Pages

Tuesday, November 6, 2007

তুমি কোন কাননের ফুল, পর্ব-৩

মত্স্যকন্যা বললো, যাক ওসব কথা। বলুন কেমন আছেন আপনি?ভালো। -বলি আমি।সে প্রশ্ন করে-গত রাতে ঘুম হয়েছিলো?আমার জবাব-হ্যাঁ, তবে প্রায় এক ঘন্টা বিছানায় এপাশ ওপাশ ফিরেছি। বারবার মনে পড়েছে- বিস্ময়কর এক মত্তস্যকন্যার সাক্ষাত পেয়েছি। ব্যাপারটা কি! মত্তস্যকন্যা তাইলে শুধু ফ্যান্টাসি না। বাস্তব। বিস্ময়কর বাস্তব!সাগরকন্যা বললো-আমার দেরি হওয়াতে আপনি বিচলিত হয়েছিলেন?আমি বলি-হ্যাঁ। একবার মনে হয়েছিলো, হয়তো আর আসবেন না। আপনি পূর্ণ মানবি রূপ ধারণ করতে পারবেন না। খামাখা বলেছিলেন। আচ্ছা, ইয়ে, আপনার কি মানবী রূপে মানুষের সমাজে স্থায়ী হওয়ার বাসনা হয় না?-হয়। কিন্তূ সম্ভব না।-কেন?-বিশেষ ক্ষমতাটা সীমিত। রিমোট কন্ট্রল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত মনে হয়।-রিমোট কন্ট্রল কার হাতে?-বলতে পারেন খোদার হাতেই।-মানবী হওয়ার প্রক্রিয়াটা কি রকম?-ইচ্ছে করলেই হতে পারি। শর্ত হলো, ইচ্ছেটার পেছনে মহত উদ্দেশ্য থাকতে হবে। কখনো নির্ভেজাল বিনোদনের চান্স পাই।-নির্ভেজাল বিনোদন মানে?-মানে হলো, যে বিনোদনের ফলে কারো কোন প্রকার ক্ষতির সম্ভাবনা জিরো। এই যেমন ধরুন, আপনার সঙ্গে কথা বলার জন্য মানবী রূপ ধারণ করার পেছনে মহত উদ্দেশ্য এবং বিনোদন দুটাই ছিলো।-মহত উদ্দেশ্যটা কী?-ওরে বাব্বা, ওইটা তো এখনি বলা যাবে না। এতো জলদি উপসংহারে যেতে চান?-না না ঠিক আছে। আপনার মর্জি। উপসংহার দেরিতেই আসুক।আমি জিগ্যেস করি-আচ্ছা, এই যে বললেন, মানবীরূপে সীমিত সময় পর্যন্ত থাকার কথা, অর্থাত্ আমি জানতে চাইছি, সীমিত সময়ের সীমা টের পান কীভাবে?সে বলে-সময় শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে সিগন্যাল পাই। সিগন্যালটা এ রকম,- 'আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি, মত্স্যকন্যা রূপ ধারণের জন্য প্রস্তুত হও এবং মনে মনে ইচ্ছেটা শাণিত করো।' একবার আমি, দেরি করতে চেয়েছিলাম। দেখি, আমার সমস্ত শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। মনে হলো, আমার শরীর কিছুক্ষণ পর বিস্ফোরিত হবে। আমি তাড়াতাড়ি মত্স্যকন্যা রূপ ধারণের ইচ্ছে জাগাই আমার মস্তিস্কে।তখন, মানে সেই দিনগুলোতে, আমরা, আমি আর আমার মা,প্রাচিন হেলিক নগরীর একটি দালানে থাকতাম। দালানটা কোথায় জানেন?আমি বলি-আপনি ভূমধ্যসাগরে তলিয়ে যাওয়া আটলান্টিস নগরীর কথা বলছেন?