Pages

Tuesday, November 6, 2007

তুমি কোন কাননের ফুল (পর্ব-২)

প্রথম পর্ব এখানে, ক্লিক করুনআমার ঘরে আসলেন কী করে? আমার গালে এতো জোরে থাপ্পড় মারলেন কেন? আমি বলি, আমি অস্ট্রেলিয়া থেকে এই মুহুর্তে এসেছি তোমাকে একটা থাপ্পড় মারার জন্য। সে টেবিলের ড্রয়ার টান দিয়ে পিস্তল বের করতে গেলে আমি বলি, আমাকে গুলি করার ভয় দেখাইও না। কোন লাভ হবে না। আমি ইচ্ছে করলে তোমার পিস্তল দিয়ে তোমাকে গুলি করে মেরে ফেলতে পারবো। সেটা আমি করবো না। কারণ এতে আমার বিশেষ ক্ষমতার অপব্যবহার হবে। বুঝতেই পারছো, যে মেয়েটি হাজার কিলোমিটার পথ মুহুর্তেই পাড়ি দিতে পারে, তার ক্ষমতা তোমাদের কল্পনার সুপারম্যানের চাইতেও বিস্ময়কর। এই কথা বলতেই আমি দেখি, লোকটার গুন্ডামার্কা চোখের দৃষ্টি ভীতু চোরের দৃষ্টিতে রূপান্তরীত হলো। সে পিস্তলটা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে বললো, আই এ্যাম সরি, আই এপোলোজাইস- আমারে মাফ কইরা দেন। জীবনে আর কখনো এমন কাজ করবো না। আমি বলি, ঠিক আছে আপাতত মাফ করলাম। তবে তোরা আমেরিকানরা, সবাই না, অনেকেই, হাড়ে হাড়ে বজ্জাত; সাংঘাতিক শয়তানী করে নিজেরা নির্দোষ বলে চিল্লা-চিতকার করিস।এই পর্যন্ত একটানা কথা বলে মত্স্যকন্যা থামে। ওর লেজটাকে ডান দিকে বাঁকা করে হাতের নাগালে এনে, লেজের মাথাটা একটু চুলকালো। বললো, সরি, একটা চিংড়ি চিমটি কাটলো মনে হয়।আমি বলি,আপনি পূর্ণ মানবী হয়ে পার্কে চলে আসুন। বসে আলাপ করবো। আপনার কাছ থেকে আমার অনেক কিছু জানার আছে। তারপর বলুন, তারপর কী করলেন ওই আমেরিকান লোকটাকে?সে বলে,কি আর করবো। বললাম, যাও বাতরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে স্লিপিং গাউন পরে শুয়ে পড়ো।তাকে বাতরুমে ঢুকিয়ে আমি চলে যাই আটলান্টিকের অতলে। ও আচ্ছা, ভালো কথা, আজ তো অনেক কথা শুনার সময় নাই। কার সময় নাই জানেন?কার? -আমি জিগ্যেস করি।আপনার। -সে বলে। আরো বললো-আপনাকে ঘরে যেতে হবে এখন। ঘুমাতে হবে না? যান যান ঘরে গিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমান।আমি বলি-আজ তো ঘুম আসবে না মনে হয়। আপনার সাক্ষাত আপনার কথাবার্তা শুনে আমার মস্তিষ্ক খুব এক্সাইটেড হয়েছে। ডিপ ফ্রিজের ভেতর মাথা ঢুকিয়ে রাখলেও বোধ হয় ঠান্ডা হবে না।সে বলে-আরে যান যান। আমি জানি, মানুষের জীবন এমনিতেই থ্রিল, রোমান্স আর সাসপেন্স ভরা। তবু মানুষ খায়, ঘুমায়, বিনোদনে অংশ নেয়, পলিটিক্স করে, সন্তান জন্ম দেয়। পুরুষদের অনেকে শত টেনশন মাথায় নিয়ে নিজের বউয়ের সঙ্গে মার্কেটে ঘুরতে ঘুরতে অন্যের বউয়ের কোমরের দিকে চেয়ে থাকে। কোন কোন নারীও তদনুরূপ। যান, ঘরে গিয়ে ঘুমান। কাল দেখা হবে। শেরাটন হোঠেলের পাশের পার্কের প্রথম সারির শেষ মাথার বেঞ্চে বসে থাকবো সন্ধ্যায়। আমার পরনে থাকবে সাদা