস সালাম। লোকটা বাঙ্গালি, লোকটা ঢাকার, লোকটা মিরপুরের, কিংবা লোকটা চট্টগ্রামের হাটহাজারির কদলপুরের,লোকটা খানদানি-উচ বংশীয় কিংবা রাইয়ত-প্রজার গোষ্ঠীর,লোকটা সাধু কিংবা অসাধু , লোকটা অমুকের ভাই; তমুকের শালা কিংবা কারো জামাই কারো শশুর কারো বাবা কারো পুত্র কারো বন্ধু, কেউ তাকে ভালোবাসে, কেউ তার উপস্থিতি সহ্য করতে পারে না। এই রকম অনেক পরিচিতি প্রতিটি মানুষের আছে।আমি প্রতিদিন পথ চলি এইসব মানুষের সঙ্গে। পথ চলি মানে পায়ে পায়ে হাঁটি, কখনো পায়ে পায়ে দৌড়াই, কখনো সড়কপথে রেলপথে হাওয়াই পথে বাহন হয়ে দৌড়তে হয়। সকলেই দৌড়ায় পথে পথে।আমি আশ্চর্য হয়ে আমার নিজের দৌড়ের দিকে এবং মানুষের দৌড়ের দিকে তাকিয়ে থাকি।কারণ, আমিসহ সকল মানুষ নানা প্রকার কাজ-কামের মধ্য দিয়ে মৃত্যুর দিকে প্রাণপণ দৌড় প্রতিযোগিতায় মশগুল।অথচ মানুষগুলো বেঁচে থাকার জন্যই মিলিয়ন প্রকার দৌড় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। একদিন এক মিসকিন পথিক, যিনি অন্ধ এবং বয়স সত্তুর কিংবা পচাত্তুর হবে, আমাকে মিনতি করে বললেন, এক টাকা দিতে। ওই টাকা দিয়ে রুটি কিনে খাবেন বলে জানালেন। প্রশ্ন করেছিলাম, বাইচা থাকার মধ্যে কি আনন্দ পাইতাছেন চাচা? জবাব দিলেন, না বাবা আনন্দ নাই, তয় মরতে চাই না, খিদার জ্বালা থাইকা বাচতে চাই বাবা। আমি বলি, এইভাবে কতদিন বাঁচবেন চাচা, মরতে তো হইবোই। বললেন, মইরা তো যামুই, জিন্দা তাহনের লাইগা চেস্টা করন আর কি। আমি বেচারার হাতে পাঁচ টাকা দিয়ে নিজের কাজের দিকে চলে যাই।আচ্ছা, আপাতত মানবজাতির মৃত্যুমুখী দৌড় প্রসঙ্গে বেশী কথা না বলে একটি গল বলা শুরু করি। হাঁ হাঁ দৌড়ের কথা আরো আছে। পরে বলবো, কথা দিচ্ছি।গলটা হলো-সেদিন আমি শিল্পোন্নত আরব নগরীটির সাগর পারের পার্কের ভেতর দিয়ে হাঁটছিলাম রাত বারটার কিছু পরে কিংবা আগে।হাঁটতে হাঁটতে আমি কিছুক্ষণ পর পর সমুদ্রের দিকে এবং সমুদ্রের উপরের আকাশের দিকে তাকাচ্ছিলাম।কিছুক্ষন হাঁটার পর পাশবর্তী রেলিং ( নিরাপত্তা বেস্টনী ) ধরে আবছা দৃশ্যমান সাগরের পানির দিকে তাকিয়ে থাকি।হঠাত দেখি, আলোকিত অবয়বের এক মত্সকুমারী আমার দিকে তাকিয়ে হেসে উঠে।