সে বলে-হ্যাঁ, দার্শনিক প্লেটো ওটাকে আটলান্টিস বলতেন। খৃষ্টপূর্ব ৩৭০ সালের কথা, তখন গ্রীক সভ্যতার সুবর্ণকাল। আধুনিক সমাজ সংস্কৃতি সমৃদ্ধ আচিয়ান লীগ কনফেডারেশনের রাজধানী ছিলো আটলান্টিস। প্রত্নতাত্তিকরা একে নাম দিয়েছেন হেলিক। এই নগরী, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ভূমিকম্প ও সুনামীর আঘাতে সমুদ্রের তলদেশে চলে যায়।আমি জানতে চাই-আপনি লেখাপড়া করলেন কীভাবে? আপনার অভিভাবক কে ছিলেন?পূর্ণ মানবী মত্স্যকন্যা বললো-আমাকে এখন মত্স্যকন্যা ডাকার দরকার নাই। আমার সমস্যা হবে। আপনি আমাকে 'ম' বলে ডাকবেন।-'ম' মানে কী?-'ম' মানে ম। ম অর্থহীন। আবার ম অনেক প্রকার শব্দের অদ্যাক্ষর। যার যা খুশি মনে করুক। আর অভিভাবক তো বাবাই ছিলেন।-বাবার কাছে গেলেন কীভাবে?গম্ভীর হয়ে ম বলতে শুরু করলো-মা মত্স্যমানবী হয়ে সমুদ্র গর্ভে চলে যাওয়ার পর, বাবা মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন নি। দু'একদিন পর পর শহর ছেড়ে নিকটবর্তী গ্রামে চলে যেতেন। গ্রামের পথে পথে মাইলের পর মাইল হাঁটতেন একা একা। বাবা ছিলেন শিক্ষক। কলেজের অধ্যাপক। আত্মীয়-স্বজন বন্ধুরা বাবাকে বুঝাতেন। পরামর্শ দিতেন- 'আপনি পুরুষ মানুষ। এতোটা ভেঙ্গে পড়া মানায় না। আবার বিয়ে করুন। সংসারী হোন।' বাবা মাথা নেড়ে না করতেন। কারো প্রশ্নের দীর্ঘ জবাব দিতেন না। সংক্ষিপ্ত, হাঁ অথবা না। একবার শুধু তার প্রিয় বন্ধুটির এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন-'তোমরা আমাকে প্রশ্ন করো না। আমি এই জগতের লীলা কিছুই বুঝি না। আমি এক মূর্খ, বেওকুফ।' আসলে বাবা ছিলেন একজন মেধাবী অধ্যাপক। কলেজের ছাত্রদের প্রিয় শিক্ষক। ইতিহাস পড়াতেন। খুব মনোযোগে ছাত্ররা তাঁর ক্লাশ করতো। আমি একদিন শুনি, বাবা তার বন্ধুকে বলছেন, -'এই যে এতোটা মনোযোগে ছাত্রদেরকে ইতিহাস পড়াই, ওরাও খুব মনোযোগে বক্তৃতা শুনে, নোট করে। এই শিক্ষার কোন মানে নেই আমি দেখতে পাচ্ছি। কেননা ইতিহাস থেকে তো মানুষ শিক্ষা নেয় না। যদি শিক্ষা নিতো, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যুদ্ধ করতো না, রক্তপাত করতো, হত্যা ধর্ষণ ষড়যন্ত্র করতো না। বার্নার্ড শ এর কথাটা ফেলে দেয়া যায় না। সভ্যতার ইতিহাসেই দেখো, ইতিহাস ভালো জানেন এমন অজস্র বিদ্বান লোকেরা জঘন্য ইতিহাসের জনম দিয়েছে।' যাক বললো, ও হ্যাঁ বাবার অভিভাবকত্বের