ট্রপিক্যাল জিন্স আর সবুজ শার্ট। চোখে থাকবে ক্রিস্টাল চশমা। আশেপাশের লোকজন দেখবে, আমি আপনাকে দূর থেকে হাতের ইশারায় ডাকছি এবং আগে সালাম করবো স্থানীয় আরবী মেয়েদের কায়দায়। কুশল বিনিময়ের পর আমরা ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলবো। আর আমার সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি কাউকে এখন বলবেন না। আপনাকে বলে দিবো কীভাবে দুনিয়াবাসীকে জানাবেন। যান, এখন গিয়ে ঘুমান নিশ্চিন্তে। আবারো বলছি, কোন দুশ্চিন্তা করবেন না। আমার দ্বারা আপনার কোন ক্ষতি হবে না। বাই, গুড বাই।এতোটুকু পর্যন্ত কথা বলার পর, আমি দেখলাম, মত্স্যকন্যা মুখে হাসি নিয়ে, খুব দ্রুত ছোট হতে শুরু করেছে। ওর আকার আকৃতি ছোট হচ্ছে। ছোট হচ্ছে ছোট হচ্ছে ছোট হচেছ। অবশেষে এক বিন্দু। অতঃপর বিন্দু নাই। কিচ্ছু নাই। পানি শুধু পানি। সাগরের স¡চ্ছ পানি। আমি সাগরের পানির দিকে তাকিয়ে আওয়াজ দিলাম-মত্স্যকন্যা আপনি কি আছেন ওখানে?এমন সময় পেছন থেকে এক ভারতীয় আমার কাছাকাছি এসে, একবার সাগরের পানির দিকে আরেকবার আমার মুখের দিকে তাকালো। কিছু বুঝতে না পেরে আমাকে জিগ্যেস করলো-আপ কিস্কে সাথ বাত কররাহা হ্যায়? পানি মে তো কোই নেহি হ্যায়!আমি বলি-নেহি কুচœনেহি।লোকটি তার পথে চলতে চলতে একা একা বলে, ইস দুনিয়ামে বহত পুরানা পাগল হ্যায়, ইয়ে নয়া পাগল কাঁহাসে আগিয়া হ্যায়।দ্বিতীয় দিনওর কথামতো পর দিন সন্ধ্যায় আমি যাই শেরাটন হোটেলের পাশের পার্কে। গিয়ে দেখি, ওই বেঞ্চে কেউ নাই। আশে পাশেও কেউ নাই। ব্যাপার কী? এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। হাঁটছি। মনে হচ্ছে এই বুঝি দেখা যাবে তাকে। না কি কোন গড়বড় হলো ? কোথায় সে এখন? কোন সাগরের অতলে? না কি কোন জনপদে? আসলো না কেন? কোন ক্ষুধার্ত হিংস্র তিমি ওকে মেরে খেয়ে ফেলেছে কী? না না ওই সব বিপদের আশংকা নেই। ওর বিশেষ ক্ষমতা আছে। সাগরের হিংস্র হায়ওয়ানদের চুতিয়া বানানোর মতো বুদ্ধি ওর আছে। কেনো আমার সঙ্গে এতো কথা বললো? বিস্ময়কর এক মত্স্যকন্যা! চমতার কিছু কথা বলেছে! ওর কাছ থেকে আরো অনেক বিষয় জানা দরকার। হয়তো সে আমার কাছ থেকে কোন তথ্য পেতে চাইছে। আমি তো সরলমনে যা জানি তা বলবো। সে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যে, এই বিস্ময়কর সৃষ্টির ভেতর হয়তো অগণন রহস্য ভান্ডার। অজানা রহস্যের প্রতি আমার খুব আকর্ষণ। ইস্ কাল রাত আরো এক দুই ঘন্টা ওর সঙ্গে আলাপ করলাম না কেন? না না আমি তো আলাপচারিতার ইতি টানি নি। সে-ই বলেছিলো,'যান, এখন যান, ঘুমান গিয়ে নিশ্চিন্তে।' এর পর বিস্ময়করভাবে ছোট হতে হতে নাই হয়ে গেলো। আজব কারিশমা! সে কি আমাকে কাবু করার চেষ্টা করবে? ওর অরিজিন তো মানব সন্তান। সব শেষে বলে বসে যদি-'আমি তোমাকে ভালবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি বাচঁবো না। আমাকে তুমি বিয়ে করো।' তাইলে তো সর্বনাশ! অর্ধেক মাছ অর্ধেক নারীকে আমি বিয়ে করবো কীভাবে? আজ পর্যন্ত পূর্ণ মানবীদের কেউ আমাকে পটাতে পারে নি বা আমার দ্বারা কাউকে পটানো সম্ভব হয় নি।