আমি হতবাক। কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে কথা বলে-ভয় পাবেন না। চিত্কার করবেন না। কাউকে বলার চেষ্টাও করবেন না। আমি এক মত্স্যকন্যা। আমাকে এখন শুধু আপনিই দেখতে পাচ্ছেন বিশেষ কারণে। আশপাশের ওই মানুষগুলো আমাকে দেখছে না। আমার কথাও শুনতে পাচ্ছে না। ওদেরকে আপনি কিচ্ছু বলবেন না। আমার সাথে সানন্দে কথা বলুন। ওদেরকে কিছু বললে ওরা আপনাকে পাগল খেতাব দিয়ে দৌড়াবে। দুশ্চিন্তা আক্রান্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি শতবর্ষী এক মত্স্যকুমারী। আমি আপনার কোন ক্ষতি করবো না।সে একটু থেমে মুচকি হাসে আর লেজ নাড়ায়। আমি মন্ত্রমুগ। পোষ মানা ময়না পাখির মতো নিশ্চিন্ত হয়ে কথা বলি-আমি সত্যি ভীষণ হতবাক। গলের বইয়ে পড়েছিলাম সাগরকন্যার কথা। এখন আপনি আমার সামনে। আমি কি ঠিক দেখছি না কি ভুল দেখছি! হঠাত্ আমার চোখের সামনে অস্তিত্ববান হলেন কি করে? গভীর সমুদ্র থেকে ছুটে আসতে দেখলাম না! আপনি কি আমার কাছে কিছু চাইতে এসেছেন? সমুদ্র গহনে শত বছর ধরে বেঁচে আছেন? আপনার মুখমন্ডল এতো মসৃণ, এতো সুন্দর কেন? একশ' বছরেও আপনি যৌবনবতী? মনে হয় পঁচিশ/তিরিশ। আমি......মত্স্যকন্যা হাস্যোজ্বল মুখে বললো-একটু থামুন। আপনি তো ভয়ংকর সমস্যা আক্রান্ত। একটা প্রশ্নের জবাব পাওয়ার অপেক্ষা না করে প্রশ্নের পর প্রশ্নের শিকল বানিয়ে ফেলছেন কেন? যাক আপনাকে 'সরি' বলতে হবে না। আমি না হয় ধরে নিলাম আপনি 'সরি' বলেছেন।আমার বিস্ময়ের মাত্রা বাড়তে থাকে।সে আরো বলে-আপনারা মানে,আপনাদের সভ্য মানব সমাজ এই 'সরি' বা 'দুঃখিত' শব্দটাকে যখনতখন যত্রতত্র ব্যবহার করে ফেলে। খামাখা ইচ্ছে করে অন্যের ক্ষতি ক'রে বলে 'সরি'। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য যারা দুঃখ প্রকাশ করে, তাদের না হয় মাফ করা যায়। কিন্তূ মজার ব্যাপার হলো, ইচ্ছাকৃত যারা অন্যের ক্ষতি করে, তাদেরকে সব সময় ধরা যায় না। একটা বাহানা বানিয়ে দেখিয়ে দেবে সেটা অনিচ্ছাকৃত। আপনারা খুব কৌশলী প্রাণী। তবে অতি চালাকের গলায় দড়ি লেগে যায় কখনো কখনো। ও হ্যাঁ, আপনার প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি।আপনি ভুল দেখছেন না। গোলক ধাঁধাঁয়ও পড়েন নি। আমি আমার সীমিত বিশেষ ক্ষমতা বলে আপনার সামনে অস্তিববান হয়েছি। আপনার কাছ থেকে কিছু চাইতে এসেছি কি না তা এখন বলবো ন। আমি আপনার কোন ক্ষতি করবো না। আমি যৌবনবতী, তবে নবায়নকৃত। পঁচিশ বছর অন্তর নবায়ন করা হয় আমাদের যৌবন। মত্স্যকন্যারা তিন শ' বছর পরে মরে যায়। আমার যৌবন নবায়ন করেছেন খোদা। তিনবার নবায়ন করা হয়েছে।আমি মত্স্যকুমারীর সমস্ত শরীরের দিকে চোখ বুলাই। ভয় থ্রিল সাসপেন্স রোমান্স আমাকে ঘিরে রেখেছে। সে আবার কথা বলে-এভাবে তাকাচ্ছেন কেন? সাগরকন্যা সম্পর্কে আপনি কি জানেন?