কথা বলছিলাম। মা মত্স্যকন্যা হয়ে যাওয়ার পর, প্রতিমাসে একবার বাবা আসতেন সমুদ্র সৈকতে। সন্ধ্যার সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে, মনে মনে মাকে ডাকতেন-'তুমি আমাকে দেখা দিয়ে যাও।' সূর্য ডুবে গেলে, আঁধার ঘন হতে থাকলে, সৈকতে বেড়াতে আসা মানুষেরা, দম্পতিরা, প্রেমিক প্রেমিকারা, আশ্রয়মুখো হতে শুরু করে। বাবার ঘরে ফেরার সময় হয় না। বাবা বসে থাকেন একটা বালুর ঢিবিতে। সমগ্র জনপদে অন্ধকার প্রগাঢ় হলে মা উঠে আসেন সমুদ্র গর্ভ থেকে। বাবার মনের অন্ধকার দূর হয়। বাবা দেখতে পান, আলোকবর্তিকার মতো আমার মায়ের মুখমন্ডল। দু'জনে কথা হয় পাঁচ/সাত মিনিট। মা এর বেশি থাকতে পারেন না পৃথিবীর প্রকৃতিক পরিবেশে। মা বাবা কথা বলার সময় ওদের মাঝখানে দূরত্ব থাকে প্রায় দশ হাত। বাবা আরো কাছে গিয়ে মায়ের মুখমন্ডলে হাত বুলাতে চাইলে মা মানা করেন। জানিয়ে দেন, আরো কাছে আসলে মায়ের মারাত্মক ক্ষতি হবে। বাবা থামেন। জিগ্যেস করেন, 'তোমার চেহারা এতো আলোময় হলো কি করে?' মা বলেন, 'আমি জানি না। খোদা ভালো জানেন।' এইভাবে কিছু কথাবার্তা হওয়ার পর মা বিদায় নেন বাবার কাছ থেকে।অতঃপর তিন মাসের মাথায় যেদিন সাক্ষাত হয় বাবার সঙ্গে, সেদিন মা আমাকে সঙ্গে নিয়ে আসেন সমুদ্র সৈকতে।আমি তখন পনর দিনের শিশু। বাবা আমাকে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে কাঁদেন। ডুকরে ডুকরে কাঁদেন। কান্না থামাতে পারেন না। মা বলেন, 'কান্না থামাও, কথা শোন। মেয়ে মত্স্যকন্যা হয়েই জন্ম নিয়েছে। তবে সম্পূর্ণ আলাদা প্রকৃতির এক সাগরকন্যা হবে। সমুদ্রজগতের বাদবাকি মত্স্যকন্যাদের মতো হবে না। আমি মহান প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা করেছি তাকে বিশেষ ক্ষমতা দেয়ার জন্য। তিনি আমার প্রার্থনা মঞ্জুর করেছেন মর্মে স্বপ্নে জানতে পেরেছি। এই বিশেষ ক্ষমতা বলে সে পৃথিবীর যে-কোন জনপদে পূর্ণ মানবী রূপে মানুষের সমাজে যেতে পারবে। স্কুল কলেজে লেখাপড়া করতে পারবে। তুমিই ওর অভিভাবক থাকবে। তবে নামে মাত্র। তোমার এক টাকাও খরচ করতে হবে না। শেরাটন হোটেলের পাশের পার্কে ঘুরতে ঘুরতে, হাঁটতে হাঁটতে ম এর কথা শুনছিলাম খুব মনোযোগি ছাত্রের মতো। ওর কথা বলার ভঙ্গিও চমতার। গলার আওয়াজও মধুর। সম্মোহন আছে। সে জানালো, ছয় বছর বয়সে বাবার অভিভাবকত্বে স্কুলে ভর্তি হয়। তার মা তার বাবাকে বলে দিয়েছিলেন ওর মত্স্যকন্যা পরিচয় গোপন রাখতে। বিশেষ ক্ষমতার জন্যই এই গোপনীয়তা।