(হয়তো হিসাব মিলে নি। হিসাব ক'রে প্রেম করে কি কেউ?) শেষ পর্যন্ত মত্স্যকন্যার কাছে ধরা খাবো! নাহ্ হতে পারে না। আরে ধুর্ এসব চিন্তার কোন মানে নেই। বিপদের সম্ভাবনার কল্পনা করে পেরেশান হওয়াকে মনোবিজ্ঞানীরা প্যারানয়া রোগ বলে। আর এই আধা মাছ আধা মাইয়া তো সাংঘাতিক! চিন্তা পড়তে পারে। ওর সামনে উল্টাপাল্টা চিন্তা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নইলে ধরা খাওয়ার আশংকা আছে। কিন্তূ আজ আসবে কি সে? পূর্ণ মানবী ধারণ করার বিশেষ ক্ষমতা সত্যি তার আছে কী? না কি গত রাতে ভূয়া বাহাদূরী দেখিয়েছে। সমুদ্র কিনার তো এখান থেকে কাছে। রাস্তা পার হয়ে নিরাপত্তা বেস্টনি পর্যন্ত যেতে দু'মিনিটও লাগবে না। প্রায় সাত কিলোমিটার লম্বা কর্ণিশ। গতকালের জায়গাটা এখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে। আমার হাতেও এখন সময় বেশি নেই। ওর জন্য এক ঘন্টা সময় হাতে নিয়ে এসেছি। এক ঘন্টা পর ব্যবসায়িক কাজে অন্য জায়গায় যেতে হবে।আমি ভাবতে ভাবতে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার পাশে এসেছি সমুদ্র কিনারে যাওয়ার জন্য। এই সময় আমার সামনে, বিপরীত দিকে থেকে আসা এক কিশোর বললো-হ্যালো, পেছনে তাকান, একজন আপনাকে ডাকছেন। আমি এবাউট টার্ণ করি। তাকে দেখতে পাই। মত্স্যকন্যা পূর্ণ মানবী রূপে এসেছে। আমি দ্রুত হাঁটি ওর দিকে। সে বেঞ্চটিতে বসে আছে। আমি কাছে যেতেই দাঁড়িয়ে সালাম করে। আমি জবাব দেই। সে বলে-সরি একটু দেরী হয়ে গেলো। চলুন, হাঁটি।আমি তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত বিস্ময়মাখা দৃষ্টি রাখি। নিখুঁত এক সুন্দরী। রুচিশীল। অতিমাত্রিকতার ছায়া নেই। পরিচ্ছেদের সবখানে পরিমিতিবোধের প্রভাব আছে। ফুলেল মোহময়তা ছড়ায় তার অস্তিত্ব। আমি ধ্যানমগ্ন হওয়ার উপক্রম হতেই সে কথা বলে-কী ব্যাপার! এতো কী দেখছেন? বেশি দেখবেন না। বেশি দেখলে শরীরের প্রেমে পড়ে যাবেন। লাভ হবে না। কেননা আমি প্রেমের প্রসঙ্গ আসলেই পালাই।আমি বলি-না না পালানোর দরকার পড়বে না। কারণ ওই রকম প্রেমের আশংকা নেই। আমি যা দেখছি, সেটা হলো, যে কোন সুন্দরের কাছে চুম্বক আছে। তা মনোযোগ আকর্ষণ করে দর্শকদের। এটাই কি স্বাভাবিক না?সে বলে-ধন্যবাদ। আপনার চিন্তাও পরিশীল। আমি জানতে চাই-ইচ্ছে করে দেরী করলেন? না কি.......সে বললো-আরে না না, ইচ্ছে করে না। একটা ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিলাম। অবশ্য সমাধানও দিয়ে এসেছি।আমি প্রশ্ন করি-কী রকম ঝামেলা? কী রকম সমাধান? কোথায়? সমুদ্রে না জনপদে?