আমি বলি-১৮৩৬ সালে লেখা ডেনিশ লেখক হ্যান ক্রিশ্চিয়ান এ্যান্ডরসন'র 'দি লিটল মারমেইড' পড়েছি আমি। এতোটুকু জানি যে, আপনারা ৩০০ বছর বাঁচেন। এরপর মরে সমুদ্রের ফেনা হয়ে যান।আমি জানতে চাইলাম-কিন্তূ আপনি আমাকে মিথ্যা বললেন কেন?কোন মিথ্যা? -মত্স্যকন্যার প্রশ্ন।এই যে বললেন আপনার বয়স একশো বছর।না মিথ্যা বলিনি। তাছাড়া আমি অন্য মত্স্যকন্যাদের মত না। আলাদা প্রকৃতির। আমার কিছু বিশেষ ক্ষমতা আছে। লজ্জা-শরম আছে। দেখতেই তো পাচ্ছেন। আমি অন্যদের মতো নেংটা নই। আবৃত করে রাখি নিজেকে। বক্ষবন্ধনীটার দিকে আপনার নজর পড়ছে দেখতে পাচ্ছি। বন্ধনীটা কুমীরের চামরায় তৈরী। আমি নিজেই বানিয়েছি। আর বিশেষ ক্ষমতা বলেই আপনার সাথে আপনাদের বাংলা ভাষায় কথা বলছি।আমি হতবাক হয়ে ওর লেজের দিকে দৃষ্টি দিলাম। বিস্ময়ের ঘোর কাটার কোন সম্ভাবনা নেই। আমার মনে পড়লো হ্যান ক্রিশ্চিয়ান এ্যান্ডরসনের 'দি লিটল মারমেইড'র সাগরকন্যাটির কথা।তখনি আমার সামনের মত্স্যকন্যা বললো-আপনাকে একটা সারপ্রাইজ দেই?আমি জানতে চাই-কী সেটা?সে বললো-আপনার চিন্তাপাট করলাম এই মাত্র। আপনি এ্যান্ডারসনের মত্স্যকুমারীর কথা ভাবছেন। ওই সাগরকন্যার বেদনাভরা পরিণতি আপনাকে আবিস্ট করে বার বার, যখনি আপনার মনে পড়ে। কি মিথ্যে বলেছি?না না মিথ্যে বলেন নি, সত্য বলেছেন। আপনিও কি মিথ্যে বলেন? -আমার আগ্রহ।মিথ্যা বলার সুযোগ আসে নি জীবনে। সে বললো।বুঝলাম না কি বলতে চান? -আমি বলি।সত্যি বুঝেন নাই? -বড় ভাইয়ের বউয়ের কায়দায় সে বলে।না। -হাদারামের মতো বলি আমি।আপনাকে বেকুব বললে তো আপনি নারাজ হবেন, তাই না? -মোনালিসার দৃষ্টি ছড়িয়ে প্রশ্ন করে মত্স্যকন্যা।আমি দেখি, মুখে হাসি আছে তার। তবে ওর মাছের লেজ ডানে বামে নড়ছেই। শরীরচর্চার বুকডন আসনের মতো অনেকটা দু'হাত সামনের দিকে ভাঁজ করে রেখে, পানির উপরে মাথা তুলে সে কথা বলছে। সমুদ্রের আসল ঢেউয়ের আঘাত এখানে নেই। ওয়েভব্রেকার করা হয়েছে মাটি ভরাট করে। ওই ভরাট জায়গাটি মিনি শহরে বিবর্তিত হচ্ছে। যাক্ তার প্রশ্নে আমি প্রথমে আঁতে ঘা অনুভব করতে শুরু করছিলাম। সাথে সাথে মনে হলো কোন চমতার কারণ আসতে পারে সামনে। আমি সাদ্দাম হোসেনের একগুঁয়েমীর অভিনয় করি, বলি-আমাকে বেকুব মনে হলে বেকুব বলবেন।না না আমি আপনাকে বেকুব বলে নিজে বেকুব হতে চাই না। -সরল প্রেমিকার মতো বলে মত্স্যকন্যা।