(সকল বিশেষ ক্ষমতার সাথে গোপনীয়তার একটা সম্পর্ক আছে।)ওর বাবা আত্মীয় বন্ধুদের বলেছিলেন, এই মেয়ে তার পালক মেয়ে। ফুটন্ত ফুলের মতো মেয়ে। ঘরে বাইরে সকলেই মায়া করে। ছাত্রী হিসেবেও মেধাবী। সহপাটিদের কেউ কেউ হিংসা করে। সে মনে মনে বলে- আমার প্রতি হিংসা বা ঈর্ষা করে তো কারো লাভ হবে না।স্কুলের সবগুলো পরীক্ষায় সে প্রথম হতো। একদিন তার এক সহপাটি জিগ্যেস করেছিলো, সে রাতে কয় ঘন্টা পড়ালেখা করে। সে জবাবে বলেছিলো, 'এক সেকেন্ডও না। পড়ালেখা করার জন্য স্কুলে আসি, স্কুল ছুটি,পড়ালেখাও ছুটি।' স্কুল কলেজ ছুটি হলে ছাত্র ছাত্রীরা ফিরে যেতো যার যার বাড়ি ঘরে। ম তার বাপের বাড়ির পথে কিছুণ হাঁটতে হাঁটতে এক সময় সুযোগ বুঝে হাওয়া হয়ে যায়। মুহুর্তেই সে চলে গেছে বঙ্গোপসাগরে তার মায়ের ক্ষণস্থায়ী সাগরালয়ে।আমি জানতে চাই-সাগরালয় মানে?ম বলে-সাগরালয় মানে সমুদ্র গহনের বাড়ি।সমুদ্র তলায় বাড়ি আছে নাকি? কী রকম? কে বানিয়ে দেয়? - আমি জিগ্যেস করি।সে বলে-আমরা বানাই। দেখতে সুন্দর না। তবু নিরাপত্তার কাম চলে। সমুদ্র তলায় মিলিয়ন মিলিয়ন বাড়ি ঘর আছে।আমার প্রশ্ন-কী দিয়ে বানান বাড়ি?সে জানায়-সমুদ্র মহাসমুদ্রের তলদেশে কিসের অভাব? সব কিছু পাওয়া যায় জলময় জগতের প্রাণীগুলোর জন্য। প্রাণী মানে লিভিং ক্রিয়েচার তো সমুদ্র জগতেই বেশি। এই গ্রহের, এই পৃথিবীর প্রাণীজগতের শতকরা সাতান্নব্বই ভাগের আবাসস্থল হলো মহাসমুদ্রের মহাগহন এলাকা। আপনার তো জানা আছে, ভূপৃষ্ঠের তিন ভাগের দুই ভাগ হলো জলজ এলাকা, মহাসামুদ্রিক এলাকা। আমি ও আমার মা পাথর ও কল কারখানার ধ্বংসাবশেষ দিয়ে ঘেরাও করে অস্থায়ী ঠিকানা বানাই। ওটা বানাই এমনি মজা করার জন্য। আমরা নিরাপদে ঘুমাই সাগর-পাহাড়ের গুহায়। ঘুমানোর আগে গুহার মুখে সাগর-বনের ঝোপ ঝাড় রেখে দেই। যাতে হিংস্র সন্ত্রাসী তিমি কিংবা অক্টোপাসেরা মনে করে- এখানে কোন গুহা নেই। আটলান্টিকের খুনি তিমিগুলো মারাত্মক ভয়ংকর। ওরা দল বেঁধে অভিযান চালায়। ওদের রাজ্যে ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত।ওদের রাজ্য মানে? - আমি প্রশ্ন করি।