সে হেসে বললো-চারটা প্রশ্ন! আচ্ছা যাক, ছোট ছোট বাক্য। মাফ করা গেলো। শুনুন,আপনার মতো আমার এক বান্ধবী আছে সুইডেনে। সপ্তাহে অন্তত একবার ওর সঙ্গে দেখা করি। এই কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত ওর কাছে ছিলাম। সুইডেন দেশটা খুব শান্ত। এই অর্থে যে, যুগের যুগ ধরে ওখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। তো আমি, সুইডিশ বান্ধবীটির সঙ্গে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংকে নিয়ে আলোচনা করছিলঅম। এক পর্যায়ে আমি একটু চড়া ভলিউমে বলি, হকিং তো রাজনীতিকদের মতো স্ট্যান্টবাজি করেছেন। সিদ্ধান্তে পৌঁছার আগেই চেঁচামেচি করেছেন। তার 'এ্যা ব্রিফ হিস্টরী অব টাইম' বইটিতে তত্ত্ব সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন কম। খামাখা হাউকাউ করেছেন বেশি আল্লাহ-খোদা সম্পর্কে। একজন বড় মাপের বিজ্ঞানী এই কাজ করবেন কেন? তার ব্ল্যাকহোল গবেষণায় ভুলের কথা বেশ কয়েক বছর পর মিডিয়াকে জানিয়েছেন।আমাদের পাশে,ম-কন্যা বলতে থাকে, একটু দূরে, দুই জন ব্রিটিশ ছোকড়া বসেছিলো। হকিং সম্পর্কে আমার কথা শুনে, আমাদের কাছে এক ছোকড়া এসে বললো, আমরা ক্যামব্রিজের ছাত্র। হকিংয়ের ভক্ত। হকিং সম্পর্কে আলতুফালতু কথা বলবে না। সে অনেক বিজ্ঞানী। তুমি কী বিজ্ঞানী? আমি বলি, আমি বিজ্ঞানী না, কিন্তূ বিজ্ঞানী যদি মতলববাজ রাজনীতিকদের মতো খামাখা হাউকাউ করেন, তা সহজে বুঝতে পারি। ছোকড়াটি বললো, যাও যাও, হকিং সম্পর্কে উল্টাপাল্টা কথা বলবে না। নইলে.......ম-কন্যা বললো, আমি চিল্লিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠি। বলি, হেই পোলা ভূতের বাচ্চা জানোয়ার, নইলে কি করবি? ছোকড়া বললো, দুইজন হ্যান্ডসাম যুবক দুইটা সুন্দরী মাইয়াকে নির্জন জায়গায় নিয়া কি করতে পারে বুঝতেই পারছো। আমি বলি, আহা হা হা রে আমার সোনা বন্ধু, হ্যান্ডসাম যুবক! আসো আসো কাছে আসো, হাতে হাত ধরি নিয়ে চলো নির্জনে। ছোকড়া দুটি গুন্ডামী কায়দায় কাছে আসে। একটা আমার হাত ধরতেই অন্য হাতে ঘুষি মারি থুতনীতে। শুরু হয় ঢুসঢাস। আমি কারাতে কায়দায় দুই ছোকড়ার পাছায় দুইটা লাথি মারি। পাঁচ/ছয় সেকেন্ডের মাথায় পুলিশ আসে। পুলিশকে সব কথা বলি। পুলিশ ওদের ধরে নিয়ে যায়। আমি আমার বান্ধবীকে তার ঘরে পৌছে দিয়ে আপনার কাছে চলে আসি। মজার ব্যাপার হলো, যে-ছোকড়াটিকে আমি গালি দিয়েছিলাম, তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবার সময় সে আমার উদ্দেশে বলছিলো - তুমি গালিটা ভুল দিয়েছিলে। ভূতের বাচ্চা জানোয়ার হয় না। ভূতের বাচ্চা ভূত হয়। আমি বলি, আরে যা যা, গালিতে ভুল হলে অসুবিধা নেই। তোমরা বিজ্ঞানের ছাত্ররা, বিজ্ঞানীরা সমিকরণগুলো শুদ্ধ করো, নইলে খবর আছে।(চলবে)