আমি বলি-বলুন, মিথ্যে বলার সুযোগ আসে নি মানে কী?সে বলে-মানে এতো লম্বা জীবনে কখনো প্রেমের বাহানা করার এবং সংসার জীবন যাপন করার সুযোগ পাই নি। করতে চাই নি বলতে পারেন।আমার মগজে গম্ভীর দার্শনিক বক্তব্যের ধাক্কা লাগে। ভাবি, এই আধা মাছ আধা মাইয়া তো জবরদস্ত একখান কথা কইলো। আমি কিছু বলার আগেই মত্স্যকন্যা বললো-আমি যে মিথ্যে বলি নি আপনি টের পাইলেন মনে হচ্ছে।আমি বলি-মিথ্যে বলেন নি। ভাবছি, আপনার মাথায় তো মানব সমাজের অনেক খবর আছে।সে বলে-অনেক না। খুব সামান্য। কিছু কিছু জানি। আপনি আমার সাক্ষাতার নেয়া শুরু করলেন যে? ব্যাপার কি?আমি বলি-আপনি আমাকে চমকের পর চমক দিচ্ছেন? ফলে আপনার সম্পর্কে জানার আগ্রহ বাড়ছে। মাথায় কেবল প্রশ্ন তৈরী হচ্ছে। আপনি সাক্ষাতার নেয়ার ব্যাপারটি সম্পর্কেও জানেন দেখছি।মত্স্যকন্যা একসাথে দুই চোখ মুদে আবার খুলে চমতকার রিলাক্স মুডে বলে-জানি মানে? আমি তো সাক্ষাতার নেই মাঝে-মধ্যে।আমি জানতে চাই-কার সাক্ষাতার নিয়েছেন? কীভাবে নিয়েছেন? কখন নিয়েছেন? কোথায় নিয়েছেন?লেখাপড়া জানেন? কোথায় লেখাপড়া করেছেন?থামুন থামুন। আপনি আবারো প্রশ্নের শিকল বানানো শুরু করে দিয়েছেন। -ছোট ভাইয়ের বিয়ের জন্য কনে দেখতে যাওয়া বড় আপার মতো হাসিমাখা কথা বলে অর্ধেক মাছ অর্ধেক নারীটি।বলে-শুনুন,পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশিস্টজনদের সাক্ষাতকার আমি নিয়েছি শুধুমাত্র নিজের জ্ঞানতৃষ্ণা মেটাবার জন্য। কোন পত্রিকা কিংবা ম্যাগাজিনে ছাপানোর জন্য না কিংবা কোন টিভি চ্যানেলে প্রচার করার জন্য না। কী ভাবছেন আমার চোখের দিকে তাকিয়ে? ভাবছেন-> অর্ধেক মাছের শরীর নিয়ে মানুষের সমাজে কিভাবে যাই?> লেখাপড়া কোথায় কীভাবে করলাম?কী এ প্রশ্ন দু'টি এসেছে মাথায়?হ্যাঁ, তবে আরো এক বস্তা পরিমান প্রশ্ন ইতোমধ্যে তৈরী হয়ে গেছে।ভালো কথা। বস্তার মুখ খুলে হাজার প্রশ্ন এক সাথে আমার উপর ঢেলে দিবেন না। ধীরে ধীরে, স্টেপ বাই স্টেপ। -কলেজের বয়স্ক অধ্যাপিকার মতো বলে সে। পার্থক্য শুধু এই, অধ্যাপিকারা এ রকম কথা বলার সময় হাসেন না। মত্স্যকন্যার মুখে হাসি লেগে আছে।সে চোখে মুখে গাম্ভির্য্য এনে বলে-মানুষের জগত সংসারে আমি যাই পূর্ণ মানবী রূপে। সুন্দরী স্মার্ট তরূণীর রূপ ধারণ করে। আমার মুখমন্ডল, এখন আপনি যা দেখতে পাচ্ছেন,এটাই থাকে। আমি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছি পূর্ণ মানবী রূপে। কেউ টের পায় নি। এটা হয়েছে আমার মায়ের দোয়ায়। আমার মা ও বাবা মানব সন্তান ছিলেন। খোদার কসম খেয়ে মিথ্যা বলার অপরাধে আমার মাকে খোদা মত্স্যকন্যা বানিয়ে দেন। তখন আমার মা বাবা জাহাজে করে দুর দেশে যাচ্ছিলেন। মধ্য দুপুরে লাঞ্চ করে, জাহাজে শুয়েছিলেন বিশ্রাম নেয়ার জন্য। ঘন্টাখানেক ঘুম শেষে জেগে দেখেন মা মত্স্যকন্যা হয়ে গেছেন। বাবা বিস্ময়ে ভয়ে চিতকার করতেই মা থামান। বলেন,আমি স্বপ্নে দেখেছি,মত্স্যকন্যার রূপ হলো আমার সেই মিথ্যে কথাটির শাস্তি। তোমার সঙ্গে আর থাকতে পারবো না। সমুদ্র গভীরে চলে যাচ্ছি। আমাকে মাফ করে দিও। আমার পেটে তোমার সন্তান। পূর্ণ মানব হয়ে জন্মালে যে কোন উপায়ে তোমার কাছে পাঠিয়ে দেবো। আর মত্স্যকন্যা হয় যদি,সমুদ্র গহনের জগতেই থাকবে। তবে খোদার কাছে প্রার্থনা করবো তিনি যেনো সন্তানটিকে বিশেষ ক্ষমতা দেন, যাতে সে পৃথিবীতে মানুষের সমাজে ইচ্ছেমতো আসতে পারে।যাই, তোমার ভালবাসা সঙ্গে নিয়ে যাইযাই. মাঝে মাঝে তোমার দেখা পাওয়ার আশা বুকে নিয়ে যাইআমি যাই, তুমি থাকো, সুখে থাকো, কাউকে বিয়ে করে বাকী জীবন পার করোআমি যাই গো যাই, খোদা হাফেজ।কবিতার ভাষায় কথা ক'টি বলে মা আমার সাগরে ঝাঁপ দেন এবং তলিয়ে যান।আমি জিগ্যেস করি-আপনার মায়ের সেই মিথ্যে কথাটি কী ছিলো?মত্স্যকন্যা বলে-সেটা খুব সাধারণ একটা মিথ্যা। সেটা এখন আপনাকে বলবো না। পরে বলবো।আমি বলি-বিস্ময়কর! অবাক হলাম! অবাক হলাম এ জন্যে যে, এই আরব দেশে, এক যুগ ধরে ব্যবসায়িক লেনদেন করার সময় দেখেছি, অজস্র নারী পুরুষ কথায় কথায় কসম খায়। খোদার কসম খেয়ে অবলীলায় মিথ্যে কথা বলে। চট করে বলে, 'ওয়াল্লা ওয়াল্লা কসম বিল্লাহ আনা মা কাজ্জাব আলাইক।' মানে......আমাকে থামিয়ে মত্স্যকন্যা জানায়-থাক অনুবাদ করতে হবে না। আরবি ভাষা আমি বুঝি। পৃথিবীর প্রধান ভাষাগুলো আমার মেমরীতে আছে। সেটা খোদার বিশেষ দান। অনুবাদটা বলি?আমি হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়ি।সে বলে-'ওয়াল্লা ওয়াল্লা কসম বিল্লাহ আনা মা কাজ্জাব আলাইক।' এখানে 'ওয়াল্লা ওয়াল্লা' এবং 'কসম বিল্লাহ'একই অর্থবোধক। ওরা কথা বলতে দুটিই ব্যবহার করে। কথাটার ইংরেজি তরজমা হলো- ইন গডস নেম, আই এ্যাম নট লাইং টু ইউ। আর বাংলা অনুবাদ হলো, 'খোদার কসম, আমি আপনাকে মিথ্যা বলছি না।'আমি জানতে চাই-আপনি পড়ালেখা কোথায় করেছেন?