ম বলে-ওদের দেশ। ভারতের চাইতে বিশাল এলাকা জুড়ে আছে আটলান্টিকে ওরা। ওই বিস্তৃত অঞ্চল হলো ওদের দেশ। সাগর মহাসাগরগুলোতে সামুদ্রিক প্রাণীদের দেশ বিভক্ত আছে। স্বাধীন পরাধীন দেশ আছে। সামুদ্রিক জায়েন্ট কিলাররা অন্যদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে। হত্যা ধর্ষণ করে। মহাসাগরগুলোর বিস্তারিত অন্তরদেশে কুবলাই খান, চেঙ্গিস খান, হালাকু খান, হিটলার, মুসোলিনি, সাদ্দাম, বুশ, ব্লেয়ারদের মতো প্রাণী আছে।আমার জানতে ইচ্ছে করে-নিউটন,আইনস্টাইন,ব্রাট্রান্ড রাসেল, মিলটন, শেক্সপিয়র, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দদের মতো কেউ নেই?ম বললো-না না, ওদের মতো কেউ নেই। থাকলে আমার মোটেই ইচ্ছে হতো না পূর্ণ মানবী হয়ে মানুষের সমাজে থেকে যেতে। আর টাইটানিক নামের বিশাল জাহাজটিও আটলান্টিকের তলায় পড়ে থাকতো না। ভাঙ্গাচোরা ওই জাহাজটিকে সন্ত্রাসী তিমি আর অক্টোপাশেরা খুন খারাবীর দূর্গ হিসাবে ব্যবহার করতে পারতো না।আমি বলি-আটলান্টিক তো ইংরেজি 'এস' অক্ষরের মতো। কোথাও আটাশ হাজার ফুট গভীর, কোথাও সতের হাজার ফুট, আর কোথাও বারো হাজার ফুট গভীর।ম মাথা নেড়ে সায় দিলো-ঠিক বলেছেন।আমি ম এর পাশে হাঁটতে হাঁটতে ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দৃষ্টি দিয়ে ব্রাশ করি। ম আমার দিকে না তাকিয়ে দূর নক্ষত্র খচিত আকাশের দিকে দৃষ্টি রেখে হাঁটতে হাঁটতে বললো--কি দেখছেন কি ভাবছেন বলবো?-বলুন।-ভাবছেন 'একেবারে লেটেস্ট ফ্যাশনের পোশাক পরা এই সুন্দরী নারীকে কাল দেখলাম মত্স্যকন্যা রূপে আজ দেখছি পূর্ণ মানবী রূপে। বিস্ময়কর! সত্যি বিস্ময়কর লীলা! ঠিক বললাম কী?আমি স্বীকার করি-হ্যাঁ ঠিক তাই। আচ্ছা, ইয়ে, স্কুল কলেজে লেখাপড়া করলেন কী উদ্দেশ্যে? চাকরী-------পড়ালেখা করেছি, করি এবং করবো শুধু জ্ঞানক্ষুধা মিটানোর জন্য। চাকরী কিংবা রোজগারের দরকার নেই আমার। সমুদ্র জগতে বেশির ভাগ সময় থাকি, খাই, ঘুমাই। ওখানে কোন কিছু কিনে খেতে হয় না। বাজার নাই, সরকার নাই, সমাজ নাই; কূটনীতি নাই, দুর্নীতি নাই; ইন্টারনেট নাই; ব্লগিং নাই; গালাগালি নাই; নারী পুরুষের বিশেষ অঙ্গ প্রদর্শন নাই; পাসওয়ার্ড হ্যাকিং করে কাউকে অপমান করা নাই; জমি খরিদ বিকি নাই; রিয়েল এস্টেটের ব্যবসাও কেউ করে না; অতএব চাকরী করে দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়িয়ে জমি বা ফ্লাট কেনার কোন সম্ভাবনাও নেই। ওখানে জোর যার মুল্লুক তার নীতিটাই চলে। বিশৃঙ্খলার মধ্যেও একটা শৃঙ্খলা আছে বলে মনে হয়। একটা মজার ব্যাপার বলি। আমার এই দুই প্রকার জীবন যাপনে আনন্দ পাই। মানুষ হয়ে মানুষের বোধ ও উপলব্ধির শরিক হতে ভাল লাগে। আবার মত্স্যকন্যা হয়ে ফিরে যাই যখন সমুদ্রজগতে, মনে হয়, এই আমি নতুন ভূবনে এলাম। সব কিছু নুতনভাবে পাই মনে হয়। আর সমুদ্রজগতের প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব মনোরম। পাহাড় টিলা গাছপালা সবুজ ঘাস লতাগুল্ম এবং বহু প্রকার বর্ণিল ছোট বড় মাছের খেলা দেখতে ভালো লাগে। তাছাড়া বিচিত্র বিস্ময়কর আকৃতির প্রাণীগুলোর চলাফেরা দেখলে মাথা ঘুরে যায়। সামুদ্রিক ঘোড়াগুলোর মশকারী দেখে হাসতে হাসতে গালের মাংসে ব্যাথা করে।আমি প্রশ্ন করি-আর মহাসামুদ্রিক মহাতংক, বিশাল দানব আকৃতির একটা তিমি আপনার দিকে ধেয়ে আসতে দেখলে কেমন লাগে?-অবশ্যই ভালো লাগার কথা না। ওই রকম অবস্থা কখনো হয় না। কারণ আট/দশটা হাতির সমান একেকটা বিশালাকার তিমির দৃষ্টি শক্তির চেয়ে আমার, শুধু আমার না, সকল সাগর কন্যার দৃষ্টি শক্তি দ্বিগুণ বেশি। আমাদের তো ওদের রাজ্যে থাকার প্রয়োজন পড়ে না। কখনো ওদের দেশের ভেতর দিয়ে অন্য প্রাণীদের দেশে যাই তিমি বা অন্য হিংস্রদের চোখে ধুলো দিয়ে। ওরা আকারে বিশাল। কিন্তূ আমাদের মতো চালাক না। সাইজে বড়, স্বভাবে হিংস্র, খুনী, 'লাকিন মখ মাফী'। 'লাকিন মখা ফী' কথাটার অর্থ জানেন?আমি একটু হেসে বলি-জানি। এটা কথ্য আরবী। অর্থ হলো, 'কিন্তূ ব্রেইন নাই-বুদ্ধি নাই'।ম বললো-বুদ্ধি যে একেবারে নাই তা না। গুন্ডামীও দেখায়। সমুদ্রপৃষ্টে এসে লাফালাফি করে। বুদ্ধি তুলনামুলক কম আর কি। মানুষের বুদ্ধির মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়। মানুষ বিশালাকারে তিমি শিকার করে সৈকতে শুইয়ে রাখে। সত্যিই (একটু দাঁড়িয়ে আমার দিকে চেয়ে) মানুষ বড় বিস্ময়কর প্রাণী। মানুষের কোন তুলনা হয় না।আমি বলি-মানুষ ইতর প্রাণীর চেয়েও নিকৃষ্ট ইতরামী করে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে মানুষের হিংস্রতা জঙ্গলের কিংবা মহাসামুদ্রিক জানোয়ারদের হিংস্রতার চাইতে অনেক বেশি।ম বললো-তবু সামগ্রিক বিচারে মানুষের সৃষ্টিশীলতা এবং মেধা মনন চর্চার কোন তুলনা হয় না। জঘন্য মানুষটিও ভালো মানুষে পরিণত হতে পারে।আমি বলি-কিন্তূ কিছু লোক, পৃথিবীর সকল সমাজেই, মরণ কবুল করবে তবু ভালো হবে না। দিনের পর দিন হাজারো অপরাধে ডুবে থাকে। মানুষের স্বভাবের উপর এক সায়েন্টিফিক লেখায় পড়েছিলাম, কিছু মানুষ জেনিটিক্যালি অপরাধপ্রবণতা নিয়েই জন্মে। (অসমাপ্ত)