সে জানায়-বর্তমানে আপনাদের বাংলাদেশের রাজধানী, ইরানে, মিসরে, স্পেনে, লন্ডনে, সুইডেনে, আর আমেরিকায়। প্রতিষ্ঠানে খুব বেশী পড়ি নি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছি। তবে পড়াশুনা সব সময় করি। কোন বিষয়ে জানার ইচ্ছে হলে পৃথিবীর যে কোন দেশের পাবলিক লাইব্রেরীতে ঢুকে পড়ি। তিন/চার ঘন্টা গভীর মনোযোগে বইয়ের পাতায় চোখ বুলাই। গতকাল বিকেলেও এ দেশের কালচারাল ফাউন্ডেশনের পাঠাগারে ছিলাম। সন্ধার পর আপনাকে পাঠাগারে ঢুকতে দেখেছি। আপনি আমাকে দেখেন নি। আপনি গতকাল ইয়া বড় মেক্রপেডিয়া নিয়ে বসেছিলেন ঘন্টাখানেক।আমি বিস্ময়মাখা হাসি দিয়ে বলি-ঠিক বলেছেন। আমারও বিভিন্ন বিষয় জানার আগ্রহ প্রবল। তাই অবসরে বইয়ের জগতে ডুব দেই। কখনো কখনো কম্পিউটারে ওয়েবসাইটে ঘুরে বেড়াই।মত্স্যকন্যা বলে-আমিও মাঝে-মধ্যে ইন্টারনেট ক্যাফেতে গিয়ে ইচ্ছেমত ব্রাউজ করি। মজা করার জন্য চ্যাটিং রুমে ঢুকি। একদিন রিলিজিয়ন রুমে ঢুকলাম, সিরিয়াস ধর্মীয় বিতর্কে অংশ নেয়ার জন্য। ওরে বাবা! ওখানে দেখি, পোলা মাইয়ারা সেক্স চ্যাটিং করছে। আমি বেরিয়ে যাবো ভাবছি, এমন সময়, একষট্টি বছর বয়সের এক পোলা আমাকে পারসোনাল চ্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানায়। প্রশ্ন করে, ইউ এফএম? আমি লিখি, রেডিওর শর্ট মিটার ব্যান্ডে আমি দেশ বিদেশের গান শুনি। এফএম ভালো লাগে না। ওই ব্যাটা প্রশ্ন করে, কী বলছো তুমি? আমি লিখি, তোমার প্রশ্নের উত্তর লিখেছি। সে লিখে,আমি জানতে চেয়েছি, তুমি মেইল না ফিমেইল? আমি লিখি, ও আচ্ছা, তো এফ আর এম এর মাঝখানে অবলিগ বা স্পেস দাও নি কেন? আমি তো সুন্দরী মাইয়া। সে লিখলো,আমি সেক্সের জন্য পাগল হয়ে আছি। তুমি কোথায়? হারি আপ কাম অন ডিয়ার! আমি লিখি, আমি এখন অস্ট্রেলিয়াতে। একটা থাপ্পর মাইরা তোমার বত্রিশটা দাত ফালাইয়া দিলে পাগলামী ছুইটা যাইবো। রিলিজিয়ন রুমে ঢুকে ফাইজলামী। অসভ্য কোথাকার! সে লিখে, আমি তো নিউইয়র্কে। তুমি সারা জীবন চেষ্টা করলেও অস্ট্রেলিয়া থেকে নিউইয়র্কের কাউকে থাপ্পর মারতে পারবে না।মত্স্যকন্যা একটু নড়েচড়ে আরো বললো-আমি আমার বিশেষ ক্ষমতা বলে মুহুর্তেই লোকটির নিউইয়র্কের বাড়ির বেডরুমে গিয়ে ঢুকি। দেখি, সে আন্ডারওয়ার পরে বসে কম্পিউটারে আমার উদ্দেশে বারবার বাজ করছে। আমি পেছন থেকে বাঁ হাতে ওর গালে একটা মিডিয়াম ওজনের থাপ্পড় লাগিয়ে বলি, হারামজাদা, রিলিজিয়ন রুমে ঢুকে সেক্সের পাগলামী আর কোন দিন করবি না। সে ধড়ফড় ক'রে উঠে বলে, কে আপনি কে?